ক্যালগারীর ওয়েবার একাডেমী মুসলিম ছাত্রদের ধর্মপালনের অধিকারকে অবজ্ঞা করেছে
সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : আলবার্টার হিউম্যান রাইটস ট্রাইবুনালের একটি রায় বহাল রেখেছে আলবার্টার আদালত। হিউম্যান রাইটস ট্রাইবুনালের ঐ রায়ে বলা হয়েছিল ক্যালগারীর একটি প্রাইভেট স্কুল ওয়েবার একাডেমী তার দুই মুসলিম ছাত্রের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে তাদেরকে একাডেমী ভবনে নামাজ পড়তে না দেয়ায়।
একাডেমী ভবনের ভিতরে নামাজ পড়তে না দেয়ায় ২০১৫ সালে ওয়েবার একাডেমীর বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ট্রাইবুনালে নালিশ করে দুই মুসলিম ছাত্র। হিউম্যান রাইটস ট্রাইবুনাল তদন্ত শেষে দেখতে পায় ওয়েবার একাডেমী ঐ দুই মুসলিম (সুন্নী) ছাত্রের প্রতি বেআইনীভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। ট্রাইবুনাল একাডেমীকে ২৬ হাজার ডলার জরিমানা করে। খবর কানাডিয়ান প্রেসের।
ওয়েবার একাডেমীর ঐ ছাত্র দুজনের একজন গ্রেড ৯ এবং অপরজন গ্রেড ১০ এ পড়ে। ইসলাম (সুন্নী) ধর্মমতে দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক।
ওয়েবার একাডেমী কর্তৃপক্ষ হিউম্যান রাইটস ট্রাইবুনালের ঐ রায়ের বিরুদ্ধে কোর্ট অব কুইন্স বেঞ্চে আপীল করেন। আপীলে একাডেমী কর্তৃপক্ষ বলেন, তারা ঐ ছাত্রদ্বয়ের অভিভাবককে জানিয়েছিলেন যে, একাডেমীর নীতি হলো অসাম্প্রদায়িক। এখানে প্রার্থনা করার জন্য কোন জায়গা নেই।
কোর্ট অব কুইন্স বেঞ্চের বিচারক গ্লিন পয়েলম্যান তার রায়ে বলেন, আলবার্টা হিউম্যান রাইটস ট্রাইবুনাল কানাডার সুপ্রতিষ্ঠিত নীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছে। তারা কোন ভুল করেনি এবং যে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে তা যৌক্তিকভাবেই করা হয়েছে।
আদালতের এই রায়ের প্রতি ওয়েবার একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট নেইল ওয়েবার তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এটা আশা করিনি। আমরা একটি বিষয় নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম যে, এই একাডেমীতে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণ করবে একটি অসাম্প্রাদায়িক পরিবেশে এবং কোন রকম ধর্মীয় আচার আচরণের বাইরে থেকে।
কোর্ট অব কুইন্স এর এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে কি না সে বিষয়ে ওয়েবার একাডেমী এখনো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি বলে জানান নেইল ওয়েবার।
বিচারক গ্লিন পয়েলম্যান বলেন, ওয়েবার একাডেমী কিছুটা কৃতিত্ব পাবার দাবীদার। কারণ তারা বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের একাডেমীতে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষা গ্রহণের জন্য এবং একাডেমীর বিভিন্ন প্রোফাইলে ছাত্রদের পাগড়ী, দাড়ি ইত্যাদি সহ ছবি প্রকাশ করেছেন যদিও এটি তাদের প্রথাগত নীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। কিন্তু কোন এক
কারণে একাডেমী কর্তৃপক্ষ একাডেমীর ভিতরে কোন নির্ভৃত জায়গায় নামাজের সময় মুসলিম ছাত্রদের নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে আপত্তি জানান।
উল্লেখ্য যে, ২০১১ সালে একাডেমী কর্তৃপক্ষ ঐ দুই মুসলীম ছাত্র সারমাদ আমীর ও নামান সিদ্দিকীকে জানান তারা যে ভঙ্গিমায় (হাটু বাকিয়ে ও সেজদায় গিয়ে) নামাজ পড়েন তা একটি অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে খুব বেশী দৃষ্টিগোচর হয়।
একাডেমী কর্তৃপক্ষের এই অভিযোগের পরও আমীর ও সিদ্দিকী তাদের নামাজ পড়া বন্ধ করেনি তবে সেটি তারা তখন করতো গোপনে এবং সুযোগ না পেলে কখনো কখনো একাডেমী ভবনের বাইরে স্নো’র মধ্যেও।
সিদ্দিকী আলবার্টা হিউম্যান ট্রাইবুনালের সামনে দাড়িয়ে বলেছিলেন, আমি খুব লজ্জা ও অপমানিত বোধ করছি যদিও আমি আমার ধর্ম পালনের অধিকার চর্চা করছি একজন কানাডিয়ান হিসাবে, একজন মানুষ হিসাবে।
ক্যালগারীর একজন বিশিষ্ট ইমাম ও ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অব কানাডার প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ছেলে দুটি কেবলমাত্র তাদের অধিকার অনুশীলন করছে এবং তাদের এই অধিকারকে সম্মান জানানো উচিৎ। তারা কোন বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে না, কোন উপদ্রব সৃষ্টি করছে না এবং কারো কোন ক্ষতিও করছে না। তারা কেবল তাদের ধর্ম অনুশীলন করছে। এ অধিকার প্রতিটি কানাডিয়ানের আছে।
আদালতে বিষয়টি নিস্পত্তি হলেও সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী বলেন, আমি মনে করিনা ওয়েবার একাডেমীর অভ্যন্তরে নামাজ পড়া নিয়ে কর্তৃপক্ষ যে অবস্থান নিয়েছিল তার পিছনে কোন বিদ্বেষ কাজ করেছে বা কোন রকম বর্ণবাদী অবস্থান ছিল। আমি বিশ্বাস করি না তারা ছেলে দুটির নামাজ পড়া বন্ধ করতে চাইছিল কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে। একাডেমী কর্তৃপক্ষ যেটা বুঝতে পারেনি সেটা হলো, নামাজ পড়াটা ঐ ছেলে দুটির আইনগত অধিকার।
সোহরাওয়াদী আরো বলেন, ওয়েবার একাডেমীর উচিত তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনা এবং কেউ যদি (যে কোন ধর্মের) তার নিজ ধর্ম পালন করতে চায় সে ব্যাপারে অনুমতি প্রদান করা।