রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কানাডা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
ডিসেম্বর ৭, ২০১৯
২০১৭ সালের আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশটির সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধ চরমপন্থীরা মিলে এই নৃশংস মানবতা বিরোধী অভিযান চালায়। সেই অভিযানে ধর্ষণের শিকার হয় ১৯ হাজার নারী ও কিশোরী। বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় ৪৩ হাজার। জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হয় আরও অন্তত ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাকে। প্রচন্ড প্রহারে আরও কমপক্ষে ১ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গার হাড়গোড় ভাঙা হয়। এই নৃশংস অত্যাচার সইতে না পেরে সেই সময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। আর এদের সবাই আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
জাতিসংঘ এটাকে গণহত্যা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ‘নিধনযজ্ঞ।’ অতি সম্প্রতি জাতিসংঘ আদালতে মামলা করেছে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। এর কদিন পর আর্জেন্টিনায় আরও একটি মামলা দিয়েছে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা। এক সময়ের গণতন্ত্রী নেত্রী অং সান সু চিসহ শীর্ষ জেনারেলদের অভিযুক্ত করা হরা হয়েছে এই মামলায়।
উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘ আদালতে গাম্বিয়া কর্তৃক মামলা করার পর কানাডার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এক বিবৃতিতে বলেন, এই পদক্ষেপ গণহত্যার মত অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। গণহত্যার অপরাধের মধ্যে রয়েছে, নির্বিচার হত্যা, পদ্ধতিগতভাবে বৈষম্য সৃষ্টি, ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য এবং যৌন সহিংসতা। তিনি বলেন, কানাডার সরকার গাম্বিয়ার আইনী পদক্ষেপে সমর্থন জানানোর উপায় খুঁজে দেখবে।
এর আগে অন্টারিও প্রভিন্সের সাবেক প্রিমিয়ার ও ফেডারেল লিবারেল পার্টির সাবেক অন্তর্র্বতীকালীন নেতা বর রে বব রে বলেন, মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা গণহত্যার মামলার পক্ষে সমর্থন আদায়ে সহযোগিতা করার জন্য তিনি মিয়ানমার বিষয়ক কানাডার বিশেষ দূত হিসাবে ফিরে আসবেন।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিশেষ দূত হিসাবে বব রে ইতিপূর্বে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের কানাডায় আশ্রয় দিতে সুপারিশ করেছিলেন। রোহিঙ্গা সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও সুপারিশ করেছিলেন তিনি।
কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে চার দফা প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবগুলো হলো- এক. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্তীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে। দুই. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে। তিন. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজগৃহে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গণহত্যার সব আলামত থাকা সত্বেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনতে ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এবার জাতিসংঘ আদালতে মামলা করেছে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। আমরা আশা করবো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম হবে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। কানাডা সরকারও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।