মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের কানাডায় আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ

সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও সুপারিশ

এপ্রিল ৮, ২০১৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বব রে। ছবি : সিটিভি

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিশেষ দূত বব রে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের কানাডায় আশ্রয় দিতে সুপারিশ করেছেন। বিশিষ্ট আইনজীবী অন্টারিওর সাবেক প্রিমিয়ার ও লিবারেল পার্টির সাবেক এই অন্তর্বর্তীকালীন নেতা বর রে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও সুপারিশ করেছেন। খবর সিবিসি নিউজ এর।

গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রাখাইনের প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

গত অক্টোবরে কানাডার টরেন্টোর সাবেক এমপি বব রে-কে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

বব রে তদন্ত শেষ করে কানাডা সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কানাডাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি, সংগঠন ও কোম্পানির বিরুদ্ধে কানাডা এবং এর মিত্র দেশগুলোকে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।

বব রে মনে করেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে চলমান সংকটে কানাডার উদ্যোগ দেশটির পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি লিটমাস টেস্ট বা অগ্নিপরীক্ষা।

সংকট নিরসনে চলতি মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের বৈঠকে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

আগামী মে মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য জি-সেভেন সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সংকটকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছেন রে।

বব রে বলেন, মিয়ানমার সরকার দেশটি থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পুনর্বাসনের আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধভিক্ষুদের হাতে বছরের পর বছর ধরে কৌশলগত সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এমন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রাখাইনের প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ছবি : সিবিসি

এদিকে ডয়চে ভেলের এক সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রধান অধ্যাপক সিআর আবরার বলেন, বব রে রোহিঙ্গাদের কানাডায় আশ্রয় দেয়ার যে সুপারিশ করেছেন, তার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক দিক আছে।

তিনি বলেন, কানাডা তো আর সবাইকে আশ্রয় দিতে পারবে না। কিন্তু এর একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে। সেখানে যে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে বব রের সুপারিশের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আরও একবার জানানো হল।

অধ্যাপক আবরারের মতে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ কমানোরও চেষ্টা করেছেন বব রে; যাতে বিশ্বের সবাই রোহিঙ্গাদের জন্য এগিয়ে আসে। বাংলাদেশকে এককভাবে যেন এই চাপ বহন করতে না হয়।

তিনি বলেন, তবে আমরা আশা করেছিলাম বব রে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনকে গণহত্যা বলে চিহ্নিত করবেন। তিনি অনেক শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু আরও একটু শক্ত অবস্থান নিলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ত।

কানাডার সরকার এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য তিন কোটি ৭৫ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্ষাকালে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য গত ১৬ মার্চ আরও ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার তহবিল জোগানের ঘোষণা দেয় কানাডার সরকার।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ছাড়াও বন্যা, বৃষ্টি বা অন্য ঝুঁকিসহ এবং স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ১২টি খাতে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।

সিপিডির হিসাব অনুযায়ী, আগামী জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ হবে ৮৮ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সিপিডি হিসাব করে দেখেছে, এ বছরের জুন পর্যন্ত ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা জরুরি, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া এত বিপুল অর্থ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ও মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ।