কানাডায় প্রতি তিনজনে একজন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার
ধর্ষণের সর্বোচ্চ হার বিদ্যমান শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে কানাডার নামও আছে!
মার্চ ১৫, ২০১৯
খুরশিদ আলম : যৌন হয়রানি এক গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধ বা পাপচারের যারা শিকার হন তাদের জীবনে নেমে আসে মহা বিপর্যয়। তছনছ হয়ে যায় তাদের জীবনের সব স্বপ্ন। বেঁচে থাকাটা তাদের জীবনে হয়ে উঠে কঠিন এক সংগ্রাম। ক্ষণে ক্ষণে যৌন হয়রানির স্মৃতিগুলো মনের পর্দায় ভেসে উঠে জীবনকে করে তুলে বিভীষিকাময়। বিতৃষ্ণায় ভরে উঠে মন।
যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গেলে অনেক সময় নেমে আসে আরো ভয়াবহ পরিণতি। আগুনে ভস্মিভূত হয়ে বাংলাদেশের মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরত সে কথাটাই যেন প্রমাণ করে গেল। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠলে অথবা কারো কামনা ও লালসার কাছে আত্মসমর্পণ না করলে রামদা, ছুরি অথবা বা অন্য কোন অস্ত্রের আঘাতে জীবন বিপন্ন হয়ে উঠার ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে বাংলাদেশে। এ যেন এক হরর মুভির দৃশ্য যা একের পর এক পর্দায় ভেসে উঠছে। সাধারণ মানুষ এ দৃশ্য দেখে তাৎক্ষনিকভাবে আতঙ্কিত হচ্ছেন আবার পরক্ষণেই ভুলে যাচ্ছেন। আবার নতুন কোন দৃশ্য ভেসে উঠছে, আবারো মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে, আবারো ভুলে যাচ্ছে। এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ এই যৌন হয়রানি বা নির্যাতন এবং কখনো কখনো নৃশংস হত্যাকান্ড!
বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশে এই যৌন হয়রানি ও নির্যাতন এবং কখনো কখনো নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো ঘটছে। পত্রিকার পাতা উল্টালে প্রতিদিনই এসব খবর দেখা যায়। কদাচিৎ দু একটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা ও সামালোচনার ঝড় উঠে পত্রপত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারপর দু-চারদিন বা দু-চার সপ্তাহ অথবা দু-চার মাস পর আলোচনা-সমালোচনার ঝড় স্তিমিত হয়ে আসে। এক পর্যায়ে মানুষজন তা ভুলে যায়।
মানুষ কেন ভুল যায় এই সব ঘটনা? কেন কোন সু-সংগঠিত সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে উঠে না দেশে যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের বিরুদ্ধে? আর যদিও বা দু-চারটি ঘটনায় দেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, বিচারও হয় ত্বরিত গতিতে, সাজাও হয় দৃষ্টান্তমূলক, কিন্তু তারপরও এই ব্যাধি কেন সামাজ থেকে দূর হয় না? কেন তার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে? এ প্রশ্ন আজ সকলেরই।
ভারতের দিল্লির মেয়ে জ্যোতি সিংহ পান্ডের কথা হয়তো অনেকই ভুলে যাননি। ২০১২ সালের ঘটনা। চলন্ত বাসে তার উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল একদল নরপিশাচ। প্রতিবাদ করায় তার বন্ধু অন্দ্র প্রতাপ পান্ডেকে রড দিয়ে পিটিয়ে বাস থেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এর পর গণধর্ষণ চলানো হয় জ্যাতির উপর। পরে তাকেও বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
গোটা ভারত সেদিন এই গণর্ধষণের প্রতিবাদে ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পরেছিল। মারাত্মকভাবে আহত জ্যোতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরেও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাকে আর বাঁচানো যায়নি।
জ্যোতিকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ৬ আসামী গ্রেফতার হয়। দ্রুত বিচার আইনে তাদের সাজা হয় মৃত্যুদন্ড। একজনের বয়স কম হওয়াতে মৃত্যুদন্ড থেকে বেচে যায়। বাকীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকরীও হয়। কিন্তু যৌন হয়রানী, যৌন নির্যাতন, যৌন সন্ত্রাস কি বন্ধ হয়েছে ভারতে? হয়নি। এমনকি চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা পরে আরো ঘটেছে ভারতে!
চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশেও! ভারতের ঐ ঘটনার কিছুদিন পরই ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে টাঙ্গাইলে রূপা নামের এক শিক্ষার্থীকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর ঘাড় মটকে তাকে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ পরে ঐ বাসের তিন শ্রমিককে গ্রেফতার করে।
সিংহভাগ যৌন হয়রানির ঘটনা থেকে যায় অপ্রকাশিত। ফলে বিচারের আওতায় অনা যায় না অপরাধীদের। ছবি : সিবিসি
রূপা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকা আইডিয়াল ল’ কলেজে এলএলবি শেষ পর্বে পড়াশোনা করছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। তাঁর কর্মস্থল ছিল শেরপুর জেলা।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ধর্ষণপ্রবণ দেশ হওয়ার কলঙ্কটীকাটি কপালে সেঁটে গেছে বাংলাদেশের!
আর কানাডা? শান্তির দেশে, নিরাপত্তার দেশ কানাডার কপালেও কি আছে এই কলঙ্কটীকা?
হ্যা, আছে। অবাক করার বিষয় হলেও বাস্তবতা হলো, কানাডাও মুক্ত নয় এই কলঙ্কটীকা থেকে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ হার বিদ্যমান শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে কানাডার নামও আছে! এবং উন্নত বিশ্বের দেশ কানাডা ধর্ষণের দিক থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে।
কানাডার মতো পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই অহরহ ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। আর এ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেনসহ আরো অনেক উন্নত দেশ। সম্প্রতি ওনডার্সলিস্ট নামক একটি ম্যাগাজিনে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ঐ সূত্রের বারত দিয়ে প্রিয়.কম এ প্রকাশিত হয় বিশ্বের যে ১০টি দেশে তুলনামুলক বেশি ধর্ষণ হয় তার একটি তালিকা। তালিকাটি নিম্মরূপ :-
ইথিওপিয়া : তালিকায় ১০ম স্থানে আছে ইথিওপিয়া। দেশটিতে ধর্ষণ একটি জাতীয় সমস্যা। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ৬০ শতাংশ নারীই ধর্ষণের শিকার হয়। অপহরণ করে কিংবা জোর করে বিয়ে করাকে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা : শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তাকর্মীরা নিজেরাই তাদের দেশের নাগরিকদের ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের তালিকায় নবম স্থানে আছে দেশটি। গৃহযুদ্ধের শেষ হওয়ার চার বছর পরও শ্রীলঙ্কার নারীরা তাদের দেশের নিরাপত্তাকর্মী দ্বারা ধর্ষিত হয়।
কানাডা : উন্নত বিশ্বের দেশ কানাডা ধর্ষণের দিক থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে। দেশটিতে প্রতি তিনজনে একজন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তবে মাত্র ছয় শতাংশ অভিযোগই পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়। বিট্রিশ কলম্বিয়ায় একটি জরিপে বলা হয়, প্রতি ১৭ জন নারীর মধ্যে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হন যাদের ৬২ শতাংশই শারীরিকভাবে আহত হন।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে টরন্টোর ডাউনটাউনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি : সিবিসি
ফ্রান্স : ফ্রান্সে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণকে অপরাধ বলে গণ্য করা হতো না। কিন্তু নারী অধিকার কর্মীদের আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি ফ্রান্সে একটি নতুন আইন করা হয়। ২০০২ সালের দিকে আইনটি ফ্রান্সের আদালতে অনুমোদিত হয়। তবে ধর্ষণ হওয়ার পরে অনেক নারীই সম্মানের ভয়ে পুলিশের কাছে কোনো প্রকার অভিযোগ দায়ের করে না। ফলে দেশটির পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারে না। দেশটির স্থান বর্তমানে সাত নম্বরে।
জার্মানি : ধর্ষণের কারণে এ পর্যন্ত দুই লাখ চল্লিশ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে জার্মানিতে। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজারে। যা সত্যিই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। আর ধর্ষণের তালিকায় দেশটি আছে ছয় নম্বরে।
যুক্তরাজ্য : আধুনিতা আর মানবতাবাদের উদাহরণ হিসেবে অনেকে যুক্তরাজ্যকে উপস্থাপন করলেও আলোর নীচের অন্ধকার হাতরায়না কেউ। ধর্ষণের দিক থেকে দেশটি আছে চার নম্বরে। ২০১৩ সালে যৌন নির্যাতন নিয়ে দেশটিতে একটি জরিপ চালানো হলে সেখানে দেখা যায় গড়ে দেশটিতে ৮৫ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়। আর গেলো বছর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ।
ভারত : ভারতে ধর্ষণের মাত্রা দিনে দিনে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর একটি জরিপে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে দেশেটিতে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯২৩ জন যা গেল বছরে আরো বেড়েছে। এরমধ্যে ২৪ হাজার ৪৭০ জনই তার পরিবার, প্রতিবেশির হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সুইডেন : ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের দিক থেকে সুইডেন আছে তিন নম্বরে। বিশ্বের সবচেয়ে ধর্ষণ প্রবল অঞ্চল হলো সুইডেন। প্রতিদিন ধর্ষণ নিয়ে রিপোর্ট ফাইল হয় সুইডিশ পুলিশের কাছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা : তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১২ সালে দেশেটিতে ৬৫ হাজার ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের একটি জরিপে বলা হয়েছে ২৫ শতাংশেরও বেশি আফ্রিকান নারী ধর্ষণের শিকার হয়।
