টরন্টোতে বালিকার হিজাব ড্রামা

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮

খওলা নোমান মিডিয়াতে রীতিমত হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছিল হিজাব নিয়ে এক কল্প কাহিনী প্রচার করে। পাশে তার ছোট ভাই ও মা’কে দেখা যাচ্ছে। ছবি : ন্যাশনাল পোস্ট

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত ১২ জানুয়ারী টরন্টোর বার্চমাউন্ট ও শেপার্ড এলাকায় অবস্থিত পউলিন জনসন জুনিয়র পাবলিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী খওলা নোমান মিডিয়াতে রীতিমত হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছিল এক কল্প কাহিনী প্রচার করে। শুধু টরন্টোর স্থানীয় মিডিয়াই নয়, বিশ্ব মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল তার ঐ কল্প কাহিনী।
বালিকাটির কল্পকাহিনী ছিল এরকম : সকালে সে যখন স্কুলে যাচ্ছিল তখন একজন যুবক হঠাৎ করে তার পিছনে এসে তার জ্যাকেটের হুডি টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে এবং হিজাবের কিছু অংশ কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে। অচমকা এরকম আক্রমণের শিকার হয়ে বালিকাটি ভীত ও বিহ্বল হয়ে পড়ে। ভয় পেয়ে বালিকাটি তখন চিৎকার দিয়ে উঠেছিল। এরপর আক্রমনকারী যুকবটি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।
কিন্তুু এর কয়েক মিনিট পরেই সেই যুবকটি আবার ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয় এবং পুণরায় বালিকাটির হিজাব কাটতে শুরু করে কাঁচি দিয়ে। এই সময় বালিকাটি ঘুরে দাড়ায় এবং প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে। তখন যুবকটি হাসতে হাসতে আবারো ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
বালিকাটি এর পর স্কুলে গিয়ে তার শিক্ষকদেরকে ঘটনাটি অবহিত করে। স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। ইতিমধ্যে মিডিয়ার লোকজনও এসে হাজির হয়। রীতিমত সংবাদ সম্মেলনও শুরু হয়ে যায়। ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে বালিকাটি মাত্র ঘন্টা খানেক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিতে থাকে। এই সময় তার পাশে তার মা, নানী এবং ছোট ভাই উপস্থিত ছিল।
কানাডায় বর্ণ বিদ্বেষ, ধর্ম বিদ্বেষ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে বরদাস্ত করা হয়না। তাই এরকম একটি ঘটনাকে কেউ সহজভাবে নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ঐ দিনই ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “I want her and her family and her friends and community to know that that is not what Canada is and that is not who Canadians are.”
ঘটনার আরো নিন্দা জানান অন্টারিওর প্রিমিয়ার ক্যাথলিন উইন এবং টরন্টো সিটির মেয়র জন টরি।
পুলিশ আক্রমণকারীতে ধরতে পারেনি। ঘটনার পর আক্রমণকারীর যে বর্ণনা দেয়া হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল সে একজন এশিয়ান যুবক।
দুদিন পর জানা গেল আসল ঘটনা। বালিকার পুরো কাহিনীটাই বানানো। কেউ তাকে আক্রমণ করেনি। কেউ তার হিজাবও কাটেনি। পুলিশ তদন্ত শেষে এই বক্তব্য দেয়।
স্তম্ভিত হয়ে যান সবাই। অতটুকু বয়সের এক বালিকা এহেন কান্ড ঘটাতে পারে! আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, তার ছোট ভাইটিও আক্রমনের সাক্ষ্য দিয়েছিল। ঐ ছেলেটির বয়স দশ!
বালিকার মা নিকাবধারী। মিডিয়ার সামনে এসেছিলেন নিকাব পরে। নানী নিকাবধারী না হলেও হিজাবধারী। ফলে তারাও এই আক্রমণের কারণে ভীত হয়ে পড়েন। টরন্টোতে ইতিপূর্বে হিজাব বা নিকাবধারী মহিলাদের উপর আক্রমনের ঘটনা আরো কয়েকটি ঘটেছে।
পুলিশ যখন জানায় বালিকার উপর কোন আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি তখন সবার মনেই একটি প্রশ্ন জাগে- তাহলে বালিকাটি কেন এই ড্রামা করলো? তাও আবার ন্যাশনাল মিডিয়ার সামনে!
পুলিশ রিপোর্ট পাবার পর এই ঘটনার জন্য বালিকাটির পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা ভেবেছিলাম ঘটনাটি সত্যিই ঘটেছিল। আমরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি তাদের প্রতি যারা এই ঘটনায় যারা ব্যথিত হয়েছেন এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
বালিকাটি কেন এমন করলো তার কারণ হয়তো জানা যাবে না এই মুহুর্তে বা অদূর ভবিষ্যতেও। কিন্তু সে যে কর্মটি করে গেছে তার ফল ভোগ করতে হবে আগামীতে কেউ যদি সত্যি সত্যি হিজাব বা বোরখা পরার কারণে হামলার শিকার হন। তখন হয়তো অনেকেই হামলার কথা বিশ্বাস করতে চাইবে না বালিকা খওলা নোমান এর কল্প কাহিনীর কথা স্মরণ করে।
টরন্টো পুলিশের কর্মকর্তা মার্ক পুগাস বলেন, কিভাবে হিজাব কাটার কাহিনী বি¯তৃতি লাভ করলো আমরা জানিনা। এই ঘটনা ‘বেশ অস্বাভাবিক’। তবে আমি আশা করবো এমন কল্প কাহিনী প্রচার পাওয়ার পরও আগামীতে যারা সত্যি সত্যি হামলা বা বিদ্বেষের শিকার হবেন তারা নিরুৎসাহিত হবেন না সামনে এগিয়ে আসতে।
কানাডিয়ান মুসলিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দও আশংকা প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, আগামীতে হয়তো সত্যিকার অর্থে যারা বিদ্বেষের শিকার হবেন তারা তাদের ঘটনা প্রকাশ করবেন না এই ভেবে যে, কেউ তা বিশ্বাস করবে না। সূত্র : কানাডিয়ান প্রেস/টরস্টার নিউজ।