কানাডার সবচেয়ে ধনী ৮৬ জনের সম্পদ রয়েছে দরিদ্রতম ১ কোটি ১০লাখ লোকের সমপরিমাণ
জুলাই ২৭, ২০১৪
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: অটোয়ার রাজনীতিকরা যখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেননা যে কারা মধ্যবিত্তশ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন তখন এক নতুন পর্যবেক্ষনে দেখা যাচ্ছে যে সবচেয়ে ধনীব্যক্তিদের হাতেই ক্রমবর্ধমানহারে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
কানাডার সেন্টার ফর পলিসি অলটারনেটিভ নামের বাম ঘরানার একটি সংগঠনের রিপোর্টে দেখা যায়, সবচেয়ে ধনী৮৬জন ব্যক্তি বা পরিবার অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার০.০০২ শতাংশ লোক ক্রমশ আরও ধনী হয়ে উঠছে এবং এই মুহূর্তে তাদের হাতে দেশের দরিদ্রতম এক কোটি ১৪লাখ লোকের সমপরিমাণ সম্পদ পুঞ্জীভূত রয়েছে।
রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, এই পরিসংখ্যান ১৯৯৯ সালের চেয়ে বেশি।ওই বছর সবচেয়ে ধনী ৮৬ ব্যক্তি বা পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ছিলো সবচেয়ে গরীব এক কোটি ১লাখ মানুষের সম্পদের সমান। তাদের ওই সম্পদ দিয়ে নিউ বার্নসউইকের সবকিছু কিনে ফেলার পরও ৪ হাজার কোটি ডলার হাতে থেকে যাবে।
রিপোর্টের লেখক অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যাকডোনাল্ড রিপোর্ট প্রণয়নের জন্য স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডা এবং কানাডিয়ান বিজনেস ম্যাগাজিনের গবেষণার উপাত্ত ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, তার রিপোর্টের লক্ষ্য হলো এটা দেখানো যে, আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য যদি নীতি হয় এবং সামাজিক ন্যায়বিচার যদি ভাবনার কারণ হয় তাহলে সম্পদের অসাম্যও চরম পর্যায়ে পৌঁছে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত অর্থে আয়ের ধারণার ক্ষেত্রে কানাডার অতি ধনীদের তালিকার কিছুই করার নেই। অতি ধনী ৮৬ জনের কেউই কোম্পানির সিইওনন – যদিও তাদের বিরাট অঙ্কের বেতন ও বোনাসের কারণে তারা প্রায়ই অকুপাই আন্দোলনের পোস্টারে ঠাঁই পান। এদের মধ্যে একজন আছেন যিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বা প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
অতি ধনীরা সেইতালিকায় উঠে এসেছেন সম্পদ সৃষ্টি এবং তার ব্যবসায়ের মাধ্যমে। তা সেটা কোম্পানিই হোক, রিয়্যাল এস্টেটই হোক বা সিকিউরিটিই হোক।
ম্যাকডোনাল্ড বলেন, আমরা প্রায়শ আয় বৈষম্যের ওপর গুরুত্বারোপ করি, কিন্তু সম্পদের অসমতার তুলনায় সেটি হলো সমাজতন্ত্রীদের স্বর্গ।
তিনিবলেন, শীর্ষে অবস্থানরত ২০ শতাংশ লোক সর্বমোট আয়ের অর্ধেকটা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সম্পদের অসমতার দিক থেকে দেখলে দেখা যাচ্ছে, শীর্ষ ২০শতাংশের হাতে রয়েছে সর্বমোট সম্পদের ৭০শতাংশ। এটি বাস্তবিকই অনেক বেশি চরম অবস্থা এবং উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সম্পদের এই পুঞ্জীভবনের ফলে এই সম্পদ আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কিনে ফেলতে শুরু করে।
আয় বা সম্পদ যেটাই হোক, এই অসাম্য আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনে একটি মুখ্য ইস্যু হয়ে উঠবে বলেই ক্রমশ দেখা যাচ্ছে। লিবারেল দলের নেতা জাস্টিন ট্রুডো এবং এনডিপি নেতা থমাস মালকেয়ার এই বিষয়টিকে সামনে আনতে চান যে, কনজারভেটিভদের নীতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণী পেছনে পড়ে গেছে। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা কম, ঋণে জর্জরিত এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে দিন আনি দিন খাই অবস্থায় জীবন কাটাতে হচ্ছে।
