‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ’ বর্ণবাদী মনোভাবেরই নামান্তর
অক্টোবর ৮, ২০১৬
॥ খুরশিদ আলম ॥
যারা কানাডায় আসতে চান নতুন ইমিগ্রেন্ট হয়ে তাদের মধ্যে ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ’ বা কানাডিয়ান মূল্যবোধ বিরোধী কোন প্রবণতা আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ তাদের আবেদন গ্রহণ করার আগে। পরীক্ষা পাশ করলে তারা ইমিগ্রেশন পাবেন, পাশ না করলে তাদেরকে কানাডায় আসার স্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে। কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডার লীডারশীপ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া মহিলা প্রার্থী ক্যালী লিচ সম্প্রতি এজাতীয় এক বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের শীর্ষে এসেছেন। তিনি বিতর্কের মুখমুখি হয়েছেন নিজ দলের লোকদের কাছেও।
ক্যালী লিচ আদতে এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ বলতে কি বুঝাতে চাইছেন তা তিনি সুষ্পষ্ট করে কিছু বলেননি এখনো। উপরে যা বললাম, হয়তো তিনি এরকমই কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছেন। বা তিনি হয়তো এ বিষয়ে তেমন কিছু না জেনে বা না বুঝেই একটি বক্তব্য দিয়ে রাতারাতি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে চেয়েছিলেন। কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এর ‘আদর্শে’ অনুপ্রাণিত হয়ে অর্থাৎ এন্টি ইমিগ্রেন্ট সিন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে লীডারশীপ দৌড়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।
ক্যালী লিচ এর এ বক্তব্য থেকে এটা খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে তিনি মূলত সম্ভাব্য মুসলিম ইমিগ্রেন্টদেরকে উদ্দেশ্য করেই এই এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ এর বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। কারণ, বর্তমানে বৃটেনসহ গোটা ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতে মুসলিম ইমিগ্রেন্ট বা সম্ভাব্য মুসলিম ইমিগ্রেন্টদের নিয়ে চলছে এক ধরণের ফোবিয়া বা ভীতি যাকে ইসলামোফোবিয়া বলে আখ্যায়িত করছেন অনেকে। এই ফোবিয়াকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ এগিয়ে আছেন ভোটারদের পছন্দের তালিকায়। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ ধারণা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো নির্বাচনে জয়লাভ করতেও পারেন। সাম্প্রতিক জরীপ রিপোর্টগুলোতেও দেখা যাচ্ছে অপর প্রার্থী হিলারী ক্লিনটনকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে।
আধুনিক কানাডায় বা আধুনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অথবা আধুনিক ইউরোপে বর্ণবাদকে পুঁজি করে কেউ নির্বাচনে জয়ী হবেন এমনটা ভাবা উচিৎ হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে আমরা তাই-ই দেখতে পাচ্ছি। প্রকাশ্যে বর্ণবাদী বক্তব্য রাখা, বর্ণবাদকে উষ্কে দেয়া, নারীদের প্রতি অবমাননাকর ও অশোভন বক্তব্য রাখা, মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য দেয়া এ সবই করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং এর পরও তিনি জনপ্রিয়তায় হিলারী ক্লিনটনকে ছুঁয়ে ফেলছেন। সভ্য বলে বলে বিবেচিত আজকের বিশ্বেও এই অবাক কান্ড ঘটছে!
আবার ভাবি, এতে অবাক হবার কি আছে? ৯/১১ এর পর মিথ্যা অভিযোগের দোহাই দিয়ে ইরাক নামের দেশটিকে ধ্বংস করে দেয়া হলো! সেই অভিযানে নির্মমভাবে নিহত হলো লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ যাদের মধ্যে ছিল নিষ্পাপ শিশুরাও! পরে প্রমাণিত হলো গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না ঐ দেশটিতে। তথাকথিত ‘সভ্য আধুনিক বিশ্বে’ এই ঘটনা ঘটেছে! আর ঐ বর্বরতার কোন বিচার হয়নি কোন আন্তর্জাতিক আদালতে! এবং আরো অবাক হবার বিষয় হলো, এতকিছুর পরও সেই সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ পুনরায় সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সাদ্দাম হোসেন স্বৈরশাসক ছিলেন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই স্বৈরশাসকই একসময় আমেরিকার বন্ধুও ছিলেন! ঐ যে কথায় আছে না, আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রুর প্রয়োজন নেই!
