পরিদর্শনে দেখা গেছে অন্টারিওর ১৩ শতাংশ প্রাইভেট ক্লিনিক প্রাদেশিক মান পূরণ করে না
ডিসেম্বর ১, ২০১৪
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক :
টরস্টার নিউজ সার্ভিসের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কসমেটিক সার্জারি, কলোনোস্কোপি এবং ব্যথার ইনজেকশন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে অন্টারিওর এমন ক্লিনিকগুলোর মধ্যে ২০১১ সালে সেবাদান শুরুর পর থেকে ১৩ শতাংশ ক্লিনিকেই প্রয়োজনীয় মান বজায় নেই।
এই ১৩ শতাংশের মধ্যে এমন ৩.৬ শতাংশ ক্লিনিক রয়েছে যেগুলো জননিরাপত্তা বিষয়ক পরিদর্শনের মান রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, এই সংখ্যা খুবই বেশি এবং এতে করে এসব ক্লিনিকের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসায় অবহেলা বিষয়ক আইনজীবী মিজ. আমানি ওয়াকলে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘প্রতি সাতটি ক্লিনিকের মধ্যে একটি পরিদর্শনের মান রক্ষায় ব্যর্থ হলে বা শর্তাধীনে পাস করলে সেটা নিন্দনীয়। আপনি যেভবেই দেখেন না কেন এটি রীতিমত ব্যর্থতার পর্যায়ে পড়ে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি আন্তরিকভাবে প্রশ্ন রাখতে চাই যে, জনগণকে রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে অসমর্থতার বিষয়টিকে আমাদের পুরো ব্যবস্থা সার্বিকভাবে ঢেলে সাজানোর চেয়ে কম কিছু দিয়ে সংশোধনের উপায় আছে কি না।’’
কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস ২০১১ সাল থেকে ৩৩০টি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ৪৪টিতে মান পূরণ করার ক্ষেত্রে ঘাটতি পাওয়া যায়।
পরিদর্শনে ১২টি ক্লিনিক অকৃতকার্য হয়েছে এবং ৩৩টিকে শর্তাধীনে পাসমার্ক দেয়া হয়েছে। এই ৩৩টির মধ্যে কয়েকটিকে দু’বার এমনকি তিনবারও শর্তসাপেক্ষে পাস করানো হয়েছে। (একটি ক্লিনিক একই সঙ্গে অকৃতকার্য এবং শর্তসাপেক্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার সার্টিফিকেট পেয়েছে। এর বাইরে ২২টি ক্লিনিককে উল্লেখিত ১৩ শতাংশের মধ্যে ধরা হয়নিÑ এদেরকে শর্তাধীনে উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে কারণ এগুলির কোনটি নতুন এবং কোনটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। এগুলোকে মান পূরণ না করার কারণে এই শ্রেণীতে ফেলা হয়নি।)
চিকিৎসায় অবহেলা বিষয়ক আইনজীবী পল হার্টি বলেন, ‘‘শর্ত ছাড়া পাস না করা ক্লিনিকের যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তাতে এগুলোতে সতর্কীকরণ ঘণ্টা বাজানো উচিৎ। একটি বিমান কোম্পানির কথা ভাবুন যেখানে প্রতি ১০টি বিমানের একটি বাছাইয়ে পাস করেনি। পরিদর্শনের সংখ্যা এবং এর মাত্রা অনতিবিলম্বে জোরদার করা দরকার।’’
সিপিএসওর (ঈচঝঙ) মুখপাত্র ক্যাথরিন ক্লার্ক বলেন, জনগণ এজন্য সাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন যে, কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকগুলোর অসাবধানতাজনিত ভ্রান্তি তুলে ধরছে যা সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত করা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘‘২০১০ সালের আগ পর্যন্ত কোন কর্তৃপক্ষেরই এসব ক্লিনিক নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব ছিলো না। জনগণকে রক্ষা করার জন্য কলেজ কর্র্তৃপক্ষ এদের ওপর নিয়ন্ত্রণের ধারণা চালু করে। এর অর্থ হলো, এই কর্মসূচি চালুর পর থেকে জননিরাপত্তার প্রশ্নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।’’
অন্টারিওর কসমেটিক শিল্প ঘিরে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্ল্যাকহোল নিয়ে টরস্টারের অনুসন্ধানের পর কুইন্স পার্ক ক্লিনিকগুলোর অসাবধানতাজনিত ভ্রান্তি বিষয়ে কলেজকে অবহিত করে।
২০০৭ সালে টরন্টোর একটি কসমেটিক ক্লিনিকে তরুণী মা ক্রিসটা স্ট্রাইল্যান্ডের মৃত্যুর পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।
টরস্টারের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত ক্লিনিকগুলিতে ৪৪০বার পরিদর্শন করা হয়েছে। এসব পরিদর্শনের ফলাফল এক বছরের বেশি সময় ধরে ফেলে রাখা হয়।
হার্টি বলেন, পরিদর্শনে ক্লিনিকগুলোর চেয়ে টরন্টোর রেস্টুরেন্টগুলোর অবস্থা ভালো পাওয়া যায়। অধুনাবিলুপ্ত গ্রিড পত্রিকার ২০১২ সালের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টরন্টোর জনস্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় পরিচালিত ৮.৬ শতাংশ পরিদর্শনের ফলাফল ছিলো হয় শর্তসাপেক্ষে পাসমার্ক দেয়া অথবা বন্ধ করে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে। মাত্র ০.১৪ শতাংশকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের নোটিশ দেয়া হয়েছিলো।
