ভাইয়লা ডেসমন্ডের প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন

ডিসেম্বর ৫, ২০১৮

 খুরশিদ আলম

কানাডায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ, কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইয়লা ডেসমন্ড এর প্রতিকৃতি ছাপা হয়েছে কানাডার দশ ডলার মূল্যের নতুন ব্যাংক নোটে। এই একই মানের পুরানো ব্যাংক নোটে কানাডার জাতির পিতা ও প্রথম প্রধানন্ত্রী স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর ছবিও আছে।

কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করার জন্য আজ দশ ডলারের ব্যাংক নোটে ডেসমন্ড এর ছবি এসেছে, সেই একই নোটে আছে ম্যাকডোনাল্ড এরও ছবি যিনি ছিলেন প্রচন্ড ভাবে বর্ণবাদী! তিনি কানাডার আদিবাসীদের দেখতে পারতেন না। ইউনিভার্সিটি অব রিজাইনা’র এ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর এবং লেখক জেমস ডাচেক লিখেছেন, “স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড দেশটি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু তার সিদ্ধান্ত ছিল আদিবাসীদের কোন স্থান নেই এই দেশটিতে। তারা ডিসপোজএবল।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস এর কলামিস্ট ইয়েন অস্টিন তার এক কলামে লিখেন, “ ম্যাকডোনাল্ড এর যারা ভক্ত তারাও জানতেন তিনি ছিলেন একজন চরম বর্ণবাদী ব্যক্তি।”

ম্যাকডোনাল্ড কানাডায় বসবাসরত চাইনীজদেরও ভাল চোখে দেখতেন না। চাইনীজদের বিরুদ্ধেও তিনি বর্ণবাদী আচরণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষ এর অভিযোগও রয়েছে! কানাডার আদিবাসীদের সন্তানদের জোর করে ধরে এনে বিতর্কিত আবাসিক স্কুলে ভর্তি করানোর পিছনেও তার ভূমিকা ছিল জোরালো। সেই স্কুলে আদিবাসী শিশুদের উপর চালানো হয়েছিল নির্মম অত্যাচার। যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়েছিল ঐ শিশুরা।

এসকল কারণে সম্প্রতি ম্যাকডোনাল্ডকে নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙচুড় করা হচ্ছে তার মূর্তি, রং মেখে দেয়া হচ্ছে মূর্তির গায়ে। গত আগস্ট মাসে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভিক্টোরিয়া সিটি কর্তৃপক্ষ ম্যাকডোনাল্ডের একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি সিটি হলের প্রবেশদ্বারের পাশ থেকে সরিয়ে ফেলেছে।

একই ব্যাংক নোটে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুই ব্যক্তির ছবি! একজন চরম বর্ণবাদী, অন্যজন চরম বর্ণবাদ বিরোধী। এ এক বিচিত্র ইতিহাস বৈকি!

বাজারে নতুন আসা দশ ডলারের নোটে নাগরিক অধিকার আদায়ের পথিকৃৎ ও বর্ণবাদ বিরোধী কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইয়লা ডেসমন্ড এর ছবি ছাড়াও আছে কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস ভবনের ছবি এবং কানাডিয়ান চার্টার অব রাইটস থেকে উদ্ধৃতি। আরো আছে কানাডার আদিবাসীদের স্বীকৃতিস্বরূপ ঈগলের একটি পালক।

কানাডীয় ব্যাংক নোটে ভাইয়লা ডেসমন্ড এর ছবি। ছবি : অনলাইন

স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড যখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন কানাডায় বর্ণবাদকে অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হতো না। বর্ণবাদকে সমর্থন করার পিছনে ম্যাকডোনাল্ড এর যুক্তি ছিল এই রকম – আমি এরকম একটি দেশ চালাচ্ছি যে দেশটি বর্ণবাদী মানুষে ভরা। এ কারণেই আমি বর্ণবাদকে সমর্থন করে গেছি।

ম্যাকডোনাল্ড পরলোকগমন করেন ১৮৯১ সালে। কিন্তু কানাডায় বর্ণবাদ সেই সময় যেমন বৈধ ছিল তেমনি বৈধ ছিল ভাইয়লা ডেসমন্ড এর আমলেও। ডেসমন্ডকে যেদিন জোর করে সিনেমা হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় আসন গ্রহণ করার জন্য সেটি ছিল ম্যাকডোনাল্ড এর মৃত্যুর ৫৫ বছর পরের ঘটনা। তিনি বৈধ টিকিট নিয়েই প্রবেশ করেছিলেন সিনেমা হলে। সময়টা ছিল ৮ নভেম্বর, ১৯৪৬ সাল। ঐ সময় তাঁকে বলা হয় তিনি যেহেতু কৃষ্ণাঙ্গ তাই তিনি মেইন ফ্লোরের কোন আসনে বসে মুভি দেখতে পারবেন না। কারণ সেটি শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত। তাঁকে বসতে হবে বেলকনির কোন আসনে। ৩২ বছর বয়সী ভাইয়লা ডেসমন্ড বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন এবং বেলকনির আসনে না গিয়ে মেইন ফ্লোরের আসনেই গিয়ে বসেন যে স্থানটি শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। থিয়েটার কর্তৃপক্ষ ডেসমন্ডকে ঐ স্থান থেকে সরে যেতে বললেও তিনি সরে যান নি। এরপর পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে এবং ঐ রাতটি তাঁকে জেলে কাটাতে হয়। পরের দিন তাঁকে আদালতে নেয়া হলে বিচারক ডেসমন্ডকে ২০ ডলার জরিমানা করেন এবং আদালতের খরচ বাবদ আরো ৬ ডলার জরিমানা করেন।

ভাইয়লা ডেসমন্ড দমার পাত্রী ছিলেন না। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করেন এবং বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু সেখানেও রায় তাঁর পক্ষে যায় নি। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর করা আপীল বাদ হয়ে যায়।

ভাইয়লা ডেসমন্ড মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৫ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫০। আর সিনেমা হলের ঘটনা ঘটেছিল তিনি যখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর।

তবে ভাইয়লা ডেসমন্ড সেদিন বর্ণবাদ আর আদালতের বিচারে কাছে পরাজিত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি জিতেছেন। তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৪৫ বছর পর তাঁকে মরণোত্তর ক্ষমা প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে নভাস্কোশিয়ার তৎকালীন লেফটেনেন্ট গভর্নর মেয়ান ফ্রান্সিস এই ঘোষণা দেন এবং ঐ একই সময় নভাস্কোশিয়ার তখনকার প্রিমিয়ার ডেরেল ডেক্সটার সরকারীভাবে ভাইয়লা ডেসমন্ড এর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।

ভাইয়লা ডেসমন্ডকে বলা হয়ে থাকে কানাডার রসা পার্কস। রসা পার্কস ছিলেন আমেরিকায় নাগরিক অধিকার রক্ষায় অগ্রদূত। তাঁর জন্ম ১৯১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী। তিনি থাকতেন আলাবামায়। ১৯৫৫ সালে তিনি একদিন যাত্রীবাহী এক বাসে উঠে গন্তব্যস্থানে যাচ্ছিলেন। ঐ সময় এক শ্বেতাঙ্গ যাত্রী সিটে বসার জন্য রসা পার্কসকে সিট ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু রসা পার্কস সিট ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ঐ সময় আমেরিকায়ও বর্ণবাদ বেশ তীব্র আকারেই ছিল। কিন্তু রসা পার্কস এর সাহসী ভূমিকায় সেদিন জেগে উঠেছিল বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন। শহর জুরে কৃষ্ণাঙ্গরা বয়কট করেছিলেন বাস সার্ভিস। বছর খানেকেরও বেশী সময় ধরে চলে এই বয়কট আন্দোলন। পরে সুপ্রিম কোর্ট যখন রায় দেন যে বাসে শ্বেতাঙ্গ যাত্রীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা অসাংবিধানিক তখন এই বয়কটের আন্দোলন থামে। এর পর রসা পার্ক আমেরিকায় নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেন।

আজ কানাডায়ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় এবং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রতীক হয়ে উঠেছেন ভাইয়লা ডেসমন্ড। জীবদ্দশায় তিনি বর্ণবাদ বিরোধী যে আন্দোলন করে গেছেন এককভাবে তার স্বীকৃতি মিলেছে প্রায় ৭২ বছর পর। ডেসমন্ড বেঁচে থাকলে আজ খুবই গর্বিত হতেন। এ কথা ইতিপূর্বে বলেছেন তার ছোট বোন ৯১ বছর বয়সী ওয়ান্ডা রবসন।

কানাডায় আজকে বর্ণবাদী আচরণকে প্রশ্রয় দেয়া হয় না। বর্ণবাদকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। এখনকার কোন প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোন মন্ত্রী বা এমপি কিংবা কোন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী প্রকাশ্যে বর্ণবাদী আচরণ করবেন একথা ভাবাই যায় না। কানাডার সিংহভাগ সাধারণ মানুষও এখন বর্ণবাদী আচরণকে পছন্দ করেন না।

আমরা আজকে এই দেশে নাগরিকত্বের সকল অধিকার ভোগ করছি। ভোট দিতে পারছি, নির্বাচনে অংশ নিতে পারছি। জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে মতামত দিতে পারছি। আর এটি সম্ভব হয়েছে ভাইয়লা ডেসমন্ডদের মত প্রতিবাদী মানুষদের ক্রমাগত আন্দোলনের কারণেই।

আজকে কানাডায় যদি অতীতের মত শ্বেতাঙ্গদের জন্য সিনেমা হলে, বাসে, ট্রেনে বা রেস্টুরেন্টে সংরক্ষিত এলাকা থাকতো তাহলে আমরা যারা নতুন ইমিগ্রেন্ট তাদের পক্ষে কি সম্ভব ছিল এই দেশটিতে থাকা অথবা এই দেশটিকে নিজেদের দেশ ভাবা?

গোটা পাশ্চাত্যভূমে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব যখন তরঙ্গায়িত হতে হতে কোন কোন দেশে জলোচ্ছাসে রূপ নিয়েছে তখন কানাডায় আমরা দেখছি ভিন্ন রূপ। জরীপে দেখা গেছে এখানে প্রতি ১০ জন কানাডিয়ানের মধ্যে ৮ জন মনে করেন দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইমিগ্রেন্টদের প্রয়োজন রয়েছে। কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। টরন্টোতে এই মতের সমর্থকদের সংখ্যা বেশী এবং যারা উচ্চ শিক্ষিত (ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী) তারাও এই মতের পক্ষে। ইমিগ্রেন্টরাও নিজেদেরকে কানাডিয়ান ভেবে অত্যন্ত গর্ব অনুভব করেন।

তবে এ কথাও সত্য, কানাডায় এখনো কিছু সংখ্যক লোক আছেন যারা বর্ণবাদী। কেউ কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ কেউ অপ্রকাশ্যে। যারা রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন তাদের বেশীরভাগই বর্ণবাদী। কানাডায় মুসলিম ইমিগ্রেন্টদেরকে সুনজরে দেখেন না এই রক্ষণশীলদের সিংহভাগ। আরো যাদেরকে সুনজরে দেখা হয় না তাদের মধ্যে আছেন – আদিবাসী, সাউথ এশিয়ান, এশিয়ান, ইহুদী এবং কৃষ্ণাঙ্গ ইমিগ্রেন্টরা। বছরদুই আগে প্রকাশিত ফোরাম রিসার্স এর এক জরীপে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। জরীপে দেখা গেছে কুইবেক প্রভিন্সে শতকরা ৫৭ জন কোন না কোন এথনিক গ্র“পকে সুনজরে দেখেন না। আলবার্টায় এই হার ৪৫%, আটলান্টিক কানাডায় ৩৯%, ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ৩৫% এবং অন্টারিও, মেনিটোবা আর সাচকাচুয়ানে ৩৩%।

