আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনে প্রত্যেক মুসলিমকে ভোট দেওয়ার আহবান জানালেন কানাডার ৬৯টি মসজিদের ইমাম

মে 5, 2019

টরন্টোর বসনিয়ান কালচারার সেন্টারের জুম্মার জামাতে ইমাম ফারাজ রব্বানী বলেন, “ইমানদার মানুষ হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক দায়িত্ব আছে এবং আমাদের ইমান বা বিশ্বাস এই দায়িত্ববোধ সাপেক্ষ। তিনি বলেন, ভোট দেওয়া সেই দায়িত্বগুলোর অন্যতম। ছবি : সিবিসি

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক , ১৯ এপ্রিল ২০১৯: আগামী অক্টোবরে কানাডায় সাধারণ নির্বাচন। একটি নির্দলীয় গ্রুপ আশা করছে যে, এবারের নির্বাচনে মুসলিমদের ভোট পড়বে অন্য যে কোন নির্বাচনের চেয়ে বেশি। গ্রুপটি সর্বাধিক সংখ্যক মুসল্লীর সমাগম হয়েছে এমন একটি জুম্মার নামাজের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যেখানে একটিই বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর সেই তা হলো, প্রত্যেক ভোটার যেন তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।

পবিত্র শুক্রবার বা গুড ফ্রাইডেতে আলবার্টা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অন্টারিও, নোভা স্কশিয়া এবং কুইবেক এই পাঁচটি প্রদেশের ৬৯টি মসজিদের ইমামরা জুম্মার নামাজে চারটি ভিন্নভিন্ন ভাষায় একটি সমন্বিত খুতবা পাঠ করেন। খুতবায় ভোট দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। খবর সিবিসি নিউজের।

টরন্টোর বসনিয়ান কালচারার সেন্টারের জুম্মার জামাতে ইমাম ফারাজ রব্বানী বলেন, “ইমানদার মানুষ হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক দায়িত্ব আছে এবং আমাদের ইমান বা বিশ্বাস এই দায়িত্ববোধ সাপেক্ষ। তিনি বলেন, ভোট দেওয়া সেই দায়িত্বগুলোর অন্যতম। ছবি : সিবিসি

টরন্টোর বসনিয়ান কালচারার সেন্টারের জুম্মার জামাতে ইমাম ফারাজ রব্বানী বলেন, “ইমানদার মানুষ হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক দায়িত্ব আছে এবং আমাদের ইমান বা বিশ্বাস এই দায়িত্ববোধ সাপেক্ষ।” তিনি বলেন, ভোট দেওয়া সেই দায়িত্বগুলোর অন্যতম। ইমাম রব্বানীর ভাষায়, “ধর্মের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাসীরা নিজের এবং অন্যদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে এবং অকল্যাণ দূর করার প্রয়াস চালিয়ে যাবে।”

কানাডার মুসলিম ভোট শীর্ষক একটি নির্দলীয় ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ ছিলো শুক্রবারের এই উদ্যোগ। কানাডার মুসলমানদের খুব কম সংখ্যকের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিদ্যমান চক্র ভেঙ্গে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। তাদের ভাষায়, মুসলিম ভোটারদের স্বল্প সংখ্যকের ভোটদান নির্বাচনের ওপর বাস্তব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

৬৫টি আসনে জনসংখ্যা এমন যে তারা ভিন্ন ফলাফল বয়ে আনতে পারে

গুড ফ্রাইডে মুসলমানদের ছুটির দিন নয়, তবে কানাডায় এটি বৈধ ছুটির দিন (যীশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ও পুনরুত্থান দিবস হিসাবে)। তাই এদিনে মসজিদগুলোতে জুম্মার জামাতে সাধারণত বিপুল মুসল্লির সমাগম ঘটে।

২০১১ সালের সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী কানাডায় ১০ লাখ মুসলমান রয়েছে। চলতি বছর সিএমভি (কানাডিয়ান মুসলিম ভোট) বলেছে যে, দেশটিতে বৈধ মুসলিম ভোটোরের সংখ্যা হবে ১৬ লাখের মতো।

আর স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার হিসাব অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কানাডায় প্রতি ১০ জনে একজন হবে মুসলিম। এর অর্থ হলো, মুসলিমরা দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোটদাতা জনগোষ্ঠী হতে যাচ্ছে।

