কানাডায় অভিবাসী পরিবারগুলোর সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে
মে ৫, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯ : দুই দশকের বেশি সময় ধরে কানাডায় বসবাসরত অভিবাসী পরিবারগুলো এই দেশে জন্মগ্রহণকারী কানাডীয়দের চেয়ে বেশি সম্পদশালী। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার নতুন তথ্যে এমনটাই বলা হয়েছে। খবর সিবিসি নিউজের
সংস্থার তথ্যে দেখা গেছে, গত দুই দশকে সার্বিকভাবে উভয় গ্রুপের লোকেদেরই সম্পদের বড় ধরণের বৃদ্ধি ঘটেছে।
যেসব প্রতিষ্ঠিত অভিবাসী পরিবারের মধ্যে প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তির বয়স ৪৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে এবং যারা অন্ততপক্ষে ২০ বছর আগে এদেশে এসেছেন তাদের সম্পদের পরিমাণ গড়ে ১৯৯৯ সালের ৬ লাখ ২৫ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ১০ লাখ ৬ হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে অর্থাৎ ৬৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
তুলনায় যেসব পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তিটি কানাডায় জন্মগ্রহণ করেছেন সেইসব পরিবারের সম্পদ কম বেড়েছে যা গড়ে ৫ লাখ ১৯ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে নয় লাখ ৭৯ হাজার ডলারে। বৃদ্ধির পরিমাণ চার লাখ ৬০ হাজার ডলার বা ৮৮ শতাংশের বেশি।
পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থাটি বলছে, এই পার্থক্যের একটি কারণ এই হতে পারে যে, অভিবাসী পরিবারগুলোর বেশিরভাগেরই অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হলো রিয়েল এস্টেট। কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের পরিবারের তুলনায় অভিবাসী পরিবারগুলো সাধারণত সম্পদের বৃহদংশ বিনিয়োগ করে গৃহায়ন খাতে কিন্তু তাদের মোট সম্পদ অপেক্ষাকৃত কম।
অভিবাসী পরিবারগুলোর সম্পদের গড়ে ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধির কারণটা বোঝা যাবে গৃহায়ন খাতে তারা যে নিরপেক্ষতার সুযোগ পায় তা থেকে লাভবান হওয়ার মধ্যে। তুলনামূলক বিচারে অভিবাসী পরিবারগুলোকে দেওয়া এই নিরপেক্ষতার সুবিধার পরিমাণ ৩৯ শতাংশ।
অন্যদিকে কানাডায় জন্মানোদের পরিবারগুলোর সম্পদ অর্জনের কারণ হলো তাদের পেনশন প্ল্যানের সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে অভিবাসী পরিবারগুলোর জন্য দেয় সুবিধার পরিমাণ মাত্র ১৭ শতাংশ।
আবাসন খাত অভিবাসীদের বিনিয়োগের অগ্রাধিকার হওয়ার পেছনে একটি কারণ হতে পারে তাদের ঋণগ্রহণের ইচ্ছাও। প্রতিষ্ঠিত অভিবাসী পরিবারগুলোর আয় ও ঋণের অনুপাত ২০১৬ সালে ছিলো ২.১৭ যা কানাডায় জন্মানো পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে ১.৩২।
স্ট্যাটিস্টিক কানাডা বলছে, “সুনির্দিষ্টভাবে সমীক্ষায় এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, একই বয়সের কানাডায় জন্মানোরা যেমনটা করে থাকে সেই তুলনায় অভিবাসী পরিবারগুলো ব্যাপকতরভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শোধ করতেই হবে এমন ধরণের ঋণ গ্রহণ করেছে, নিবন্ধিত অবসর সঞ্চয় পরিকল্পনার অর্থ তুলে নিয়েছে বা তাদের মাসিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের স্থিতির কেবল আংশিক পরিশোধ করেছে।”
দক্ষ অভিবাসীদের ওপর গবেষণাকারী ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জেলেনা জিকিক বলেন, “তাদের মানসিক গঠনটাই এমন যে তারা নিরাপদ থাকতে চায়।” সুতরাং সম্পদের মই বেয়ে ওঠার আগ্রহও তাদের মধ্যে এক ধরনের বোধশক্তির জন্ম দেয়।
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ অভিবাসী এমন চিন্তায় উদ্বুদ্ধ যে, ‘আমার সন্তান যেন ভালো থাকে। তারা একটি নতুন জায়গায় এসে নিজেদের অবস্থান হারানোর শঙ্কার মধ্যে থাকে, সুতরাং তারা সব সময়ই নিজেদের সুরক্ষাার জন্যই বাস্তবসম্মত বিনিয়োগ পছন্দ করে।’”
কানাডায় যত বেশিদিন ধরে বসবাস করছে ততই অভিবাসীরা সম্পদশালী হচ্ছে এটা হয়তো উৎসাহব্যঞ্জক, তবে জিকিক বলেন, তারা অতো সহজে সম্পদশালী হয়নি বরং এর উল্টোটাই আসলে সত্যি।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য অভিবাসীরা কানাডায় আসেন এবং তারপর তাদেরকে স্বল্প-বেতনের চাকরি নিতে বলা হয় কারণ তাদের যোগ্যতার সনদ কানাডায় গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কাহিনী অহরহ শোনা যায়, এটা এমন একটি বিষয় যা তাদের জন্য যেমন খারাপ তেমনই কানাডার সমাজের জন্যও।
জিকিক বলেন, “এর একটি সীমিতকরণের প্রতিক্রিয়া আছে, তারা আসছে কিন্তু সব সময় খুব সহজে এগুতে পারছে না।”
তিনি আরও বলেন, যারা সফল হতে পারছে তারা তাদের স্থিতিস্থাপকতার গুণের কারণেই সফল হচ্ছে। কানাডায় আসার জন্য তাদের মধ্যে অত্যন্ত জোরালো আগ্রহ থাকে, সুতরাং এখানে আসার পর ওপরে ওঠার জন্য তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকে