বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করার প্রত্যয়

বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর আয়োজনে আগামী ১৬ মার্চ টরন্টোতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গালা ডিনার পার্টি। এ উপলক্ষে চেম্বারের কর্মকর্তদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এখানে তা তুলে ধরা হলো।

মার্চ ১৩, ২০১৮

আমরা বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সম্পূর্ণ ডিউটি ফি ব্যবসা চালু করতে পেরেছি : সৈয়দ নাজমুল হক মনা,

 প্রেসিডেন্ট, কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স

সৈয়দ নাজমুল হক মনা

প্রশ্ন : আপনি কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর জন্মলগ্ন থেকেই এর সঙ্গে জড়িত। শুরুর ইতিহাসটা একটু বলবেন কি সংক্ষেপে? এর সঙ্গে আর কে কে জড়িত ছিলেন?

উত্তর : শুরুটা ছিল ১৯৯৪ সালে। তখন এখানে আমাদের লোকসংখ্যাও কম ছিল আর বিজনেস ম্যান বলতে কিছু ব্যবসায়ী- তাদের সংখ্যা

ছিল একেবারে হাতে গোনা। তবুও আমরা অনুভব করলাম ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন থাকা প্রয়োজন। সেই অনুভব থেকেই উদ্যোগ নেয়া। তখন সাথে ছিলেন জনাব রেজাউর রহমান, শক্তিদেব, শওকত হোসেন, আশরাফ খান, নজরুল ইসলাম মিন্টু প্রমুখ। আমাদের চেম্বারের প্রথম কমিটিতে রেজাউর রহমান ছিলেন প্রেসিডেন্ট, আমি ছিলাম সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং শওকত হোসেন ছিলেন জেনারেল সেক্রেটারী।

প্রশ্ন : কিসের তাগিদে আপনারা একটি ব্যবসায়িক সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিলেন সেদিন?

উত্তর : কানাডাতে বিজনেস কমিউনিটি হিসাবে ছোট হলেও সরকারের কাছে তো আমরা একটা দেশ হিসাবে বিবেচিত ছিলাম। তখন নাফটা, ফ্রি ট্রেড, ডিউটি সহ আরো অনেক বিষয়ে কানাডা সরকারের পলিসি রিফর্ম হচ্ছিল। একটি কার্যকর বিজনেজ সংগঠন ছাড়া কানাডিয়ান সরকারের সঙ্গে কোন যোগাযোগ বা বারগেইন পজিশনে ছিলাম না আমরা। যার কারণে ঐ সময় আমাদের একটা ব্যবসায়িক সংগঠনের অতিব প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের আত্মপ্রকাশ।

প্রশ্ন : শুরুতে কি কি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এবং সেই বাধা কি ভাবে অতিক্রম করেছিলেন?

উত্তর : খুব একটা বাধার সম্মুখিন হতে হয়নি। বরং আমরা অন্যান্য এথনিক গ্র“প যেমন ইন্ডিয়ান চেম্বার এমনকি পাকিস্তান চেম্বার থেকেও যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন : সংগঠনটি গড়ার পর এ পর্যন্ত কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর সবচেয়ে বড় অর্জন কি?

উত্তর : সাফল্য বলতে আমরা বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো’কে সহযোগিতা করেছি। আমাদের সহযোগিতায় এই এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো টরন্টোতে অনেকগুলো ট্রেড শো করেছে। আমরা তাদেরকে লজিস্টিক, ট্রন্সপোর্টেশন এবং সোর্সিং সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহযোগিতা দিয়ে সাহায্য করেছি। তবে এই চেম্বারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল অর্জন হলো ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সম্পূর্ণ ডিউটি ফি ব্যবসা চালু করতে পারা। আমরা কানাডার ফেডারেল পর্যায়ে লবিং করে এই সুবিধাটুকু আদায় করতে সক্ষম হই ২০০১ সালে। এ জন্য অবশ্যই আমারা গর্ব করার দাবী রাখি। কারণ এ ধরণের ১০০% ডিউটি ফ্রি সুবিধা অন্য কোন দেশে আমাদের আছে কি না আমার জানা নেই।