হাসপাতালের বাইরের প্রাঙ্গন হিসাবে পরিচিত ক্লিনিকগুলোর তুলনা করার আরেকটি উৎস হলো হাপাতালগুলো। অন্টারিওর ১৫০টি হাসপাতালের একটিও ২০১১ সালের পর থেকে
হাসপাতালের মান পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাক্রিডিটেশন কানাডার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়নি।
হার্টি বলেন, ক্লিনিকগুলোর পরিদর্শনের ফলাফল খুবই উদ্বেগজনক, বিশেষ করে যখন এই প্রদেশটি স্বাস্থ্যসেবাকে হাসপাতালের বাইরে ক্লিনিকগুলোতে নিয়ে যেতে চাইছে। ২০১০ সালে অন্টারিওতে ক্লিনিক ছিলো ২০৯টি। বর্তমানে ২৬৪টি ক্লিনিক চালু রয়েছে এবং আরও ১০টি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে করে ক্লিনিকের সংখ্যা বেড়েছে ৩১ শতাংশ এবং প্রাদেশিক সরকার এই খাতটির আরও সম্প্রসারণ চায়।
ক্লিনিকগুলোতে হাসপাতালের মত ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা নেই এবং সমালোচকরা বলেন, অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।
ক্লিনিকগুলোর জন্য একটি মান নির্ধারণ এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পূরণের সময়সীমা ঠিক করে দেয়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী এরিক হসকিনস-এর প্রতি আহবান জানিয়েছেন হার্টি।
চলতি মাসের শুরুর দিকে হসকিনস স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার উন্নয়ন এবং ক্লিনিকগুলোর অসাবধানতাজনিত ভ্রান্তি সম্পর্কিত পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি চলমান কর্মসূচির মূল্যায়ন এবং তার উন্নয়নের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য অন্টারিওর হেল্থ কোয়ালিটি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।
টরস্টারের অনুসন্ধানে ক্লিনিকগুলোতে ব্যাপক সংক্রমণের চিত্র উঠে আসার পর হসকিনস ওই নির্দেশ দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্লিনিকগুলির ব্যর্থতার কারণের মধ্যে রয়েছে, মেডিক্যাল ডাইরেক্টর না থাকা, চিকিৎসা সরঞ্জাম যথাযথভাবে পরিষ্কার না করা এবং জরুরী পরিস্থিতিতে জীবনসঞ্চারী ওষুধ (ওঠ ৎবংঁংপরঃধঃরড়হ ফৎঁমং) না দেয়া।
ক্লিনিকগুলো পরিদর্শনে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হলে সেখানকার চিকিৎসকদেরকে অ্যানেসথেশিয়ার প্রয়োজন রয়েছে এমন ধরণের চিকিৎসা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়।
প্রগতিশীল রক্ষণশীল দলের এমপিপি (লিডস-গ্রেনভিলি) স্টিভ ক্লার্ক বলেন, এতগুলো ক্লিনিক পরিদর্শনে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনায় তিনি ‘মর্মাহত’। তিনি বলেন, ‘‘আমি সত্যিই অনুভব করে যে, সিপিএসওতে কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা দরকার।’’ মিজ. ক্লার্ক সম্প্রতি এই সংস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে পার্লামেন্টে একটি বেসরকারী সদস্য বিল উত্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিপিএসও ক্লিনিক পরিদর্শনের ফলাফল অর্থাৎ কতগুলি ক্লিনিক অকৃতকার্য হয়েছে, কতগুলি উত্তীর্ণ হয়েছে এবং কতগুলি শর্তসাপেক্ষে পাসমার্ক পেয়েছে সেই তথ্য প্রকাশ করতে দু’বার অস্বীকৃতি জানানোর পর টরস্টার এই বিশ্লেষণের কার্যক্রম হাতে নেয়।
ক্লার্ক বলেন, সিপিএসও ঠিক ওই পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করে না। তারা টরস্টারকে সংস্থার অনলাইন রেজিস্টার দেখতে বলে। কিন্তু অনলাইন রেজিস্টারে প্রতিটি ক্লিনিকের ফলাফল পৃথকভাবে দেখতে হয়। তিনি সতর্ক করে দেন যে, হাতে হাতে গুণতে গেলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
টরস্টারের পক্ষ থেকে তৃতীয়বারের মত ক্লিনিকগুলোর পরিদর্শনের ফলাফল আলাদাভাবে দেয়ার অনুরোধ জানানো হলে ক্লার্ক এসব তথ্য দেন।
২৩৩টি ক্লিনিক সম্পূর্ণরূপে উত্তীর্ণ হয়েছে, ১৬টি শর্তসাপেক্ষে উত্তীর্ণ এবং ২৫টির ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। আর ৬৬টি ক্লিনিক এই কর্মসূচি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে অর্থাৎ এসব ক্লিনিকে অ্যানেসথেশিয়ার প্রয়োজন রয়েছে এমন ধরণের চিকিৎসা কার্যক্রম আর চালানো হচ্ছে না। পরিদর্শন ব্যবস্থার ঢেলে সাজানোর আহবানকারী ওয়াকলের মত সমালোচকদের সঙ্গে একমত পোষণ করে হার্টি বলেন, ক্লিনিকগুলোর পরিদর্শনের জন্য প্রদেশটির উচিৎ পৃথক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা যা আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে তথ্যের স্বাধীনতা বিষয়ক অনুসন্ধানের ব্যাপারে দায়িত্ব নেবে। তিনি বলেন, ‘‘ক্লিনিকগুলোর কার্যকর নিয়ন্ত্রক হিসাবে সিপিএসওর ওপর জনগণের আস্থা খুবই সীমিত। ক্লিনিক পরিদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলি শেষ পর্যন্ত ক্লিনিকগুলির পর্যাপ্ত পরিদর্শন নিশ্চিতকরণে সিপিএসওর ব্যর্থতা থেকেই উদ্ভূত।’’ – টরস্টার নিউজ সার্ভিস