বর্ণবাদী মিডিয়া ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
আড়াই মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ পেলেন অন্টারিওর একটি রেস্টুরেন্ট মালিক মোহাম্মদ ফকিহে
জুন ৬, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১৪ মে ২০১৯ : মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি চেইন রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান দেওয়ার প্রকাশ্য অভিযোগ উত্থাপনের দায়ে অনলাইন মিডিয়ার একজন স্বনামখ্যাত ব্যক্তিত্বকে ওই রেস্টুরেন্টের মালিককে আড়াই মিলিয়ন ডলার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মিডিয়াটি নিয়মিতভাবেই মুসলিমবিরোধী সংবাদ প্রচার করতো। খবর দ্য কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্টটি তৈরী করেছেন মিশেলি ম্যাককুই¹ি।
অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্টের জাস্টিস জেন ফারগুসন প্যারামাউন্ট ফাইন ফুডস নামের চেইন রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ ফকিহের মানহানি করার দায়ে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে মোট ২৫ লাখ ডলার পরিশোধ করার জন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কেভিন জে জনস্টনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এই জনস্টন ‘ফ্রিডম রিপোর্ট.সিএ’ নামের একটিসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবভিত্তিক গণমাধ্যমের মালিক এবং সম্প্রতি তিনি মিসিসাগা শহরের মেয়র পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। মোহাম্মদ ফকিহকে আক্রমণ করে জনস্টন বেশ কয়েকটি ভিডিও সম্প্রচার করেন।
২০১৭ সালে ধারণ করা ভিডিওগুলোতে ফকিহর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে জ্বালাময়ী বক্তব্য উপস্থাপন করেন জনস্টন যার একটিতে তিনি ফকিহকে একজন ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাসী’ হিসাবে অভিহিত করে বলেন, ফকিহ পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার মদদপুষ্ট। তিনি এমন অভিযোগও করেন যে, ফকিহর রেস্টুরেন্টে নিজেকে “জেহাদী” বলে স্বীকার না এমন কোনও স্টাফ নেওয়া হয় না।
জাস্টিস ফারগুসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২০ জুলাই যেদিন জনস্টন ও আরেক ব্যক্তি ভিডিও ফুটেজ ধারণ করেছিলেন সেদিন মিসিসগায় প্যারামাউন্টের প্রধান স্টোরে আসলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পক্ষে ফান্ড রেইজিংয়ের একটি অনুষ্ঠান চলছিলো।
ফারগুসন বলেছেন, তারা (জনস্টন ও আরেক ব্যক্তি) ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং ফকিহ ও তার রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে বেশ কিছু মানহানিকর বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, ফকিহ ২০০৭ সালে প্যারামাউন্টের প্রতিষ্ঠা করেন এবং এপর্যন্ত সারা কানাডায় প্রায় ৪০টি স্থানে এর শাখা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
ফুটেজে অন্তত আটটি ঘটনার ভিডিওচিত্র রয়েছে যাতে ফারগুসনের বিবেচনায় মানহানিকর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ফারগুসন লিখেছেন, ভিডিওতে প্যারামাউন্টের দোকানের সামনের অংশ ও লোগো দেখানো হয়েছে এবং ফকিহর ছবি বিকৃত করে তার হাতে রক্ত লেগে আছে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ফারগুসন যুক্তি দেন যে, মানহানির মামলার নোটিশ পেয়ে জনস্টন তার দাবির ব্যাপারে আরও বেশি দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক ভিডিওতে ফকিহকে “শ্বেতাঙ্গদের প্রতি ঘৃণা পোষণকারী” একজন “কট্টরপন্থী মুসলমান” হিসাবে বর্ণনা করেন।
ফারগুসন তার রায়ে আরও লিখেছেন, ২০১৮ সালের এপ্রিলে একদিন ফকিহ যখন তার তেরো ও চার বছরের মধ্যে বয়সের বাচ্চাদের নিয়ে মিসিসগার একটি শপিং মলে গিয়েছিলেন তখন জনস্টন ফকিহর দিকে তেড়ে যান এবং তাতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
সেই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা জনস্টন তার নিউজ পোর্টালগুলোতে পোস্ট করেন। ওই ঘটনার পর ফকিহর ছোট বাচ্চাটার রাতের বেলা ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সে “তার বাবাকে ঘৃণাকারী ভীতিকর ব্যক্তিটি” সম্পর্কে জানতে চায়। রায়ে উল্লেখ করেন ফারগুসন।
এক বিবৃতিতে ফকিহ বলেন, ফারগুসনের রায় হলো বর্ণবাদ ও ঘৃণাসঞ্জাত বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিজয়। তিনি বলেন, কেবল মুসলিম হবার কারণে কেউ যখন আপনাকে “সন্ত্রাসী” বলে মিথ্যা অপবাদ দেয় তখন সেটাই হলো ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতি। “এই রায় স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, এধরণের ইসলামভীতিজনিত মন্তব্য ভুল এবং অবমাননাকর।” আমি নিজেকে দায়মুক্ত বোধ করছি। যারা অনলাইনে ঢালাওভাবে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ায় তাদেরকে মূল্য দিতে হবে এটা প্রমাণের ক্ষেত্রে এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”