যুক্তরাষ্ট্র : অন্যসবের মতো ধর্ষণেও শীর্ষ যুক্তরাষ্ট্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির ৯৯ শতাংশ পুরুষই ধর্ষক। যারা ধর্ষণের শিকার তাদের মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী এবং নয় শতাংশ পুরুষ। একটি জরিপে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল কলেজ থেকেই মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হয় যা তাদের গোটা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
ব্যাপারটা তাহলে দাড়াচ্ছে এই যে, নারী নিরাপদ নয় অনুন্নত উন্নত কোন দেশেই। সেটা বাংলাদেশই হোক আর কানাডাই হোক, সর্বত্রই কম বেশী যৌন হয়রানী, যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণ যেভাবেই বর্ণনা করি না কেন এগুলো অহরহই ঘটছে। এমনকি ধর্মযাযক, হুজুর, পুরহিত এরাও আছেন ধর্ষকের তালিকায়! বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার! আগের দিনের রাজা, মহারাজা থেকে শুরু করে স্থানীয় জমিদারদের আলাদা রং মহলই থাকতো যেখানে নারী সম্ভোগ তথা নারীদের উপর যৌন হয়রানী, যৌন নির্যাতন চলতো নিয়মিত ভাবে এবং তা ছিল বিধিসম্মত!
প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের গত সংখ্যায় যৌন হয়রানির উপর একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। ঐ প্রতিবেদনে দেখা যায়, অন্টারিও প্রভিন্সের কলেজ ও ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির শিকার। সরকার পরিচালিত এক জরীপে এই তথ্য প্রকাশ পায়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় এই তথ্য “ডিস্টার্বিং”।
হাফিংটন পোস্ট এর খবরে বলা হয়, অন্টারিও’র বিগত লিবারেল সরকারের আমলে নেয়া এই জরীপ কার্যক্রমে অংশ নেয় ১ লক্ষ ১৬ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৬৩% শিক্ষার্থী জানায় তারা বিভিন্ন ধরণের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। জরীপে অংশগ্রহনকারী কলেজ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার। তাদের মধ্যে ৪৯.৬% শিক্ষার্থী জানায় তারাও বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, শুধু কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতেই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা তা নয়। টরন্টো স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্রেটার টরন্টো সহ অন্টারিও প্রভিন্সের অন্যান্য অঞ্চলের স্কুলগুলোতেও যৌন হয়রানির ঘটনা প্রায়ই ঘটে আসছে। ইতিপূর্বে টরন্টোর আইনজীবী জুলিয়ান ফেলকনার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ‘বিপজ্জনক হারে’ এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে স্কুলগুলোতে। ঐ জরিপে অংশগ্রহণকারী টরন্টোর একটি স্কুলের ১৯% ছাত্রী বলেছে তারা বিগত দুই বছরে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
অন্যদিকে সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ এর নতুন এক গবেষণায় বলা হয়, এখানকার হাই স্কুলের প্রায় অর্ধেক ছাত্রীই অশালীন যৌন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গির শিকার হয়। আর এক তৃতীয়াংশ ছাত্রী শারীরিক স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা বা চিমটি কাটার শিকার হয়।
মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডেভিড ওলফ বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি একটি কমন বা সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাড়িয়েছে স্কুলগুলোতে।
সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ কর্তৃক নবম গ্রেডের আঠার শ ছাত্রীর উপর পরিচালিত জরিপ থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যায় – স্কুলগুলোতে ৪৬% ছাত্রী যৌন মন্তব্য, কৌতুক, অঙ্গভঙ্গি বা দৃষ্টিকটু নজরের শিকার হয়েছে। যৌনতার উদ্দেশ্যে স্পর্শ বা জড়িয়ে ধরার শিকার হয়েছে ৩০% ছাত্রী।
আর শুধু যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু নয়। কানাডার কর্মস্থলগুলোতেও এর ব্যপকতা কম নয়। এক সমীক্ষায় বলা হচ্ছে কানাডার কর্মস্থলগুলোতে নারীদের উপর যৌন হয়রানি ‘মহামারী’ আকারে ছড়িয়েছে। কানাডিয়ান প্রেস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কানাডার কর্মস্থলে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা ব্যাপকতর। কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা যতটা বিশ^াস করতে প্রস্তুত এটা তার চেয়েও অনেক বেশি। একটি নতুন সমীক্ষার রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে।
মানব সম্পদ বিষয়ক পেশাজীবী সমিতির ওই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনীতি, গণমাধ্যম, বিনোদন ও ব্যবসায়িক খাতে এ ধরণের হয়রানির সাম্প্রতিক যেসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে তাতে এই “অন্ধকার বাস্তবতাই” উঠে এসেছে যে, কর্মস্থলে যৌন হয়রানি “মহামারী আকারে বিরাজ করছে এবং বিষয়টিকে জিইয়ে রাখার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
সমিতির সদস্যদের নিয়ে পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৭ শতাংশ সদস্য কাজের সময় কোনও একজন কর্মীকে যৌন হয়রানি বা আঘাতপ্রাপ্ত হতে দেখেছেন।
১৯ শতাংশ সদস্য তাদের কাছে আসা হয়রানির অভিযোগের সংখ্যা এমন পরিমাণে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন যা শতকরা হিসাবে ‘নাটকীয়’ না হলেও ‘যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ’।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০০০ কানাডীয়র মধ্যে পরিচালিত নেভিগেটরের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীদের এক-তৃতীয়াংশের সামান্য কিছু বেশি এবং পুরুষদের ১২ শতাংশ বলেছেন যে তারা কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
রিপোর্টে বলা হয়, যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের ৮০ ভাগই কারো কাছে এ ধরণের ঘটনা প্রকাশ করেন না।
কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গণের নেতৃস্থানীয় কারো কারো বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে তারা তাদের সহকর্মী বা অধিনস্তদের উপর যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই দলের শীর্ষ পদ হারিয়েছেন কয়েকজন। কেউ হারিয়েছেন মন্ত্রীত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আলোচিত হয়েছেন প্যাট্রিক ব্রাউন নামের একজন রাজনীতিক। তার বিরুদ্ধে দুই মহিলা যৌন নির্যাতের অভিযোগ আনেন। ঐ সময় তিনি ছিলেন অন্টারিও প্রভিন্সের প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এবং প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা। ইতিপূর্বে তিনি ফেডারেল পার্লামেন্টেরও এমপি ছিলেন। ঐ সময়টাতেই নাকি তিনি যৌন নির্যাতন এর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। সিটিভি নিউজের এক খবরে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। প্যাট্রিক অবশ্য দাবী করেন এই অভিযোগ সুষ্পষ্টভাবে মিথ্যা। পরে তিনি দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ব্র্যাম্পটনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে যশস্বী বা সেলিব্রিটি মহিলাদের কেউ কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন খবর যখন মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হচ্ছে তখন কানাডায় মহিলাগণ কতটা অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানি বা চাপ এর শিকার হচ্ছেন তা নিয়ে সম্প্রতি একটি জরীপ চালানো হয়। জরীপে যে তথ্য উঠে এসেছে তা বিষ্ময়করই বলা যায়। কারণ, দেখা গেছে অর্ধেকের বেশী কানাডীয় মহিলা কোন না কোন ভাবে অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানি বা চাপের শিকার হচ্ছেন। খবর সিবিসি নিউজের।
গত অক্টোবর মাসের ২০ ও ২১ তারিখে এ্যাবাকাস ডাটা’র পরিচালিত ঐ জরীপে দেখা যাচ্ছে কানাডার ৫৩% মহিলা অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানি বা চাপ এর শিকার হচ্ছেন। আর শতকরা ১০ জনেরও বেশী পুরুষ এবং মহিলা বলেন তাদের কর্মস্থলে মহিলাদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া খুবই কমন বা সাধারণ বিষয়। এ্যাবাকাস ডাটা’র চেয়াম্যান ব্রুস এন্ডারসন বলেন, জরীপে উঠে আসা এই তথ্য খুবই আঘাত হানার মত। সংখ্যার হিসাবে বলা যায় কানাডায় ৮০ লক্ষ মহিলা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের জীবনের কোন এক পর্যায়ে।
জরীপে একটি প্রশ্ন ছিল – সম্প্রতি হলিউডে অভিনেত্রীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আপনি কি অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানি বা চাপের শিকার হয়েছেন কখনো?
