উদ্বেগজনক বাড়ি ভাড়া পরিস্থিতি

আগস্ট ১৮, ২০১৯

কানাডার প্রায় সব শহরেই ন্যূনতম মজুরিতে যারা কাজ করেন তাদের পক্ষে এক বা দুই বেডরুমের একটি এ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া নেয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যতে এসে ঠেকেছে। কারণ, ভাড়া দেওয়ার যোগ্যতা নেই তাদের। অন্টারিও-ভিত্তিক এক থিঙ্কট্যাঙ্কের নতুন রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার বেতন-কাঠামো সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত এবং মর্টগেজ অ্যান্ড হাউজিং করপোরেশনের ভাড়া সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে কানাডার সেন্টার ফর পলিসি অলটারনেটিভস কানাডাজুড়ে তিন ডজন বৃহত্তম শহরের প্রায় ৮০০ মহল্লায় অনুসন্ধান চালায় এটা দেখার জন্য যে, ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করে কারও পক্ষে আবাসনসুবিধা খুঁজে পাওয়া কতটা সহজ।

অনুসন্ধানের ফলাফল একেবারেই উদ্বেগজনক। অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কানাডার এক-পঞ্চমাংশ পরিবারকে তাদের আয়ের অর্ধেক অর্থই বাড়ি ভাড়ার পিছনে খরচ করতে হয়”। কানাডায় বাড়ির উচ্চমূল্যের কারণে এখন মোটের উপর দেশটির এক-তৃতীয়াংশ পরিবারকেই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতে হচ্ছে।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অলাভজনক হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় প্রতি পাঁচ জনে একজন অর্থাৎ ১৮ শতাংশ মানুষ তাদের উপার্জনের অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশি অর্থ বাড়ি ভাড়া ও ইউটিলিটির পেছনে ব্যয় করেন। অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এটা হলো ব্যয়ের এমন এক ‘সঙ্কটের পর্যায়’ যখন মানুষ ‘গৃহহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি’র মধ্যে পড়ে।

সন্দেহ নেই এই নিম্ম আয়ের মানুষদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশই অভিবাসী। এদিকে গ্রেটার টরন্টো অঞ্চলের ইউনাইটেড ওয়ে একটি উদ্বেগজনক রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে এমন বক্তব্য উঠে এসেছে যে, “আপনি কতদিন ধরে কানাডায় আছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়- বাস্তবতা এই যে, এখানে আপনার জন্ম না হয়ে থাকলে তার অর্থ হলো আপনি কম উপার্জন করবেন।” রিপোর্টে দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিবাসীরা আসলে আরও দরিদ্র হয়েছে এবং যারা ২০ বছরে বেশি সময় ধরে কানাডায় আছে তেমন “দীর্ঘদিনের অভিবাসীদের গড় আয় গত ৩৫ বছরেও বাড়েনি।” ফলে দেখা গেছে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসীদের মধ্যেও চাকরীর আয় থেকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

টরন্টোর অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থিত ক্রিসেন্ট টাউন, ডেন্টোনিয়া পার্ক, টিসডেল প্লেস প্রভৃতি আবাসিক ভবনগুলোতে গত ১০/১২ বছরে এপার্টমেন্ট ভাড়া প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। এই ভবনগুলোতে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী থাকেন। অথচ এই এলাকায় বসবাসকারী অভিবাসীদের আয় দ্বিগুন তো দূরের কথা ১০/১২ পার্সেন্টও বৃদ্ধি পায়নি।

সেন্টার ফর পলিসি অলটারনেটিভস এর অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যাকডোনাল্ড সিবিসি নিউজের সঙ্গে এ সাক্ষাৎকারে বলেন, কানাডার আবাসন বাজার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি বাড়ির মালিকদের ওপর আলোকপাত করার কথা, কিন্তু মোট পরিবারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হলেন ভাড়াটে আর তারা সাধ্যের মধ্যে বাড়ি খুঁজে পেতে চরম দুর্ভোগ পোহান। এটি তাদের জন্য বড় রকমের একটি বোঝা। তিনি আরো বলেন, “ভাড়াটেদের অনেকেই বিশেষ করে যারা প্রায় ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করেন, যাদের আয় নির্দিষ্ট এবং এক ব্যক্তির আয়ে চলে এমন পরিবারের ভাড়াটেরা যেখানেই খোঁজ করুন না কেন সাধ্যের মধ্যে বা মোটামুটি বাসযোগ্য অ্যাপার্টমেন্ট পাবেন না।”

সিবিসি’র আরো জানায়, “টরন্টোতে একজন শ্রমিককে এক রুমের বাড়ির জন্য সপ্তাহে ৭৯ ঘণ্টা এবং দুই রুমের বাড়ির জন্য ৯৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।”

আমরা জানি কানাডায় একজন কর্মজীবী সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করেন। এটা স্ট্যান্ডার্ড টাইম। সেখানে ৭৯ ঘন্টা বা ৯৬ ঘন্টা কাজ করা যে কোন বিচারেই চরম অমানবিক এক পরিস্থিতি।

সামনে কানাডার জাতীয় নির্বাচন। আমরা মনে করি বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণের দাবী রাখে। কারণ একটি দেশের নাগরিকদের বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ আবাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং এটি তাদের মৌলিক মানবাধিকার। সুতরাং একে উপেক্ষা করা যাবে না। নিম্ম আয়ের মানুষদেরকে এই অমানবিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে হবে।