ইলেকশনস কানাডার গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য যে কোন ধর্মীয় গ্রুপের চেয়ে মুসলিমরা ঐতিহাসিকভাবেই ভোট দিতে যায় সবচেয়ে কম। নির্বাচনী সংস্থার এক কর্মপত্রে বলা হয়, ২০০০ সালের নির্বাচনে মুলিমদের ভোটদানের পরিমাণ ছিলো ৬৭ শতাংশ। সেই তুলনায় ইহুদিদের ভোটদানের পরিমাণ ছিলো ৮৫ শতাংশ, ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্টদের ৮২ শতাংশ আর হিন্দুদের ৭৮ শতাংশ। জাতীয় পর্যায়ে ভোটদানের পরিমাণ ছিলো ৬১.২ শতাংশ।

২০১৫ সালের নির্বাচনে ওই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। নির্বাচনের পর মেইনস্ট্রিট রিসার্চের এক জরিপ অনুযায়ী, সেবার ৭৯ শতাংশ মুসলিম ভোটার ভোট দেয়। অথচ ওই নির্বাচনে জাতীয় পর্যায়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের হার ছিলো ৬৮.৫ শতাংশ।

চলতি বছর কানাডিয়ান মুসলিম ভোটের গবেষণা অনুযায়ী, ৬৫টি আসন আছে যেখানে ২০১৫ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যে পরিমাণ ভোটের প্রয়োজন হয়েছে সেই হারের চেয়ে মুসলিম ভোটার বেশি।

দেশে লোকরঞ্জনবাদী আন্দোলন চলেছে

মুসলিম ভোট নির্বাচনে সিদ্ধান্তমূলক হয়ে উঠতে পারে এমন একটি নির্বাচনী আসন হলো অন্টারিওর মিল্টন আসন। গত নির্বাচনে এখানকার এমপি ২,৪৩৮ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। সিএমভির নির্বাহী পরিচারক আলী মানেক সিবিসি নিউজকে বলেন, মুসলিমরা জোটবদ্ধ হয়ে ভোট দেয় না, তবে মিল্টন আসনে প্রায় আট হাজার মুসলিম ভোটার রয়েছে যারা নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট।

তাহলে কানাডার মুসলমান ভোটারদের সামনে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় কোনটি?

মানেক বলেন, আমাদের গবেষণা এবং সামাজিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কানাডার মুসলিম কমিউনিটিতে আমরা যেটি দেখি সেটা হলো, কানাডার অন্যান্য জনগোষ্ঠী যেমনটা ভাবে মুসলিমদের ভাবনাও সেই রকম: চাকরি, অর্থনীতি, ট্যাক্স, অভিবাসন এবং বৈদেশিক সহায়তা এগুলোই প্রধান ইস্যু।

ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতিও আরেকটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।”

গ্রুপটি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়া মুসলিমদের ওপর সমীক্ষা চালানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। তারা আশা করছে চলতি মে মাসেই মুসলমানদের মূল উদ্বেগের বিষয়গুলি সম্পর্কে গবেষণার ফলাফল তারা পাবে।

এই গ্রুপের একজন স্বেচ্ছাসেবী আজিজা মোহাম্মেদ শুক্রবারের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। তিনি বলেন, আসন্ন ফেডারের ইলেকশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যখন এমন রাজনৈতিক দল আছে যারা সক্রিয়ভাবে বর্ণবাদ এবং ইসলামবিদ্বেষ ছড়ায় তখন সেটার বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের জন্যও সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।”

আজিজা বলেন, “দেশে একটি লোকরঞ্জনবাদী আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করেছে যেটি কানাডার আদর্শ এবং মুসলিমদের আদর্শের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।”

শুক্রবারের সমাবেশের মূল বার্তার মধ্যে একটি ছিলো এমন যে: মুসলমানদের কেবল নিজেদের কথা মাথায় রেখে ভোট দিলে চলবে না বরং তারা যে সমাজে বসবাস করে সেই বৃহত্তর সমাজে কী প্রতিক্রিয়া হবে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। রব্বানী বলেন, “স্থানীয় রাজনীতির চেয়েও অনেক বড় বিষয় নিয়ে ভাবুন।”

মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত বসনিয়ান সেন্টারে আগমনকারী ওগুজ সারকুটের জন্য এটি ছিলো নতুন উপলব্ধির বিষয়: “আমরা যদি ভোট না দিই তাহলে আমাদের অভিযোগ করার অধিকার থাকবে না।”