এ জন্য আমরা অবশ্যই বাংলাদেশ হাই কমিশনের তদানীন্তন হাই কমিশনার জনাব আনোয়ার আলম সহিদ, কামার্শিয়াল সেক্রেটারী জনাব আব্দুস সবুর সাহেবকে ধন্যবাদ জানাবো। বাংলাদেশ থেকেও জনাব তোফায়েল আহমেদ তথ্য উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন এবং উৎসাহ দিয়েছিলেন।

সেই প্রথম এবং সেই শেষ বারের মত আমরা কমিউনিটি মেম্বারগণ এবং বাংলাদেশ হাই কমিশন এক যোগে কাজ করেছিলাম এবং সফলতা পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন : আগামীতে আপনাদের লক্ষ্য কি?

উত্তর : আপনি লক্ষ্য করবেন বাংলাদেশ বিজনেস কমিউনিটি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে। আমরা বিজনেস কমিউনিট যতটা শক্তিশালী হতে পারবো- আমরা ততটাই কানাডিয়ান সরকারের কাছে একটা প্রেসার গ্র“প হিসাবে কাজ করতে পারবো।

দ্বিতীয়ত হোমগ্রোন গ্রোইং বিজনেস কমিউনিটিকে আমরা বিভিন্নভাবে আইডিয়া জেনারেট এবং শেয়ার কারার মাধ্যমে সাহায্য করতে পারি। এখানে বাংলাদেশীদে জন্য কানাডার সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে বিজনেস সম্প্রসানেরর বিশাল সুযোগ আছে। আমরা ইতিমধ্যে কানাডার এক্সপোর্ট ডেভলাপমেন্ট কর্পোরেশন, বিজনেস ডেভলাপমেন্ট কর্পোরেশন, বিভিন্ন ফাইনাসসিয়াল ইনস্টিটিট এর কর্মকর্তাদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করেছি যা অনেকের জন্যই ফলপ্রসু হয়েছে।

আরিফ রহামান পরিচালক কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সআরিফ রহামান
পরিচালক
কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স

সিবিসিসি’কে একটি সক্রিয় চেম্বার হিসাবে গড়ে তুলতে চাই : আরিফ রহমান

পরিচালক, কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স

আরিফ রহমান

প্রশ্ন : কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর কার্যক্রম মাঝখানে স্থবির হয়ে পড়েছিল। কারণটা কি?

উত্তর : কিছু সাংগঠনিক জটিলতার কারণে আমাদের কার্যক্রম মাঝখানে স্থগিত ছিল।

প্রশ্ন : প্রধানত আপনার ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টার কারণেই কানাডা বাংলাদেশ

চেম্বার অব কমার্স আবার প্রাণ ফিরে পায়। সংগঠনটি সক্রিয় করার পিছনে আপনার প্রধান প্রেরণা কি ছিল?

উত্তর : আপনারা জানেন যে, আমরা এখানে যারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি, তাদের অনেকদিনের লালিত একটি স্বপ্ন ছিল- প্রবাসের অন্যান্য কমিউনিটির ব্যবসায়ীদের মত আমাদের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরও একটা সংগঠন গড়ে উঠবে। যে সংগঠনের মাধ্যমে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে পরবো। এমনকি বাংলাদেশে যে সকল আগ্রহী ব্যবসায়ী আছেন তাদের সঙ্গেও একটি যোগাযোগ স্থাপন হবে।

আমরা এই কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স-কে একটি সক্রিয় চেম্বার হিসাবে গড়ে তুলতে চাই যাতে করে এর মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটির ব্যবসায়ীগণ উপকৃত হতে পারেন।

প্রশ্ন : নতুন ভাবে আপনারা সংগঠিত হয়েছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে আপনাদের অর্জন কি কি?

উত্তর : এর মধ্যে আমরা আমাদের সংগঠনটিকে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং একটি নির্ভরশীল সংগঠন হিসাবে দাঁড় করিয়েছি। আমরা আমাদের ব্যবসায়িক সাফল্য লাভের জন্য কি ভাবে কাজ করতে পারি সেটি নিয়ে কাজ করছি এবং কিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া তার জন্য কানাডা বিসনেস ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (BDC) সাথে একটি মিটিং করেছি।

৫. সম্প্রতি আপনারা কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছেন। এতে কেমন সাড়া পেয়েছেন?