সরকার সম্প্রতি ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডার রিপোর্টে দায় মেটানোর পর প্রকৃত প্রবৃদ্ধির উদ্ধৃতি দিয়ে দেখাতে চাইছেন যে, তাদের নীতিমালা প্রতিটি মানুষের জন্য ইতিবাচক ভাবে কাজ করেছে।
কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী জেসন ক্যানি তখন উল্ল্লেখ করেন যে, কর আদায়ের পর যে আয় থাকে সেটি সব মানুষের ক্ষেত্রে ১০শতাংশ হারে বেড়েছে।
তবে স্ট্যাটিসটিক্স কানাডায় আরও দেখা গেছে যে, সম্পদ জমা হচ্ছে শীর্ষ পর্যায়ে। মধ্যবিত্ত পর্যায়ে দায়দেনা মিটিয়ে প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ যখন ১৯৯৯ সালথেকে ৮০শতাংশ বেড়ে পরিবারপিছু ২লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ডলারে পৌঁছেছে, তখন শীর্ষ পর্যায়ের ৪০শতাংশ মানুষ দায় দেনা মিটিয়ে প্রকৃত সম্পদের ৮৮.৯ শতাংশের মালিকানা ধরে রেখেছে। অবশিষ্ট ৬০শতাংশ মানুষ মাত্র ১১.১ শতাংশ সম্পদের মালিক। চোখ খুলেদেয়ার মত উপাত্ত হলো, সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ মানুষের দায়দেনার পরিমাণ তাদের সম্পদের চেয়ে বেশি।
এই ইস্যুটি বুধবার আবারও আলোচনায় এসেছে যখন মি. ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের উদ্দেশে প্রশ্নরাখেন যে, তিনি কী মধ্যবিত্তের সমস্যাটিকে একটি অবাস্তব কাহিনী মনে করেন কিনা। এদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে সংজ্ঞায়িত করতে অসমর্থ হওয়ায় ট্রুডোর সমালোচনা করেন হারপার।
কিন্তু এখানেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যায়নি। এনডিপি বিশেষভাবে সমালোচনামুখর ছিলো এমনকি মন্দারমধ্যেও সরকারের কর্পোরেট ট্যাক্সের হার দারুণভাবে কমিয়ে দেয়া, কর্মসংস্থানের কম সুযোগ সৃষ্টিকরা এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ কম হওয়ার বিষয় নিয়ে।
কিছু অর্থনীতিবিদ অবশ্য এমনও যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, উচ্চপর্যায়ের অসমতা রয়েছে এমন দেশগুলো সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাম্যবাদী দেশগুলোর চেয়ে কম সাফল্য অর্জন করতে পারে। সিসিপিএ-ও সর্বশেষ পর্যবেক্ষেনেও বলা হয়েছে যে, সম্পদের মই বেয়ে কেউ একেবারে ওপরে উঠে গেলে তার সেখানেই স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৩ সালে দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর মধ্যে মোটামুটিভাবে তারাই রয়েছেন যারা ২০০৫ এবং১৯৯৯ সালে সবচেয়ে ধনীর তালিকায় ছিলেন। সুপরিচিত পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে থমসন, ইরভিং, ডেসমারিয়াস এবং পেটিসন।
রিপোর্টে দেখা গেছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ৮৬ কানাডীয় তাদের সম্পদের পরিমাণ ১১৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৭৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। ম্যাকডোনাল্ড বলেন, সম্পদের প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমানভাবে কেন্দ্রীভূত হয়ে আসছে একটি কারণে যে, এর জন্য আয়ের ওপর নানা ভাবে কর আদায় করা হয়।
তিনিবলেন, একজন কানাডীয় যদি একটি কোম্পানি বা শেয়ার বিক্রি করে এক লাখ ডলার অর্জন করেন এবং আরেকজন যদি এক বছর ধরে চাকরি করে এক লাখ ডলার আয় করেন তাহলে ব্যবসায়িক সম্পদ বিক্রি করে দেয়া লোকটির চেয়ে চাকরি করে অর্থ উপার্জনকারী ব্যক্তিটিকে দ্বিগুণ হারে কর আদায় করতে হবে।
তিনিবলেন, সম্পদ অর্জনের জন্য আয়সীমার সর্বোচ্চ স্তরে উচ্চতর সমন্বিত কর হার এবং উচ্চহারে আয়কর আদায়ের যৌথ ব্যবস্থা নেয়া হলে কানাডার সবচেয়ে ধনীদের হাতে সম্পদের পুঞ্জীভবন রোধ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয়র জন্য কিছুটা কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব হতে পারে।