যৌন হয়রানি নামক ব্যাধি সমাজ থেকে দূর হোক
অক্টোবর ৮, ২০২০
নতুন এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, কানাডার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি সংখ্যায় যৌন হামলার শিকার হয়। বেশিরভাগ যৌন হামলার ঘটনা ঘটে অন্য শিক্ষার্থীদের দিক থেকেই। সম্প্রতি প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস কানাডার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সমীক্ষা চালানোর আগের এক বছরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের ১১ শতাংশই যৌন হামলার শিকার হয়েছে। সমীক্ষায় আরো বলা হয়, যারা অনাকাক্সিক্ষত যৌন আচরণের শিকার হয় তারা অসম্মানিত, অসচ্ছন্দ এবং অনিরাপদ বোধ করতে পারে। আর এধরণের আচরণ ভুক্তভোগীর সার্বিক কল্যাণ ও তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর এধরনের হামলা করেছে অন্য শিক্ষার্থীরাই। নারীদের ক্ষেত্রে যেসব হামলার ঘটনা ঘটে তার ৬০ শতাংশই করেছে অন্য শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ছেলেদের ওপরেও হামলার ৬১ শতাংশ করেছে অন্য শিক্ষার্থীরা। এদিক থেকে নারী ও পুরুষের ওপর যৌন হামলাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা সমান। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অন্য যেসব যৌন আচরণ যেমন, শিস দেয়া বা অপছন্দনীয় শারীরিক সংসর্গ ইত্যাদিরও বেশিরভাগ ঘটনা ঘটিয়েছে শিক্ষার্থীরাই। এ ধরণের পরিস্থিতিতে পড়া মেয়েদের ৮০ শতাংশ এবং ছেলেদের ৮৬ শতাংশ বলেছে, তাদের সঙ্গে এসব আচরণ করেছে তাদের সহপাঠীরাই। আর কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হামলার শিকার হওয়া মাত্র তিন শতাংশ ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে।
কানাডার মত উন্নত এক দেশে যেখানে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ও মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত উন্নত, সেখানেও এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে আসছে। ইতিপূর্বে পরিচালিত অন্য এক সমীক্ষায়ও দেখা গেছে অন্টারিও প্রভিন্সের কলেজ ও ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির শিকার। অন্টারিও’র বিগত লিবারেল সরকারের আমলে নেয়া ঐ জরীপ কার্যক্রমে অংশ নেয় ১ লক্ষ ১৬ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৬৩% শিক্ষার্থী জানায় তারা বিভিন্ন ধরণের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। জরীপে অংশগ্রহনকারী কলেজ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার। তাদের মধ্যে ৪৯.৬% শিক্ষার্থী জানায় তারাও বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, শুধু কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতেই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা তা নয়। গ্রেটার টরন্টো সহ অন্টারিও প্রভিন্সের অন্যান্য অঞ্চলের স্কুলগুলোতেও যৌন হয়রানির ঘটনা প্রায়ই ঘটে আসছে। ইতিপূর্বে টরন্টোর আইনজীবী জুলিয়ান ফেলকনার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ‘বিপজ্জনক হারে’ এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে স্কুলগুলোতে। ঐ জরিপে অংশগ্রহণকারী টরন্টোর একটি স্কুলের ১৯% ছাত্রী বলেছে তারা বিগত দুই বছরে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
অন্যদিকে সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ এর নতুন এক গবেষণায় বলা হয়, এখানকার হাই স্কুলের প্রায় অর্ধেক ছাত্রীই অশালীন যৌন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গির শিকার হয়। আর এক তৃতীয়াংশ ছাত্রী শারীরিক স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা বা চিমটি কাটার শিকার হয়।
সাধারণত কোনো নারী বা কিশোরীকে অথবা কিশোরকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা, ভয় দেখানো, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেয়া, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে পিছু নেয়া, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে গান, ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, পথরোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি কর্মকান্ড যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
আমরা মনে করি, যৌন হয়রানী করার এই স্বভাব বা মানসিকতাকে পাল্টানোর জন্য শিক্ষাব্যবস্থার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আমরা চাই মানব সমাজের সার্বিক কল্যানেই সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় যৌন হয়রানী নামক এই ব্যাধি সমাজ থেকে দূর হোক।