কিন্তু মিথ্যা অজুহাতে একটি দেশ ধ্বংস করা, লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ হত্যা করা, নিজ দেশের অর্থনীতির বারটা বাজানোর পরও বুশ পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য। এবার যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও আমেরিকার সেই নাগরিকেরা নির্বাচিত করেন তবে সেটি আশ্চর্য হবার মতো কোন ঘটনা হবে বলে আমার কাছে মনে হয় না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এর ঐ সম্ভাবনার বিষয়টি দেখেই সম্ভবত ক্যালী লিচ কৌশলে এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ নামে একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। তিনি হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত প্রকাশ্যে বর্ণবাদী কোন মন্তব্য করছেন না বা মুসলিম বিরোধী কোন বক্তব্য রাখছেন না। কিন্তু তার টার্গেট যে মূলত মুসলিম সম্প্রদায় সে বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার কারণ নেই। স্বরণ করা যেতে পারে যে, বিগত কনজারভেটিভ সরকারের আমলে এই ক্যালী লিচই মুসলিমদের “বার্বারিক কালচারাল প্র্যাকটিস” বিষয়টিকে উস্কে দিয়েছিলেন। তিনি তখন ছিলেন স্টিফেন হারপারের কনজারভেটিভ সরকারের কেবিনেট মিনিষ্টার।
বার্বারিক কালচারাল প্র্যাকটিস বলতে তখনকার ইমিগ্রেশন মিনিস্টার ক্রিস আলেকজান্ডার এবং স্ট্যাটাস অব উইমেন মিনিস্টার ক্যালী লিচ যা বলতে চেয়েছিলেন তা হলো, মুসলিম সমাজে জোরপূর্বক মেয়েদের বিয়ে দেয়া, অনার কিলিং, পুরুষ কর্তৃক বহুবিবাহ, মেয়েদের খৎনা করানো বা লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ করা ইত্যাদি কিছু বিষয় আছে যা কানাডিয়ান সমাজে করতে দেয়া হবে না। কারণ এগুলো বর্বরোচিত আচরণ।
আপত দৃষ্টিতে সাবেক ঐ দুই মন্ত্রীর উদ্যোগটা খুবই প্রশংসনীয় ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সমস্যা ছিল অন্যত্র। তাদের ঐ উদ্যোগের পিছনে আসল উদ্দেশ্য ছিল ভোটের রাজনীতি। মূল সমস্যা সমাধানে তাদের কোন আন্তরিক ইচ্ছা ছিল না। তারা চেয়েছিলেন নির্বাচনের আগে মুসলমানদের এই ইস্যুগুলোকে সামনে এনে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা বা মুসলিমদের সম্পর্কে একট নেতিবাচক ধারণা তৈরী করে একটা বিভেদ সৃষ্টি করা যাতে ঐ সময়কার আসন্ন নির্বাচনে বেশী ভোট পেতে সুবিধা হয়। স্বরণ করা যেতে পারে যে, গত নির্বাচনের আগে মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বা ভাবমূর্তি তৈরী করার জন্য ঐ সময়কার কনজারভেটিভ সরকার আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল যার একটি ছিল নিকাব ইস্যু। এই নিকাব, মেয়েদেরকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া, অনার কিলিং, মেয়েদের খৎনা করানো এর কোনটাই কিন্তু ধর্মের অংশ নয় এবং খোদ মুসলিম সমাজেই এগুলোকে ভাল চোখে দেখা হয় না। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকার কোন কোন অঞ্চলের মানুষজন নিজেদের এই পশ্চাদপদ রীতিনীতিকে বৈধতা দেয়ার জন্য ধর্মের দোহাই দিয়ে থাকেন। তবে শর্তসাপেক্ষে পুরুষদের বহুবিবাহের বিষয়টির অনুমোদন লক্ষ্য করা যায় ইসলাম ধর্মে। এ ব্যাপারে নিচের উদ্ধৃতিটুকু দেখা যেতে পারে।
“ইসলামে বিবাহের ব্যাপারে মৌলিক বিধান হল, সামর্থ্য থাকলে পুরুষ একাধিক বিবাহ করবে। তবে হবু স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ বজায় না রাখতে পারলে একটি নিয়ে সন্তুষ্ট হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর তোমরা যদি আশংকা কর যে, পিতৃহীনাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ কর (স্বাধীন) নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে (বিবাহ কর) অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত (ক্রীত অথবা যুদ্ধবন্দিনী) দাসীকে (স্ত্রীরূপে ব্যবহার কর)। এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর নিকটবর্তী।”(নিসাঃ ৩)
পরন্তু বহু বিবাহ করা শর্তসাপেক্ষে সুন্নত ও আফযল। যেহেতু আমাদের গুরু মহানবী (সঃ) বহু বিবাহ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) সাঈদ বিন জুবাইরকে বলেছিলেন, ‘বিবাহ কর। কারণ এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যার সবার বেশি স্ত্রী।’ অথবা ‘এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সবার চেয়ে বেশি স্ত্রী ছিল। (আহমাদ, বুখারী)
উল্লেখ্য যে, একই সাথে চারটির বেশি স্ত্রী রাখা হারাম। যেমন উক্ত আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। সমান অধিকার দিয়ে রাখার ক্ষমতা না হলে একটাই বিবাহ করতে হবে। তাতেও সক্ষম না হলে রোযা পালন করে যেতে হবে। (বুখারী ৫০৬৫, মুসলিম ১৪০০ নং)” – সূত্র : http://www.hadithbd.com
এখন বহুবিবাহ প্রথাকে কি বর্বর প্রথা বলা যাবে? আমি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমরা এই বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। আমার ধারণা, ধর্মীয় বিধান হলেও আধুনিক কালে এটি যে গ্রহণযোগ্য নয় সে ব্যাপারে সম্ভবত কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না। তবে অতি ধার্মিকরা এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করবেন সেটাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে কানাডায় বহু বিবাহ প্রথার ভবিষ্যত কি হতে পারে তা ভবিষ্যতই বলে দিবে। বর্তমানে এই প্রথা কানাডায় অবৈধ যদিও ব্রিটিশ কলম্বিয়ার বাউন্টিফুল নামের একটি এলাকায় মরমন সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রথা বহু বছর ধরেই চলে আসছে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে। এদিকে কানাডাসহ পাশ্চাত্য সমাজে সমকামী বিয়েও যে বৈধ হবে এ কথা মাত্র কয়েক বছর আগেও কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। কিন্তু সেটিই এখন পাশ্চাত্যের অনেক রাষ্ট্রের আইনে বৈধ! আর এই বৈধতার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে খোদ কানাডায়ই একদল মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বহুবিবাহ প্রথাকে বৈধ করার আন্দোলন শুরু করার জন্য। এই আন্দোলনকারীদের সাধারণত একাধিক পার্টনার থাকে। এদের মধ্যে দেখা গেছে এক পুরুষের একাধিক পার্টনার আবার এক নারীরও একাধিক পার্টনার থাকে। তবে সব পার্টনারে সঙ্গে এদের বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে না। থাকে একজনের সঙ্গে। সেই দৃষ্টিকোন থেকে এরা একে বহুবিবাহ প্রথা বলতে নারাজ। কিন্তু যে কর্মটি তারা করছেন তা তো বহুবিবাহেরই নামান্তর!
সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার পর এখন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সেই মরমন সম্প্রদায় যদি আবার উঠেপড়ে লাগে যে তাদের বহুবিবাহ প্রথাকে বৈধতা দিতে হবে তবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না। কারণ তারা আগেও অনেকবার চেষ্টা করেছে এটিকে বৈধ করানোর জন্য। আর সেই আন্দোলনে মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ কেউ যদি যোগ দেন তবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিবে কে জানে?
মূূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ক্যালী লিচ কানাডায় নতুন ইমিগ্রেন্ট গ্রহণের আগে এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ এর পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেছেন। আগেই উল্লেখ করেছি, ক্যালীর টার্গেট মূলত মুসলিম সম্প্রদায় যদিও তিনি তা মুখ খুলে বলছেন না। কিন্তু ক্যালী কি জানেন যে আজ থেকে ঠিক একশত বছর আগে এই কানাডায়ই সাধারণ মহিলাদের ভোটাধিকার ছিল না? সেটাকে ক্যালী কোন ভ্যালিউজ এর সঙ্গে তুলনা করবেন? ক্যালীর পূর্বপুরুষ ইউরোপীয়রা যখন এদেশে এসে জোরজবস্তি করে আদিবাসীদের জমি দখল করে নিয়েছিল, তাদের বহু লোককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, তাদের সন্তানদের জোরপূর্বক ধরে এনে আবাসিক স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল এবং ঐ সন্তানদের অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, সেগুলো কোন ভ্যালিউজ না? আজকে এই আধুনিক যুগেও কানাডায় যখন শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠির কিছু অংশ কর্তৃক অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠি নানাভাবে বর্ণবাদের শিকার হন সেটি কি এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ নয়?
হ্যা, অপকর্ম মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও হচ্ছে। জোরপূর্বক মেয়েদের বিয়ে দেয়া, অনার কিলিং, মেয়েদের খৎনা করানো বা লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ করা, ইত্যাদি অপকর্মের মধ্যেই পড়ে। আর সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ অপকর্ম হচ্ছে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী হামলা চালানো। আমরা জানি এই জঙ্গীরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না, তারা অপর ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু নন, শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানে তারা বিশ্বাস করেন না, নির্বিচারে নিরিহ নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা করা তাদের কাছে অধর্ম নয়, নিজেরা যৌনদাসীদের নিয়ে আমোদফূর্তি করেন অপরদিকে রাস্তায় কোন মহিলাকে বোরখা ছাড়া বের হতে দেন না। এরকম আরো অনেক অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন এরা ধর্মের নাম করেই। এদের কালো হাতের থাবা থেকে আজ মুক্ত নয় কানাডাও। কানাডার মাটিতেও এদের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই কয়েক দফা হামলা চালিয়েছেন। আগামীতে আরো হতে পারে এমন আশংকা অনেকেই করছেন। ফলে এইরকম আশংকা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ক্যালী যদি এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজের কথা বলেন তবে তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু দেখা গেছে তারপরও আপত্তি হচ্ছে এবং ক্যালীর দলের লোকেরাই অনেকে আপত্তি তুলেছেন তার ঐ প্রস্তাবের বিপক্ষে। কিন্তু কেন? যারা আপত্তি তুলছেন তারা কি জঙ্গী মুক্ত কানাডা চান না?
ক্যালী কর্তৃক এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজের প্রস্তাব আসার পর তার দলেরই এক প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জেসন ক্যানী বলেন, ‘এটি প্রস্তুতিহীন এক অবস্থান। আমার মনে হয় ক্যালী এই এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজের সুক্ষ্ম তারতম্যগুলো সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেননি।”
উল্লেখ্য যে, জেসন ক্যানী সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন তার নিজের এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করে। তিনি গত জুলাই মাসেও অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ঐ সময় তিনি ঘোষণা দেন তিনি ক্যালগারি প্রভিন্সে কনজারভেটিভ পার্টির দলীয় প্রধানের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি ইমিগ্রেশন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় নিকাব এবং বার্বারিক কালচার নিয়ে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। ইমিগ্রেশন আইনেও অনেক পরিবর্তন এনেছেন যার পরিনতিতে ইমিগ্রেন্ট আসা কমে গিয়েছিল কানাডায়।
ক্যালীর দলের আরেক নেতা মেক্সিম বারনিয়ের বলেছেন ক্যালী প্রস্তাবিত এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজের বিষয়টি একটি অকার্যকর ধারণা।
টরন্টো ভিত্তিক সাংবাদিক ডেসমন্ড কোল টরন্টো স্টার পত্রিকায় তার এক লেখায় ক্যালীকে কান্ডজ্ঞানহীন মহিলা হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি লীডারশীপ প্রতিযোগিতায় জয়ী হবার আশায় দলের মধ্যে একটি বর্ণবাদী ও বিদেশীদের সম্পর্কে অহেতুক ভয় সৃষ্টি করার পায়তারা করছেন মাত্র।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই ক্যালী – যিনি মন্ত্রী থাকা কালীন ‘বার্বারিক কালচার’ এর বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ তৎপর ছিলেন, সেই তিনিই আবার সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে আবেগ ভরা কণ্ঠে তার সেই ভূমিকার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন! রাজনীতির কি আজব খেলা!
রাজনীতির এই আজব খেলায়ই আবার নেমেছেন বলে মনে হয় ক্যালী তার ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ’ এর প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ’ এর বিষয়টি আসলে কি? বা কি অর্থ হতে পারে এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ এর?
কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে বলা আছে, কানাডিয়ান ভ্যালুউজ এর অর্থ হলো – স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায় বিচারের অঙ্গীকার এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। কানাডিয়ানরা গর্বিত এই ভেবে যে, কানাডা বিশ্বে একটি শান্তিপূর্ণ জাতি। এখানে ব্যতিক্রমী একটি ফেডারেল পদ্ধতির সরকার গঠন করা হয়েছে যার ভিত্তি হলো আপোস এবং সহাবস্থান। কানাডার জনগণ গণতন্ত্রের কদর করেন। এখানকার আইনসমূহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে গড়ে উঠা। কানাডিয়ান ভ্যালুউজে আরো আছে সমতার প্রতি কদর। এখানে সকলেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে যদি তা অপরের মতের সঙ্গে নাও মিলে। এখানে আরো আছে চিন্তার স্বাধীনতা, ধর্মপালনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সামাবেশ করার স্বাধীনতা। কার জন্ম কানাডায় বা কে বিদেশ থেকে এদেশে এসে স্থায়ী হয়েছেন সেটি বড় কথা নয়, এ দেশে প্রত্যেকের সাংস্কৃতিক ভিন্নতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
যারা এই ভ্যালুউজসমূহকে অবজ্ঞা করবেন, অসম্মান করবেন বা মানবেন না, ধরে নিতে হবে যে তাদের মধ্যে এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ কাজ করছে।
তবে একটি বিষয় সত্য যে, অনেক মুসলিম দেশে উপরে উল্লেখিত ভ্যালুউজসমূহকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় না। ঐ সকল দেশে গণতন্ত্র নেই। আছে যেটা সেটা হলো রাজতন্ত্র এবং সেই রাজতন্ত্রে এখনো কিছু কিছু আইন আছে যা বর্বর যুগে প্রচলিত ছিল। সেইসব দেশে আরো আছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর খড়গ হস্ত। চিন্তার স্বাধীনতা নেই, নেই অন্যধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা। অন্যের সংস্কৃতিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। বর্ণবাদ এবং মানুষকে অবমাননা করার সংস্কৃতি প্রকাশ্যেই চালু রয়েছে অনেক মুসলিম দেশে। ন্যায় বিচার পান না অনেক মুসলিম দেশের সাধারণ মানুষ। সেটি সংরক্ষিত ধনী ও রাজ পরিবারের
সদস্যদের জন্য।
এমন সব দেশ থেকে কোন ব্যক্তি যখন ইমিগ্রেন্ট হয়ে কানাডায় আসতে চাইবেন তখন তাকে কানাডিয়ান ভ্যালুউজ সম্পর্কে অবহিত করতে চাওয়া এবং এই ভ্যালুউজ এর সঙ্গে ঐ ব্যক্তি একমত আছেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি জরুরী তাতে সন্দেহ নেই। কারণ এই ভ্যালুউজ এর প্রতি যাদের সম্মানবোধ নেই তারা এখানে এসে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেন। পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি সহ রাজনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারেন এরা।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ইতিমধ্যে যারা ঐ সকল দেশ থেকে কানাডায় এসেছেন তারা কি পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি সহ কোন রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছেন যার কারণে কানাডায় কোন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে? কানাডার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি কি আগের তুলনায় আরো খারাপ হয়ে গেছে এই ইমিগ্রেন্টদের কারণে? তাদের কারণেই কি এখানে বিভিন্ন জঙ্গী হামলাগুলো সংগঠিত হয়েছে? তারা কি কানাডাকে ঘৃণা করেন?