এই প্রশ্নের উত্তরে জরীপে অংশগ্রহনকারী ৫% কানাডীয় মহিলা বলেছেন তারা অতি ঘনমাত্রায় অবাঞ্ছিত যৌন হায়রানির শিকার হয়েছেন। ৭% মহিলা বলেছেন তারা অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন প্রায়ই। ৪১% মহিলা বলেছেন তারা অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মাঝেমধ্যে। আর ৪৬% মহিলা বলেছেন তারা কখনোই এরকম অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির শিকার হননি।
উল্লেখ্য যে ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে প্রকাশিত অন্য এক জরীপে বলা হয়েছিল কানাডায় প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে তিনজন ধর্ষণের শিকার হন। কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা তখন বলেছিলেন এটি ‘‘কমিয়ে দেখানো’’ হিসাব।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক এলিজাবেথ শিহাই, যিনি যৌন হামলার আইন বিষয়ে পড়ান, তিনি বলেন, ‘‘এধরণের জরিপ যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের প্রকৃত সংখ্যার কাছাকাছিও যেতে পারে বলে আমি মনে করি না।
ফোরাম সার্চ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই জরিপ চালিয়েছিল যা ঐ সময় টরস্টার নিউজ সার্ভিসে প্রকাশিত হয়।
কানাডায় যৌন নির্যাতনের আরেক রূপ হলো হাজার হাজার তরুনীকে কৌশলে বা জোরপূর্বক যৌনদাসী বানানো। আর এই যৌনদাসীদের খদ্দেরদের মধ্যে আছেন ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবী, পুলিশ অফিসার, শিক্ষক এমনকি আদালতের বিচারকও!
খদ্দেরদের মনোরঞ্জনে অবাধ্য হলে এই যৌন কর্মীদের উপর নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন। দিনে ১০ থেকে ১৫ জন খদ্দেরের কাছে শরীর বিক্রি করতে হয় হতভাগ্য এই তরুনীদের কাউকে কাউকে। এদের মধ্যে কারো কারো বয়স ১২ বছর। আর এই যৌনব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে টরন্টোসহ গোটা প্রভিন্সজুড়ে! ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে টরন্টো স্টার এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
আগের দিনের দাসদের মত হতভাগ্য এই তরুনীদের বেচা-কেনাও করা হয়। গত ২০১৩ সালে টরন্টোতে এমনি এক তরুনীকে পুলিশ উদ্ধার করে যাকে দালালদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল তার নিজের জন্মদাত্রী মা! ঐ তরুনীর বয়স ছিল ১৭। তার মা ছিল ড্রাগ এডিক্টেড। প্রতিনিয়ত ড্রাগের পয়সা যোগার করতে গিয়ে একপর্যায়ে ঐ মহিলা ঋণগ্রস্থ হয়ে পরে। আর সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য নিজের মেয়েকে বিক্রি করে দেয় এক দালালের কাছে।
যৌনদাসী হিসাবে এই মেয়েরা যা আয় করে তার সবটাই দালালদের পকেটে জমা হয়। আর সকলেরই ধারণা যে এই মেয়েদেরকে দেশের বাইরে থেকে উচ্চ বেতনের চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে আনা হয় নানান অবৈধ উপায় অবলম্বন করে। আর এখানে এনে তাদের পাসপোর্ট বা অন্যান্য কাজগপত্র আটক করা হয়। ভয় দেখানো হয়, কথার অবাধ্য হলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই মেয়েদের প্রায় সকলেরই জন্ম কানাডায়!
দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত এই যৌনদাসীদের উপর অত্যাচারের সীমা থাকে না অনেক সময়। কখনো কখনো তা ভয়ঙ্কর ও বর্বরোচিত পর্যায়ে চলে যায়। টরন্টো এলাকায় কর্মরত গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডেভিড কোরেয়া বলেন, আমি এমনো ঘটনা দেখেছি- এই যৌনদাসীদের জেনিটাল এরিয়ার অভ্যন্তরে জোর করে স্পঞ্জ ঢুকিয়ে রাখা হয় যাতে করে দিনে একাধিক খদ্দেরের সঙ্গে মিলিত হতে হলে রক্তপাত না ঘটে। টরন্টো পুলিশের সেক্সক্রাইম ইউনিটের ইন্সপেক্টর জনা বিইভেন বলেন, এই যৌনদাসীদের প্রতি এমন ব্যবহার করা হয় যেন তারা গবাদি পশু। তিনি আরো বলেন, এই যৌনব্যবসা শুধু টরন্টো বা অন্টারিওর সমস্যা নয়। গোটা কানাডাতেই চলছে এই অপকর্ম!
