কানাডার রাজনীতিতে চরমপন্থীদের প্রতিহত করতে হবে
সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
কানাডার জাতীয় নির্বাচন। আর এই নির্বাচন প্রাক্কালে চরম রক্ষণশীল দল পিপল’স পার্টি অব কানাডার প্রধান ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের ছবি সম্বলিত একটি বিলবোর্ড এর বক্তব্য নিয়ে কদিন আগে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সুদৃশ্য ঐ বিলবোর্ডে লেখা ছিল `Say NO to mass immigration’ ভেঙ্গুভার, ক্যালগারী, হ্যলিফেক্স, টরন্টো এবং রিজাইনাতে এই বিলবোর্ড সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আমরা জানি কানাডায় ইমিগ্রেন্ট ও দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ডানপন্থী একাধিক রক্ষণশীল গ্রুপ সর্বদাই সক্রিয়। আর এদের জাতীয় নেতা হিসাবে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছেন ম্যাক্সিম বার্নিয়ার।
হিংসাত্মক অপরাধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং একজন অধ্যাপক বারবারা পেরির বক্তব্য অনুযায়ী, সারা কানাডায় কমপক্ষে ১৩০টি চরম ডানপন্থী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, এই সংখ্যাটি ২০১৫ সালের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, বেশিরভাগ গ্রুপই তৈরি হয়েছে বিশেষ কোনও ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধ আদর্শের ভেতর থেকে। আর এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো মুসলিম ও ইহুদি বিরোধী গ্রুপ। এছাড়া অভিবাসী, আদিবাসী, নারী, এলজিবিটি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা থেকেও বিভিন্ন চরমপন্থী গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল ছিলো কানাডায় ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ একটি বছর। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা সম্প্রতি যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে এই তথ্য জানা যাচ্ছে।
আমরা দেখেছি, এডমন্টনে কয়েকমাস আগে অভিবাসন বিরোধী এক প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে এবং সেটা প্রকাশ্য এক সমাবেশের মাধ্যমে। পোস্টারে অভিবাসন বিরোধী নানা বক্তব্য লিখে উক্ত সমাবেশে এই প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হয়।
অভিবাসন বিরোধীরা রঙ্গীন পোস্টারে ‘Keep Canada Canadian’, ‘No Migration’ এই জাতীয় স্লোগান লিখে সমাবেশ করেন। সমাবেশে তাদের আচরণ ছিল অত্যন্ত আগ্রাসী। যারা তাদের এই অভিবাসন বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে আসেন তাদের উপর তারা শারীরিক হামলা চালান। শুরুতে উপস্থিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে পরে আরো অধিক সংখ্যক পুলিশ ডাকতে হয়েছিল ঘটনাস্থলে।
কানাডার এন্টি-হেইট নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ইভান ব্যালগর্ড বলেন বলেন, ওইসব লোকেরা ক্রমশই বেশি করে মূল ধারার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িত হচ্ছে। “আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাস্তব জীবনে সক্রিয় সাংগঠনিক ধারায় তারা টরন্টোর মেয়র পদে ফেইথ গোল্ডির প্রচারণায় সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসছে। তারা ম্যাক্সিম বার্নিয়েরের পার্টির ব্যাপারেও উৎসাহী।”
এখানে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, কানাডীয়দের প্রায় অর্ধেকই স্বীকার করেন যে, তাদের মধ্যে বর্ণবাদী চিন্তা-চেতনা আছে এবং আগের বছরগুলোর তুলনায় এখন তারা সেইসব চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ইপসস-এর এক নতুন জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। ইপসস-এর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সিন সিম্পসন বলেন, “আমরা দেখেছি যে, (প্রায়) ৫০ শতাংশ মানুষ বর্ণবাদী চিন্তা-ভাবনা থাকার বিষয়টিকে যথার্থ এবং প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক বলে মানেন।”
ইপসস-এর জরিপে এটাও প্রকাশ পেয়েছে যে, কানাডায় বর্ণবাদের ছকবাঁধা ধারণা এখনও বলবৎ এবং ফুটন্ত অবস্থার কাছাকাছি রয়েছে। এই ছকবাঁধা ধারণা একটু বেশি জোরালো কুইবেকে।
আমরা জানি কানাডা মূলত গড়ে উঠেছে ইমিগ্রেন্টদের অবদানের কারণেই। আর মূলত এই দেশটিতে আদিবাসী ছাড়া বাদ বাকি সবাই ইমিগ্রেন্ট। কেউ আগে এসেছেন আর কেউ পরে এসেছেন। সকলেরই সমান অবদান রয়েছে এই দেশটি গড়ার পিছনে। এ সত্য গোপন করার কোন উপায় নেই। আজকে ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের মত রাজনীতিকরা এই সত্য গোপন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প হওয়ার দিবা স্বপ্ন দেখছেন। আমাদের সকলেরই উচিৎ এই বিদ্বেষী মনোভাপাপন্ন চরমপন্থী রক্ষণশীলদের প্রতিহত করা। নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে তারা যাতে কোন রকম বিভেদ সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকেও সকলেরই নজর রাখতে হবে।