টরন্টোতে চালু হলো নারীদের মসজিদ

‘এটা এমন জায়গা যেখানে আমরা নিরাপদ থাকবো’

৬ জুন, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার টরন্টোতে একটি নতুন মসজিদ চালু হলো। এই মসজিদের ধারণা এসেছে ফর উইমেন বাই উইমেন-এর মূল চিন্তা-ভাবনা থেকে। ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়ার প্রেক্ষাপটে টরন্টোর মুসলিমদের একটি গ্রুপ এই মসজিদটিকে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন নিকোল বোগার্ট।

কানাডার নারীদের এই মসজিদে শুক্রবার প্রথম জুম্মার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম নারীরা যাতে তাদের বিশ্বাসের অনুশীলন করতে পারে এবং ইসলামভীতিজনিত আক্রমণের মুখে প্রশান্তি লাভ করতে পারে সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংগঠকরা বলছেন, ইসলামভীতিজনিত হামলা তাদের সমাজে নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

ট্রিনিটি-সেন্ট পল’স ইউনাইটেড চার্চে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে জুম্মার জামাত শুরুর সামান্য আগে নারী মসজিদের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফারহিন খান টেলিফোনে সিটিভি নিউজকে বলেন, “আমিসহ অনেক নারী আছেন যারা নারী-পুরুষের বৈষম্যজনিত ইসলামোফোবিয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং আক্রমণের শিকার হয়েছেন।”

গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার টরন্টোতে মহিলাদের একটি নতুন মসজিদ চালু হলো। ছবি : সিটিভি

১৯শে এপ্রিলের ওই জুম্মার জামাতের জন্য জায়গার অনুমোদন দেন বিশ্বাস, ন্যায়বিচার ও শিল্প বিষয়ক ট্রিনিটি-সেন্ট পল’স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা।

রেভারেন্ড ড. চেরি ডিনোভো নামের ওই ব্যক্তি বলেন, “আমি মনে করি, বিশ্বাসী মানুষের ওপর, সে তাদের বিশ্বাস যাই হোক না কেন, এটা এক নিরঙ্কুশ দায়িত্ব যে তারা আজকের দিনে ভালোবাসা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে। যখন ইসলামোফোবিয়ার ক্রমবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি সেই সময়ে আমরা এই সময় থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমরা ইহুদিবাদবিরোধিতা বেড়ে যেতে দেখছি, আর আমি মনে করি, খ্রিস্টান হিসাবে আমাদেরকে সত্যিকার অর্থেই খ্রিষ্টবাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে, আমাদের প্রতিবেশিদের ভালোবাসতে হবে, সে প্রতিবেশী যেই হোক না কেন। তবে বিশেষ করে আমাদের বোনেদের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি জায়গায় থাকতে চাই যেখানে আমরা নিরাপদ থাকতে পারি, যে জায়গাটা পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে এবং প্রশান্তি এনে দিতে সহায়ক হবে।”

উল্লেখ্য, খ্রিস্টীয় বিশ্বাস অনুযায়ী গুড ফ্রাইডেতে এবং ইসলামী সন অনুযায়ী ১৫ শাবানের প্রাক্কালে ওই জুম্মার জামাত অনুষ্ঠানকে ডিনোভো এক “ঐতিহাসিক দিন” হিসাবে অভিহিত করেন।

ফারহিন খান বলেন, প্রতি পক্ষে এক শুক্রবারে জুম্মার জামাত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফর উইমেন বাই উইমেন সংগঠকরা এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার আশা করছেন যেটি কেবল তার সদস্যদের বিশ্বাসকে সমর্থন করবে তাই নয় বরং মুসলিমবিরোধী মনোভাব উস্কে দেয় যেসব সামাজিক বাধা সেগুলো ভেঙ্গে ফেলার কাজও করবে।

নারীদের মসজিদ স্থাপনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয় বিভিন্ন বড় ধরণের হামলার ঘটনার পর। এসব হামলার মধ্যে রয়েছে গত মাসে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে ভয়াবহ হামলা এবং ২০১৭ সালে কুইবেকে মসজিদে হামলার ঘটনা।

ওই সহিংসতা সম্পর্কে খান বলেন, “আমার এমন বোধ হয়েছে যেন মসজিদের পবিত্রতার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।”

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সর্ব সাম্প্রতিক ডেটা থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের ঘটনা ৪৭শতাংশ বাড়লেও মুসলিমদের লক্ষ্য করে চালানো ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ১৫১ শতাংশ।

এধরণের হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অন্টারিও ও কুইবেকে। এই দুই প্রদেশে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন হামলার ঘটনা বেড়েছে যথাক্রমে ২০৭ শতাংশ ও ১৮৫ শতাংশ।

টরন্টোর ট্রিনিটি-সেন্ট পল’স ইউনাইটেড চার্চে জামাত অনুষ্ঠানের আগে তারা সেখানে মসজিদের উদ্বোধন করেন।

খান বলেন, তারা মনে করছেন, নারীদের মসজিদ টরন্টোর বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে। মুসলিম নারী ও তাদের বন্ধুদের মসজিদে স্বাগত জানান খান।

তিনি বলেন, “আমরা সত্যিই একটি শান্তিপ্রিয় কমিউনিটি। মুসলিমবিরোধী বিতর্ক সত্তেও আমরা ঘৃণা নয় ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চাই।”

“আমরা আমাদের মাথায় হিজাব পরা এবং আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনাচরণ অব্যাহত রাখবো।”