বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

নভেম্বর ৩, ২০২০

গত ১০ অক্টোবর শনিবার ছিল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য: অধিক বিনিয়োগ-অবাধ প্রবাহ’।

দিবসটি উপলক্ষে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক বাণী প্রদান করেন। বাণীতে তিনি বলেন, “বর্তমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতে কেউ যেন একাকিত্ব অনুভব না করেন সে জন্য কানাডা সরকার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য বিশেষ পরিষেবা প্রদান করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সকল কানাডিয়ান যাতে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পান সে ব্যাপারেও সাহায্য করছে।”

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি মানসিক ব্যাধি ও তার চিকিৎসা বিষয়ে মানুষের অহেতুক আতঙ্ক, লজ্জা, ভয় ও সংকোচ দূর করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রতি বছর এ দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে। কারণ সুস্থ-সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে গেলে সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

করোনার প্রভাবে কানাডায়ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়েছে। ছবি: ই. টাইমস

বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য দেশের মতো কানাডায়ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়েছে অনেক। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা এখনও এই রোগে আক্রান্ত হননি তাদের মাঝেও বাড়ছে মানসিক সমস্যা। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে করোনার এই মাহামারীকালে সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অন্য যে কোন বছরের তুলনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে তার শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং পরিনতিতে করোনার কাছে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ করোনা মহামারির এই দুর্যোগকালে শরীরের পাশাপাশি মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখারও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যুক্তরাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ জানিয়েছে, করোনা মহামারির কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয়েছে। ইতালি ও স্পেনে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, করোনার কারণে কানাডিয়ানদের মধ্যেও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সিটিভি নিউজের পক্ষে ন্যানোস রিসার্স পরিচালিত এক জরিপে অংশগ্রহণকারী কানাডিয়ানদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুজনই বলেছেন করোনা শুরু হওয়ার পর তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আগের তুলনায় আরো খারাপ হয়েছে এবং মদ্যপানের পরিমাণ ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমরা জানি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি চিরকালই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এবং বাস্তবতা হচ্ছে- আমরা শরীরের সুস্থতা নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন থাকি এবং যতটা নজর রাখি মনের সুস্থতার ব্যাপারে আমরা ততটাই উদাসীন। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সুস্থ শরীর ছাড়া যেমন সুস্থ মন সম্ভব নয় তেমনি সুস্থ মন ছাড়া সুস্থ শরীর, সুস্থ জীবন কোনটাই সম্ভব নয়।

কিন্তু বাস্তবতা হলো শরীরের অসুখের মতোই মনেরও যে অসুখ হতে পারে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অনেকে আবার মনে করেন, মানসিক রোগ মানেই পাগল; সাইকিয়াট্রিস্ট মানেই পাগলের ডাক্তার। ব্যাপারটা আদৌ সে রকম নয়। মানসিক রোগ মানেই পাগল নয় এবং মানসিক রোগের ডাক্তার মানেই পাগলের ডাক্তার নন।

প্রতিদিনই আমরা কোনো না সময় নানা কারণে উদ্বিগ্ন হই, বিষণ্নতা অনুভব করি, মানসিক চাপ অনুভব করি এবং এগুলো সবই মানসিক সমস্যার লক্ষণ। আবার এটাও মনে রাখতে হবে এগুলো অনুভব করা মানেই কেউ মানসিক রোগী নন। এগুলো কিছুটা সময়ের জন্য হলেও একজনের মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। তাই প্রতিদিনই যেহেতু আমাদের নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সে কারণে এগুলোর সুন্দর সমাধানও করতে হবে।

মানসিক সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমত জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। মানসিক রোগকে অবহেলা না করে বা লুকিয়ে না রেখে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।