কানাডায় যৌন নির্যাতনের আরেক রূপ হলো জোর পূর্বক বিয়ে দেয়া। সম্প্রতি জোরপূর্বক বিয়ের ওপর একটি জড়িপ চালিয়েছে সাউথ এশিয়ান লিগাল ক্লিনিক অব ওন্টারিয়। টরন্টোতে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল এই দুই বছরে ওন্টারিয়তে দুই শতাধিক নারী তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে জড়িপ চালাতে গিয়ে দুই বছরে ২১৯টি জোর পূর্বক বিয়ের ঘটনার কথা জানতে পারে তারা। ভিকটিমদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই ছিল নারী। যারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশের বয়স ছিল ১৬ থেকে ৩৪ বছর। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, দাদা-দাদি, নানা-নানি এবং ধর্মীয় নেতারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়।
জোর পূর্বক বিয়ে দেয়ার ঘটনা যেসব কারণে ঘটে তারমধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তবে পারিবারিক সম্মান, অর্থ এবং অভিবাসনের কারণেও এ ধরণের বিয়ের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ভিকটিমদের বেশিরভাগই কানাডিয়ান নাগরিক(৪৪%) অথবা স্থায়ী বাসিন্দা(৪১%)। চার শতাংশের কানাডায় কোন লিগ্যাল স্ট্যাটাস নেই, সাত শতাংশ শরণার্থী, বিদেশী নাগরিক অথবা অস্থায়ী ভিসায় কানাডায় কাজ করে।
জোর পূর্বক বিয়ে করতে বাধ্য হওয়া অনেকেই নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়। এরমধ্যে হুমকি ৬৮ শতাংশ, শারীরিক নির্যাতন ৫৯ শতাংশ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ২৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য যে, জোর করে বিয়ে আর ধর্ষণের মধ্যে যে কোন পার্থক্য নেই সেই বিষয়টি এই জরীপে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, জোর করে বিয়ের অর্থই হলো কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনমিলন। আর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন মিলনের অর্থ হলো, ধর্ষণের শিকার হওয়া। সেটা স্বামী কর্তৃক হলেও।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য করার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে মুসলিম সমাজে। আফগানিনস্তান, ফিলিস্তিন, সেনেগাল, সোয়াজিল্যান্ড, তুরস্ক ও বৃটেন এমনকি কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলমান কমিউনিটিতেও এই সমস্যা বিদ্যমান। তবে হিন্দু, শিখ ও খ্রীষ্টান কমিউনিটিতেও এ ধরণের ঘটনা ঘটে।
জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে যারা সচেতনতা তৈরির কাজ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সন্দ্বীপ চাঁদ। তিনি বলেন, “ প্রকৃতপক্ষে যে হারে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে, এই প্রতিবেদনে তার সামান্যই উঠে এসেছে। কারণ এ ধরণের অনেক ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়”।
উল্লেখ্য যে, কানাডায় যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণ ইত্যাদি থেকে বাংলাদেশী কমিউনিটিও মুক্ত নয়। ইতিপূর্বে একাধিক বাংলাদেশী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে। ইতিপূর্বে বিডিনিউজ২৪.কম এর এক খবরে বলা হয়, কানাডার টরন্টোয় শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে এক বাংলাদেশি ইমামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মোহাম্মদ মাসরুর (৪৮) নামের ওই বাংলাদেশিকে ২০১১ সালের ১০ অগাস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সাল থেকে কানাডায় বসবাসকারী মাসরুরের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ রয়েছে।
কানাডা পুলিশের কনস্টেবল কারেন আর্মস্ট্রং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টরন্টোয় বায়তুল মুকাররম ইসলামিক সোসাইটি এবং বিভিন্ন বাসায় কোরআন পড়ানোর সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করেন মাসরুর। তিনি ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা এবং সা¤প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও মিশিগানে বসবাস করেছেন বলে জানান আর্মস্ট্রং। পাঁচ ব্যক্তির এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সপ্তাহ তদন্তের পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বাঙ্গালী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় অবস্থিত ড্যানফোর্থ ইসলামিক সেন্টারে (৩০১৮ ড্যানফোর্থ) ৬ বছরের এক বালক যৌন হয়রানির শিকার হয় ২০১৫ সালে। যৌন হয়রানির ঘটনাটি ঘটে ঐ বছর ৩ মে। আর এই অভিযোগে টরন্টোতে গ্রেফতার হন এক বাংলাদেশী সিনিয়র সিটিজেন যার নাম দেওয়ান সৈয়দ মশিউর রেজা (৬৯)। পরের তাকে টরন্টোর কলেজ পার্কে অবস্থিত আদালতে হাজির করা হয়।
টরন্টো পুলিশ সার্ভিসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় একটি বালক ড্যানফোর্থ ইসলামিক সেন্টারে ক্লাশ করতে গেলে সেখানে মশিউর রেজা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে তাকে যৌনতায় পূর্ণ একটি ভিডিও দেখানো হয়। এর পর মশিউর রেজা বালকটিকে যৌন হয়রানি করে।
দেওয়ান সৈয়দ মশিউর রেজার বিরুদ্ধে ৪টি অভিযোগ আনা হয়। পুলিশের ধারণা এই ব্যক্তি আরো একাধিক যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের সঙ্গ যুক্ত থাকতে পারে। ড্যানফোর্থের ঐ ইসলামিক সেন্টারে মশিউর রেজার অবাধ যাতায়ত ছিল। এছাড়াও তিনি টরন্টোর আরো দুটি হোম ডে কেয়ারে যাতায়ত করতেন। পুলিশ জানায়, ১৯৯৯ -২০০৯ সময়কালে ক্রিসেন্ট টাউনে অবস্থিত একটি হোম ডে কেয়ারে তার নিয়মিত যাতায়ত ছিল। ঐ হোম ডে কেয়ারটি এখন আর নেই। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মশিউর রেজার প্রবেশাধিকার ছিল স্কারবরোর মিডল্যান্ড ও কিংস্টন রোডের কাছাকাছি 5 Heale Avenue.. এ্যাভিনিউতে অবস্থিত একটি ডে কেয়ারে।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে টরন্টোতে আরো একজন বয়স্ক বাংলাদেশী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। ঐ ব্যক্তি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের ধর্ম শিক্ষা দিতেন। পরে বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। এটি প্রায় দেড় যুগ আগের ঘটনা।
এই তিনটি ঘটনাই টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ছিল আলোচিত বিষয়। কারণ এ ঘটনাগুলো স্থানীয় মূলধারার পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। কিন্তু ছাপার অন্তরালে আরো যে সব ঘটনা ঘটছে বা ঘটছে তার অনেক হিসাব খোদ পুলিশ কর্তৃপক্ষও জানে না। এর প্রধান কারণ, পরিবারের সম্মান রক্ষার স্বার্থে যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতনের শিকার কেউ মুখ খুলেন না। বিষয়টি চেপে যান। পুলিশি ঝামেলা হতে পারে, কমিউনিটির লোকজন জানলে মুখ দেখানো যাবে না ইত্যাদি আরো কারণে লোকজন চুপ থাকাটাকেই শ্রেয় বলে মনে করেন। আর গবেষণায়ও দেখা গেছে মাত্র ছয় শতাংশ অভিযোগই পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়। সে কারণে যৌন হয়রানি বা নির্যাতন কিংবা ধর্ষণ ইত্যাদির প্রকৃত চিত্র কখনোই কোন পুলিশ রিপোর্টে বা কোন গবেষণা কর্মে ফুটে উঠে না।
