কানাডায় কি পরিমাণ বিদ্বেষমূলক অপরাধ ঘটছে?
মানসম্মত সংজ্ঞা ছাড়া কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না : হিংসা বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ কাকে বলে সেই নিয়ে সারাদেশে পুলিশের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন ধারনা রয়েছে
নভেম্বর ৯, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ০৯ অক্টোবর ২০১৯ : কী করলে সেটা হেট ক্রাইম হবে সে বিষয়ে সারা দেশের পুলিশ বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে কোন কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা হেট ক্রাইমের শিকার হচ্ছে তা নির্ধারণের মত সঠিক সংখ্যা পাওয়া অসম্ভব। সিবিসির এক নতুন অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে। রিপোর্ট করেছেন সামান্থা ক্র্যাগস।
বিভিন্ন পুলিশ বিভাগ হেট ক্রাইমের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা ব্যবহার করে, যার অর্থ হলো, ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়াটি অঞ্চল ভেদে ভিন্ন। এমনকি এ ধরণের অপরাধের তদন্তকারী পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যেও ভিন্নতা দেখা যায়। কিছু পৌরসভায় হেট ক্রাইমের সমন্বিত সংজ্ঞা আছে যাতে জেন্ডার স্বাতন্ত্র্য ও তার অভিব্যক্তির বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অন্যদের আদৌ কোনও আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই।
আলবার্টা মানবাধিকার কমিশনের হেট ক্রাইম বিষয়ক কমিটির প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ক্যাম্প বলেন, সারাদেশে একটি সংজ্ঞা না থাকার অর্থ হলো হেট ক্রাইমের বিদ্যমানতা নিয়ে কানাডীয়দের কোনও যথাযথ ধারণা নেই। তিনি বলেন, এর অর্থ হলো এই অপরাধ বন্ধের জন্য কোথায় সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ধারণা নেই।
ক্যাম্প বলেন, স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর কানাডায় ১,৭৯৮টি হেট ক্রাইম ঘটেছে কিন্তু এই সংখ্যা আরও বেশি হবার সম্ভাবনা আছে।
সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “যেটা হওয়া দরকার সেটা হলো জাতীয় পর্যায়ে এর একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং তা দন্ডবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা। আর কেবল অপরাধের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য নয় বরং বেশ কিছু কারণে এটা হওয়া দরকার।” তিনি বলেন, “একটি মানসম্মত সংজ্ঞা ছাড়া কানাডায় যা ঘটছে তাতে বর্তমান পরিসংখ্যান যথাযথ নয়।”
দÐদানের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়
কানাডার দÐবিধিতে ঘৃণা প্রচারের ওপর আলাদা অনুচ্ছেদ আছে, বিশেষ করে গণহত্যার পক্ষে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে। জনগণকে উস্কানি দেওয়া বা ধর্মীয় বিষয়ে কোনও রকম অপকর্ম সম্পর্কেও অনুচ্ছেদ রয়েছে। কিন্তু এই দÐবিধিতে হেট ক্রাইমকে দÐদানের অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, প্রাথমিক অভিযোগকে হেট ক্রাইম হিসাবে বিবেচনা করা হয় না।
কিছু পুলিশ সার্ভিস যেমন অটোয়া পুলিশ সার্ভিস হেট ক্রাইমকে সংজ্ঞায়িত করে “জাতিগোষ্ঠী, জাতীয় ও সম্প্রদায়, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, যৌন প্রবণতা বা এরকম অন্য যে কোনও কারণে ঘৃণা বা বিদ্বেষ থেকে সংঘটিত অপরাধ হিসাবে।”
কুইবেক প্রাদেশিক পুলিশের আদৌ কোনও আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই।
যে ১৯টি পুলিশ বিভাগ তাদের হেট ক্রাইমের সংজ্ঞা সিবিসি নিউজকে জানিয়েছে তাদের মধ্যে আটটি জেন্ডার স্বাতন্ত্র্যের কথা উল্লেখ করেছে। মাত্র দু’একটি পুলিশ বিভাগ জানায়, তাদের সংজ্ঞায় জাতিগত বা ধর্মীয় কারণে কারো সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টি “সত্যিকার অর্থে অথবা ধারণাগতভাবে” অন্তর্ভুক্ত।
ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা
ক্যাম্প বলেন, একটি মানসম্মত সংজ্ঞা না থাকায় বিভিন্ন পুলিশ বিভাগ তাদের মাঠ পর্যায়ের অফিসারদেকে হেট ক্রাইম চিহ্ণিত করা ও তার তদন্তের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, এটি যদি কানাডার জন্য অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে থাকে তাহলে এর প্রতিফলন ঘটতে হবে একটি অভিন্ন দÐবিধিতে যাতে অফিসাররা দায়িত্ব পালনের সময় সেটি ব্যবহার করতে পারে। তাঁর ভাষায়, “দÐবিধি হলো আমাদের সমাজের নীতিবোধ, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন, আর কানাডা সব সময়ই একটি বহুমতের, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ সমাজ হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে এই অভিপ্রায়ের প্রতিফলন হিসাবে দÐবিধিতে হেট ক্রাইম বিষয়ে কোনও অনুচ্ছেদ নেই কেন?”