পাঠক, আমরা জানি গত ২৫/৩০ বছরে যারা ইমিগ্রেন্ট হয়ে কানাডায় এসেছেন তারা প্রায় সকলেই টরন্টো, ভেঙ্গুভার ও মন্ট্রিয়লে বসতি স্থাপন করেছেন। কানাডার এই তিনটি বড় শহরে ইমিগ্রেন্টরা মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। আর এদের বেশীর ভাগই এসেছেন মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, দক্ষিনপূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে। এই সকল দেশ থেকে যারা ইমিগ্রেন্ট হয়ে কানাডায় এসেছেন তাদের মধ্য মুসলিম ইমিগ্রেন্টও রয়েছেন অনেক। আদম সুমারীর তথ্য মতে বর্তমানে কানাডায় মুসলিমদের উপস্থিতি রয়েছে ৩.২%। খ্রীষ্টানদের পরেই এখন তাদের অবস্থান। টরন্টোতে মুসলিমদের সংখ্যা ৭.৭%, মন্ট্রিয়লে ৬%। এবং কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো কানাডায় গত দুই বা তিন দশকে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের কারণে অপরাধের মাত্রা গত অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিন্মপর্যায়ে নেমে গেছে! স্ট্যাটিসটিকস কানাডার সাম্প্রতিক এক জরীপে দেখা গেছে কানাডায় গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে এই প্রথম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে বিভিন্ন অপরাধের মাত্রা। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় ১৯৬২ সাল থেকে কানাডায় অপরাধের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। এর পর অপরাধের মাত্রা আবার হ্রাস পেতে শুরু করে এবং ২০১৩ সালে যে মাত্রায় নেমে আসে তা গত প্রায় অর্ধশতাব্দীতে দেখা যায়নি।
ইতিপূর্বে স্যাটিসটিক্স কানাডার তথ্যেই বলা হয়েছে টরন্টো মন্ট্রিয়ল প্রভৃতি বড় বড় শহরে সাম্প্রতিককালে আসা ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভয়ঙ্করসব অপরাধের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। এই ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে একধরণের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করেছে অপরাধ কমানোর ক্ষেত্রে। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রন লেভি বলেন, ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে আগের দিনে যে একপেশে ভাবনা ছিল, অর্থাৎ ইমিগ্রেন্টরাই সব নষ্টের মূল, সে ভাবনা থেকে আজ আমরা মুক্তি পাবার পথ খুঁজে পেয়েছি। এটি সত্যি উৎসাহব্যঞ্জক একটি ব্যাপার।
অন্যদিকে কানাডার এনভাইরনিক এর এক জরীপে দেখা যায় এই দেশটিতে বসবাসরত ৮৩% মুসলমান নিজেদেরকে কানাডিয়ান ভেবে খুবই গর্ববোধ করেন। ২০০৬ সালের তুলনায় এই গর্ববোধের অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে ১০%। কৌতুহলের বিষয় হলো, অমুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে এই অনুভূতি মুসলমানদের তুলনা কম। মাত্র ৭৩% অমুসলিম খুবই গর্ববোধ করেন নিজেদের কানাডিয়ান পরিচয় নিয়ে।
তাহলে কি আমরা বলতে পারিনা যে, অগণতান্ত্রিক দেশ এবং কিছু কিছু রাজতান্ত্রিক দেশ যেখানে এখনো বর্বর আইন প্রচলিত রয়েছে সেখান থেকে আসা ইমিগ্রেন্টরা কানাডীয় ভ্যালুউজ এর সঙ্গে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন? তারা কানাডীয় ভ্যালুউজ এর পরীক্ষা না দিয়েই একে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে নিয়েছেন? যদি তাই হয়ে তবে ক্যালী কর্তৃক ‘এন্টি কানাডিয় ভ্যালুউজ’ এর পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব কেন আসলো নতুন ইমিগ্রেন্টদের বেলায়?
গত বছর নির্বাচনের আগে বার্বারিক কালচার নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠায় ক্যালী অনুতপ্ত হয়েছেন সম্প্রতি। আগামীতে তিনি কি আবারো অনুতপ্ত হবেন এই ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ’ এর প্রস্তাব পেশ করে মাঠ গরম করায়?
কানাডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাককুলাম বলেছেন, ক্যালীর এই বিতর্কিত ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ’ এর প্রস্তাবনাটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ এবং এর মাধ্যমে তিনি ইমিগ্রেশন বিভাগের বিদ্যমান কার্যধারাকেও অবজ্ঞা করেছেন। টরন্টো স্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, ফেডারেল সরকারের ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয় কাউকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি দেয়ার আগে ভাল করে তার কাগজপত্র ও পুলিশ রিপোর্ট চেক করে নেয় নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে। তাছাড়া কানাডার নতুন জীবনে খাপ খাইয়ে নিতে তাদেরকে সহযোগিতাও করা হয়। মন্ত্রী আরো বলেন, ক্যালীর এই প্রস্তাবনা কানাডায় ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি করবে।
এদিকে ক্যালীর এই এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ প্রস্তাব আসার পর ফোরাম রিসার্স এক জরীপ চালায় যা টরন্টো স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ঐ জরীপে দেখা যায় কানাডার দুই তৃতীয়াংশ লোকই ক্যালীর প্রস্তাবের পক্ষে। আর কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকদের মধ্যে শতকরা ৮৭ জনই মনে করেন সম্ভাব্য ইমিগ্রেন্টদের পরীক্ষা হওয়া উচিৎ এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ এর ব্যাপারে।
এ বিষয়ে টরন্টো স্টার পত্রিকার পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অধিকাংশ কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন বিভাগের কার্যধারা সম্পর্কে অবহিত নন। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল রয়েছে সিকিউরিটি বিষয়ে ভাল করে তদন্ত করার জন্য। তাছাড়া যারা সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করেন তাদেরকেও একটি পরীক্ষায় পাশ করতে হয় যে পরীক্ষায় কানাডার ইতিহাস, সরকার পদ্ধতি, ভৌগলিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নানান প্রশ্ন থাকে।
আসলে ইসলামোফোবিয়াকে কাজে লাগিয়ে বিগত কনজারভেটিভ সরকার যে এন্টি ইমিগ্রেন্ট মনোভাব তৈরী করে গিয়েছে তারই ফলাফল আমরা দেখতে পাই উপরে উল্লেখিত জরীপে। আর সুযোগ বুঝে ক্যালী ঐ মনোভাবকে আরো উস্কে দিয়ে দলের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করতে চাইছেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো, অনধপঁং পরিচালিত আরেক জরীপে দেখা যাচ্ছে শতকরা ৫৪ জন কানাডিয়ান বর্তমানে দেশের জন্য একজন মহিলা নেত্রী চান। এবং সেই নেত্রীর বয়স ৫০ বা তার নীচে হলে ভাল হয়। এতে ক্যালী ও তার সমর্থকদের আনন্দিত হওয়ার কথা। কারণ, ক্যালীর বয়স বর্তমানে ৪৬। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ক্যালীর নিজের দলের সমর্থকরা আবার চান মহিলা নেত্রীর বয়স ৫০ এর বেশী হলে ভাল হয়। অর্থাৎ ক্যালী নিজ দলের লোকদের কাছেই ভোট পাবেন না দলের নেত্রী হওয়ার জন্য।
পরিশেষে বলা যায়, আদীবাসীদের কথা বাদ দিলে বর্তমানে যারা কানাডায় বাস করেন তারা সবাই ইমিগ্রেন্টই। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ বা বাদামী সবাই এ দেশটিতে এসেছন ইমিগ্রেন্ট হয়েই। কেউ আগে কেউ পরে। কেউ জোর করে প্রবেশ করেছেন কেউ সিস্টেমের মাধ্যমে প্রবেশ করেছেন। কানাডা আজকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে সেই ইমিগ্রেন্টদের প্রচেষ্টাতেই। সুতরাং কোন ব্যক্তি বা কোন একটি গোষ্ঠি বা সম্প্রদায় কর্তৃক অন্য গোষ্ঠি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিরুপ মনোভাব তৈরী করে বিভেদ সৃষ্টি করাটা কোন যুক্তিযুক্ত কাজ নয়। এই দেশটি নির্মানে সকলেরই অবদান রয়েছে।
কানাডায় টেররিষ্টদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাক এটি যেমন শ্বেতাঙ্গ কানাডীয়রা চান না তেমনি চান না বাদামী বা কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমরাও। কানাডা একটি শান্তির দেশ বলেই ইমিগ্রেন্টদের এদেশে আসা। তাছাড়া কানাডায় হোমগ্রোন টেররিস্টদের মোকাবেলায় স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীও যথেষ্ট তৎপর। এদেরকে ধরে বিচার ব্যবস্থার মুখমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনও রয়েছে কানাডায়। অন্যদিকে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরাও আইন-শৃংখলা বাহিনীকে এই টেররিষ্টদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। সুতরাং ক্যালী প্রস্তাবিত এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ এর প্রস্তাবটি যে মূলত অর্থহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত সে বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। আমরা অপেক্ষায় আছি ক্যালী কবে আবার আবেগ ভরা কণ্ঠে এই এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালুউজ এর প্রস্তাব রাখার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করবেন।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