হিজাব পরার অধিকারের পুনঃনিশ্চয়তা দিলো কুইবেকের শীর্ষ আদালত
নভেম্বর ৪, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : হিজাব পরে আদালতে আসায় একজন বিচারক মন্ট্রিয়লের এক নারীকে ভর্ৎসনা করেন, এতে ওই নারীর মৌলিক অধিকার লংঘিত হয়েছে। গত ৩ অক্টোবর বুধবার কুইবেকের আপিল আদালত এই রায় দিয়েছেন। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।
আদালত সর্বসম্মতভাবে রায় দিয়েছেন যে, ধর্মীয় পোশাক পরা কোনও নাগরিককে ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
২০১৫ সালে আদালত কক্ষের একটি ঘটনায় ওই রায় দেন আপিল আদালত। ওই সময় কুইবেকের একটি আদালতের বিচারক রানিয়া এল-আলাওল নামের একজন মুসলিম মহিলাকে বলেন যে, তার গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে মামলা চালাতে হলে তাকে মাথার ওড়না খুলে ফেলতে হবে। এল-আলাওল হিজাব খুলতে অস্বীকার করলে বিচারক তার মামলা মুলতবি করে দেন।
আপিল আদালতের তিন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল রায়ে বলেছেন, “কুইবেক আদালতের বিচার কক্ষ এবং কুইবেকের অন্য সব আদালত কক্ষ সারা কানাডার সব আদালত কক্ষের মতই ধর্মীয় নিরপেক্ষতার স্থানÑ এটাকে কোনও পক্ষই চ্যালেঞ্জ করতে পারে না।”
রায়ে বলা হয়, “তার মানে অবশ্যই এই নয় যে, নিছক আন্তরিকতার সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটানোর কারণে বিচারকরা কোনও বিচারপ্রার্থীকে আদালতকক্ষে ঢুকতে বাধা দেওয়ার যুক্তি হিসাবেই কেবল আদালতের নিরপেক্ষতার ওপর আস্থা রাখতে পারেন।”
এমন সময়ে এই রায় এলো যখন কুইবেকের নবনির্বাচিত কোয়ালিশন এভেনির সরকার বিচারক, শিক্ষক, কৌসুলি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ধর্মীয় প্রতীক পরা নিষিদ্ধ করে নতুন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে।
উপরে বর্ণিত মামলার ক্ষেত্রে বিচারক এলিয়ানা মারেঙ্গো বাদী এল-আলাওলকে বলেন যে আদালত হচ্ছে ধর্ম-নিরপেক্ষ স্থান এবং তিনি যথাযোগ্য পোশাক সম্পর্কিত বিধি লংঘন করেছেন।
মারেঙ্গো বলেন, “আমার মতে আপনি উপযুক্ত পোশাক পরেননি। শালীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হচ্ছে, হ্যাট ও রঙ্গিণ চশমা পরার অনুমোদন নেই। আর আমি বুঝি না মাথার স্কার্ফ কেন একই নিয়মের মধ্যে পড়বে না।”
তিনি বলেন, “সুতরাং আপনি যদি মাথায় স্কার্ফ পরেই থাকেন তাহলে আমি আপনার মামলার শুনানি গ্রহণ করবো না, যেমনটা আমি হ্যাট, রঙ্গিণ চশমা বা আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে উপযুক্ত নয় এমন কোনও পোশাক পরে কাউকে আমার সামনে আসার অনুমতি দেবো না।”
আপিল আদালত মারেঙ্গোর ওই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে ঘোষণা করে বলেছে, কুইবেকে আদালতের বিধিতে হিজাব পরা নিষিদ্ধ নয় যদি সেটা আন্তরিক ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায় এবং জনস্বার্থের কোনও ক্ষতি না করে।
রায়ে বলা হয়, “কুইবেকের বহু ধর্মমতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমাজের আলোকে উপযুক্ত ধর্মীয় পোশাক এবং কোনও বিচারপ্রার্থী বা সাক্ষী তার পোশাক নির্বাচনের মাধ্যমে আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করছে এই দুইয়ের পার্থক্য বুঝতে পারা একজন বিচারকের জন্য সাধারণভাবেই খুব সহজ কাজ।” এতে আরও বলা হয়, “কুইবেকে যে ধরণের ধর্মীয় পোশাক পরা হয় সেগুলো অগুণতি নয় এবং সাধারণভাবে সেগুলো চেনাও খুব কঠিন নয়। আদালতগুলো বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই এ ধরণের পোশাক পরা লোকেদের গ্রহণ করতে খুব সামান্যই অসুবিধা বোধ করছে।”
আপিল আদালত আরও বলেছে, আদালতের দরজায় এসে ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেমে যায় না। মারেঙ্গোর সিদ্ধান্ত এল-আলাওলের সাংবিধানিক অধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত আদালত কক্ষে ধর্মীয় পোশাক সম্পর্কিত কানাডার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাও লংঘন করেছে।
এল-আলাওলের আইনজীবীদের একজন ক্যাথারিন ম্যাকেনজি বলেন, আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালার পুনঃনিশ্চয়তা। তিনি বলেন, “আমাদের আদালতগুলো এমন স্থান হতে হবে যেখানে মানুষকে নিরপেক্ষভাবে দেখা হবে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপারটা এমন হতে হবে যাতে নিছক ধর্মীয় প্রতীক পরার কারণে কাউকে আদালতে নিজের ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়।”
২০১৬ সালে কুইবেকের সুপিরিয়র কোর্ট আলাওলের রুলিং দেওয়ার অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছিলেন। মারেঙ্গো তার প্রতি অন্যায় আচরণ করেছেন এমন রুলিং চেয়ে অনুরোধ করেছিলেন আলাওল। আপিল আদালত অবশ্য সুপিরিয়র আদালতের সিদ্ধান্ত এড়িয়ে গিয়ে মারেঙ্গোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেন।
এল-আলাওলের আরেক আইনজীবী জুলিয়াস গ্রে বুধবারের রায়কে “সন্তোষজনক” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “নীতিগতভাবে নিছক ধর্মীয় প্রতীক পরার কারণে আপনি কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার অস্বীকার করতে পারেন না।”
আলাওল এখন কুইবেকের বিচার পরিষদে তার মামলার শুনানি করতে পারবেন। তবে এ নিয়ে এখনও কোনও তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।