কানাডার সবচেয়ে সুখী মানুষ হলো টিনএজ বালক ও বয়স্কা নারীরা

5 ডিসেম্বর, 2018

৭০ বছরের বেশি বয়সী নারীরা স্বাস্থ্যবতী, সুখী এবং জীবনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। বালকেরা নিজেদের সৌভাগ্য নিয়ে নিজেরাই অভিভূত। এই দুইয়ের মাঝে যারা আছেন তাদেরকেই জীবনের লড়াইটা সবচেয়ে বেশি করতে হয়।

কুইক কুইজের প্রশ্ন: কানাডার সব বয়সের মানুষের মধ্যে এমন দুটি অংশের নাম করুন যারা সবচেয়ে বেশি সুখী।

বিস্ময়কর জবাব: নিজের জীবন নিয়ে সর্বোচ্চ সুখী বলে জানিয়েছে কানাডার সমাজের দুটি অংশ… তারা হলো টিনএজ বালক ও ৭০ বছরের বেশি বয়সের নারী। খবর ম্যাকলিন’স এর।

বয়সের বিশাল ব্যবধান এবং  অতি সামান্যই মিল রয়েছে এমন দুটি গ্রুপের মানুষ আমাদের দেশের ব্যক্তিগত সুখের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করবে এটা কল্পনা করাও অসম্ভব মনে হয়। আর তাদের সুখের মাত্রাগত ব্যবধানও খুব সামান্য। তাহলে সুখী জীবন সম্পর্কে তারা আমাদেরকে কী শোনাতে পারেন?

৭০ বছরের বেশি বয়সী নারীরা স্বাস্থ্যবতী, সুখি এবং জীবনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ । ছবি : অনলাইন

নিজে থেকে বলা জীবনের সন্তুষ্টি বা সুখের কথা সম্পর্কিত অনুশীলন হচ্ছে শিক্ষার একটি বিকাশমান ক্ষেত্র যাতে কানাডীয়রা কেমন অনুভব করে এবং কেন করে সে সম্পর্কে অন্তর্গত অনেক কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় তুলে ধরা হয়। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সাম্প্রতিক এক রিপোর্টের বিষয় ছিলো বয়স্কা নারীদের অনুভূতির বিষয়টি এবং সেটা ছিলো শিক্ষণীয় ও তথ্যবহুল। যারা ৭০ বছরের বয়সসীমা ছুঁয়েছেন তাদের অপেক্ষাকৃত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং এটা জোরালোভাবে প্রত্যেকের সুখের ভাগফল হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। আর স্ট্যাটক্যানের তথ্য অনুযায়ী যেহেতু পরিবারের আয় বয়োজ্যেষ্ঠদের জীবনের সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে খুব বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়- সেহেতু মোদ্দা কথা হলো, অর্থ দিয়ে সুখ কেনা যায় না- তবে অসুখি হওয়ার ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের ভূমিকা রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের মধ্যে সমগ্র জীবন ধরে তাদের পরিবার, বন্ধু এবং বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের বিষয়ে গভীর ও বিস্তৃত অভিজ্ঞতার সন্নিবেশ ঘটে। জীবন সম্পর্কে মানুষের ভাবনার ওপর জোরালো একাত্মতাবোধ ও সারা জীবনের অর্জনের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। আর বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে বয়োবৃদ্ধ নারীরাই এই সুফলটা বেশি গ্রহণ করেন।

আর টিনএজ বালকদের ক্ষেত্রে কী ঘটে? সত্যিই এটা আরও বড় এক রহস্য। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বালকেরাই এ দেশের জনগণের সবচেয়ে সুখী অংশ। তারা সাধারণভাবে দারুণ ভালো স্বাস্থ্য এবং বন্ধুদের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধনের বিষয়টি উপভোগ করে, তবে জীবনের নানা অর্জনের দীর্ঘ তালিকা এবং অন্যান্য সম্পর্ক যা বয়স্ক নারীদেরকে সুখী করে সেটার অভাব রয়েছে বালকদের। প্রকৃতপক্ষে, এই টিনএজ বালকদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিষয়ে যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া হলে দেখা যাবে যে আসলে তাদেরই সবচেয়ে বেশি অসুখি হওয়ার কথা, অন্ততপক্ষে যুবা মহিলাদের তুলনায়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমিরিটাস এবং সুখ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন হেলিওয়েল উল্লেখ করেছেন যে, “সম্প্রতি শিক্ষা ও চাকরির বাজরে তরুণদের তুলনায় তরুণীদের জন্য কাজের এবং ভূমিকা রাখার সুযোগ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।” কানাডায় সব ধরণের গ্রাজুয়েটদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫৮ শতাংশ। আর গত বছর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে নারীরা প্রথমবারের মতো পুরুষদের পেছনে ফেলেছে। স্ট্যাটক্যান-এর আরেক রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০০৮-এর কর্মসংস্থানের নিরিখে “বিগত মন্দাবস্থার পর থেকে পুরুষ শিক্ষার্থীরা তাদের নারী প্রতিপক্ষের তুলনায় খারাপ অবস্থায় রয়েছে।”

বিদ্যালয়ে এবং কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান অন্ধকার পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রফেসর হেলিওয়েল ধারণা করেন যে, টিনএজ বালকদের রীতিমতো সুখী থাকার পেছনে যে কারণ থাকতে পারে সেটা হলো নিজেদের নিয়ে একধরণের মোহগ্রস্ততা। তিনি বলেন, “বালকেরা যে কোনও বিষয় শান্তভাবে গ্রহণ করে এবং নিজের কর্মকুশলতার ব্যাপারে মাথা ঘামায় না।” তারপরও হেলিওয়েল উল্লেখ করেন যে, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীদের সাম্প্রতিক উত্থান একটি বৃহত্তর উদ্বেগের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত আর সেজন্যেই জীবন সম্পর্কে তাদের সন্তুষ্টির ফলাফলে নিম্মগামিতার প্রতিফলন ঘটেছে। মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা অপেক্ষাকৃত বেশি সুখি কারণ তারা নিজেদের আশা-আকাক্সক্ষাই নিম্ম স্তরে রেখেছে।

সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে অনিবার্য নিম্মগামিতার সময়ে এগিয়ে চলা কানাডীয়দের জন্য ওই মধ্যবর্তী বছরগুলোতে  টিকে থাকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিয়েছিলো হেলিওয়েলের গবেষণা। তিনি দেখিয়েছিলেন যে, সুস্বাস্থ্য এবং যথেষ্ট পরিমাণ আয় ছাড়াও নিজের সন্তুষ্টির মাত্রা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কানাডীয়দের মধ্যে কাজ করেছে তিনটি বৃহত্তম উপাদান। এগুলো হলো, পছন্দনীয় কর্মস্থল, একটি স্থিতিশীল আবাসনস্থল এবং একটি সফল বিয়ে।

আপনার ঘর, কর্মস্থল এবং সমাজের সঙ্গে একাত্মতা বোধ এভাবেই আপনাকে টিন এজ সময়ের আশীর্বাদ থেকে একেবারে বেদনাশূন্য ও সাবলীলভাবে বয়স্ক জীবনের তৃপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সম্ভব হলে সেই  সাচ্ছন্দ্য উপভোগ করুন।