কানাডায় বেড়ানোর সেরা কয়েকটি স্থান
জুলাই ৯, ২০১৬
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : কানাডা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। পূর্বে আটলান্টিক ও পশ্চিমে প্যাসিফিক এই দুটি মহাসাগর থেকে শুরু করে পশ্চিমের বিস্তির্ণ পাহাড়ী এলাকাসহ আরো বহু কিছুই আছে দেশটিতে দেখার। আছে নদী, আছে সুবিশাল বন। অন্টারিওর উত্তরে আছে হাডসন উপসাগর। চার ঋতুতে কানাডার রূপ বদলায় চার রকম। তীব্র শীত থেকে তীব্র গরম সবই অনুভব করা যায় এখানে।
কানাডায় এখন সামার। মাত্র অল্প সময়ের জন্য তার স্থায়িত্ব। সময় ও সুযোগ থাকলে এই অল্প সময়ের মধ্যেই বেড়ানোর কাজটি সেরে নিতে পারেন। ডলারের মান পড়ে যাওয়াতে দেশের বাইরে বিশেষ করে আমেরিকায় বেড়াতে যাওয়ার চেয়ে কানাডার অভ্যন্তরে বেড়ানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পশ্চিমের সুদর্শন শহর ভেঙ্কুভার, মন্ট্রিয়লের ওল্ড সিটি, কুইবেকের রাজধানী কুইবেক সিটিসহ অন্যান্য শহরগুলোর প্রত্যেকটির রয়েছে আলাদা আলাদা বৈচিত্র। কানাডার নাগরিকেরা বন্ধুবৎসল। দেশটিতে রয়েছে নিরাপত্তার গ্যারান্টি। সুতরাং নির্ভয়ে বেড়াতে যেতে পারেন দেশটির যে কোন প্রান্তে। নিচে জনপ্রিয় কয়েকটি পর্যটন স্থানের বর্ণনা দেওয়া হলো।
কানাডায় কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে হলে প্রথমেই আসে নায়েগ্রা ফসল এর কথা। কানাডায় এবং পৃথিবীতেও সবচেয়ে বিখ্যাত কয়েকটি প্রাকৃতিক আকর্ষনীয় স্থানের মধ্যে এই নায়েগ্রা ফসল অন্যতম। কেউ কানাডায় বেড়াতে আসলেন আর নায়েগ্রা ফসল দেখতে গেলেন না এটি হতেই পারে না। নায়েগ্রা ফলস না দেখলে কানাডা দেখা হয় না। প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন পর্যটক আসেন কানাডায় শুধু এই ফলসটি দেখার জন্য।
নায়েগ্রা ফসল টরন্টো থেকে বেশী দূরে নয়। মাত্র এক থেকে সোয়া ঘন্টার ড্রাইভ। যারা প্রথমবার নায়েগ্রা ফলস দেখতে যান তাদের কাছে এটি বাকী জীবনের এক অভাবনীয় স্মৃতি হয়ে থাকে। নায়েগ্রা ফলসটি খুব কাছে থেকে দেখারও ব্যবস্থা রয়েছে। শীপে করে অথবা সুরঙ্গ পথে নিচে নেমে খুব কাছে থেকে জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখতে পারেন পর্যটকগণ। হেলিকপ্টারে উঠেও দেখা যেতে পারে জলপ্রপাতের দৃশ্য। নায়েগ্রা জলপ্রপাতটি কানাডা ও আমেরিকার বর্ডারে। তবে কানাডার অংশ থেকে জলপ্রপাতটি খুব ভাল করে দেখা যায়।
নায়েগ্রায় যারা রাত কাটাতে চান তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন হোটেলে থাকার সুব্যবস্থা।
নায়েগ্রায় আরো আছে মেরিনল্যান্ড। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানারকম চিত্তাকর্ষক ও মজাদার খেলা ও প্রদর্শণীর আয়োজন। ডলফিনের মনোমুগ্ধকর খেলা, বিভিন্ন রাইডিং এ উঠার সুযোগ
আপনাকে দিবে দিনব্যাপী আনন্দ। বাচ্চাদের জন্য এটি ড্রিমল্যান্ড। দু/চার ঘন্টার ভ্রমণে আপনার পুষাবে না। সেখানে যেতে চাইলে সারাদিনের পরিকল্পনা নিয়ে যেতে হবে। মেরিনল্যান্ডে ফ্যামিলি পিকনিক করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গাও রয়েছে।
সামারে নায়েগ্রার বোটানিক্যাল গার্ডেনও দেখার মত। চারিদিকে প্রকৃতি তার অপার সৈন্দর্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে। ১৯৩৬ সালে পার্কটি গড়ে তোলা হয় ৯৯ একর জমির উপর।
