যে ১০টি প্রতারণায় ২০১৮ সালে কানাডীয়দের সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে

এপ্রিল ৮, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত বছর বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে কানাডীয়দের ১০ কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কমপিটিশন ব্যুরো অব কানাডা এ তথ্য জানিয়েছে।

গত ১ মার্চ শুক্রবার, প্রতারণা প্রতিরোধ মাস উপলক্ষে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে যে, ক্ষতির যে অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে তা কেবল পুলিশের কাছে অভিযোগ করা ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং মোট ঘটনার পাঁচ শতাংশ মাত্র। খবর সিটিভি নিউজ এর।

কানাডীয়রা যেসব প্রতারণার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সেরা ১০টি ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো:

ডেটিং প্রতারণা

দি বেটার বিজনেস ব্যুরোর (বিবিবি) হিসাব অনুযায়ী, অনলাইনে ডেটিংয়ের যেসব প্রোফাইল রয়েছে তার ৩০শতাংশই ভুয়া। সংস্থাটি জানায়, অন্য যে কোনও প্রতারণার চেয়ে রোমান্স নিয়ে প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক বেশি কানাডীয় এবং এই ধরনের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। প্রতারকরা নিজেরাও নতুন নতুন কায়দা বের করছে, তাদের শিকারদেরকে বিভিন্ন অপরাধের পাশাপাশি নানা ধরণের পণ্য ও মাদক চুরি এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদে ফেলছে।

বিবিবির পরামর্শ:

– আপনি কাদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং আপনাকে নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য কি সেটা সব সময় জেনে নিন।

– ডেটিংয়ের সাইটে গেলে কখনও দেখা হয়নি এমন কারো কাছে অর্থ পাঠাবেন না বা ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য শেয়ার করবেন না।

– যদি তাদেরকে খুব বেশি আগ্রহী মনে হয় তাহলে বুঝে নেবেন এটিই এক সতর্ক সঙ্কেত

আয়কর আদায়ের নামে কেলেঙ্কারি

কানাডার অনেক মানুষই টেলিফোন করে হুমকি দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে পরিচিত যেখানে টেলিফোনকারী নিজেকে কানাডার রাজস্ব বিভাগের এজেন্ট হিসাবে পরিচয় দেয় এবং টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেয়। একই ধরণের হুমকি আসতে পারে টেক্সট মেসেজ, চিঠি বা ই-মেলের মাধ্যমেও। এ ব্যাপারে ব্যাপকতর সচেতনতা থাকলেও বিবিবি জানাচ্ছে, এ ধরণের প্রতারণায় দেশের মানুষ ৬০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ হারিয়েছে।

বিবিবির পরামর্শ:

– সিআরএসহ কানাডার সরকারি সংস্থাগুলো বিটকয়েন বা গিফট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করে না।

– তারা কোনরকম হুমকি দিয়ে কোনও ফোনকল করে না কিংবা টেলিফোনে বা ই-মেলে কোনও ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য লেনদেন করে না।

অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা

এধরনের প্রতারণার হার দৃশ্যত কমে আসছে। ২০১৭ সালে কানাডার মানুষ অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণার শিকার হয়ে এক কোটি ত্রিশ লাখ ডলারের বেশি অর্থ খুইয়েছে। চলতি বছর এধরনের প্রতারণার পরিমাণ কমে এলেও এতে ৩৫ লাখ ডলারের বেশি অর্থ খুইয়েছে কানাডাবাসী।

বিবিবির পরামর্শ :

– যদি বিষয়টি যথেষ্ট সত্য বলে মনে হয় তাহলে সেটা সম্ভবত সত্যিই।

– সবসময় বৈধ ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করুন এবং কখনই অচেনা মানুষকে টাকা দেবেন না।

– অনলাইনে কেনাকাটার সময় আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন, সবসময় শুধু নিরাপদ পোর্টাল ব্যবহার করুন এবং আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য নিয়মিত চেক করুন।

চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা

চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার শিকার হয়ে কানাডীয়রা ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ লাখ ডলার হারিয়েছে। বেটার বিজনেস ব্যুরো জানায়, এই প্রতারণাচক্র ভেঙ্গে দেওয়া কঠিন হয়ে উঠছে কারণ প্রতারকরা মনস্টার, ইনডিড এবং লিঙ্কডইন-এর মতো স্বনামখ্যাত সেবাদাতা সংস্থাগুলোর মাধ্যমেই প্রতারণা করছে। এধরণের প্রতারণার শিকার হচ্ছে মূলত কোনও এক সময় বঞ্চিত হওয়া মানুষেরা যেমন ছাত্র, অভিবাসী, প্রাক্তন দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা।

বিবিবির পরামর্শ:

– আপনি যদি কোন চাকরির জন্য আবেদন করে না থাকেন তাহলে সেই চাকরির জন্য আপনাকে ডাকার কোনও কারণ নেই।

– কোনও স্বনামখ্যাত কোম্পানিই আপনাকে চেক ভাঙ্গিয়ে কোম্পানির নামে বা তাদের কোনও কর্মচারীর কাছে অর্থ ফেরত পাঠাতে বলবে না।

ফিশিং

ফিশিংয়ের একটি ব্যাপকতর অর্থ আছে। তবে সাধারণভাবে এটি দিয়ে সেইসব প্রতারকচক্রকে বোঝানো হয় যারা নিজেরা যতটুকু নয় তার চেয়েও বড় করে দেখায়।

বিবিবির পরামর্শ:

– সব সময় মনে রাখবেন , অচেনা কোনও ই-মেল থেকে আসা লিঙ্কে ক্লিক করা বা নিজের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা উচিৎ নয়। আপনি যেসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করেন সেখান থেকে পাঠানো বলে দাবি করা কোনও মেল সম্পর্কে মনে সন্দেহ দেখা দিলে সেখানে দেওয়া তথ্য ঠিক কিনা তা জানতে সরাসরি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

সাবসক্রিপশন নিয়ে প্রতারণা

আপনি যখন অনলাইনে ব্রাউজিং করছেন তখন ত্বকের যতœ বা ওজন কমানোর বড়ির কোন বিজ্ঞাপন দেখতে পেলে সেটা কিন্তু সাবসক্রিপশন নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে। অনেক সময় প্রতারকরা একজন সেলিব্রিটির ভুয়া অনুমোদন ব্যবহার করে কিংবা অন্যান্য ভুয়া আত্মপ্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে। শেষ পর্যন্ত আপনার নামে অনেক গোপন শর্তসহ বিরাট অঙ্কের মাসিক বিল পাঠিয়ে দিতে পারে।

বিবিবির পরামর্শ:

– স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনও দাবি, যেমন ওজন কমানোর বড়ি, বৈজ্ঞানিক সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বিজ্ঞাপনে যে দাবি করা হচ্ছে তার স্বপক্ষে প্রমাণ হিসাবে সেই বড়ির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করানো থাকতে হবে।

– পরীক্ষা করা হয়নি এমন কোনও দ্রব্য সেবন করলে সেটা ক্রেতার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

– বানোয়াট বৈজ্ঞানিক রিপোর্টের ব্যাপারেও যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।

ঋণের আগাম ফি দাবি

কানাডায় ঋণদাতারা ঋণ দেবার আগেই কারো কাছে অগ্রিম ফি দাবি করতে পারে না। এধরনের প্রতারণায় জড়িত লোকেরা সাধারণত আর্থিক টানাপোড়নে থাকা লোকজন এবং যারা ঋণ পাবার যোগ্য বিবেচিত হয় না তাদেরকে শিকারে পরিণত করে। শেষ পর্যন্ত হয়তো দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত লোকটি ফি দিয়েছেন কিন্তু কখনই ঋণ পাননি।

বিবিবির পরামর্শ:

