সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় অভিবাসন সীমিত করার পক্ষে

আগস্ট ১৮, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক :

নতুন এক জরিপের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কানাডীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্বাস করেন, যে পরিমাণে অভিবাসী গ্রহণ করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ তা সীমিত করে আনা। জনমতের এই প্রবণতাকে অভিবাসন মন্ত্রী আহমেদ হুসেন উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। খবর দি কানডিয়ান প্রেস এর।

লেগার-এর এক সাম্প্রতিক জরিপে অংশ নেওয়া ৬৩ শতাংশ মানুষ বলেছে, সরকারের উচিৎ অভিবাসন সীমিত করে আনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নিরূপণ করা, কারণ, কানাডা সম্ভবত অভিবাসীদের সমাজে একীভূত করে নেওয়ার সক্ষমতার শেষ সীমায় পৌঁছেছে।

মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কানাডার ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদা পূরণে বাড়তি অভিবাসনের ওপরেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ।

হুসেন বলেছেন, এই প্রবণতা দেখে তিনি উদ্বিগ্ন কারণ তিনি সারাদেশের নিয়োগদাতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন এবং তারা চরম শ্রমিক সঙ্কটে আছেন। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা ব্যাপকভাবে একমত যে, অভিবাসনই শ্রমিক ও জনসংখ্যার ঘাটতি পূরণের চাবিকাঠি।

সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় অভিবাসন সীমিত করার পক্ষে। ছবি: সিবিসি

আবাসন ও অন্যান্য অবকাঠামো যথেষ্ট পরিমাণে না থাকার কারণে বিভিন্ন কমিউনিটির পক্ষে আরও বেশি অভিবাসীকে জায়গা দেওয়া সম্ভব কিনা সে বিষয়ে কানাডীয়রা হয়তো উদ্বিগ্ন তবে হুসেন বলেন, কানাডায় অভিবাসীদের আগমন কমিয়ে ফেলাটা সমস্যার কোনো সমাধান নয়।

তিনি বলেন, “এটা কোনও হার-জিতের খেলা নয়। আমার মনে হয়, অবকাঠামো, আবাসন, পরিবহন খাতে বিনিয়োগের উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি অব্যাহত রাখাই হলো সমাধান যাতে করে ওইসব বিনিয়োগ থেকে সবাই উপকৃত হতে পারে এবং যাতে করে আমরা ওইসব সামাজিক সেবাগুলোর মাধ্যমে নবাগতদের জন্য জায়গা করে দিতে পারি। এটা কানাডীয়দের জন্যও হবে উপকারী।”

কানাডিয়ান প্রেসের জন্য জরিপটি চালানো হয় সাত থেকে ১০জুন পর্যন্ত। জরিপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে চালানো কোনও সমীক্ষার পক্ষে সম্ভাব্য ভ্রান্তির সীমারেখা নিরূপন করা সম্ভব নয় কারণ এতে জনগণের কোন দৈবচয়নভিত্তিক নমুনা তৈরি করা সম্ভব নয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, অভিবাসনের পরিমাণ কমিয়ে আনার পক্ষে রয়েছেন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কনজারভেটিভ দলের ভোটাররা। এর পরেই আছেন গ্রিন পার্টির সমর্থকরা। কনজারভেটিভ দলের ৮১ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টির ৫৭ শতাংশ লোক এই মতের পক্ষে বলেছেন। অন্যদিকে, লিবারেল দলের ৪১ শতাংশ এবং এনডিপির ৪৪ শতাংশ সমর্থক অভিবাসন কমানোর পক্ষে রয়েছেন।

ভিন্নতর প্রেক্ষিতে জানতে চাওয়া হলে ৫৯ শতাংশ লিবারেল, ৫৬ শতাংশ এনডিপি এবং ৪৩ শতাংশ গ্রিন পার্টি সমর্থক বলেন, তারা সরকারের অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেন। কনজারভেটিভদের মাত্র ১৯ শতাংশ এরকম মত দিয়েছেন।

কানাডায় অভিবাসনের বিরুদ্ধে জনমত কঠোর হওয়ার এটাই প্রথম পরিসংখ্যান নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে লেগারের আরেকটি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বলেছিলো, তারা বিশ্বাস করে যে, কানাডা খুব বেশি সংখ্যক অভিবাসী ও শরণার্থীকে স্বাগত জানাচ্ছে। আর গত মাসে প্রকাশিত ইকেওএস-এর এক জরিপে দেখা যায়, ৪২ শতাংশ কানাডীয় মনে করে, এই দেশটি খুব বেশি সংখ্যক অশ্বেতাঙ্গ নবাগতকে স্বাগত জানাচ্ছে।