আর যৌন হয়রানি বা নির্যাতনে শিকার যে শুধু মেয়ে শিশু বা মহিলারাই হন তা নয়। ছেলে শিশুরাও যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়। গত সপ্তাহে কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম ফেডারেল রাজনৈতিক দল এনডিপি’র প্রধান নেতা জাগমিত সিং বলেছেন তিনিও শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। মার্শাল আর্ট এর প্রশিক্ষকের হাতে তিনি নির্যাতিত হয়েছেন যখন তার বয়স ১০। কিন্তু সে সময় তিনি বিষয়টি চেপে যান। এমন কি বাবা মায়ের কাছেও বলেননি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মি-টু আন্দোলন জোরদার হওয়াতে পুলিশের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৫৯টি অভিযোগ জমা পড়তো সেখানে এখন গড়ে প্রতিদিন ৭৪টি অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশের কাছে।
এদিকে টরন্টোর পুলিশ বিভাগ Yourchoice.to নামে নতুন একটি ইন্টারএ্যাক্টিভ ওয়েবসাইট খুলেছে যারা যৌন হয়রানী বা নির্যাতনের শিকার হন তাদেরকে সহায়তা প্রদানের জন্য। ১২ টি ভাষায় এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে বাংলা ভাষা এখনো এতে অন্তভূক্ত হয়নি। টরন্টো পুলিশের সেক্স ক্রাইম-সেক্স এ্যাসাল্ট কঅর্ডিনেটর ডিটেকটিভ ক্যারল অ্যান রক সম্প্রতি ড্যানফোর্থের মিজান কমপ্লেক্সে বাংলাদেশীদের উদ্যোগে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অঙ্গীকার করেন, কমিউনিটির সহায়তা পেলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলায়ও এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেবা প্রদান এর ব্যবস্থা করা হবে যাতে করে যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তিগণ উপকৃত হতে পারেন। অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
তারা ডিটেকটিভ ক্যারল অ্যান এর কাছে যৌন হয়রানি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় জানতে চান। অনুষ্ঠানে টরন্টো পুলিশের আরো কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
Yourchoice.to ওয়েবসাইট এ বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তিগণ বা তাদের হয়ে অন্য কেউ কিভাবে বিষয়টি পুলিশের কাছে রিপোর্ট করবেন, রিপোর্ট করার পর আদালত প্রক্রিয়া কি, ‘সেক্সুয়াল এ্যাসাল্ট এভিডেন্স কিট’ কি এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, কমিউনিটি রিসোর্স, টরন্টো রেপ ক্রাইসিস সেন্টার এর ঠিকানা বা যোগাযোগ নাম্বার, সার্ভে ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও ব্যাখ্যা দেওয়া আছে এই ওয়েবসাইটে।
টরন্টো পুলিশ চিফ মার্ক সান্ডার্স আশা প্রকাশ করে বলেন, এই ওয়েবসাইটটি যারা যৌন হয়রানির শিকার তাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে এবং একই সাথে তারা পুলিশের কাছে তাদের অভিযোগও তুলে ধরবেন।
বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ কানাডায় সবচেয়ে কম করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তাগণ আশা করছেন এই Yourchoice.to মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তরা এগিয়ে আসবেন তাদের অভিযোগ তুলে ধরার জন্য।
কানাডায় অনেক প্রভিন্সে মে মাস “Sexual Assault Awareness/Prevention Month (SAAPM)” হিসাবে স্বীকৃত। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও যৌন হয়রানির শিকার যারা তাদের সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে এই মাসটিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মে মাসের প্রথম দিনে এবং এ মাসটির প্রতি সোমবারে টরন্টো পুলিশ সার্ভিস তাদের গৃহীত নতুন উদ্যোগ www.yourchoice.to এর প্রচার চালাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ।
যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে অপরাধীদেরকে। আর এর জন্য যারা যৌন হয়রানির শিকার তাদেরকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এমনটাই মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা এবং সমাজ বিজ্ঞানীরা।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘Yourchoice.to’ বিষয়ে টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশীদের অভিমত
টরন্টো পুলিশ সার্ভিসের ‘Yourchoice.to’ প্রকল্পের খবর ও এর সেবা কার্যক্রমের ব্যাপারে বিস্তরিত জানান দেবার জন্যে ডিটেকটিভ ক্যারল অ্যান বাংলাদেশীদের কাছে এসেছিলেন এপ্রিলের ১১ তারিখ সন্ধ্যায়। ড্যানফোর্থের মিজান অডিটোরিয়ামে বক্তৃতা ও অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন ও পোস্টার-বুকলেট বিলি করে বাংলাদেশীদেরকে জানালেন এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও বিধেয়। সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে যারা এসেছিলেন তাদের কয়েকজনের কাছে আমরা গিয়েছিলাম কিছু প্রশ্ন নিয়ে তাদের ফিডব্যাক নেবার জন্যে। প্রশ্নগুলো ছিল নিম্মরূপ-
১. . আপনি কি মনে করেন যে আমাদের সাউথ এশিয়ান কমিউনিটিতে যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করাটা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ?
২. আপনি কি মনে করেন যে এই আলোচনার সূত্রপাত আমাদের আরো বেশী ক্ষতি করবে এবং মূলধারার মানুষ-জন আমাদের সম্মন্ধে একটা খারাপ ধারণা পোষণ করবে?
৩. আমাদের কমিউনিটিতে যৌন হয়রানি হয় বলে কি আপনার মনে হয় ?
৪. আপনি কি এমন কোন বাংলাদেশীর কথা জানেন যিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন কিন্তু রিপোর্ট করতে সাহস পাননি ?
৬. এই প্রজেক্ট যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন কারো কতটুকু উপকারে আসবে বলে আপনার মনে হয়?
৭. আপনি কি মনে করেন যে যৌন হয়রানির শিকার হয় শুধুমাত্র কম বয়সী মেয়ে এবং শিশুরা?
৮. এই প্রজেক্ট এর শেষে এ ধরণের নতুন কোন কর্মসূচী নেবার আর কোন প্রয়োজন থাকবে কি?
৯. এই প্রজেক্ট যদি চলতে থাকে তাহলে নতুন আর কি বিষয় যুক্ত করা প্রয়োজন ?
ফিডব্যাকে বিভিন্নজন যা বলেছেন তা এখানে তুলে ধরা হলো।
শিবু চৌধুরী : একজন সক্রিয় সমাজ কর্মী। বাংলাদেশ কমিউনিটি সার্ভিসেস সেন্টারের ও বাংলাদেশ হিন্দু মন্দির কানাডার একজন প্রতিষ্ঠাতা ডিরেক্টর।
১. – অবশ্যই না। বরং এই বিষয় ভিত্তিক আলাপ-আলোচনা আমাদের কম্যুনিটিতে শুরু করাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যাঁরা এই উদ্যোগটি নিয়েছেন তাদেরকে আমার অনেক ধন্যবাদ! আমি প্রথম ডাকেই আমার কাজ থেকে সরাসরি চলে এসে আলোচনা শুনেছি।
২. – আমি মনে করি যে এবিষয়ের ওপর আলোকপাত করে আলোচনার সূত্রপাত আমাদের কোন ক্ষতি করবে না। বরং এই বিষয়ে যে সমস্তকর্মকান্ড চালু আছে সেগুলোর প্রচার হলে কমিউনিটির সদস্যরা প্রয়োজনে এর সাহায্য নিতে পারবে। এতে যৌন অপরাধ সম্পর্কিত ঘটনার হার কমবে বলে মূলধারার মানুষ বরং খুশী হবে।
৩. – অবশ্যই হয় ! কিন্তু নিতান্ত বোধগম্য কারণে সেসব ঘটনার কথা জানা যায় না। তবে এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন যে আমাদের কম্যুনিটির অধিকাংশেরই স্পষ্ট ধারণা নেই কোনটা যৌন হয়রানি বা অপরাধ আর কোনটা নয়।
৪. – আমি এ বিষয়ে আপাতত কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করছি।
