‘নেকাব নয়’ নীতির পক্ষে জেসন কেনি

ডিসেম্বর ১, ২০১৪

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক :

অটোয়া : জেসন কেনি অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী থাকাকালে মুসলিম নারীদের নাগরিকত্বের শপথ গ্রহণের সময় নেকাব পরার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন সেটি জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য সম্প্রতি টুইটারে স্ট্যাটাস দেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, নাগরিকত্বের শপথ গ্রহণকারীদেরকে এটি করতে হবে প্রকাশ্যে, তাদের মুখমন্ডল অনাবৃত থাকতে হবে।’’ তিনি এমন সময় এই স্ট্যাটাস দিলেন যখন শপথ অনুষ্ঠানে নেকাব নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে।

জেসন কেনি টুইটারে তার ৩৫,৭০০ ফলোয়ারের কাছে জানতে চান তারা তার এই অবস্থানের ব্যাপারে একমত কি না।

বর্তমানে মিসিসগায় বসবাসরত জুনেরা ইসহাক নামের একজন পাকিস্তানি মহিলা ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে রক্ষণশীল দলের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি যুক্তি দেন যে, তার ধর্মবিশ্বাসকে ধারণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ওই নিষেধাজ্ঞা তার অধিকারের সনদ লংঘন করেছে। কিছু মুসলিম নারী জনসমক্ষে এবং অনাত্মীয় পুরুষের সামনে নেকাব পরিধান করেন।

বৃহস্পতিবার টরন্টোতে একটি কেন্দ্রীয় আদালতে শুনানীর সময় জুনেরা ইসহাকের একজন আইনজীবী অভিযোগ করেন যে, ২০১১ সালের শেষদিকে নির্বাহী আদেশে একতরফাভাবে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে জেসন কেনি নাগরিকত্বের অনুষ্ঠানের ওপর তার নিজের আদর্শ চাপিয়ে দিয়েছেন।

এসময় কেনি বলেন, এক শ্রেণীর নারীর প্রতিনিধিত্বকারী নেকাব কানাডায় অগ্রহণযোগ্য।

ইসহাকের অন্য একজন কৌসুলি লোরনে ওয়াল্ডম্যান এ বিষয়ে কেনির অবস্থান খন্ডন করে বলেন, নাগরিকত্বের আইনে শপথ গ্রহণের সময় কাউকে দেখা যেতে হবে বা তার কণ্ঠস্বর শোনা যেতে হবে এমন কোন শর্ত দেয়া নেই।

গত শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে ওয়াল্ডম্যান বলেন, ‘‘একজন নাগরিক হিসাবে কেনি তার পছন্দমত যে কোনও কিছু বিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু একজন মন্ত্রী হিসাবে তিনি নিজের বিশ্বাসকে তার দায়িত্বের সঙ্গে সংশয়ান্বিত করে ফেলেছেন। একজন মন্ত্রী হিসাবে তাকে বিদ্যমান আইনকে তুলে ধরতে হবে এবং তিনি যে নীতিগত পরিবর্তন ঘটিয়েছেন সেটি কেবল বেআইনীমফ হয়নি সেটি বিদ্যমান আইন ও অধিকার সনদের সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ।’’

তিনি আরও বলেন, আদালতের সামনে কোন বিষয়ে বিবেচনা তুলে ধরা কেনির জন্য ‘অস্বাভাবিক’। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কি বেরিয়ে আসে তা দেখার জন্য কেনি অপেক্ষা করবেন এমনটা কেউ আশা করতেই পারে।

মামলায় সরকারের পক্ষের কৌসুলি যুক্তি দেন যে, নাগরিক হওয়াটা কারও অধিকার নয়, এটি একটি সুবিধা। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইসহাক তার গাড়িচালকের লাইসেন্স নেয়ার জন্য এর আগে নেকাব উন্মোচন করেছেন।’’ নেগার হাশেমী নামের ওই আইনজীবী আরও বলেন, ইসহাক নাগরিকত্ব আদালতের সামনে অথবা পেছনে শপথ নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইসহাককে স্পন্সর করে পাকিস্তান থেকে কানাডায় নিয়ে এসেছেন তার স্বামী। কিন্তু গত জানুয়ারিতে তিনি যখন নেকাব নিষিদ্ধ করার বিষয়টি জানতে পারেন তখন তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান স্থগিত করেন। তার মামলার কারণে এই নীতিটি বাতিল হতে পারে।

আদালতের বিচারক তার রায়প্রদান অপেক্ষমান রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট নীতির পরিবর্তনের বিষয়ে তিন বছর আগে এক বক্তৃতায় কেনি বলেছিলেন, শপথ নেয়ার সময় যারা মুখ ঢেকে রাখে তাদের বিষয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের প্রতি সাড়া দিয়ে তিনি ওই ব্যবস্থা নেন।

তিনি বলেন, ‘‘যারা মুখ ঢেকে রাখে তারা সত্যিই শপথবাক্য পাঠ করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন পার্লামেন্টের সদস্য, নাগরিকবৃন্দ ও নাগরিকত্ব বিষয়ক আদালতের বিচারকরা।’’

তিনি বলেন, ‘‘শপথ নেয়ার সময় অনুষ্ঠানের বিচারকগণ এবং সেখানে উপস্থিত সবার সামনে প্রার্থীদের মুখমন্ডল খোলা রাখা এজন্যে দরকার যাতে আইন অনুযায়ী প্রার্থীরা শপথবাক্য উচ্চারণ করছেন কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।’’

তিনি আরও বলেন, কানাডীয়দের একটি গ্রুপকে আলাদা করে দেয়া বা তাদেরকে তাদের মুখ ঢেকে রাখার অনুমোদন দেয়া, বিশেষ করে যখন তারা আমাদের সমাজে অংশগ্রহণ করছে তখন তাদের পরিচয় আমাদের কাছ থেকে গোপন রাখার বিষয়টি কানাডার গর্ব এবং খোলানীতি ও সামাজিক সংলগ্নতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের সঙ্গে সঙ্গতিহীন।’’

ওই নিষেধাজ্ঞা জারির একমাস পর কেনি বলেন, জরীপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮জনই নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেছেন।

মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেসও তার ‘‘সাহসী সিদ্ধান্তকে’’ এই বলে সম্মান জানায় যে, নেকাব ও বোরকা হলো যারা মুসলমানদেরকে একটি ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে আলাদা করে রাখতে এবং তাদেরকে সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চায় সেইসব ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক হাতিয়ারমাত্র।

– দি কানাডিয়ান প্রেস