নায়েগ্রাতে আরো আছে বাটারফ্লাই কনজারভেটরী পার্ক। এখানে প্রায় ৪৫ প্রজাতির প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। অসাধারণ এক মোহনীয় দৃশ্য এটি। বাগানের ভিতর ঘুরে ঘুরে খুব কাছে থেকে এই দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
আলবার্টায় অবস্থিত ব্যানাফ পার্ক। রাজকীয় রকি মাউন্টেনের মাঝে অবস্থান এই ন্যাশনাল পার্কটি
প্রকৃতির কোলে যদি দিন কতকের জন্য নিজেকে সপে দিয়ে অপার শান্তি খুঁজে পেতে চান তবে একবার ঘুরে আসতে পারেন আলবার্টায় অবস্থিত ব্যানাফ পার্কে। পশ্চিমের রাজকীয় রকি মাউন্টেনের মাঝে অবস্থান এই ন্যাশনাল পার্কটি। একবার গেলে আর ফিরে আসতে মন চাইবে না এমনি রূপ এই পার্কের। কানাডার সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো এই পার্কেই অবস্থিত।
টরকুয়েসী সবুজ হ্রদ, বরফ আচ্ছাদিত সুবিশাল পাহাড়ের চূড়া, তুষার স্রোত সবই পাবেন এই অত্যাশ্চর্য পার্কটিতে যেখানে আপনি সহজেই প্রবেশ করতে পারবেন। এখানকার লুইসি হ্রদটি দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে একটি। এর সবুজ পানিতে চারপাশে অবস্থিত পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে থাকে স্ফটিক সচ্ছতায়। পর্যটকগণ হ্রদের চারপাশে ঘুড়ে বেড়াতে পারেন। পার্কটির একেবারে দক্ষিনে ক্ষুদ্র ব্যানাফ শহরটি অবস্থিত যেখানে থাকা খাওয়াসহ সবরকমের সুবিধা রয়েছে পর্যটকদের জন্য।
টরন্টো শহরের একটি প্রধান প্রতীক এর দৃষ্টিনন্দন ও চমকপ্রদ স্থাপত্য নিদর্শন সি এন টাওয়ার। গত ২৬ জুন ছিল এই টাওয়ারটির ৪০তম জন্মবার্ষিকী। লেক অন্টারিওর পাড় ঘিরে গড়ে উঠা কানাডার সর্ববৃহৎ শহর টরন্টোর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই টাওয়ারটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যে কয়টি টাওয়ার রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। সি এন টাওয়ারের উচ্চতা ৫৫৩ মিটার। এই টাওয়ারে রয়েছে একটি ঘূর্ণ্যমান রেস্টুরেন্ট। এতে বসে অতিথি বা পর্যটকগণ খাবার গ্রহণের পাশাপাশি শহরের নজরকারা দৃশ্য অবলোকন করতে পারেন। টাওয়ারে আরো আছে একটি গ্লাস ফ্লোর। এই ফ্লোরে দাড়িয়ে কাচের ভিতর দিয়ে সরাসরি নিচের দৃশ্য দেখা যায়। রাতের বেলা টাওয়ারটি বৈদ্যুতিক আলোর মাধ্যমে নানা রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তোলা হয় যা দূরদুরান্ত থেকেও দেখা যায়।
কুইবেকের রাজধানী কুইবেক সিটি। কানাডার কুইবেক সিটি সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে। কথাটি এরকম যে, আপনি যদি এই শহরটি ঘুরে ঘুরে দেখেন তবে আপনাকে প্যারিস না দেখলেও চলবে। অবশ্য কুইবেক সিটিতে আইফেল টাওয়ার নেই। কিন্তু এর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো আপনাকে মুহূর্তের মধ্যেই নিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। সেন্ট লরেন্স নদীর পার ঘিরে অবস্থিত কুইবেক সিটি কানাডার একটি খুবই জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা।
জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক এই শহরটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর অংশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কানাডার দশম বৃহত্তম শহর এটি এবং উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে পুরাতন শহরগুলোর একটি। লা সিটাডেলি (La Citadelle) দুর্গ এই শহরের ল্যান্ডমার্ক স্থাপনা। এখানে দেখার মত আরো রয়েছে কুইবেক পার্লামেন্ট ভবন। ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস অব কুইবেক আরেকটি দর্শনীয় স্থান কুইবেক সিটির।
পর্যটকদের জন্য কুইবেক সিটিতে আরো আকর্ষন হলো এর উইন্টার কার্নিভাল, সামার মিউজিক ফেস্টিভাল এবং সেন্ট জিয়েন ব্যাপ্টিস্ট ডে, মন্টোমরেন্সি জলপ্রপাত ও মন্ট সেইন্ট এ্যানি স্কি রিজোর্ট।
কানাডার রাজধানী অটোয়াতে পার্লামেন্ট ভবন একটি দর্শনীয় স্থান। নদীর (অটোয়া রিভার) তীরে অবস্থিত এই ভবনটি পার্লামেন্ট হিল নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ১৯ শতকের স্থাপত্য কলার একটি অসাধারণ নিদর্শন এই পালামেন্ট হিল। প্রতি বছর বহুসংখ্যক পর্যটক আসেন এই ভবনটি পরিদর্শনে। ওইকিপিডিয়ার হিসাবে দেখা যায় প্রতি বছর এখানে প্রায় তিরিশ লক্ষ পর্যটক আসেন। এখানে প্রতিদিন ফ্রি ট্যুর গাইড পাওয়া যায়। তবে ‘ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ’ পলিসির ভিত্তিতে এই ফ্রি ট্যুর গাইডের সেবা পাওয়া যায়। পার্লামেন্টে ভবনের পিস টাওয়ারে উঠার সুযোগও পাওয়া যেতে পারে যেখান থেকে অটোয়া সিটির মনোরম দৃশ্যাবলী অবলোকন করা যায়। পার্লামেন্ট ভবনকে কেন্দ্র করে প্রায় সারা বছরই কোন না কোন উৎসব লেগে থাকে। তবে সামারের অনুষ্ঠানগুলো হয় আরো জমকালো। ১লা জুলাই কানাডা ডে উপলক্ষে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে এখানে। ঐ দিন জমকালো ফায়ারওয়ার্কস সহ আরো নানা ধরণের উৎসব পালিত হয়। সামারে প্রতিদিন বিকেলে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক সাউন্ড এন্ড লাইট শো অনুষ্ঠিত হয় মিউজিক সহ। এগুলো ফ্রি অনুষ্ঠান।
আফ্রিকান লায়ন সাফারী টরন্টোর নিকটবর্তী হ্যামিলটনে অবস্থিত। টরন্টো থেকে এর দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের মত। এই লায়ন সাফারীতে আছে শতাধিক প্রজাতির প্রায় এক হাজার প্রাণী। পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্ত থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে এই প্রাণীসমূহ। এই সাফারীর বিশেষত্ব হলো, এখানে খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাণীগুলো ঘুরে বেড়ায়। আর পর্যটকগণ নির্ধারিত রাস্তা দিয়ে নিজের গাড়ি অথবা সাফারীর ট্যুর বাসে করে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এই সময় মনে হবে আপনি বন বাদাড়ে পশু-পক্ষীর সঙ্গেই বাস করছেন। প্রাণীগুলো গাড়ির খুব কাছে চলে আসে। মাঝে মধ্যে গাড়ির ভিতরেও চলে আসতে চায়।
লায়ন সাফারীতে নিজের গাড়ি নিয়ে ঢুকতে হলে গাড়ির কন্ডিশন ভাল হতে হবে। বিশেষ করে গাড়ির জানালার কাঁচ যদি ভাঙ্গা থাকে বা ফাটলও যদি থাকে তবে সেই গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। সাফারীতে ট্যুর বাসে ঘোরাই উত্তম।
সাফারী পার্কটি একটি পারিবারিক ব্যবসা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। কানাডার সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গর্ডন ডেবেনহাম প্রথমে উদ্যোগ নিয়ে এই পার্কটি স্থাপন করেন।
-সূত্র : অনলাইন