৫. – অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি প্রকল্প। এর বাস্তাবায়নে আমাদের সম্পৃক্ততা কমিউনিটির সদস্যদের জন্যে অনেক উপকারে আসবে। আমি চাইনা এই অবস্থার শিকার কেউ হোক, তবে যদি কেউ এই অবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েন সে তার নিজের জন্যে অথবা পরিবার বা বন্ধুদের মাধ্যমে এই YOUR CHOICE প্রকল্প থেকে অনেক সাহায্য পাবে।
৬. – শতকরা ১০০ ভাগ উপকারে আসবে। একান্ত নিরাপদ ও গোপনীয় এই প্রকল্পের কর্মকান্ড যারা একটু দ্বিধান্বিত তাদের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী।
৭.. – যৌন হয়রানির শিকার যে কেউই হতে পারে – তবে শিশু এবং বয়স্কদেরই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার কোন ক্ষমতা থাকেনা।
৮. – এই প্রকল্পের পরিধির বিস্তার অবশ্যই প্রয়োজন। কমিউনিটির সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. – দুর্ঘটনা পরবর্তী পর্য্যায়ে মানসিক স্থিতির পুনর্বাসন প্রকল্প থাকা অবশ্য প্রয়োজন।
নূর কাজী একজন প্রাক্তন ছাত্রনেতা, একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী, একজন সমাজকর্মী, ভাষাবিদ ও ভাষা বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক।
১. কানাডার বাঙালি কমিউনিটিতে যৌন হয়রানি হচ্ছে কি না- তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আলোচনা হওয়া উচিত হবে গবেষণার পর।
২. মূলধারার মানুষ গবেষণায় প্রাপ্ত রেজাল্টকে গুরুত্ব দেয়। ৩. এ বিষযে অনুমান নির্ভর কথা-বার্তা মিডিয়ায় আনা উচিত নয়।
৪. বিষয়টি ব্যক্তিগত। জানলেও মিডিয়ায় বললে গুরুতর অপরাধ হতে পারে।
৫. এটা একটি ভালো প্রকল্প।
৬. উপকারের আগাম চিন্তার কোন নিক্তিদন্ড নাই। এ বিষয়ে প্রফেশনাল জ্ঞান অর্জনকারী ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তিরাই কেবল যৌন হয়রানির ব্যপারে ভূমিকা পালন করে থাকেন।
৭. কোন কমিউনিটির? বাঙালি কমিউনিটিতে এ ব্যপারে আমার জানা মতে কোন গবেষণা হয় নাই।
৮. এ বিষয়ে প্রতি বছরই সিটি নতুন প্রজেক্ট গ্রহন করতে পারে।
৯. মানসিক চিকিৎসা প্রজেক্ট।
মৌ মধুবন্তী একজন সক্রিয় সামাজিক কর্মী। উনি সেলফ এমপ্লয়েড, একজন কবি, গান রচয়িতা ও বাংলাদেশ সেন্টারের বার্ষিক “চালের গুঁড়া” পিঠা উৎসবের প্রধার সংগঠক।
১. – অপ্রয়োজনীয় তো নয়ই বরং অতিশয় গুরুত্বসহকারে আমাদের সাউথ এশিয়ান কমিউনিটিতে যৌন হয়রানির উপর আলোচনা ও শিক্ষা প্রদান করা বিশেষভাবে আমি সমর্থন করি এবং এর পক্ষে যদি জোরদার সাপোর্ট করতে হয় তাই করতে আগ্রহী।
২. – মুল্ধারার লোকজন প্রতিনিয়ত এইসব যৌন হয়রানি থেকে ভিক্টিমদেরকে মুক্ত করার জন্যই নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের কমিউনিটির ভিক্টিমেরা অনেক উপকৃত হবে এই আলোচনার মাধ্যমে। একদিনে সেটা সম্ভব হবে না, জানি। নিজেদের আত্ম বিশ্বাসের বেড়া ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে সবার সাথে শেয়ার করবার জন্য তাদের কে প্রস্তুত করলেই একমাত্র আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। অবশ্যই কমিউনিটির কোন ক্ষতি হবে না এবং ভাবমুর্তিও নষ্ট হবে না।
৩. – অবশ্যই হয়, হচ্ছে এবং সব স্তরেই হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আলোচনা না হলেও বন্ধু বান্ধবের পর্যায়ে এগুলো আলচনা হয়। তবে মুলধারা থেকে সাহায্য নেবার মত সাহস বা শিক্ষা অনেকেরই নেই বলেই এগিয়ে যেতে পারে না। আবার এটা যে যৌন হয়রানি সেটাই অনেকের উপলব্ধি করার মত মানসিক সচেতনতা নেই। তা হলে আগে মানসিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে তবেই তারা বুঝবে যে তারা যৌন হয়রানির শিকার এবং তা রিপোর্ট করবার মত সুবিধা আছে ।
৪. – অবশ্যই জানি। কিন্তু মিথ্যা সম্ভ্রমের ভয়ে এবং কমিউনিটিতে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় না বলেই সেগুলো প্রকাশের মুখ দেখেনা । আমাদের কমিউনিটির লোকেদের মধ্যে রাখ ঢাক এবং মানিয়ে নেবার বা মেনে নেবার প্রবণতা অনেক বেশী, গোড়াতেই ভুল শিক্ষা পেয়ে পেয়ে অনেকেই আত্ম বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
৫. – আমি হাইলি এপ্রিসিয়েট করি এই ধরণের সিস্টেম কে। তবে বাংলা ভাষা থাকাটা জরুরী এই সাইটে । এবং এই সাইট পরিচালনার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। সেটা বড় গ্রুপে না হয়ে ছোট ছোট গ্রুপে হলে ভালো হবে মনে করি।
৬. – টরন্টো পুলিশ রিসার্চ করেই এই সাইট তৈরী করেছে এবং সেখানে অন্যান্য কমিউনিটির ভিক্টিমেরা রিপোর্ট করছে। অবশ্যই বাংলাদেশী এবং বাংলা ভাষী ভিক্টিমদের উপকার হবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সিস্টেম চালু হয় মানুষের উপকারের জন্য। আর তা মানুষের ব্যবহার করা খুবই দরকার বলে আমি মনে করি ।
৭. – না। যে কোন বয়েসের লোক এই যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে এবং হচ্ছে। রিপোর্ট করার পদ্ধতি জানা থাকলে আর গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে জানলে প্রচুর ভিক্টিম বা ভুক্তভোগী এগিয়ে আসবে তাদের পরিস্থিতি রিপোর্ট করতে। যৌন হয়রানি একটা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জগতে বিরাট রকমের ছাপ ফেলে। কাউন্সিলিং ছাড়া এই দুর্বিসহ অভিজ্ঞতা থেকে খুব কম ভিক্টিম বেরিয়ে আসতে পারে। কম বয়েসের মেয়েরা বেশীর ভাগ এই যৌন হয়রানির শিকার হয়। তাই স্কুল পর্যায়ে সেক্স এডুকেশান সিস্টেম যা চালু আছে তা আরো দৃঢ়ভাবে চালু রাখা দরকার।
৮. – সেদিনের কর্মসূচী ছিল কেবল সূচনা মাত্র। নাচ গান এর অনুষ্ঠানের চেয়েও এই কর্মসূচী নিয়মিত চালানো এবং কমিউনিটির সবার ঘরে ঘরে এই সুবিধার কথা পৌঁছে দেবার ব্যস্থা করা খুব প্রয়োজন।
৯. – কাউন্সিলিং এর জন্য কোথায় যেতে পারবে তার একটা লিস্ট সরবরাহ করা যেতে পারে। সবার আগে অংশ গ্রহণকারিদেরকে নিশ্চিত করতে হবে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে। যৌন হয়রানির শিকার কেবল নারী বা শিশু নয়, নারী পুরুষ, বালক বালিকা , বৃদ্ধ বৃদ্ধা সকলেই হচ্ছে। আরো আছে LGBTQ গ্রুপ। তাদের জন্য নিয়মিত আলোচনা ও সাপোর্ট গ্রুপ তৈরী করা দরকার। বাবা মা কে শেখানো দরকার মিথ্যা কথা না বলতে । সত্যকে মোকাবেলা করে, সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে । জীবন নাটক নয়। বাস্তবতা। তাই সত্যকে সুন্দর করে সাহসের সাথে মোকাবেলা করা দরকার।
মেরী রাশেদীন বাচিক শিল্পী ও বাচনিক” এর আহ্বায়ক।
১. আমি মনে করি যৌন হয়রানি বিষয়টি নিয়ে কথা বলা জরুরি। তবে আমাদের সমাজ কতটা নিবে বা খোলাখুলি বিষয়টি নিয়েভাববে সেটা ভাববার বিষয়।
২. এই বিষয়ে কথা বলা খুব জরুরি। কারণ এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, এখনও যৌন হয়রানি ঘটছে কিন্তু আমরা এখনো খোলাখুলি হতে ভয় পাই সামাজিকতার কথা ভেবে। সেই স্টিগমা থেকে আমাদের বের হয়ে আসার জন্যই এই আলোচনা বার বার হওয়া উচিত।
৩. আমাদের কমিউনিটিতে অবশ্যি যৌন হয়রানি হয়। কেউ মুখ খুলে কেউ মুখ খুলে না। ওই যে আগেই বলেছি সামাজিকতার ভয় এখন আমাদের মাঝে কাজ করে আর বিশেষ করে যৌন নিপীড়ক যদি পরিবারের কেউ হন ।
৪. না, জানি না কারণ কথা প্রসঙ্গে এই বিষয়ে আমার কারো সঙ্গে কথা বলা হয়ে উঠেনি।
৫. আমার কাছে অনেক ভালো মনে হয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য ভান্ডার আছে। আমরা চাইলেই ব্যাবহার করতে পারবো। তবে এই ইনফরমেশন শেয়ারিং নতুন প্রজন্মদের কাছেও পৌঁছাতে হবে।