সিবিসি নিউজ সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচনের পর কোন কোন দল হেট ক্রাইমের একটি অভিন্ন সংজ্ঞা প্রণয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ সিবিসি সেটাই দেখতে চেয়েছিল।
লিবারেল দল বলেছিল, তারা “স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা দেশে হেট ক্রাইমের যে উপাত্ত সংগ্রহ করে সেই উপাত্ত সংগ্রহের মান ও পরিমান আরও উন্নত করবে।” ই-মেলে দেয়া এক বক্তব্যে দলটি বলেছিল, তাদের সরকার “এধরণের অপরাধের মোকাবিলায় কার্যকর ও প্রামাণ্য তথ্যনির্ভর নীতিমালা তৈরি করবে।”
কনজারভেটিভ দল ই-মেলে জানিয়েছিল, দলটি “তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধের বিচারের নীতিতে” বিশ্বাসী।
কনজারভেটিভ দল বলেছিল, “যে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে সেটি যদি যথাযথ না হয় তাহলে কনজারভেটিভ দলের সরকার সেই বিষয়টির সুরাহা করার ওপর মনোযোগী হবে।”
একটি নির্ভুল চিত্র পাবার চেষ্টা
এনডিপি দলটি বলেছিল, কানাডায় এখনও এমন ছয়টি বড় শহর আছে যেগুলোতে হেট ক্রাইম ইউনিট বলে কিছু নেই। তারা যদি নির্বাচনে জয়লাভ করে তাহলে দলটি প্রতিটি নগরে হেট ক্রাইম ইউনিট প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ ও সম্পদের যোগান দেবে। দলটির একজন মুখপাত্র ই-মেলে বলেন, “হেট ক্রাইমের একটি সুস্পষ্ট ও উপযুক্ত সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য আমরা সব প্রদেশ, বিশেষজ্ঞ ও আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করবো যার ফলে আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যবহার করি সেগুলো আরও বেশি নির্ভুল হবে।”
দ্য পিপলস পার্টি অব কানাডা বলেছিল, তারা “সংগৃহীত উপাত্তের সমরূপ হওয়া এবং অধিকতর উন্নততর করার প্রয়োজন আছে কিনা সেই বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে এবং অর্থ যোগান দেবে।”
গ্রিন পার্টি বলেছিল, “সব পুলিশ বাহিনী যাতে কানাডার হিংসা সম্পর্কিত আইন বোঝে সেটা নিশ্চিত করবে” তারা।
ক্যাম্প বলেন, হেট ক্রাইমের প্রকৃত অকুস্থলের চিত্র তুলে ধরা এবং এর বিদ্যমানতা সম্পর্কে জনগণকে জানাতে সব সরকার ও পুলিশ বাহিনীগুলো বাধ্য। “এটা করা না হলে আমরা জনগণের সেবক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি না।”