উত্তর : জি, অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি যা আমরা কল্পনাও করিনি। আমি আশা করবো আগামীতে কানাডার সমস্ত ব্যবসায়ীরা একটি সংগঠনের মাধ্যমে, একই পতাকাতলে এসে কাজ করবেন।

তানভির সিদ্দিকীতানভির সিদ্দিকী পরিচালক কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স

বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করবো : তানভির সিদ্দিকী

পরিচালক, কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স

তানভির সিদ্দিকী

প্রশ্ন : আপনাদের আসন্ন ডিনার গালা অনুষ্ঠানে অন্টারিও প্রভিন্সের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কারা আসছেন?

উত্তর : আমাদের আসন্স গালা ডিনার পার্টি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ মার্চ। আমরা আশা করছি বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। আমাদের গালা ডিনার পার্টিতে প্রধান অতিথি হয়ে

আসছেন অন্টারিওর Minister of Economic Development and Growth Steven Del Duca. আমরা আশা করছি এই অনুষ্ঠানে টরন্টোর বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এর এমপি নেথানিয়েল র্আস্কিন স্মিথ এবং স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এর এমপি বিল ব্লেয়ার উপস্থিত থাকবেন। এই দুই রাইডিং এ বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী বাস করেন। এছাড়াও স্কারবরো সেন্টার এর এমপি সালমা জাহিদকেও আশা করছি আমাদের অনুষ্ঠানে। কানাডার বিজনেস ডেভলাপমেন্ট কর্পোরেশন এবং এক্সপোর্ট ডেভলাপমেন্ট কর্পোরেশন এর প্রতিনিধিও আসছেন কয়েকজন আমাদের গালা ডিনার পার্টিতে।

প্রশ্ন : কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় আপনারা কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

উত্তর : আমাদের চেম্বারের নিয়ম বা গঠনতন্ত্র অনুসারে আমরা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করবো। তারা যাতে তাদের ব্যবসায় সাফল্য লাভ করতে পারেন সে জন্য আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী পরামর্শ দিয়ে যাব।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ থেকে কোন ব্যবসায়ী কানাডায় তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী হলে আপনারা তাদেরকে কি ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত?

উত্তর : এক্ষেত্রেও আমরা আমাদের চেম্বারের নিয়ম-নীতি অনুযায়ীই তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবো যাতে করে কানাডায় তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারনে সক্ষম হন। কেউ যদি কানাডায় কোন ব্র্যান্ড এস্টবলিশ করতে চান বা কোন ফ্রেঞ্চাইজ কিনতে চান অথবা কোন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চান তবে সে ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। আমাদের চেম্বারে বেশ কয়েকজন পরিচালক আছেন যারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রাখেন। তারা প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করতে পারবেন।

প্রশ্ন : কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর সদস্য হতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে এবং সদস্য হবার প্রক্রিয়াটি কি?

উত্তর : মূলত যে কেউই আমাদের চেম্বারর সদস্য হতে পারবেন যদি তার চলমান একটি ব্যবসা থাকে এবং একটি বিজনেস নাম্বার থাকে। খুবই সহজ পদ্ধতিতে আমরা আমাদের চেম্বারে সদস্য গ্রহণ করছি। আমাদেরকে ফোন করে অথবা আমাদের ওয়েব সাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহনের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। ওয়েব সাইটের ঠিকানা হলো : https://www.the-cbcc.ca/register-cbcc-general

প্রশ্ন : কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর কার্যক্রম কি শুধু টরন্টোতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না কানাডার অন্যান্য শহরেও এর কার্যক্রম বিস্তৃত   করার পরিকল্পনা রয়েছে আপনাদের?

উত্তর : আমরা সীমাবদ্ধ থাকবো না। কানাডার অন্যান্য শহর যেখানে বাংলাদেশীদের ব্যবসা আছে সেখানেও আমরা আমাদের চেম্বারের কার্যক্রম বি¯তৃত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। বর্তমানে আমরা মন্ট্রিয়ল, ভেঙকুভার সহ অন্যান্য প্রধান প্রধান শহরগুলোতে যোগ্য প্রার্থী খুঁজছি কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কামার্স এর শাখা খুলতে।