নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কানাডার রাজনৈতিক দলগুলো তেমন বৈচিত্র্য ধারণ করে না

জুলাই 13, 2020

০৯ জুন, ২০২০ : কানাডার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা যেসব নির্বাচকদের নেতৃত্ব দিতে চান তাদের মতো বৈচিত্র্য অর্জনের জন্য দলগুলোকে অনেক কিছু করতে হবে।

কানাডার পুরো ইতিহাসজুড়ে প্রায় সব সময়ই লোকেরা প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় দলগুলোর নেতা নির্বাচন করেছে শ্বেতাঙ্গদের মধ্য থেকে। এমনকি অতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও। অবশ্য, রাজনৈতিক দলের নেতারা বৃহত্তর জনগণের মধ্যকার লৈঙ্গিক ও জাতিগত বৈচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন- আর তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর খুব একটা ভালো হয়েছে এমনটাও মনে হয় না। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন এরিক গ্রেনিয়ার।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, কোনও দলের নেতৃত্ব অর্জন করা খুব সহজ নয়। যারা তা অর্জন করতে পারেন, সচরাচর কিছু বিষয় তাদের অনুকূলে কাজ করে।

তারা তাদের দলের ভেতরে ও বাইরে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। তাদের নিজস্ব টিম থাকে যা তাদের নেতৃত্বের প্রয়াসে সমর্থন যোগায়। তারা দলের সদস্যদেরকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, দলের পক্ষে কথা বলার জন্য তারাই সবচেয়ে সেরা Ñ এবং তাদের তথাকথিত “নির্বাচনযোগ্যতা” আছে।

সমীক্ষায় অবশ্য দেখা যায়, পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা নারী ও অশ্বেতাঙ্গদেরকে প্রাথমিকভাবে রাজনীতিতে জড়িত হতেই বাধা দেয়। তাদের দলের নেতৃত্বে উঠে আসার অর্থ হলো সাধারণভাবে ওইসব বাঁধা ও সংস্কার পেরিয়ে আসা যেটা শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের মোকাবিলা করতে হয় না।

২০১৩ সালের মত সাম্প্রতিক সময়েও সাতটি প্রাদেশিক বা টেরিটোরির প্রিমিয়ার ছিলেন নারী। আর এখন মাত্র একজন। (নাথান দেনেত্তি/ কানাডিয়ান প্রেস)

গত অল্প কয়েক দশকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল পাওয়া যায় – কিন্তু এটি মোটেও প্রীতিকর নয়।  ১৯৯০ সাল থেকে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় দলগুলোর ১৭৫ জন নেতা হয় নিজের পার্টিকে কোনও নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে আসন জয় করিয়েছেন অথবা {পরাজিত হলে  (যেটি একটি প্রতিযোগিতা বা খেলা যাতে পরাজিত পক্ষ সফল হতে ব্যর্থ হন)} আগের নির্বাচনে আসন পেয়েছে এমন দলকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে গেছেন। (এই বিশ্লেষণে টেরিটোরির নেতা, অন্তর্বর্তীকালীন নেতা কিংবা কোনও নির্বাচনে আসন পায়নি এমন দলের নেতাদের বাইরে রাখা হয়েছে)।

২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কানাডার মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী এবং প্রায় ২৭ শতাংশ হলো হয় আদিবাসী অথবা অশ্বেতাঙ্গ।

১৯৯০-এর দশকে নারীরা অধিক সংখ্যায় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে বিজয়ী হতে শুরু করেন। ১৯৯১ সালে রিটা জনস্টন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সোশ্যাল ক্রেডিট পার্টির নেতা নির্বাচিত হন এবং কানাডার প্রথম নারী প্রিমিয়ার হন তিনি। ১৯৯৩ সালে কেন্দ্রীয় প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বজয়ী কিম ক্যাম্পবেল কানাডার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে যেসব দলের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে সেগুলোর ২৩ শতাংশ নেতৃত্ব অর্জন করে নিয়েছেন নারীরা। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে ওই শতকরা হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে এবং ২০০০ সাল পরবর্তী দশকের শুরুতে সে হার আরও কমে যায়। অবশ্য, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে দলীয় নেতৃত্বের এক-তৃতীয়াংশের সামান্য বেশি অংশে বিজয়ী হন নারীরা।

২০১০-এর দশকে এসে ওই হিস্যাও হ্রাস পায়। ২০১৫ সাল থেকে নতুন নির্বাচিত পার্টি নেতৃত্বের প্রতি ১০ জনে মাত্র একজন থাকছেন নারী।

১৯৯০-এর দশকে কোনও অশ্বেতাঙ্গ কানাডীয় কোনও প্রধান দলের নেতৃত্বে আসতে পারেননি। সেই অবস্থা পাল্টে যায় নতুন শতাব্দীর শুরুতে কিন্তু তখন থেকে একটি নির্দিষ্ট প্রবণতা যেন স্থির হয়ে থাকে: গত ২০ বছর ধরে পার্টি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় প্রায় ১৩ শতাংশ দখল করে নিচ্ছেন অশ্বেতাঙ্গরা।

সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য আছে নিউ ডেমোক্র্যাট দলে

নিউ ডেমোক্র্যাট দল তাদের নেতৃত্বে শতকরা হারের দিক থেকে লিবারেল বা দেশজুড়ে বিভিন্ন রক্ষণশীল দলের চেয়ে বেশি সংখ্যক নারী ও অশ্বেতাঙ্গকে বেছে নিয়েছে।

১৯৯০ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে এনডিপির নেতৃত্বের ১৬ শতাংশ বিজয়ী হয়েছেন অশ্বেতাঙ্গ কানাডীয়রা। এই মুহূর্তে এনডিপির কেন্দ্রীয় নেতা জগমিৎ সিং তাদেরই একজন। লিবারেল দলে ১৯৯০ সাল থেকে অশ্বেতাঙ্গরা নেতৃত্বে এসেছেন ১২ শতাংশের সামান্য বেশি। অন্যদিকে রক্ষণশীল দলে (সব পরিচয়ের) ওই সময়ের মধ্যে কোনও অশ্বেতাঙ্গ নেতৃত্বে আসতে পারেননি।

এনডিপির নেতৃত্বের লড়াইয়ে নারীরা জিতেছেন প্রায় ২৯ শতাংশ। সে তুলনায় লিবারেল ও কনজারভেটিভ দলে নারীরা পেয়েছেন প্রায় ১৫ শতাংশ নেতৃত্ব।

এনডিপি নেতা জগমিৎ সিং (ডানে) এবং মিনেটোবা প্রদেশের এনডিপির নেতা ওয়াব কিনিউ ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নেন। নিউ ডেমোক্র্যাট দল তাদের প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে লিবারেল ও কনজারভেটিভ দলের চেয়ে বেশি সংখ্যক নারী ও অশ্বেতাঙ্গকে নির্বাচিত করেছে। (এন্ড্রু ভগান / কানাডিয়ান প্রেস)

বর্তমানে বৈচিত্র্য আগের চেয়ে বেশি নয়

রাজনৈতিক দলগুলোর এখনকার নেতৃত্বের পালায় কোনওভাবেই বৈচিত্র্য নেই। প্রতিটি প্রাদেশিক সরকারের নেতৃত্বে আছেন একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ। (নর্থ-ওয়েস্ট টেরিটোরির প্রিমিয়ার ক্যারোলিন কোচরেন একজন মেটিস এবং নুনাভুর প্রিমিয়ার জো স্যাভিকাটাক একজন ইনুইট)। ২০১৩ সালে ছয়টি প্রদেশ এবং একটি টেরিটোরির প্রিমিয়ার ছিলেন নারী।

বর্তমানে পার্টি নেতৃত্বের (সামান্য ক’জন অন্তর্বর্তীকালীন নেতাসহ) প্রায় ১১ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ কানাডীয়। আর এদের মধ্যে দুজন ক্ষমতা থেকে দুই কদম দূরে অবস্থান করছেন।

ম্যানিটোবার এনডিপি নেতা ওয়াব কিনিউ এবং কুইবেকের নতুন লিবারেল দলের নেতা ডোমিনিক অ্যাঙলেড নিজ নিজ আইনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা দখল করেছেন। অন্টারিওর এনডিপি নেতা এন্ড্রু হরওয়াথ এবং আলবার্টার এনডিপি নেতা র‌্যাচেল নটলে তাদের প্রদেশে বিরোধী দলীয় নেতা (যেমনটা অ্যাঙলেড)। কুইবেক সলিডেয়ারের মেনন মেসি, নিউফাউন্ডল্যান্ডের এলিসন কোফিন এবং ল্যাব্রাডরের এনডিপি ও গ্রিন পার্টির কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তীকালীন নেতা জো এন রবার্টস বর্তমানে নিজ নিজ প্রদেশের আইনসভায় তৃতীয় বা তার চেয়ে নিচের অবস্থানে থেকে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দলীয় নেতৃত্বে অশ্বেতাঙ্গ ও নারীদের প্রতিনিধিত্ব হাউজ অব কমন্সে এমপিদের মধ্যে যতটা আছে তার চেয়েও কম। কমন্স সভায় অশ্বেতাঙ্গ ও নারীর প্রতিনিধিত্ব জাতীয় গড়ের চেয়ে নিচে। এমপিদের মাত্র ২৯ শতাংশ নারী এবং ১৮ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ।

এই মুহূর্তে দেশজুড়ে নেতৃত্বের যে প্রতিযোগিতা চলছে তাতে কিছুটা বৈচিত্র্য আছে। গ্রিন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে গ্রিন পার্টির নেতৃত্বের জন্য প্রতিদ্ব›দ্বী যে দু’জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাদের দু’জনই নারী। কেন্দ্রীয় কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের জন্য প্রতিদ্ব›দ্বী চারজনের মধ্যে একজন হলেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী লেসলিন লুইস।

তবে এই প্রতিযোগিতার সামনের সারিতে অবস্থানকারী (তহবিল সংগ্রহ, জনমত ও এনডোর্সমেন্টের ভিত্তিতে) হলেন দুজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ – পিটার ম্যাককে ও এরিন ও’টুলে।

আমাদের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র এই ভূখন্ডে বসবাসরত জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে কি না সেই প্রশ্ন সরিয়ে রেখেও বলা যায় যে, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে অধিকতর বৈচিত্র্য দেখতে চাওয়ার আরও অনেক ভালো কারণ রয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, অধিকতর বৈচিত্র্য রয়েছে এমন নেতৃত্বাধীন ব্যবসায় ভালো ফল পাওয়া যায়। সম্ভবত কানাডার রাজনীতির ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলা যেতে পারে।