– আপনার যদি ঋণের প্রয়োজন হয় আর কোম্পানিটি যদি আগেই ফি দাবি করে কিংবা তারা যদি ঋণের চেক না দিয়ে কোনও গ্যারান্টিযুক্ত অনুমোদনপত্রও দেখায় তাহলে ¯্রফে সেখান থেকে বেরিয়ে আসুন।

কারিগরি সহায়তা নিয়ে প্রতারণা

কমপিউটার ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার নিয়ে প্রতারণার ঘটনা একটি স্থায়ী হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ প্রযুক্তিগত সহায়তার নামে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এধরনের প্রতারকরা কোনও বিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন অ্যাপল বা মাইক্রোসফট-এর প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছে যায় এবং সহায়তার প্রস্তাব দেয়। তারা এমনসব সেবা দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ নিয়ে যায় যেটা হয়তো মোটেই “দরকারি নয় এমনকি ক্ষতিকর”।

বিবিবির পরামর্শ:

– আপনি যে কোম্পানর সঙ্গে কথা বলেছেন সেই কোম্পানির কমপিউটার সাপোর্ট টিমের সদস্য হিসাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনও ব্যক্তির হাতে আপনার কমপিউটারের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেবেন না।

– আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, বৈধ প্রযুক্তি সহায়ক কোম্পানিগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে কাউকে টেলিফোনে কল করে না।

গৃহ সংস্কার নিয়ে প্রতারণা

এটিকে বিবিবি বলেছে, “সবচেয়ে প্রাচীন কেলেঙ্কারীর অন্যতম”। প্রতারকরা বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ির সংস্কারের কথা বলে টাকা নেয়। কিন্তু পরে খুবই যেনতেনভাবে কাজ সারে, কাজ অসম্পূর্ণ রাখে, খুব খারাপভাবে কাজটা করে অথবা একেবারেই করে না।

বিবিবির পরামর্শ:

– আলোচনা না করে কোনরকম প্রস্তাবের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, আগে টাকা শোধ করে দিতে হয়, এমন চুক্তিতে, চাপাচাপি করে বিক্রির কৌশল, আগেই বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয় এবং চুক্তি ছাড়া লেনদেন বর্জন করুন।

– বিশ্বাসযোগ্য কোম্পানি সম্পর্কে জানতে এবং আপনি যে কোম্পানিকে ডাকবেন বলে ভাবছেন সেটির সঙ্গে কাজ করে অন্যদের অভিজ্ঞতা কেমন হয়েছে সে বিষয়ে জানতে সব সময় বিবিবি.অর্গ ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।

– একটু শ্রম দিলে শেষ পর্যন্ত আপনার যথেষ্ট লাভ হবারই সম্ভাবনা।

ব্যাংকের তদন্তের নামে প্রতারণা

বিবিবি জানায়, ব্যাংকের তদন্তের নামে প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারকরা ভিকটিমদেরকে সচরাচর খুব সকালে টেলিফোনে কল করে। তারা ব্যাংকের এমন একজন প্রতিনিধি হওয়ার ভান করে যার কাছে ভিকটিমের অ্যাকাউন্টে প্রতারণামূলক লেনদেনের তথ্য আছে। এরপর তারা ভিকটিমকে এ বিষয়ে স্বমতে আনে। ভিকটিম লোকটি হয়তো ওই মুহূর্তে ঘুমের ঘোরের মধ্যে আছেন বা তেমন মনোযোগী হতে পারেননি। তাই ব্যক্তিগত আর্থিক তথ্য দিয়ে দেন।

বিবিবির পরামর্শ:

– নিজেকে ব্যাংকের প্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা বা তদন্তকারী হিসাবে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের ভোরবেলার ফোনকল সম্পর্কে সতর্ক হোন।

– ব্যাংক কখনও কাউকে কোনও তদন্তে সামিল হতে বা নিরাপত্তার জন্য অ্যাকাউন্টের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলে না।