নিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা : নিহত ৫০ :

কানাডার মসজিদগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

মার্চ 15, 2019

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইসচার্চ শহরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত দুই বাংলাদেশী। ছবি : সংগৃহীত

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ১৫ মার্চ শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইসচার্চ শহরে অবস্থিত দুটি মসজিদে জুম্মার নামাজ এর সময় এক সন্ত্রাসীর অতর্কিত বন্দুক হমলায় ৫০  জন মুসল্লি নিহত হন। এদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশীও রয়েছেন। সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৪৮ জন।
এএফপি’র এক খবরে বলা হয়, নিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর কানাডার মসজিদগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । প্রতিটি মসজিদে পুলিশি টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশিরা হলেন: স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ ও একজন গৃহবধূ হোসনে আরা পারভীন। নিহত ড. সামাদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। পরে আরো যাদের মৃতু্্যর সংবাদ জানা যায় তারা হলেন, মতলবের ডা. মোজাম্মেল হোসেন সেলিম (৩০), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জাকারিয়া ভূঁইয়া (৩৪) ও নারায়ণগঞ্জের ওমর ফারুক (৩৫)।  এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা। ঐ সময় তারা হামলার শিকার মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন। তবে তারা যখন সেখানে উপস্থিত হন, তার মাত্র কয়েক মিনিট আগে হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় এক মহিলা খেলোয়াদেরকে মসজিদের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে তাদের বারণ করেন সেখানে না যেতে। এই হামলার পর নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যেকার তৃতীয় ও শেষ টেস্ট বাতিল করা হয়।

হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে এক নারীসহ চারজনকে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি আইইডিএস ( ইমপ্র“ভড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরক স্থাপন করা একটি গাড়ি পেয়েছে। পরে বিস্ফোরকগুলো নিস্ক্রিয় করা হয়।
ক্রাইস্টচাচের স্থানীয় সময় দেড়টা দিকে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের উপর স্বয়ংক্রিয় বন্ধুক নিয়ে হামলা চালায় এক হামলাকারী। হামলার ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ প্রচার চালান অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত ঐ শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি। দুই বছর ধরে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা যায়। হামলাকারী বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বিদেশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করেন।
এদিকে হামলার পর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে টুইটারে এক বিবৃতি প্রকাশ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “দেশব্যাপী কানাডিয়ান নাগরিকেরা নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় হতভম্ব। ঐ হামলায় অনেক লোক নিহত ও আহত হয়েছেন যাদের মধ্যে রয়েছে কয়েকজন শিশু।
সন্ত্রাসী ঐ হামলার ঘটনায় যারা তাদের আত্মীয়-বন্ধুদের হারিয়েছেন আমরা তাদের প্রতি আমাদের গভীরতম সমবেদনা জানাচ্ছি। নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী এবং সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের বার্তা- আপনারা আছেন আমাদের হৃদয়ে এবং অন্তরে। আমরা আপনাদের এই শোকবহ দিনে আপনাদের পাশে আছি।”

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইসচার্চ শহরে সন্ত্রাসী হামলা চালান এই ব্যক্তি ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার বিবৃতিতে কানাডার কুইবেক সিটিতে ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারী সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মুসল্লিদের কথাও স্মরণ করেন। আলেক্সান্ডার বিসোনেট (২৯) নামের এক ব্যক্তি ঐ দিন নামাজের সময় কুইবেক সিটি ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে নির্বিচারে গুলি ছোড়েন। এতে ছয়জন নিহত ও আটজন আহত হন।
উল্লখ্য যে, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারী ব্যক্তির ব্যবহৃত গুলির বক্সের উপর এই আলেক্সান্ডার বিসোনেট এর নাম অঙ্কিত ছিল।
জাস্টিন ট্রুডো তার বিবৃতিতে আরো বলেন, “বিশ্বকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ডাইভার্সিটিকে স্বীকৃতি দিতে হবে শক্তির উৎস হিসাবে, হুমকী হিসাবে নয়। কানাডা এই হামলাকে নিন্দা জানায়। আমরা হিংসাত্মক চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব আমাদের নিকটতম সহযোগী ও বন্ধু দেশ নিউজিল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলিতভাবে। আমরা সকলে মিলে অবশ্যই ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে যাব এবং এমন একটি বিশ্ব পরিবেশ সৃষ্টি করবো যেখানে সবাই নিজেদেরকে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত মনে করতে পারেন। কার কি ধর্ম বিশ্বাস সেটি কোন বিবেচ্য বিষয় হবে না। ”

ঘটনার নিন্দা জানান কানাডার বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রধান এন্ড্রু শিয়ার-ও। তিনি বলেন, “এ ধরণের নিষ্ঠুর ঘৃণার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ভাষা নেই। হামলায় যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের শান্তির জন্য আমি প্রার্থনা করছি এবং যারা আহত হয়েছেন তারা যেন আরোগ্যলাভ করেন সেই প্রার্থনাও করছি। আমি বিশ্বাস করি, সমস্ত মানুষ অবশ্যই স্বাধীনভাবে এবং ভয় ছাড়া তাদের ধর্ম পালন করার অধিকার রাখেন।”
এ ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডের্ন টুইটে বলেছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চে নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার জায়গা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে নিউজিল্যান্ডের অভিবাসী সম্প্রদায়ের। নিউজিল্যান্ডই তাদের বাড়ি। তারা আমাদের লোক।’
বিশ্বের অন্যন্য নেতৃবৃন্দও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। বাংলাদেশের প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে গুলি চালিয়ে অনেক লোক হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা অর্ডেনের কাছে পাঠানো এক শোক-বার্তায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গুলি চালিয়ে অনেক লোকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
– সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি