বিল সি-২৪ এর অধীনে জঙ্গী নেতা জাকারিয়ার নাগরিকত্ব বাতিল
অক্টোবর ৯, ২০১৫
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : জঙ্গী নেতা জাকারিয়া আমারা’র কানাডিয়ান নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে এই তথ্য জানিয়ে গত জুন মাসে তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তাকে ষাট দিনের সময় দেয়া হয়েছিল চিঠির উত্তর দিতে। ইতিমধ্যে ষাট দিনের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে গেছে।
বিল সি-২৪ এর অধিনে জাকারিয়াই প্রথম দ্বৈত নাগরিক যার কানাডিয়ান নাগরিকত্ব হরণ করা হলো। কানাডায় জঙ্গী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করার দায়ে অভিযুক্ত এই যুবক বর্তমানে কুইবেকের একটি জেলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছেন।
সরকার জাকারিয়া সহ আরো চারজনের নামে চিঠি পাঠিয়েছে যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে কানাডায় জঙ্গী হামলা চালানোর পরিকল্পানা করায়। সিবিসি’র বরাত দিয়ে কানাডিয়ান প্রেস এ খবর জানায়। জাকারিয়া হলো সেই ব্যক্তি যে ২০০৬ সালে “টরন্টো ১৮” নামে খ্যাত জঙ্গী গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছিল ডাউনটাউনের বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থলে জঙ্গী হামলা পরিচালনা করার জন্য যাতে করে কানাডার অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। এই গ্রুপের আরো দুইজন সদস্যের নামেও চিঠি গিয়েছে যাদের নাম আসাদ আনসারী ও সাদ খালিদ।
পুলিশ “টরন্টো ১৮” নামের এই জঙ্গী গ্রুপের সকলকে গ্রেফতার করে ২০০৬ সালে। গ্রুপের নেতা জাকারিয়া পরিকল্পনা করেছিল ‘উ-হল’ ট্রাক
ভাড়া করে তাতে বিষ্ফোরক বোঝাই করবে এবং পর পর তিন দিন টরন্টোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোর কাছে ট্রাক ভিড়িয়ে দূরনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মাধ্যমে বিষ্ফোরণ ঘটাবে। আরসিএমপি’র হেড কোয়ার্টার, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ও পার্লামেন্ট ভবনেও বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল সে তার জঙ্গী গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে।
“টরন্টো ১৮” গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিল না এমন আরো দুইজন জঙ্গীর নামেও চিঠি গিয়েছে। এই জঙ্গী দুইজনের নাম হলো, মোহাম্মদ হারসি ও হিবা মোহাম্মদ আলীজাদেহ্। মোহাম্মদ হারিস সোমালিয়ার জঙ্গী গ্রুপ আল-সাহাবাব এ যোগ দিতে চেষ্টা করেছিল। হিবা মোহাম্মদ অভিযুক্ত হয় কানাডার রাজধানী অটোয়াতে জঙ্গী হামলা করার পরিকল্পনা করার জন্য। এদের সবাইকে দুই মাসের সময় দেয়া হয়েছে চিঠির জবাব দেয়ার জন্য।
“টরন্টো ১৮” গ্রুপের নেতা জাকারিয়াকে ২০১০ সালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয় ২০১৬ সালের আগে প্যারোলের কোন সুযোগ না রেখে।
“টরন্টো ১৮” গ্রুপের আসাদ আনসারী সাজা ভোগের পর ২০১০ সালে মুক্তি পায়। এই গ্রুপের সাদ খালিদ এখনো সাজা ভোগ করছে।
নাগরিকত্ব বাতিলের চিঠি পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদের অন্তত দুইজন আবেদন জানিয়েছেন চিঠির উত্তর দিতে আরো সময় মঞ্জুর করার জন্য। কারণ তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে চায়।
আসাদ আনসারীর আইনজীবী জন নরিস জানিয়েছেন তার মক্কেল আরো সময় পেয়েছে চিঠির উত্তর দেয়ার জন্য। অন্যদিকে হিবা মোহাম্মদ আলীজাদেহ্‘র আইনজীবীও জানিয়েছেন তার মক্কেল ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পেয়েছে।
জাকারিয়া আমারা’র নাগরিকত্ব বাতিল বিষয়ক খবর ন্যাশনাল পোস্টে ছাপা হওয়ার পর কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেসন কেনী এক টুইটার বার্তায় বলেন, জাকারিয়া কানাডাকে অতিমাত্রায় ঘৃণা করতো বলে পরিকল্পনা করেছিল সে এদেশের শত শত নাগরিককে হত্যা করবে। বস্তুত এই পরিকল্পনার মাধ্যমে সে নিজেই নিজের নাগরিকত্বকে বাতিল করে দিয়েছে।
জাকারিয়ার জন্ম জর্ডানে। ঐ দেশে তার নাগরিকত্ব এখনো বহাল রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বিল সি-২৪ নামের নতুন এই আইনের বলে সরকার যে কোন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে তার নিজ দেশে (যেখান থেকে এসেছে) পাঠিয়ে দিতে পারবে যদি প্রমানিত হয় যে সেই ব্যক্তি কানাডায় বা কানাডার বাইরে যে কোন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, বিশ্বাসঘাতকতা বা গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত রয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত নিবেন ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বা তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আদলতের মাধ্যমে এর সুরাহা হওয়ার প্রয়োজন নেই।
তবে গত ২০ আগস্ট নাগরিক অধিকার গ্রুপ বি.সি. সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশন এবং কানাডিয়ান এসোসিয়েশন অব রিফুজি ল’ইয়ার্স যৌথভাবে বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। তারা বলেন এই আইন কানাডার পরিচয়কে হেয় করছে এবং একই সাথে সংবিধানও লঙ্ঘন করছে। তারা আরো বলেন, এই আইন বলবৎ হওয়াতে কানাডার দ্বৈত নাগরিকেরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নগরিকে পরিনত হয়েছে।
বিল সি-২৪ কানাডার ‘চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম’ এর লঙ্ঘন এই অভিযোগ তুলে নাগরিক অধিকার গ্রুপ দুটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়।
বি সি সিভিল লিবার্টিজ এসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক জস পিটারসন ইতিপূর্বে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইনটি বলবৎ হওয়ার আগে সকল কানাডিয়ান নাগরিকের সমান সুযোগ ও অধিকার ছিল। কে কোথায় জন্ম নিয়েছে বা কোথা থেকে এসেছে সেটি কখনো কোন প্রশ্ন ছিলনা। কিন্তু নতুন এই আইনের কারণে কানাডায় আমরা বিভক্ত হয়ে পরেছি। এই বিভক্তির ফলে আমরা কেউ বেশী অধিকার ভোগ করবো আবার কেউ কম অধিকার ভোগ করবো।
জোস পিটারসন আরো বলেন, দেশের কোন নাগরিক যদি কোন অপরাধ করে থাকে তবে কানাডার যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম বিদ্যমান রয়েছে সেটিই এ ক্ষেত্রে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত বলে আমরা মনে করি। দেশ থেকে বহিস্কারের প্রথা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।
এদিকে বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। কনজারভেটিভ পার্টির ফেডারেল ক্যাম্পেইন টিমের মুখপাত্র কেভিন ম্যানার্ড সাংবাদিকদের বলেন, সরকার বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে করা সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জকে “আক্রমনাত্মকভাবে মোকাবেলা” করবে।