গত ২৯ নভেম্বর (২০১৮) সিটিভি-তে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, ২০১৭ সালে কানাডায় ঘৃণাজনিত অপরাধ (হেইট ক্রাইম) ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। মূলত মুসলিম, ইহুদি ও কৃষ্ণাঙ্গরা এই অপরাধের লক্ষ্যবস্তু। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাবমতে ২০০৯ সালের পর থেকে এটি সর্বোচ্চ মাত্রার ঘৃণাজনিত অপরাধ।

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার প্রতিবেদন অনুযায়ী আরো দেখা যায়, মুসলমানদের লক্ষ্য করে ২০১৭ সালে ঘৃণাজনিত অপরাধ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

মুসলমানদের লক্ষ্য করে ঘৃণাজনিত অপরাধ গত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। এই সংখ্যা ১৩৯ থেকে বেড়ে ৩৪৯ হয়েছে। আর কৃষ্ণাঙ্গদের লক্ষ্য করে ঘৃণাজনিত অপরাধ ৫০ শতাংশ বেড়ে ২১৪ থেকে ৩২১ হয়েছে এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধ ২২১ থেকে বেড়ে ৩৬০ হয়েছে।

অন্যদিকে কানাডায় রক্ষণশীলদের কয়েকটি গ্রুপ সাম্প্রতিক সময়ে অধিকমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী একটি অনুভূতি বা চেতনা জাগ্রত করতে। এই রক্ষণশীলদের মধ্যে নব্য জাতিয়তাবাদের একটি চেতনা নতুনভাবে জাগ্রত হয়ে উঠেছে এখন। কানাডার মাল্টিকালচারালইম নীতিতে তারা বিশ্বাসী নন। এই গ্রুপের  মধ্য আছে La Meute  এবং Soldiers of Odin.এদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বিদ্বেষ ছড়ানো ও বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকার এন্টি ডিফেমেশন লীগ এর বার্ষিক প্রতিবেদনেও বলা হয়, হোয়াইট সুপ্রিমেসী গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে এই Soldiers of Odin এর সম্পর্ক রয়েছে।

লক্ষ্যনীয় যে, এই রক্ষনশীল শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা নানান ইস্যুতে তৎপর হয়ে উঠেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। টরন্টো, মন্ট্রিয়ল ও ভেঙ্কুভার সহ নানান স্থানে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন, র‌্যালি ও সমাবেশ করার চেষ্টা করছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন ‘যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বা আধিপত্যবাদীদের তৎপরতার পর কানাডা এ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে এ কথা ভাবার কোন কারণ নেই।’

কিন্তু তারপরও আমরা বলবো, কানাডা এখন পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ও মানবাধিকার বিষয়ের অগ্রযাত্রায় বিস্তর এগিয়ে আছে। যদি না থাকতো তবে বর্ণবাদী আচরণের কারণে সরকারীভাবে ভাইয়লা ডেসমন্ডের কাছে ক্ষমা চাওয়া হতো না। কানাডিয়ান মূদ্রায় তার ছবিও ছাপা হতো না।

আমরা আরো জানি, অতীতের বৈষম্য ও বর্ণবাদী আচরণের কারণে চাইনিজ সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছে কানাডা সরকার। ক্ষমা চাওয়া হয়েছে আবাসিক স্কুলের নামে আদিবাসী শিশুদের উপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে সে ব্যাপারেও। এরকম আরো কিছু বিষয়ে কানাডা সরকারীভাবেই ক্ষমা চেয়েছে এবং ক্ষমতাসীন সরকার প্রধানরাই সরাসরি এই ক্ষমা চেয়েছেন। এমনকি রক্ষণশীল সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও ক্ষমা চাওয়ার দৃষ্টন্ত রয়েছে। এই নজীর পৃথিবীর অন্যকোন দেশে বিরল ঘটনা।

কানাডার বর্তমান ইমিগ্রেশন মন্ত্রী আহমদ হোসেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। শৈশবে তিনি নিজেও বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন এই দেশে। তিনি বলেন, কানাডায় বর্ণবাদ এখন আর সেভাবে বিদ্যমান নেই। তবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কানাডাকে আরও অনেক কিছু করতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে আমাদেরকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

ভাইয়লা ডেসমন্ডের প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন রইল।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রবাসী কণ্ঠ