এডমন্টনের মসজিদে ঘৃণাপ্রসূত মেল, প্রাদেশিক রাজনীতিতে নাড়া

মার্চ ৩, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৬ ফেব্র“য়ারি ২০১৯ : এডমন্টনের মসজিদে একটি ঘৃণাপ্রসূত মেল পাঠানো হয়েছে যা তাৎক্ষণিকভাবে রাজনীতিকদের নিন্দা কুড়িয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কীভাবে এমন একটি ঘৃণ্য কাজের নিন্দা জানানো উচিৎ সে সম্পর্কে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এডমন্টনের ৩৬ তম এভিনিউর ৭৯ তম স্ট্রিটে অবস্থিত মারকাজ-উল-ইসলাম নামের একটি মসজিদে ওই চিঠি পাঠানো হয় এবং আলবার্টা মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল (এএমপিএসি) গত বুধবার সেটি অনলাইনে প্রকাশ করে।  চিঠির নিচের দিকে ইউনাইটেড কনজারভেটিভ পার্টি (ইউসিপি) এবং ‘দি ক্ল্যান’ নামের একটি গ্র“পের লোগো ছাপানো আছে। খবর সিবিসি নিউজের।

এএমপিএসির সভাপতি ফয়সাল সুরি বলেন, তিনি মনে করেন না যে, এই চিঠির সঙ্গে ইউসিপির কোনও রকম সম্পর্ক আছে। তবে তিনি বলেন, ইউসিপির উচিত ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানানো।

এডমন্টনের এই মসজিদে একটি ঘৃণাপ্রসূত মেল পাঠানো হয়েছে যা রাজনীতিকদের নিন্দা কুড়িয়েছে। ছবি : সিটিভি

সিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি একটি অনুরোধ জানাতে চাই, আমি চাই ইউসিপি ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং এর নিন্দা জানাবে।” তিনি বলেন, “আমরা মুসলিমবিরোধী কোনও ধর্মান্ধতাপ্রসূত বক্তব্য শুনতে চাই না। এটি তো বাস্তব; এন্টি-সেমিটিজমের (ইহুদি-বিদ্বেষ) অস্তিত্ব একটি বাস্তবতা, মুসলিম-বিদ্বেষ বাস্তবেই আছে।  আমরা চাই তারা সোচ্চার হোক এবং ঘটনার নিন্দা জানাক। তাদের প্রতি আমাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু আমার মনে হয়, এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময় তাদের এগিয়ে আসার এবং এই কথা বলার যে, ‘আমরা ইসলাম-বিদ্বেষের নিন্দা জানাই।”

ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউসিপি নেতা জনসন কেনি লিখেছেন, “আমাদের আলবার্টায় ঘৃণা ও ধর্মান্ধতার কোনও স্থান নেই।” তিনি লিখেছেন, মসজিদে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তার সঙ্গে ইউসিপির কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তার ভাষায়, “বস্তুত আমি মোটেই আশ্চর্যান্বিত হবো না যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বিশাল এবং সহিষ্ণু পার্টিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে আমাদের লোগো ব্যবহার করে থাকে।”

মুখ্যমন্ত্রী র‌্যাচেল নোটলে বুধবার সকালে টুইটারে তিন বাক্যের এক বিবৃতিতে সবার আগে ওই চিঠির নিন্দা জানান। এরপর তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে একটি অপেক্ষাকৃত বড় আকারের বিবৃতি দেন যাতে তিনি ইউসিপি নেতা কেনিকে ‘ডগ হুইসেল’ পলিটিকস করার দায়ে অভিযুক্ত করেন। (ডগ হুইসেল পলিটিকস হলো সাংকেতিক বার্তা পাঠানোর রাজনীতি যে বার্তার অর্থ সাধারণ মানুষ একরমভাবে বুঝবে কিন্তু যাদের উদ্দেশে বার্তাটি দেওয়া হয় তারা প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারবে)।

মুখ্যমন্ত্রী  লিখেছেন, “এটি হলো মি. কেনির জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার এবং নিজের চরিত্রের পরীক্ষা দেওয়ার সময়। আমি এএমপিএসি এবং আলবার্টাবাসীর পাশে আছি এটা বলার জন্য যে, আর কোন মিশ্র সংকেত দেওয়া নয়, আর নয় ডগ হুইসেল পলিটিকস, বর্ণবাদী প্রার্থী ও রাজনীতির পক্ষ নেওয়া আর নয়।” তিনি আরও লিখেন, “ইসলাম-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ভাষায় নিন্দা জানানো এবং জাতিগত বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার বিস্তারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সঙ্গে দাঁড়ানোর এটাই সময়।”

ইউসিপির মনোয়নপ্রার্থী কতিপয় ব্যক্তি এর আগে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য দেওয়ার জন্য নিন্দিত হন। এদের মধ্যে সিনডি রস নামের এক নারীও রয়েছেন যিনি ক্যালগেরি-ফিস ক্রিক এলাকা থেকে মনোনয়ন চান। এই নারী ফোর্ট ম্যাকমারেতে এক বক্তৃতায় মুসলমানদেরকে ব্যাংক ডাকাতের সঙ্গে তুলনা করেন। এরপর তিনি মনোনয়ন দৌড়ে  রিচার্ড গটফ্রিড-এর কাছে হেরে যান।

ম্যাকইওয়ান ইউনিভার্সিটির মানবাধিকার, বৈচিত্র্য ও সাম্য বিষয়ক দপ্তরের প্রধান ইরফান চৌধুরী বলেন, ঘৃণাপ্রসূত কর্মকান্ডের সুনির্দিষ্টভাবে নিন্দা জানানোর মত “শক্তমত্তা” ভাষার আছে। তিনি বলেন, “আপনি যখন বর্ণবাদী কোনও ঘটনা দেখবেন তখন বলুন যে এটা বর্ণবাদী। যখন যৌনতাদুষ্ট কিছু দেখেন তখন সেটাকে যৌনতাদুষ্ট বলুন আর যখন সমকামভীতি সম্পর্কিত কিছু দেখেন তখন সেটাকে ঠিক তা-ই বলুন।”

মারকাজ-উল-ইসলামের কাছে এই চিঠি এসেছে এডমন্টনের আরেকটি মসজিদে দু’জন সন্দেহজনক ব্যক্তির প্রবেশের ঘটনার দু’সপ্তাহ পর। ওই দু’জন সন্দেহজনক ব্যক্তির মধ্যে একজনের মাথার ক্ষুদ্র টুপিতে আরবি হরফে লেখা ছিলো ‘নাস্তিক’। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছিলো।

এডমন্টন পুলিশ জানিয়েছে, তাদের হেট ক্রাইম ও ভায়োলেণ্ট এক্সট্রিমিজম ইউনিট মারকাজ-উল-ইসলামের কাছে পাঠানো ঘৃণাপ্রসূত চিঠির বিষয়ে তদন্ত করছে।

বুধবার এএমপিএসি একটি পোস্ট দিয়েছে যাতে জানানো হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই চিঠি দেওয়ার ঘটনার নিন্দা করেছেন।