৬. যৌন হয়রানি বিষয়টি নিয়ে অনেকেই খোলাখুলি কথা বলতে চাইবেন না। তবে তাদের জন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা আছে যেখানে অন্য কাউকেনা বললেও তাঁরা সাহায্য পাবেন – আশাকরি এই পদক্ষেপটি তাঁরা গ্রহণ করবেন।
৭. এটা ভুল ধারণা, যৌন হয়রানির শিকার বড়রাও হন কারণ হয়রানির ধরণ আলাদা হয় তখন।
৮. এই প্রজেক্টটা হচ্ছে সকলকে জানানো এবং আমার মনে হয় এটা চলমান হওয়া উচিত। গ্রূপ ওর্য়াক , পিয়ার গ্রূপ কাউন্সেলিং এই সব দরকার এই জাতীয় ট্রমার ভিতর দিয়ে যারা দিনাতিপাত করেছেন তাদের জন্য।
৯. – নিয়মিত সভা/মত বিনিময়
– গ্রূপ কাউন্সেলিং/ফেসবুক ইনবক্স
– সচেতনতামূলক লিফলেট
– সচেতনতামূলক বাংলা ভাষায় ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ
– গোপন ব্যালট বাক্স
– নাটক – সচেতনতামূলক।
জসিম মল্লিক একজন ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী।
১. যে কেনো বিষয় আলাপ আলোচনা হলেই সঠিক চিত্র ফুটে ওঠে। এতে সমাজের উপকারই হয়।
২. আমার তা মনে হয় না। এই সামজে সবকিছুরই সঠিক পর্যালোচনা হতে পারে।
৩. এই বিষয়ে আমার সঠিক ধারনা নাই। কখনো শুনিনি।
৪. আমার জানা নাই।
৫.যেহেতু টরন্টো পুলিশের প্রজেক্ট অবশ্যই ভাল হওয়ার কথা, এদেশের পুলিশের প্রতি আমি শতভাগ আস্থা রাখি।
৬.যৌন হয়রানি একটি অপরাধমূলক কাজ। যারা এই হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের প্রতিকার পাওয়ার অধিকার আছে। সেই অর্থে এই প্রজেক্ট উপকারি।
৭. কম বয়সীরা বেশি হয়। বড়রাও হয়।
৮. এটা নির্ভর করে এই প্রজেক্টের ভবিষ্যত সফলতার উপর।
৯. এখনই এই বিষয়ে মতামত দিতে পারছি না।
মম কাজী একজন তরুণ সমাজকর্মী ও উৎসাহী সংগঠক।
১. আমি অবশ্যই মনে করি যে কোনও কমিউনিটিতে যৌন হয়রানির বিষয় নিয়ে আলোচনা করা উচিত। বিশেষ করে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিটিগুলোতে, একারনেই যে আমরা যে সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে এসেছি সেখানে যৌন বিষয়ক আলোচনা করাটাও এক ভ্রুকুটি উদ্রেকারী ঘটনা। কিন্তু আমরা যদি যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করি তবে সকলের মাঝে সচেতনতা বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।
২. ইংরেজীতে একটা কথা আছে, “knowledge is power”. যে কোনও সঠিক তথ্য আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। মূলধারার মানুষ-জন কিন্তু সবসময়ই এ বিষয়ে আলোচনা করছে। আর আমাদের কমিউনিটির মানুষরাও এ আলোচনায় যুক্ত হচ্ছেন তাদের সাথে। কিন্তু নিজেদের মাঝে এ আলোচনা করলে তাদের কোনও প্রকার খারাপ ধারনা করার প্রশ্নই আসে না।
৩. টরোন্টের বাঙালী কমিউনিটির একজন মেম্বার হিসেব আমি জানি, আমাদের বিভিন্ন প্রিয়জন, সন্তান, প্রবীন, বন্ধু নানাভাবে যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন।
৪. আমি অন্তত তিনজনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি যারা যৌন হয়রানির স্বীকার হয়েছেন। তন্মধ্যে একজনকে কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে কারণ হয়রানিটি ছিল তার উপরস্থ কর্মকর্তা কর্তৃক। দ্বিতীয়জন তার সহপাঠী কর্তৃক যে কিনা বাবা মায়ের বকার ভয়ে লজ্জায় কাউকে বলতে পারেন নি। আর তৃতীয়টি, বৃদ্ধাশ্রমে কাজ করার সময় জানতে পারি জনৈক সাপোর্ট ওয়ার্কারের কাছ থেকে। সীমিত ভাষাজ্ঞান, চক্ষুলজ্জা ও অপমানের কারণে কোনও রিপোর্ট করা হয়নি।
৫. টরোন্টো পুলিশের এক অসাধারণ পদক্ষেপ your choice. এই প্রজেক্টের নামটিই বলে দেয় ভিকটিমের ইচ্ছার উপর কতখানি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তার উপরে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা, ভিকটিমের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং সর্বোপরি অপরাধীকে যথাযোগ্য শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে যৌন হয়রানির মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য এ ধরনের প্রজেক্টের গুরুত্ব তুলনাহীন।
৬. এই ব্যপারে আমাদের কমিউনিটির সর্বোচ্চ চিন্তার বিষয় হল গোপনীয়তা রক্ষা এবং পরবর্তীতে যেন ভিকটিমের পারিবারিক, কর্ম এবং সামাজিক জীবনে যেন কোনও প্রকার নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। your choice এর প্রথম নীতি হল ভিকটিমের ইচ্ছার উপর সবকিছু নির্ভর করবে। আর তাই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন মানুষরা আরও বেশি অভিযোগ করবেন এবং দোষীকে শাস্তি প্রদানের হারও বেড়ে যাবে।
৭. যদিও যৌন হয়রানির শিকার সবচেয়ে বেশি কম বয়সী মেয়েরা এবং শিশুরাই হয়ে থাকেন তবে টরোন্টোতে ছেলে, মেয়ে, শিশু, বৃদ্ধ সকলেই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। আমরা যদি সচেতনতা না বৃদ্ধি করি তবে এই ধরনের হয়রানি আরও বেড়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
৮. এই প্রজেক্টর শেষে অবশ্যই আমাদের নতুন করে আরও বহু কর্মসূচি হাতে নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে। হতে পারে এটি কেবল শুরু। আমাদের কমিউনিটির জন্য আমাদের ভাষায় সাহায্য প্রয়োজন। সর্বোপরি যৌন শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে সকলকে যা আমাদের মাঝে বড়ই অভাব। আর তাই বিভিন্ন ধরনের আলোচনা, কর্মশালা ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে।
৯. এই প্রজেক্টটি চলতে থাকাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি মনে করি – যৌন হয়রানি কি বা যৌন হয়রানির শিকার হলে কি করতে হবে সে বিষয়ে শিশুদের সচেতন ও শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যৌনতার সাথে জড়িত বিভিন্ন রোগ, প্রডাক্ট, সংস্কার, কুসংস্কার সম্পর্কেও ধারনা থাকতে হবে।
-সাক্ষাৎকারগুলো গ্রহণ করেছেন কবি ও সাংবাদিক আশরাফ আলী। তিনি এই Yourchoice.to সম্পর্কিত অনুষ্ঠানের একজন কো-অর্ডিনেটর ছিলেন।
যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তিগণ yourchoice.to থেকে যে ধরণের সহযোগিতা পেতে পারেন
যে কোনো অযাচিত যৌনতা সংশ্লিষ্ট ব্যবহারই যৌন হয়রানি। যারা এ ধরণের হয়রানির শিকার হন তারা একাধারে সরাসরি সাহায্য ও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য সাহায্য যাতে পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে টরন্টো পুলিশ গত বছর www.yourchoice.to নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। টরন্টো পুলিশ বিভাগের ডিটেকটিভ ক্যারল এ্যান রক (Specialized Criminal Investigations Sex Crimes- Sexual Assault Co-ordinator) প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের জন্য পাঠানো এক ইমেইলে এই yourchoice.to সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য সরবরাহ করেছেন যা এখানে বাংলায় অনুবাদ করে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। অনুবাদ করেছেন টরন্টো প্রবাসী কবি ও সাংবাদিক আশরাফ আলী।
A Sexual Assault is any unwanted sexual contact. Sexual assault can happen to anyone, regardless of gender, age and cultural background. Anyone can be sexually assaulted at anytime, anywhere, by anyone. Any sexual contact that is unwanted is sexual assault.
