কানাডায় জঙ্গীবাদ ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের ভূমিকা
সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৪
॥ খুরশিদ আলম ॥
কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে জনমত সৃষ্টির জন্য কানাডার বিশিষ্ট মুসলিম চিন্তাবিদ ও “Muslims Against Terrorism” এর প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী সম্প্রতি (গত ২২ ও ২৩ আগস্ট) দুইদিনের এক অনশন কর্মসূচি পালন করেন। তার মতে, জঙ্গী সন্ত্রাসীরা ইসলাম ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে যা করছে তা কোনমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলামে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। অনশন কর্মসূচি শুরুর আগে ক্যালগারীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মৌলবাদীরা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিম যুবকদেরকে রিক্রুট করছে ইরাক ও সিরিয়ায় Islamic State of Iraq and Syria (ISIS) এর পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য।”
সম্প্রতি জঙ্গীবাদের বিষয়টি একেবারে পুরোভাগে চলে আসে সিরিয়ায় আমেরিকার এক সাংবাদিক জেমস ফোলেকে শিরচ্ছেদ করার পর। শিরচ্ছেদের দৃশ্যটি ভিডিওতে ধারণ করে জঙ্গীরা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। সাংবাদিক জেমস ফোলে দুইবছর ধরে সিরিয়ায় নিখোঁজ ছিলেন। ভিডিওতে শিরচ্ছেদকারীর কন্ঠস্বর শুনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন বলেন, আমি নিশ্চিত যে ঐ ব্যক্তিটি বৃটিশ যুবক। তার ইংরেজী উচ্চারনভঙ্গীই বলে দিচ্ছে সে বৃটেনে জন্মগ্রহনকারী একজন মুসলিম।
সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, “আমি মার্কিন সাংবাদিককে নৃশংসভাবে হত্যা করার নিন্দা জানালে অটোয়ার একটি হাই স্কুলের সাবেক এক ছাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে আমাকে বিব্রতকর ম্যাসেজ পাঠায়। তার মতে আমি জঙ্গীবাদ সম্পর্কে যা বলছি তা ভুল এবং ইরাকে ও সিরিয়ায় ISIS যা করছে তা সঠিক। অটোয়ার সাবেক এই ছাত্রটি বর্তমানে ইরাকে ISIS জঙ্গীদের পক্ষে যুদ্ধ করছে বলে দাবী করে।” উল্লেখ্য যে, ISIS হচ্ছে একটি অতি চরমপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ যারা সম্প্রতি ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর দখল করেছে এবং তাদের শত্রুদের গণহারে নিধন করতে শুরু করেছে। অন্যদিকে সিরিয়ার সংঘাত পাশ্চাত্যের চরমপন্থী যুবকদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে আর তাদের অনেকেই ISIS এ যোগ দিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার গত কিছুদিন আগে বলেন, ISIS এর মতো সংগঠনের অস্তিত্ব কানাডার নিরাপত্তার প্রতিও দীর্ঘমেয়াদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী ইতিপূর্বে কানাডার সিবিসি নিউজকে বলেন, তার বিশ্বাস, এক দশক আগের চেয়ে এখন স্থানীয় তরুণদের মৌলবাদী হয়ে উঠার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পদার্পনের আগেই কেন সম্ভাব্য জেহাদীদেরকে বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হচ্ছে না?
সিবিসিকে তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি যে, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা জানেন, কারা তরুনদেরকে জঙ্গী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করছেন, কারা বিদেশে যাচ্ছেন এবং সেখানে যুদ্ধ করছেন। তারা জঙ্গীদের প্রত্যেককে না চিনলেও অনেককে চেনেন।’’
অন্যদিকে ক্যালগরি ইসলামিক ইনফরমেশন সোসাইটি (ISIS) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বিদেশের মাটিতে যুদ্ধ করতে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আরও কিছু করার জন্য কানাডার মুসলিম সংগঠনগুলোর প্রতি আহবান জানায়।
আইআইএসসি এর প্রতিনিধি হাসিনে চেব্বানি বলেন, ‘‘যুবকদের প্রতি আমাদের বার্তা একেবারেই পরিষ্কার: কেউ যদি তোমাকে বলে যে, একটি বিমানে, রেলগাড়িতে বা কোন পাবলিক প্লেসে নিজেকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করলে তুমি বেহেশতে যাবে তাহলে সে তোমাকে বিভ্রান্ত করছে এবং এটি গোটা মুসলিম সমাজ এবং খোদ ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধেও অপরাধ।” শেখ চেব্বানি হলেন ক্যালগারির একটি ছোট্ট নামাজ ঘরের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আইআইএসসির ধর্মীয় বিষয়ক পরিচালক। ওই নামাজ ঘরটি একসময় কিছু তরুণ কানাডীয়র যাওয়া-আসার কেন্দ্র ছিলো এবং যারা নিজেদের একটি প্রার্থনা গ্রুপ তৈরি করে নেয় এবং নিজেদেরকে “মুসলমান মানেই জেহাদকারী ”এমন আদর্শের অনুসারী মনে করতে থাকে।
তাদের মধ্যে একজন ছিলো ড্যানিয়ান ক্লেয়ারমন্ট যে একটি আত্মঘাতী হামলার চেষ্টার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং জানুয়ারি মাসে সিরিয়ায় মারা যায়। এছাড়াও ছিলো পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত কানাডীয় সালমান আশরাফি যার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের নভেম্বরে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৯ জন ইরাকীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
তাদের সঙ্গে ক্যালগারির আরও একজন যুুবক ছিল যাকে সিবিসি সোমালী-কানাডিয়ান ফারাহ মোহাম্মদ সিরডন হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং যাকে গত এপ্রিলে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক ও আল-শ্যাম-এর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে। ভিডিওতে সে বলেছে, ‘‘এটি হলো কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সব নির্যাতনকারীর জন্য একটি বার্তা: সর্বশক্তিমান আল্লাহর নির্দেশে আমরা আসছি এবং আমরা তোমাদের ধ্বংস করবো।’’
পাশ্চাত্যের তরুন এই জঙ্গীদের নিয়ে আজ খোদ মুসলিম সমাজই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। আর এই তরুন জঙ্গীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী বংশদ্ভূতও রয়েছে যাদের কারণে আমরাও এই প্রবাসে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় আছি বলা চলে। কানাডায় বাংলাদেশী বংশদ্ভূত কোন তরুন ইরাক বা সিরিয়ায় জঙ্গীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এমন প্রমান নেই। কিন্তু অসমর্থিত এক সূত্রে জানা যায়, টরন্টো থেকে দুই বাংলাদেশী যুবক হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর কয়েক মাস পর তাদের খোঁজ মিলে আফগানিস্তানে। অন্যদিকে বৃটেন থেকে সিরিয়ায় জঙ্গী বিদ্রোহী গোষ্ঠি গুলোর পক্ষে লড়াই করতে যাওয়া মুসলিম তরুণদের মধ্যে কয়েকজন বৃটিশ বাংলাদেশীও রয়েছে বলে জানা গেছে বিবিসির খবরে।
বিবিসির খবরে আরো জানা যায়, বাংলাদেশী বংশদ্ভূত এক নাগরিক সিরিয়াতে নিহতও হয়েছেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণরা যাতে জঙ্গী মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে না পড়ে সেই জন্য মসজিদ ও ধর্মীয় স্কুলগুলোতে নানা ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। বৃটিশ মুসলিমরা মূলত, মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে বৃটেনের বিভিন্ন নীতেকে মুসলিম বিরোধী বলে মনে করেন এবং এই জন্য মাঝে মধ্যে বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেন। বৃটেনের কট্টর পন্থি নেতা ও ‘হেফাজতে ইসলাম’ (যা বৃটেনের একটি মুসলিম সংগঠন) সংগঠনের সদস্য মুফতি ছদরউদ্দীন জঙ্গীবাদ পছন্দ করেননা। তবে তিনি মনে করেন জঙ্গীবাদ ঠেকাতে ফিলিস্তিনের মত ইস্যুতে বৃটেনের পররাষ্ট্র নীতি বদলাতে হবে।
উল্লেখ্য যে, বৃটেনে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের একটি অংশের মধ্যে ধর্ম শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। কানাডাতেও বাড়ছে ধর্ম শিক্ষার প্রতি আগ্রহ। এখানে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের উদ্যোগে হচ্ছে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসা।
পূর্ব লন্ডনে এমনি এক স্কুল জামিয়াতুল উলামা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুর রহমান মাদানীর সঙ্গে সিরায়ায় বৃটিশ মুসলিম তরুনদের জঙ্গীপনার বিষয়ে বিবিসির এক সাংবাদিক কথা বলতে গেলে তিনি জানান, যারা যুদ্ধে গেছেন তাদের বাবা মায়ের মধ্যে উদ্বেগ থাকবে এটা স্বাভাবিক। অনেক বাবা মা তাদের উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটান আবার অনেক বাবা মা তা করেন না। কিন্তু আমাদের যারা ছাত্র, তাদের আমরা পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি যে এই পথ ভুল। মূলত যারা এই সমস্ত কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা এই কাজ গুলোর শিক্ষা পাচ্ছে ইন্টারনেট থেকে। শেখ আব্দুর রহমান আরো বলেন, আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাছাড়া যে সকল সাইটের মাধ্যেমে ছেলেরা এমন শিক্ষা পাচ্ছে, সেই সকল সাইট বন্ধ করে দিতে হবে।
বিষয়টি কানাডার মুসলমানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের তরুন প্রজন্ম যাতে জঙ্গীদের ফাঁদে পা না দেয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। আর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে পরিবার থেকেই। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদের পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হয়ে বসে থাকলে চলবে না। সেখানে তাদেরকে কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে বা তারা কি শিখছে তার উপরও নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে।
আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি কানাডার শতকরা ৬৫ ভাগ মুসলমান ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের কার্যক্রম পছন্দ করেন না। তবে শতকরা ৩৫ ভাগ মুসলমানের সমর্থন রয়েছে ইসলামী জঙ্গী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের পক্ষে। কানাডার ম্যাগডোনাল্ড লরিয়ার ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত সম্প্রতিক এক জরীপ রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা যায় যা মোটেও সুখকর নয়। বেশীরভাগ কানাডীয় মুসলিম জঙ্গীবাদের বিপক্ষে থাকলেও শতকরা ৩৫ ভাগ রয়েছে এর পক্ষে। আমরা জানি ২০০৬ সালে কানাডার অন্টারিওতে ১৮ জন মুসলমান যুবককে আটক করা হয়েছিল জঙ্গী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করার জন্য। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সাজাও হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। পরবর্তীতে কানাডার রাজধানী অটোয়াসহ অন্যান্য এলাকা থেকে আরো ৪ জনকে আটক করা হয়েছিল বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে। এর পর থেকেই মূলত উদ্বেগ শুরু হয় কানাডার অভ্যন্তরে জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে। উল্লেখ্য যে, কানাডা গত কয়েক বছর ধরেই এই হোমগ্রোন সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করে আসছে। ইতিপূর্বে কানাডার আরসিএমপি’র পক্ষ থেকেও বলা হয়, “আমরা লক্ষ্য করছি কিছু কিছু কানাডিয়ান চরমপন্থার দিকে ঝুঁকছে এবং সম্প্রতি এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আগে আমরা ভাবতাম কানাডায় সন্ত্রাসী আক্রমন হতে পারে বাইরে থেকে। এখন দেখছি, এই আক্রমনের সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে দেশের অভ্যন্তর থেকে এবং এই হোমগ্রোন সন্ত্রসীরা রফতানীও হচ্ছে দেশের বাইরে।”
