কানাডায় পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
কানাডায় প্রতি বছর আনুমানিক ১০ লাখ পুরুষ বড় ধরণের বিষন্নতায় ভোগেন। আর এদের মধ্যে অনেকেই বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। কানাডায় প্রতিবছর আত্মহত্যা করে প্রায় চার হাজার মানুষ যার মধ্যে ৭৫% হলো পুরুষ। অথচ বিষয়টি তেমনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না।
বেশ কিছু গবেষণায় আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষ ও তরুণ গুরুতর মনো-সামাজিক জটিলতায় ভুগছেন। মানসিক স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যা সম্পর্কিত অনেক উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান থেকে এটি স্পষ্ট।
একইভাবে সমীক্ষাগুলোতে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, কানাডায় পুরুষেরা নারীদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি মাদকাসক্ত ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল। এসব নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল, গাঁজা ও আফিমজাতীয় দ্রব্য। সমস্যার তীব্রতার ওপর আলোকপাত করে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার অপঘাত মৃত্যুসম্পর্কিত পরিষেবা বিভাগ জানায়, ২০২০ সালে ওই প্রদেশে অতিরিক্ত মাদক গ্রহণের কারণে মৃত্যুবরণকারীদের ৮১ শতাংশই ছিল পুরুষ।
তথ্য-প্রমাণে প্রতীয়মান হয়, আত্মহত্যা ও নেশাদ্রব্যে আসক্তির পেছনে মূল কারণ হিসাবে কাজ করে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া, বেকারত্ব ও নৈঃসঙ্গ। এঙ্গুস-রেইড-এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী কানাডীয় পুরুষদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের মধ্যেই যথেষ্ট পরিমাণে একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার বোধ বিদ্যমান, যা একই বয়সের নারীদের মধ্যে আছে ৫৩ শতাংশের।
উদ্বেগের বিষয় হলো, পুরুষেরা মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণের দিক থেকেও পিছিয়ে আছে। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষের চেয়ে নারীদের এ ধরনের পরিষেবার সহায়তা গ্রহণের হার তিনগুণ বেশি।
এটা স্পষ্ট যে, কানাডার পুরুষ জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশের সবাই মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে ভালো নেই, কিন্তু এই সমস্যাটি আইনপ্রণেতা ও নীতি-নির্ধারকরা প্রায়শ উপেক্ষা করে গেছেন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এটি স্পষ্ট যে, কানাডায় জরুরীভিত্তিতে একটি জাতীয় পার্লামেন্টারি তদন্ত চালানো দরকার। পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ও আমাদের সমাজের সার্বিক কল্যাণের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার ভিত্তিতেই এটা করা দরকার।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ড. মেয়ারস বলেন, ‘বিষন্নতা চেপে রাখার পরিণতি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। বিপুল সংখ্যক পুরুষ এতে ভুগছে।’
উদ্বেগের বিষয় হলো পুরুষেরা সরকারের মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধার খুব সামান্যই ব্যবহার করে। দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ হলো পুরুষ। ভিন্নভাবে বললে, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় পুরুষ ও বালক বিনা চিকিৎসায় নিরবে ভুগছে, যা ব্যক্তি, পরিবার ও সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো শরীরের অসুখের মতোই মনেরও যে অসুখ হতে পারে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অনেকে আবার মনে করেন, মানসিক রোগ মানেই পাগল; সাইকিয়াট্রিস্ট মানেই পাগলের ডাক্তার। ব্যাপারটা আদৌ সে রকম নয়। মানসিক রোগ মানেই পাগল নয় এবং মানসিক রোগের ডাক্তার মানেই পাগলের ডাক্তার নন।
প্রতিদিনই আমরা কোনো না সময় নানা কারণে উদ্বিগ্ন হই, বিষণ্নতা অনুভব করি, মানসিক চাপ অনুভব করি এবং এগুলো সবই মানসিক সমস্যার লক্ষণ। আবার এটাও মনে রাখতে হবে এগুলো অনুভব করা মানেই কেউ মানসিক রোগী নন। এগুলো কিছুটা সময়ের জন্য হলেও একজনের মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। তাই প্রতিদিনই যেহেতু আমাদের নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সে কারণে এগুলোর সুন্দর সমাধানও করতে হবে।
মানসিক সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমত জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। মানসিক রোগকে অবহেলা না করে বা লুকিয়ে না রেখে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।