কানাডাকে আগামী কয়েক দশক ধরে গতিশীল এবং সমৃদ্ধ রাখার জন্য বেশি করে অভিবাসী নিয়ে আসাই হলো সবচেয়ে সেরা উপায়

ডিসম্বের ১, ২০১৭

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হোসেন গত ১ নভেম্বর যে অভিবাসন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তাকে সুনির্দিষ্ট করে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়তো যায় না, তবে সার্বিকভাবে এটি সম্ভবত একটি বিজ্ঞজনোচিত উদ্যোগ। ট্রুডোর সরকার হয়তো তার নতুন তিন বছর মেয়াদি অভিবাসন পরিকল্পনার জন্য কিছুটা সমর্থন পেতে পারেন। আর যাই হোক এতে নতুন অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ রেকর্ড মাত্রায় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছেÑ যা ২০২০ সালের মধ্যে তিন লাখ ৪০ হাজারে দাঁড়াবে।

বস্তুত এটি অপেক্ষাকৃত একটি সতর্ক পরিকল্পনা। টরন্টো স্টার এর এক সম্পাদকীয়তে  সম্প্রতি এ অভিমত প্রকাশ করা হয়। সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, আসলে সরকার যদি নিছক তার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ এবং কনফারেন্স বোর্ড অব কানাডার মতো কর্তৃপক্ষের কথা শুনতো তাহলে তারা আরও দ্রুততর গতিতে এগিয়ে যেতো। কারণ ওই বিশেষজ্ঞরা অভিবাসীর সংখ্যা অনেক বেশি বাড়ানোর সুপারিশ করেছেনÑ তারা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতি বছর সাড়ে চার লাখ করে অভিবাসী গ্রহণ করার কথা বলেছেন।

জনমনে ব্যাপকভাবে এমন ধারণা রয়েছে যে অভিবাসীরা কানাডীয়দের চাকরিবাকরি দখল করে নিচ্ছে এবং যে কোনও সরকারকেই এসব উদ্বেগের বিষয়গুলো সামলে নিতে হয়। ছবি : কানাডিয়ান প্রেস

সেই তুলনায় মন্ত্রী আহমেদ হোসেনের পরিকল্পনায় অনেক বেশি নমনীয়, পর্যায়ক্রমিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে কানাডার অভিবাসী গ্রহণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী বছরের জন্য মোটামুটি তিন লাখ ১০ হাজার, এরপর ২০১৯ সালের জন্য তিন লাখ ৩০ হাজার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ২০২০ সালের জন্য তিন লাখ ৪০ হাজার।

এতে করে সরকার অভিবাসীদের ঢল নামাতে সব দুয়ার খুলে দিয়েছে বলে কোনওধরণের সমালোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ পাবে। তা সত্ত্বেও ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও জনমনে ব্যাপকভাবে এমন ধারণা রয়েছে যে অভিবাসীরা কানাডীয়দের চাকরিবাকরি দখল করে নিচ্ছে এবং যে কোনও সরকারকেই এসব উদ্বেগের বিষয়গুলো সামলে নিতে হয়।

তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই যে, অভিবাসীর স্তর ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর ফলে সরকারের সংস্থাগুলো এবং বেসরকারী খাতের সংস্থাগুলোর জন্য এটা নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি করবে যাতে নবাগতরা যতটা সম্ভব সাফল্যের সঙ্গে সমাজের অঙ্গীভূত হতে পারে। এর অর্থ হলো, সম্ভব সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী যাতে সফল হতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রণীত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ, আবাসন সুবিধার সৃষ্টি করা।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এই পর্যায়ে আরও অভিবাসী গ্রহণের পক্ষের যুক্তি অকাট্য। কানাডা হলো অপেক্ষাকৃত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দেশ, আমাদের মধ্যম স্তরের বয়স হলো ৪৩ Ñ আর আমাদের শিশু জন্মদানের সংখ্যাও এমন যথেষ্ট নয় যাতে এটা নিশ্চিত হবে যে, ভবিষ্যতে অনেক শ্রমশক্তি পাওয়া যাবে যারা কর দেবে এবং অবসরপ্রাপ্ত সব মানুষকে সহায়তা দেওয়া যাবে। কানাডাকে আগামী কয়েক দশক ধরে গতিশীল এবং সমৃদ্ধ রাখার জন্য বেশি করে অভিবাসী নিয়ে আসাই হলো সবচেয়ে সেরা উপায়।

বর্তমানে কানাডা প্রতি বছর জনসংখ্যার অনুপাতে মাত্র ০.৮ শতাংশ হারে অভিবাসী আনছে। হুসেনের পরিকল্পনায় সেটি মাত্র ০.৯ শতাংশে উন্নীত হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একমত যে, সবচেয়ে ভালো লক্ষ্যমাত্রা হলো বছরে জনসংখ্যার অনুপাতে এক শতাংশ হারে অভিবাসী নিয়ে আসা এবং ওই লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের উচিৎ এবিষয়ে অব্যাহত নজর রাখা।

এটা করার জন্য বর্তমান সময়ের চেয়ে ভালো সময় আগে আর আসেনি। হোসেন গত বুধবার যেমনটা বললেন যে, কানাডা এখন স্বাগত জানানোর দেশ হিসাবে সারাবিশ্বে ইতিবাচক সুনাম অর্জন করেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অনেক দেশ নবাগতদের জন্য তাদের দুয়ার বন্ধ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, “ আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এবং কোনওরকম মার্জনাপ্রার্থনা ছাড়াই বিপরীত পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।”

এটি ট্রুডো সরকারের জন্য নিছক কোনও রাজনৈতিক ছাপ্পর মারার বিষয় নয়। এটি হলো এমন এক বাস্তব দুনিয়ায় কানাডার জন্য একটি সম্ভাবনাময় সুযোগ, যেটিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারলে তা এই দেশের জন্য অনাগত ভবিষ্যতের অনেক দূর পর্যন্ত কৌশলগত প্রান্ত নির্ধারণের সুযোগ দিতে পারে।

অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বের মেধা অনেক বেশি  ভ্রাম্যমান। আর কানাডা এই মেধার ওপর নিজের যতটা হিস্যা তার চেয়েও বেশি পরিমাণ আকৃষ্ট করতে চায়, যদি দেশটিকে সারা বিশ্ব থেকে আসা মানুষের জন্য একটি ইতিবাচক গন্তব্য হিসাবে দেখা হয়।

ইতিমধ্যেই কিছু উৎসাহব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যেমন, বিদেশ থেকে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু আত্মপ্রসাদ বোধ করা যথেষ্ট নয়। সুশিক্ষিত ও সৎউদ্দেশ্যে উদ্বুদ্ধ মানুষদেরকে কানাডায় নিয়ে আসার জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এ বিষয়ে এরইমধ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে উচ্চ চাহিদা রয়েছে এমন শ্রমশক্তির জন্য ভিসার আবেদন সহজীকরণের মাধ্যমে। অভিবাসন সবসময়ই কানাডার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিলো। সেটা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে সরকার একটি শুভ সূচনা করেছে এবং ভবিষ্যতেও এটা অ্যাহত থাকতে হবে। সরকারকে এই পথেই থাকতে হবে।