যে কোনো অযাচিত যৌনতা সংশ্লিষ্ট ব্যবহারই Sexual Assault বা যৌন হয়রানি। মহিলা-পুরুষ, বয়স, কিংবা সম্প্রদায় নির্বিশেষে যে কেউই যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে। যে কেউ, যে কোন স্থানে যে কারো দ্বারা অযাচিত যে কোন যৌনতা সংশ্লিষ্ট স্পর্শ Sexual Assault বা যৌন হয়রানির শিকার হতে পারেন। যে কেউ, যে কোন সময়ে যে কোন স্থানে যে কাউরো দ্বারা যৌন হয়রানিগ্রস্থ হতে পারেন।
www.youchoice.to, is a one-stop shop for sexual assault survivors to find information, resources and support services that are accessible to them.
Whether their choice is to confide in a friend, go to the hospital, seek legal advice or report to police, the website is designed to empower survivors to make choices with respect to the process that is right for them.
www.yourchoice.to যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন কারো জন্যে একটি প্রকল্প যেখানে একাধারে সরাসরি সাহায্য ও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য সাহায্য সম্পর্কিত তথ্য সহজলভ্য। দুর্ঘটনা পরবর্তীতে শুধু বন্ধুর কাছেই ব্যাপারটি জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা, হসপিটালে চিকিৎসার জন্যে যাওয়া, আইনগত ব্যস্থার আশ্রয় নেয়া কিংবা পুলিশে রিপোর্ট করা – ব্যক্তির স্ব স্ব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের জন্যে যেটা সঠিক সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে এই ওয়েবসাইট
YourChoice.to was developed after receiving funding from the Ministry of Community Safety and Correctional Services for the Toronto Police Service (TPS) to partner with Ryerson University and MCIS Language Solutions to develop resources for those impacted by sexual violence.
যৌন আগ্রাসনের শিকার ব্যক্তিদের সাহায্যের লক্ষ্যে Ministry of Community Safety and Correctional Services এর অর্থানুকূল্যে টরন্টো পুলিশ সার্ভিস, Ryerson University I MCIS Language Solutions যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তাবায়ন করেছে।
This initiative was implemented through three phases; Current Guide Revision, Guide Translation and Web Design & Development.
তিন পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তাবায়ন করা হয়েছে : পূর্বের করা Guide এর পুনর্বিন্যাস, Guide এর অনুবাদ ও ওয়েবসাইটে এর ডিজাইন ও বাস্তবায়ন।
In the first phase the TPS existing “Guide to Survivors of Sexual Assault” (the Guide) was revised to focus on the emotional and physical wellbeing of sexual assault survivors and others impacted by sexual violence. This was accomplished by seeking and integrating feedback from key community partners, members of the community who work directly with sexual assault survivors as well as survivors themselves. It has over 26 pages dedicated to providing answers to questions most commonly asked by survivors of sexual assault.
প্রথম পর্যায়ে টরন্টো পুলিশ সার্ভিস যারা যৌন হয়রানির শিকার বা ওই ধরণের অন্য যে কোন যৌন আগ্রাসনের শিকার তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার লক্ষ্যে পূর্বে প্রকাশিত “Guide to Survivors of Sexual Assault” টিকে পুনর্বিন্যাস করে। এই কাজটি করা হয় কমিউনিটি পার্টনার, যারা যৌন হয়রানির শিকার এমন ব্যক্তিদের জন্যে কাজ করেন এবং যারা নিজে এর শিকার হয়েছেন তাদের সবার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। যৌন হয়রানির শিকার হবার পর সাধারণত যে বিষয় বা প্রশ্নগুলো দেখা দেয় সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর ২৬ পৃষ্ঠার এই গাইড এ সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
In the second phase the Guide was translated into 11 languages, to ensure that Torontonians from various ethno-cultural backgrounds receive assistance in a language most comfortable to them; French, Mandarin, Arabic, Tamil, Spanish, Persian (Farsi), Cantonese, Panjabi Punjabi), Portuguese, Urdu & Hungarian.
টরন্টোর বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সবাই যাতে প্রয়োজনে ঠিক সাহায্যটি পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে এই এঁরফব টি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার কাজটি ছিল দ্বিতীয় পর্য্যায়ের কাজ। ভাষাগুলো হলো : ফ্রেঞ্চ, ম্যান্ডারিন, আরবী, তামিল, স্প্যানিশ, ফার্সী, ক্যান্টোনিজ, পাঞ্জাবী, পর্তুগিজ, উর্দু ও হাঙ্গেরিয়ান।
In the final phase the Guide was developed into a web based format to maximize the Guide’ reach and accessibility. Translated copies of the Guide can be downloaded directly from www.yourchoice.to.
চূড়ান্ত বা শেষ পর্যায়ের কাজ ছিল এই Guide কে ওয়েব এ রূপান্তরিত করে ইন্টারনেট স্থাপন করা যাতে করে এর সাহায্য অধিকাংশের কাছে সহজলভ্য হয়। Guide এর ভাষাভিত্তিক অনুবাদ www.yourchoice.to থেকে সরাসরি ডাউনলোড করা সম্ভব।
The original premise of the grant was to increase police reporting of sexual assault, but during the development of the resources it became clear to us that the most important element is to provide information and resources to those impacted by sexual violence so that they can make informed choices as to what process is best for them.
প্রাথমিক ভাবে এই অনুদান এর উদ্দেশ্য ছিল যৌন হয়রানির অভিযোগসমূহ যাতে অধিকহারে পুলিশে রিপোর্ট করা হয়। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্যে তথ্য সংগ্রহের সময় এটা প্রতীয়মান হয়ে ওঠে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে তথ্যগুলো এমনভাবে পরিবেশন করা যাতে যারা যৌন হয়রানি বা আগ্রাসনের শিকার হয়ে পড়েন তারা যাতে স্ব স্ব অবস্থার প্রেক্ষিতে যেটা ভালো সেই সিদ্ধান্তটি নিতে পারেন।
To promote the YourChoice.to site, the following items were developed:
• The “Choice Campaign” – an empowering & provoking multi-faceted media strategy promoting and supporting the survivor’s right to choose what happens next; this consists of a set of 6 diverse posters;
• A promotional card (3 ½ X 2 inch) which lists the languages that the Guide is translated into;
• Pens containing the YourChoice.to logo.
Please help us share this resource by displaying the posters, making the Survivor’s Guide available and by sending people to the website. Whether someone has first-hand experience with sexual violence or not, everyone should know that survivors have choices.
YourChoice.to প্রকল্পের প্রচার ও প্রসারের জন্যে নীচের বিষয়গুলো ডেভলাপ করা হয়েছে :
– “Choice Campaign” হচ্ছে হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের সাহায্যে বহুমুখী মিডিয়া স্ট্রাটেজি যার মাধ্যমে সবাই জানতে পারবে এই ঘটনার শিকার যারা তারা দুর্ঘটনা পরবর্তীতে তাদের পছন্দ অনুযায়ী কি কি পদক্ষেপ নিতে পারবে : এই তথ্য ৬টি পোস্টার এ সন্নিবেশিত হবে।
– (3 ½ X 2 inch) সাইজের একটি কার্ড যাতে থাকবে কি কি ভাষায় এই Guide এর অনুবাদ করা হয়েছে।
– YourChoice.to লোগো সম্বলিত কলম।
Please help us share this resource by displaying the posters, making the Survivor’s Guide available and by sending people to the website. Whether someone has first-hand experience with sexual violence or not, everyone should know that survivors have choices.
এই তথ্য প্রচারে সবার সাহায্য প্রয়োজন। এই পোস্টারগুলো সবখানে টাঙিয়ে, এঁরফব টিকে সবার জন্যে লভ্য করা যেতে পারে। কেউ যৌন হয়রানির সরাসরি শিকার হোক বা না হোক, সকলে জানুক যে, যৌন এই দুর্ঘটনার পরবর্তীতে নিজের অবস্থামত সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ আছে।