এবারের জাতীয় নির্বাচনে ১০ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন কানাডার মুসলিম সম্প্রদায় থেকে
৯ জন লিবারেল পার্টি থেকে, এদের মধ্যে ৪ জন মহিলা : ১ জন কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে
নভেম্বর ৯, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত ২১ অক্টোবর কানাডায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৪৩তম জাতীয় নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে এই প্রথম কানাডার মুসলিম সম্প্রদায় থেকে ১০ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন যা এযাবতকালের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যা। এই দশজনের মধ্যে ৯ জন নির্বাচিত হয়েছেন লিবারেল পার্টির নমিনেশন পেয়ে যার মধ্যে ৪ জনই আবার মুসলিম মহিলা। আর কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে নমিনেশন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন একজন মুসলিম পুরুষ। খবর মুসলিমলিংক.সিএ।
লিবারেল পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপিগণ হলেন ওমর আলঘাবরা, আলী এহসাসী, আহমেদ হোসেন, মজিদ জওহারী, ইকরা খালিদ, মরিয়ম মুন্সেফ, ইয়াসমীন রতানসী, মরওয়ান তাব্বারা, আরিফ ভিরানী, সালমা জাহিদ ও সামির জুবেরী। কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তার নাম জিয়াদ আবুলতাইফ।
নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি আবারো জয়ী হলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি এবার। ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ৩৩৮ টি আসনের মধ্যে লিবারেল পার্টি পেয়েছে ১৫৭ টি আসন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭০টি আসনের।
নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এন্ড্রুু শিয়ার এর নেতৃত্বাধীন কনজার্ভেটিভ পার্টি। ১২১ টি আসন পায় দলটি। তৃতীয় স্থান দখল করে বøক কুইবেকো। এই দলটি আসন পায় ৩২টি। জাগমিত সিং এর নেতৃত্বাধীন এনডিপি আসন পায় ২৪টি। আর এলিজাভেথ মে এর নেতৃত্বাধীন গ্রীন পার্টি আসন পায় ৩টি।
নবগঠিত চরম বর্ণবাদী দল পিপলস পার্টি অব কানাডা একটি আসনও পায়নি। দলের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্সিম বার্নিয়ে নিজের আসনেই পরাজিত হয়েছেন।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এখন লিবারেল পার্টিকে অন্য কোন দলের সমর্থন পেতে হবে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিল পাশ করার জন্য। তবে কৌতুহলের বিষয় হলো, এবারের নির্বাচনে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি অধিক সংখ্যক আসন পেয়ে জয়ী হলেও দ্বিতীয়স্থান পাওয়া কনজার্ভেটিভ পার্টির তুলনায় মোট ভোট পেয়েছে কম! অবশ্য এই ব্যবধান খুবই সামান্য।
মুসলিম এমপিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি –
এমপি ওমর আলঘাবরা : সিরিয়ান কানাডিয়ান ওমর আলঘাবরা লিবারেল পার্টির নমিনেশন পেয়ে এবার নির্বাচিত হয়েছেন টরন্টোর পার্শ্ববর্তী শহর মিসিসাগার ‘মিসিসাগা সেন্টার’ থেকে। টরন্টোর রায়ারসন ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পরে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রী নেন তিনি। ২০০৬-২০০৮ পর্যন্ত তিনি মিসিসাগা এরিনডেল থেকে নির্বাচিত এমপি ছিলেন। ২০১৫ সালে পুনঃনির্বাচিত হন।
এমপি আলী এহসাসী : ইরানিয়ান বংশোদ্ভূত আলী এহসাসীর জন্ম সুইজারল্যান্ডে। তিনি টরন্টোর Osgoode Hall Law School থেকে এলএলবি পাশ করেন। ২০১৫ সালেও তিনি লিবারেল পার্টির নমিনেশন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ওইলোডেল এলাকা থেকে।
এমপি আহমেদ হোসেন : আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিয়ায় জন্ম নেয়া এই আহমেদ হোসেন ২০১৫ সালে টরন্টোর ইয়র্ক সাউথ-ওয়েস্টন এলকা থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলন। এবার পুনঃনির্বাচিত হলেন। তিনি ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। অটোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।
এমপি মজিদ জওহারী : ইরানীয়ান কানাডিয়ান মজিদ জাওহারী টরন্টোর রিচমন্ড হিল এলাকা থেকে এবারের নির্বাচনে পুনরায় লিবারেল পার্টির এমপি নির্বাচিত হন। ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পাশ করেন তিনি।
এমপি ইকরা খালিদ : মিসিসাগা-এরিন মিলস এলাকা থেকে পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ইকলা খালিদ লিবারেল দলের হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালেও তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইকরা খালিদ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রিমিনলজি এ্যান্ড প্রফেশনাল রাইটিং এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ওয়েস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি জুরিস ডক্টরেট (Juris Doctorate) ডিগ্রীও লাভ করেন।
এমপি মরিয়ম মুন্সেফ : অন্টারিও’র পিটারবরো-কোয়ার্থা এলাকা থেকে আফগানিস্থানে জন্ম নেয়া মরিয়ম মুন্সেফ এবার নির্বাচনে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। তিনি প্রথমবার লিবারেল দল থেকে পাশ করেন ২০১৫ সালে। পিটারবরোর ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে মনোবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রী নেন তিনি। মিনিস্ট্রি অব ওম্যান এ্যান্ড জেন্ডার ইকুয়ালিটি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তিনি।
এমপি ইয়াসমীন রতানসী : টরন্টোর ডন ভ্যালী ইস্ট এলাকা থেকে লিবারেল দলের হয়ে তিনি পুনঃনির্বাচিত হন। তানজানিয়ায় জন্ম নেয়া ইসমাইলী সম্প্রদায়ের এই মহিলা এমপি একজন সার্টিফাইড জেনারেল একাউন্টেন্ট।
এমপি মরওয়ান তাব্বারা : অন্টারিও’র ওয়াটারলু অঞ্চলে কিচেনার সাউথ-হেসপেলার রাইডিং থেকে লিবারেল দলের হয়ে এমপি নির্বাচিত হন মরওয়ান তাব্বারা। লেবানিজ কানাডিয়ান এই এমপি গুলেল্ফ ইউনিভার্সিটি থেকে পলিটিক্যাল সাইন্সে ডিগ্রি নেন।
এমপি আরিফ ভিরানী : টরন্টোর পার্কডেল-হাইপার্ক এলাকা থেকে লিবারেল দলের হয়ে এমপি নির্বাচিত হন আরিফ ভিরানী। ২০১৫ সালেও তিনি একই দলের হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিও ইসমালী সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে পলিটিক্যাল সাইয়েন্সে ডিগ্রী নেন তিনি। পরে টরন্টো ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি ডিগ্রী নেন।
এমপি সালমা জাহিদ : টরন্টোর স্কারবরো সেন্টার এলাকা থেকে লিবারেল দলের হয়ে সালমা জাহিদ এবারের নির্বাচনে এমপি হিসাবে পুনঃনির্বাচিত হন। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করেন। পাকিস্তানে জন্ম নেয়া সালমা জাহিদ কায়েদে আযম ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পাশ করেন।
এমপি সামির জুবেরী : কুইবেক প্রভিন্সের পিয়েরফন্ডস-ডলার্ড এলাকা থেকে লিবারেল দলের হয়ে এমপি নির্বাচিত হন মন্ট্রিয়লে জন্ম নেয়া সামির জুবেরী। তার মা স্কটিস। আর বাবা পাকিস্তানী। সামির জুবেরী আইন বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব কুইবেক থেকে ডিগ্রীপ্রাপ্ত। এছাড়াও তিনি অংক শাস্ত্রে কুইবেকের কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রী প্রাপ্ত।
এমপি জিয়াদ আবুলতাইফ : জিয়াদ একমাত্র মুসলিম যিনি কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে নমিনেশন পেয়ে এবারের নির্বাচনে এডমনটন প্রভিন্সের এডমন্টন ম্যানিং এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন লেবানিজ কানাডিয়ান। ২০১৭ সাল থেকে তিনি বিরোধী দলের পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল ডেভলাপমেন্ট বিষয়ক শ্যাডো মিনিস্টার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর এই দায়িত্বের অংশ হিসাবে তিনি অনেক দেশ সফর করেছন যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।