অভিবাসন এবং অশ্বেতাঙ্গ নবাগতদের প্রতি মনোভাব নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠতে পারে

জুন ৬, ২০১৯

রায়ান ম্যালোনি : নতুন এক জরিপে বলা হয়েছে, অভিবাসন এবং কানাডায় উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখা অশ্বেতাঙ্গ নবাগতদের প্রতি মনোভাব চলতি শরৎকালে নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।

সোমবার প্রকাশিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকেওএস-এর জরিপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ কানাডীয় মনে করে, অনেক বেশি সংখ্যক অভিবাসী এদেশে আসছে।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফ্রাঙ্ক গ্রেভস হাফিংটন পোস্টকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তারা যেটা দেখে আসছেন অভিবাসীবিরোধীর সংখ্যা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ’৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে যখন ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ অভিবাসনের বিরোধী ছিলো তখনকার চেয়ে অভিবাসীবিরোধীর সংখ্যা এখন আসলে কমেছে।

তবে জরিপে এটাও প্রতিফলিত হয়েছে যে, নবাগতদের বিশেষ করে যারা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু তাদের স্বাগত জানাতে অনীহা এখন একই স্তরে রয়ে গেছে। আর এই বিষয়টিই কিছুটা অভিনব।

অভিবাসন এবং কানাডায় উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখা অশ্বেতাঙ্গ নবাগতদের প্রতি মনোভাব চলতি শরৎকালে নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। এর সঙ্গে বিশ্বজুড়ে একানায়কতন্ত্রী লোকরঞ্জনবাদের উত্থানের সম্পর্ক আছে। ছবিতে কানাডার ইমিগ্রেন্ট বিরোধী ও বর্ণবাদী গোষ্ঠি ‘la meute’ এক দল সমর্থকদের দেখা যাচ্ছে সমাবেশ করতে : গ্লোব এ্যান্ড মেইল

গ্রেভস বলেন,“এটি বর্ণবাদী বৈষম্যের যথেষ্ট স্পষ্ট পরিমাপ। কানাডীয়দের একটি বেশ বড় অংশ এদেশে খুব বেশি সংখ্যক নাকি অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক অভিবাসী আসছে সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেবে এমন কোনও ধারণার ক্ষেত্রে গায়ের রঙের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিচ্ছে।”

গ্রেভস বলেন, পরিসংখ্যান থেকে এই ইস্যুতে লিবারেল ও কনজারভেটিভ দলের সমর্থকদের মধ্যে “নাটকীয়” ব্যবধান দেখা গেছে।

এদেশে খুব বেশি, খুব কম, নাকি যথাযথ সংখ্যক দৃশ্যমান সংখ্যালঘু অভিবাসী আসছে এমন প্রশ্ন করা হলে কনজারভেটিভ দলের সমর্থকদের ৬৯ শতাংশই বেছে নিয়েছেন “খুব বেশি”। অন্যদিকে লিবারের দলের সমর্থকদের মধ্যে “খুব বেশি” বেছে নেন ১৫ শতাংশ মাত্র।

২০১৩ সালে এই একই প্রশ্নে অনেক কম ব্যবধান দেখা গিয়েছিলো। টোরি দলের (কনজারভেটিভ) ৪৭ শতাংশ এবং লেবার দলের ৩৪ শতাংশ সমর্থক বলেছিলো, খুব বেশি সংখ্যক দৃশ্যমান সংখ্যালঘু অভিবাসী এদেশে আসছে।

গ্রেভস বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের স্বাগত জানাতে অপেক্ষাকৃত কুণ্ঠিত কনজারভেটিভ কানাডীয়দের কাছে ভোট হারাচ্ছে লিবারেলরা।

গ্রেভস মনে করেন, এই পরিবর্তনের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে একানায়কতন্ত্রী লোকরঞ্জনবাদের উত্থানের সম্পর্ক আছে, যারা বহিরাগতদের প্রতি অধিকতর বৈরিতা এবং মুক্ত বাজার বা ক্ষুদ্রতর সরকার ব্যবস্থার তথা গ্লোবালাইজেশনের ধারণায় অনাস্থার ওপর জোর দেয়।

‘ট্রাম্প রাজনীতির কলুষিত প্রভাব’

গ্রেভস আরও বলেন, এই পরিবর্তনের পেছনে “যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের রাজনীতির কিছু কলুষিত প্রভাব” থেকে থাকতে পারে এবং জরিপে অংশগ্রহণকারীরা হয়তো একসময় পরিত্যক্ত হিসাবে বিবেচিত বিষয়ে কথা বলতে একধরণের “রোমাঞ্চ” অনুভব করে থাকবে।

অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হোসেন এক বিবৃতিতে হাফিংটন পোস্টকে বলেন, কানাডায় অভিবাসী গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয় না এবং সারা বিশ্ব থেকে সবচেয়ে সেরা ও মেধাবীদের নিয়ে আসা হয়।

হোসেন বলেন, জরিপের “এই পরিসংখ্যান হলো একটি সতর্কবার্তা। এতে উদ্বেগজনক এমন প্রবণতা উঠে এসেছে যেখানে কতিপয় রাজনীতিক এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষিণপন্থী গ্রুপের প্রচারণার কারণে কিছু লোক ভুল তথ্যের ও ভীতি সৃষ্টিকারীদের শিকারে পরিণত হচ্ছে।” হোসেন বলেন, “অভিবাসন বিষয়ে কানাডীয়রা স্বাভাবিক বিতর্ক করতে সক্ষম হবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে রক্ষণশীল দলের রাজনীতিকরা যেসব কথাবার্তা বলছেন তার প্রভাব সম্পর্কে তাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।”

মন্ত্রী বলেন, “আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, অভিবাসীদের পশ্চাৎপট যাই হোক না কেন, অভিবাসনের কারণে কানাডা লাভবান হচ্ছে। আর যখন আমরা ভুল তথ্যের মুখোমুখি হই তখন ভীতির বিরুদ্ধে বাস্তবতা দিয়ে লড়াই করতে হবে।”

কনজারভেটিভ দলের প্রবীন এমপি দীপক অবরাই হাফিংটন পোস্টকে বলেন, জরিপের ফলাফল দেখে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “কানাডা একটি পরিবর্তনশীল চেহারায় রূপ নিচ্ছে এবং আমাদেরকে সেটা মেনে নিতে হবে। আপনার চারপাশে তাকান তাহলেই দেখতে পাবেন, যেখানেই যান না কেন, অভিবাসনের ইতিবাচক প্রভাব আপনার চোখে পড়বে।”

অবরাইয়ের জন্ম তানজানিয়ায়। তিনি ১৯৭৭ সালে কানাডায় আসেন। দুই দশক পর ক্যালগেরির একটি আসন থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং প্রায় ২২ বছর ধরে এমপির দায়িত্ব পালন করছেন।

অবরাই ২০১৭ সালে তার দলের নেতৃত্বের জন্য লড়াই করেছেন। জরিপের ফলাফলে কনজারভেটিভ দলের প্রতি ১০ জন সমর্থকের মধ্যে সাত জনই তার মতো লোকেদের কানাডায় আসা হ্রাস করতে চায় জেনে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “আমি নিজে একজন কনজারভেটিভ। প্রত্যেকেই দেখছে আমি কেমন এবং আমি কী করেছি।” – সৌজন্যে : হাফিংটন পোস্ট