বর্তমানে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা দেশের ভিতর বেশ কিছু লোকের উপর কড়া নজর রাখছেন যাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। আমরা দেখেছি, পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বহু সংখ্যক জিহাদি মুসলিম তৈরি হচ্ছে। ধারণা করা হয় পাঁচশ’র ও বেশি সংখ্যক বৃটিশ মুসলিম ইরাক ও সিরিয়ায় বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে যুদ্ধ করছে। কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন জেহাদী গ্রুপে অন্তত ১৩০ জন কানাডীয় তরুন সক্রিয় রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩০ জন রয়েছে সিরিয়ায়। ইতিমধ্যে কয়েকজন তরুন যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিহত হয়েছে।
পাশ্চাত্যের এই তরুন জঙ্গীরা মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গীদের চেয়ে অনেক ভয়ানক ও দুর্ধর্ষ। নতুন এক মিশনে নেমে পড়েছে এই জঙ্গীরা। এরা নতুন করে মধ্যযুগীয় খেলাফত শাসন কায়েম করার লক্ষে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়েছে। এদের জঙ্গী হওয়ার পিছনে যে কারণটি কাজ করছে তা হল ইসলাম সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক শিক্ষা ও চিন্তা ভাবনা।
তবে আশার কথা এই যে, বিপথগামী এই তরুনদের কেউ কেউ এখন তাদের ভুল বুঝতে পারছে। ২০০৬ সালে কানাডার অন্টারিওতে যে ১৮ জন মুসলমান তরুন ও যুবককে আটক করা হয়েছিল জঙ্গী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করার জন্য তাদেরই একজন ছিলো খালিদ নামের এক তরুন। খালিদ তার কৃতকর্মের জন্য কানাডার মুসলমান এবং সাধারণ কানাডাবাসীর প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। খালিদ এখন মনে করে যে, তার জঙ্গী হয়ে উঠার বিষয়টি সঠিক ছিলো না।
জঙ্গীবাদ, তা যে কোন ধর্ম বা বর্ণেরই হোক না কেন তা দিয়ে কখনো কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এ শুধু রক্তপাতই ঘটায়। অনেকে যুক্তি দেখান, মধ্যপ্রাচ্যে তেলক্ষেত্রসমূহ দখলের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রাসনের কারণেই ইসলামী জঙ্গীবাদের উত্থাণ ঘটেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই জঙ্গীবাদ কি সেই সমস্যার সমাধান আনতে পেরেছে?
এ কথা সত্যি যে, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের সম্পদ বা খনি দখল করার জন্য পাশ্চাত্যের দেশগুলো নানারকম ফন্দিফিকির করে আসছে। তাঁরা ইতিমধ্যে ধ্বংস করে দিয়েছে ইরাককে। কিন্তু এ জন্য কি শুধু পাশ্চাত্ত্যের দেশগুলিই দায়ী? মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুগ যুগ ধরে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন যে সব স্বৈরাচারী রাজা-বাদশা তাঁরা কি এর জন্য কোনভাবেই দায়ী নন?
কানাডায় মুসলিম তরুনদের কেউ কেউ দেশত্যাগের আগেই জঙ্গী হয়ে উঠছে অথচ তা প্রতিরোধে মুসলিম নেতৃবৃন্দ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এরকম একটি অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। তারা মনে করেন, আগে থেকেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হলে পরিস্থিতি হয়তো এতটা খারাপ হতো না।
পরিশেষে বলা যায় জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কানাডায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ করে মুলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে অতি সম্প্রতি যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে যে প্রকাশ্যে আলোচনা ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে এটিই একটি গুরুতত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আশা করা যায় তাদের এই সচেতনতা ও সোচ্চার প্রতিবাদ আগামীতেও অব্যাহত থাকলে কানাডায় জঙ্গীবাদীরা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং একসময় তা বিলীন হয়ে যাবে। তবে এর জন্য কানাডার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে। ফিরিয়ে আনতে হবে আন্তর্জাতিক মহলে কানাডার আগের সেই নিরপেক্ষতার গৌরব।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কন্ঠ