ডেপুটি মিনিস্টারদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির জন্য অভিবাসন বিভাগের তৈরি করা একটি বিভাগীয় উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৭ সালে অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা একটি ‘প্রান্তসীমা’ সম্পর্কে সতর্কতা জানিয়েছিলেন যা অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে জনসমর্থনকে খর্ব করতে পারে যদি জনগণের কথাকে সযতœ প্রয়াসে মোকাবিলা করা না হয়।

তথ্য পাবার অধিকার আইনের আওতায় কানাডিয়ান প্রেস ওই উপাত্তের কপি হাতে পেয়েছে। অভ্যন্তরীণ ওই তথ্যে বলা হয়, সরকার যদি অভিবাসন নিয়ে আরও কিছু করতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে মূল চাবিকাঠি হতে পারে জনমনের ব্যবস্থাপনা এবং সেটেলমেন্ট সার্ভিসের কার্যকারিতার দিকে ঘনিষ্ঠ মনোযোগ দেওয়া।

নথিতে বলা হয়, “অন্যান্য দেশে অভিবাসনের প্রতি মানুষের অপেক্ষাকৃত কঠোর মনোভাব; অর্থনীতির নি¤œগামিতা বা বিশ্বায়নের ফলে সৃষ্ট অধীনতার বোধ ইত্যাদির মতো অন্যান্য পরিস্থিতিও অভিবাসনের প্রতি মানুষের মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে।

এতে বলা হয়, “কানাডার জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো দরকার, সেইসঙ্গে এ বিষয়ে কোনও উচ্চতর বিতর্ক সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিতে হবে।”

হুসেন বলেন, জনগণের মনোভাব যাতে নব্য কানাডীয় ও শরণার্থীদের বিপক্ষে চলে না যায় সেজন্যে তার মন্ত্রণালয় নবাগতদের নিয়ে বিভিন্ন লেখা তাদের কমিউনিটির লোকেদের সঙ্গে শেয়ার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার ভাষায়, কনজারভেটিভ দলের নেতা এন্ড্রু শিয়ার অভিবাসীদের সম্পর্কে যে ভীতি ছড়ানো ও ভুল তথ্য প্রচার করছেন তার মোকাবিলা করা ক্রমশই জরুরী হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, “অভিবাসনের ওপর আমাদের একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য রয়েছে কিন্তু স্বীকৃত বিরোধী দলের নেতা এমন অবস্থান নিচ্ছেন যেটার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ভুল তথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর … আর তিনি মূলত অভিবাসন সম্পর্কে পৌরাণিক কাহিনী প্রচার করছেন এটা দেখে আমি উদ্বিগ্ন বোধ করছি।”

“একজন নেতার পক্ষে এটা একেবারেই বেমানান এবং আমাদের সামাজিক গঠনের ওপর এর একটা ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।”

তবে শিয়ার বলেছেন, অভিবাসনের ওপর জনসমর্থন লোপ পাবার জন্য প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দায়ী। তিনি ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে কুইবেকের বনপথ হয়ে সীমান্ত চৌকি এড়িয়ে ৪৩ হাজারের বেশি শরণার্থীর অবৈধভাবে কানাডায় প্রবেশের ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন, যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী শিবিরে ফেরত পাঠানো উচিৎ ছিলো।

রবিবার এক বিবৃতিতে শিয়ার বলেন, “যারা নিপীড়নের প্রকৃত শিকার তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার বা কানাডার সহায়তার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে নিপীড়িতদেরকে অপেক্ষা করানোর মধ্যে বিন্দুমাত্র ন্যায্যতা বা সহানুভূতি নেই যখন অন্যরাও ছুটে এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে এবং নিউইয়র্কের উত্তরাঞ্চলের মতো জায়গাগুলো থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে আসছে।”

তিনি তার সম্পর্কে হুসেনের মন্তব্যকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে “ট্রুডোর কর্মকা- থেকে সুবিধা নেওয়ার” দায় চাপানোর প্রয়াস হিসাবে বর্ণনা করেন এবং কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থায় ন্যায্যতা ও শৃক্সক্ষলা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার ঘোষণা করেন।