অভিবাসনবিরোধী প্রচারপত্র বিতরণে আইনের লংঘন হয়নি: পুলিশ
জুলাই ২৭, ২০১৪
বিতর্কিত প্রচারপত্র: পীল পুলিশ বলেছে এই প্রচারপত্র বিলি করার মাধ্যমে আইন লংঘন করা হয়নি। ব্রাম্পটনের দক্ষিণ এশীয় জনসংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই কানাডার অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করা দরকার এমন অভিমত জানিয়ে সম্প্রতি এই প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছিলো।
রজার বেলগ্রেভ : ব্রাম্পটন Ñ ‘বর্ণবাদী’ হিসাবে কথিত এবং সরকারের সকল স্তরে ও ব্রাম্পটনের সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিন্দা কুড়ানো একটি প্রচারপত্র বিলি করার ঘটনায় কোনরকম আইন লংঘন হয়নি বলে পীল পুলিশ দেখতে পেয়েছে।
ব্রাম্পটনের পরিবর্তনশীল চেহারা শিরোনামের ওই প্রচারপত্রে ককেসীয় নাগরিকদের একটি গ্র“প ছবির নিচে দক্ষিণ এশীয় লোকেদের একটি ছবি ছাপানো হয়েছে যাতে অনেকেই পাগড়ি পরা রয়েছে।
প্রচারপত্রে আলাদা তীরচিহ্ন দিয়ে তাতে লেখা হয়েছে, ‘‘এই অবস্থা’’ থেকে ‘‘এই অবস্থা’’, ‘‘এটাই কি আপনি সত্যিকার অর্থে চান?’’ পাঠকদেরকে ইমিগ্রেশন ওয়াচ কানাডার ওয়েবসাইট দেখতে বলা হয়েছে। ইমিগ্রেশন ওয়াচ কানাডা হলো ভ্যাংকুভারভিত্তিক একটি সংগঠন যেটি মনে করে যে দেশের বর্তমান অভিবাসন নীতি কানাডার মূল ধারার জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করছে। ব্রাম্পটনে হাতে হাতে এবং অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া প্রচারপত্রটি খুবই দ্রুত ও জটিল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় অধিবাসী এবং বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি পৌর, প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ের রাজনীতিকরাও এটিকে বৈষম্যমূলক, বর্ণবাদী এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। মেয়র সুসান ফেনেল ওই পোস্টারটিকে কট্টরবাদী হিসাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি এটি প্রচারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা আইন লংঘন করেছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য পীল আঞ্চলিক পুলিশকে সতর্ক করেন।
পীল পুলিশের কনস্টেবল লিলিয়ান ফিট্জপ্যাট্রিক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘অফিসাররা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছেন। এতে কোনরকম অপরাধমূলক তৎপরতা ছিলো বলে প্রমাণিত হয়নি। কোনরকম হুমকিও ছিলো না। প্রচারপত্রে কোনরকম অপরাধমূলক কাজের ইঙ্গিত ছিলো না। সুতরাং আমাদেরও এ নিয়ে কিছু করার নেই।’’ সমাজের অনেকেই এমন জল্পনা-কল্পনা করছিলেন যে, ওই পোস্টার তৈরি, প্রচার করা এবং এতে একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে এককভাবে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে এক ধরণের ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধ হয়ে থাকতে পারে।
ফিট্জপ্যাট্রিক ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘প্রচারপত্রের সবকিছুই পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে এমন কিছুই পাওয়া যায়নি যাতে করে এটি যারা তৈরি ও প্রচার করেছে তাদের চিহ্নিত করা
সম্ভব হলেও তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আপরাধের অভিযোগ আনা যেতে পারে।’’
অবশ্য প্রাদেশিক পর্যায়ের রাজনীতিকরা
তাদের সব মতপার্থক্য ভুলে আজ অন্টারিওর আইনসভায় প্রচারপত্রটির নিন্দা জানিয়েছেন।
এদিকে প্রিমিয়ার ক্যাথলিন ওয়েইন এক চিঠিতে ব্রাম্পটনে ‘‘শিখ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণার’’ বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে এবং অন্টারিওতে সহনশীলতা ও একীভূতকরণের বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়ে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে সমর্থন দেয়ার জন্য উভয় বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানান। ওই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নিউ ডেমোক্র্যাট নেতা আন্দ্রে হরওয়াথ বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে ব্রাম্পটনের ঘরে ঘরে যে বর্ণবাদী প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে সেটি ছিলো প্রতিটি অন্টারিওবাসীর ওপর আঘাতস্বরূপ। ঘৃণার জঘন্য চেহারা যখন প্রকাশ পেয়ে যায় তখন আমাদেরকে অবশ্যই অটুট সংহতির মাধ্যমে তার মোকাবিলা করতে হবে এবং আমাদের বন্ধনের শক্তিমত্তা দেখিয়ে দিতে হবে। আজ আমরা সবাই শিখ।’’
গত সপ্তাহে দি গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইমিগ্রেশন ওয়াচ কানাডার ড্যান মারে কানাডার অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের জন্য তাদের সংগঠনের প্রচারণার ক্ষেত্রে এটিকে বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করার বিষয়টি জোরের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি অবশ্য একথাও বলেন যে, সরকারের বর্তমান নীতি কোনরকম ভাল কারণ ছাড়াই কানাডার দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদেরকে তাদের নিজ সমাজের মধ্যেই সংখ্যালঘুতে পরিণত করছে। অভিবাসনের একটি পরিবেশগত ক্ষতির দিকও রয়েছে। মারে বলেন, তাদের প্রচারণার মূল বিষয় হলো ‘‘কানাডা এবং কানাডীয়দেরকে অগ্রাধিকার দেয়ার’’ বিষয় নিয়ে।