অন্টারিও-র নির্বাচন : বাঙ্গালীদের ভাবনা

মে ৫, ২০১৮

–  আশরাফ আলী –

টরন্টো, ৩০ এপ্রিল : আর মাত্র পাঁচ সপ্তাহ ! আগামী জুন মাসের ৭ তারিখে অন্টারিও-র প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাংসদ পদপ্রার্থীরা জনগণের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিবেন আগামী পাঁচ সপ্তাহের প্রতিটা দিন। নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে বাড়ীর সামনে “আমি এই প্রার্থীর সমর্থক” সূচক ছোট-বড় সব সাইজের লন সাইন শোভা পাবে।

উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সালে সরকার গঠনের জন্যে অন্টারিওর জনগণ নির্বাচিত করেছিলেন ক্যাথলিন উইন এর নেতৃত্বাধীন অন্টারিও লিবারেল পার্টিকে। এবার আসন্ন নির্বাচনেও কি  ক্যাথলিন উইন গতবারের মত ওন্টারিয়ানদের সমর্থন পাবেন? নাকি নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে বহু ঝড়-ঝাঁপটার মুখে পড়া এবং একেবারে নতুন নেতার নেতৃত্বের ওন্টারিও পিসি পার্টিকে সরকার গঠনের দায়িত্ব দেবে ওন্টারিয়ানরা ?

আমরা সামনের ৭ই জুনের নির্বাচন বিষয়ে কিছু প্রশ্ন নিয়ে বাঙালী পাড়ায় গিয়েছিলাম। টরন্টোর বাঙ্গালী পাড়ার বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে স¤পৃক্ত তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। জানতে চেয়েছি নির্বাচন সম্পর্কে তাদের মতামত কি এবং তাদের ভবিষ্যত বাণী কি।

আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি তারা হলেন – শহীদ খন্দকার, ব্যারিস্টার জয়ন্ত কে সিন্হা ও ফারহানা খান।

ফারহানা খান, ব্যারিস্টার জয়ন্ত কে সিন্হা ও শহীদ খন্দকার

শহীদ খন্দকার কেএনএস কানাডা ইনকর্পোরেটেড নামের মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামাদি সরবরাহের একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট।  উনি একজন এম ফার্ম ও এমবিএ ডিগ্রিধারী সফল ব্যবসায়ী ও জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী।

ব্যারিস্টার জয়ন্ত কে সিন্হা একজন সফল আইনজীবী। টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটির সব অনুষ্ঠান ও উদ্যোগের সাথে তিনি নিজেকে সব সময়ে সম্পৃক্ত  রাখেন।

ফারহানা খান জেডএফ পেশায় একজন মিডিয়া কর্মী।  বাংলাদেশী মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নন্দন টিভির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ – কমার্সিয়াল হিসেবে কর্মরত। উনি একজন সমাজ কর্মী ও সফল ইভেন্ট অর্গানাইজার।  সেই সাথে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ টরন্টো, অন্টারিও র ভাইস প্রেসিডেন্ট, টরন্টো ঢাকা ক্লাবের ইভেন্ট কোঅর্ডিনেটর এবং শাহনাই এন্টারটেইনমেন্ট এর সিইও।

এখানে তাদের মতামত ও ভবিষ্যতবাণীগুলো তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন  : আসন্ন অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচন সম্পর্কে আপনার ভবিষ্যত বাণী কি? অর্থাৎ কোন দল জয়ী হবে বলে মনে করছেন?

শহীদ খন্দকার : এখন পর্যন্ত ওপিনিয়ন পোল এ যদিও কনজারভেটিভ পার্টি বিশেষভাবে এগিয়ে আছে, আমি তবুও মনে করি যে প্রকৃত ভোটের দিনে লিবারেল পার্টি বিজয়ী হবে।

জয়ন্ত সিন্হা :  আসন্ন অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে আমি একটি পরিবর্তন আশা করছি এবং স্বভাবতই পরিবর্তনে কনজারভেটিভ পার্টিকে প্রথম স্থানে রাখতে চাই।

ফারহানা  খান:   অবশ্যই লিবারেল পার্টি, কারণ এই পার্টিতে আছে একজন প্রগতিশীল এবং অভিজ্ঞ  নেতা।  লিবারেল পার্টির ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

প্রশ্ন : কেন মনে করছেন এই দলটি নির্বাচিত হবে?

শহীদ খন্দকার : লিবারেল সরকারের অধীনে  অর্থনীতি খুবই ভালো করছে, প্রকৃত পক্ষে  কানাডায় দ্রুততম উন্নতশীল অর্থনীতি হিসেবে অন্টারিও আলবার্টাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং বর্ণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভারসাম্যতা বজায় রয়েছে এই প্রভিন্স এ।  সেইসাথে এই সরকার মধ্যবিত্ত জনগণের পক্ষে সম্প্রতি কিছু নীতি বাস্তবায়ন করেছে  এবং যা ভোটারদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একটি মূল বিষয় হিসেবে কাজ করবে।

জয়ন্ত সিন্হা : বর্তমান সরকারের (প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় )  কিছু হঠকারী সিদ্ধান্তকে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই পরিপক্ক  সিদ্ধান্ত  বলে মনে করেনি এবং সুদূর ভবিষ্যতে যা দেশের সার্বিক কল্যাণে আসবে বলে মনে হয়নি। যে  কারণে জনগণ হয়তো ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় জানাবে।

ফারহানা খান :   লিবারেল পার্টির ভবিষ্যতের একটা ছক আছে, আর তারা ইতিমধ্যে প্রভিন্স পরিচালনায় অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে।  তাদের সবাই আধুনিক চিন্তাধারার, তাদের নেতা প্রগতিশীল। আমরা এর আগে দেখেছি কনজারভেটিভ পার্টি কিভাবে সরকার পরিচালনা করে। প্রিমিয়ার মাইক হ্যারিস এর নেতৃত্বে সরকার পরিচালনার সময় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়েছে।

প্রশ্ন : যে দলটি নির্বাচনে জয়ী হবে বলে আপনি মনে করছেন তারা কি এ্যাবসুলেট মেজরিটি পাবে?

শহীদ খন্দকার : আমার মনে হয়না যে এ বছরে বিজয়ী দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ক্ষীণতম সম্ভাবনা রয়েছে।  এবং লিবারেল পার্টিকে সম্ভবত এনডিপির সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে।

জয়ন্ত সিন্হা: আমার ধারণা তারা  সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সংসদ এ আসবে।

ফারহানা খান: আমার এটাই বিশ্বাস যে লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কারণ তাদের ঢ়ষধঃভড়ৎস স্বতন্ত্র ও সহজ।

প্রশ্ন : আপনার কেন মনে হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে পরাজিত হবে? অথবা কেন মনে করছেন তারাই পুননির্বাচিত হবে?

শহীদ খন্দকার : এর উত্তর আমি দ্বিতীয় প্রশ্নে এ দিয়েছি।

জয়ন্ত সিন্হা : উত্তরটি আমি দ্বিতীয় প্রশ্নে দিয়েছি এবং সেই কারণেই বর্তমান ক্ষমতাসীন  দল পরাজিত হবে বলে মনে করছি। অন্তত

ভোটের রাজনীতি আমরা আশাকর তে পারিনা।

ফারহানা খান:   আমার মনে হয়না বর্তমানে যে পার্টি ক্ষমতায় আছে সে পার্টি  পরাজিত  হবে । তারা আমাদের কথা শোনে এবং কমিউনিটির প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখে।  সবসময়েই তারা আমাদের পক্ষে কথা বলেছে।

প্রশ্ন : বেশীরভাগ প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঝোঁক বা সমর্থন কোন দিকে বলে আপনার কাছে মনে হচ্ছে? কারণটা কি?

শহীদ খন্দকার : অভিবাসীদের কাছে লিবারেল পার্টি একান্ত বিশ্বস্ত দল হিসেবে স্বীকৃত বিশেষ করে বাংলাদেশীদের কাছে। এটাও একটা সত্য যে লিবারেল এর গ্রহিত অনেক নীতি বাংলাদেশী কম্যুনিটির সদস্যদের উপকারে এসেছে।

জয়ন্ত সিন্হা : এটি প্রমাণিত যে প্রবাসী বাঙালীরা লিবারেল কে এখনঅব্দি সংগত কারণেই সমর্থন দিয়েছে।  কিন্তু সাধারণের, বিশেষত যারা র্দীঘদিন এখানে বসবাস করছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাচ্ছে।

ফারহানা খান: বাংলাদেশী কম্যুনিটির অধিকাংশ মানুষ লিবারেল পার্টিকে সমর্থন দেবে।  এর পরে দেবে প্রোগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টিকে।

প্রশ্ন : নির্বাচনের আগে অনেকেই অনেক রকম প্রতিশ্র“তি দিচ্ছে। আপনার কি মনে হয় যারা জয়ী হবেন তারা তাদের প্রদত্ত ঐ প্রতিশ্র“তি রক্ষা করবেন? নাকি এই প্রতিশ্র“তি ক্ষমতায় যাওয়ার একটি সস্তা কৌশল মাত্র।

শহীদ খন্দকার : এখানকার দলগুলো সাধারণত নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্র“তি রক্ষা করার চেষ্টা করে  এবং আমি মনে করি এবছরও এর অন্যথা হবে না।

জয়ন্ত সিন্হা : তারা অবশ্যই চেষ্টা করবেন প্রতিশ্র“তি রক্ষা করতে।  তবে আমি  অন্তত  এই সস্তা কৌশল সমর্থন করিনা।  শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাবার  জন্য প্রতিশ্র“তি না দিয়ে দেশ  গঠনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আমি সমর্থন করি।

ফারহানা খান:  তা ঠিক, তবে প্রার্থীদেরকে অবশ্যই তাদের প্রতিশ্র“তি পালন ও পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করতে হবে।

প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ কে জয়ী হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন? কেন মনে করছেন?

শহীদ খন্দকার : লিবারেল পার্টির প্রার্থী এই রাইডিং এ বিজয়ী হবে বলে আমি মনে করি।  প্রথমতঃ ঐতিহাসিকভাবে লিবারেল পার্টি বাংলাদেশী কমিউিনিটির জনগণের কাছে পছন্দনীয় এবং  বিশ্বস্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, এবং দ্বিতীয়তঃ এই পার্টির নির্বাচিত সদস্যরা কমিউিনিটির জন্যে অনেক কাজ করেছে।

জয়ন্ত সিন্হা : যেহেতু এই এলাকা বাঙালী অধ্যুষিত তাই খুব ভালো কোন যোগ্য প্রার্থী অন্য দল থেকে মনোনয়ন না পেলে  পুনরায় লিবারেল যাবার আশু সম্ভাবনা রয়েছে।

ফারহানা খান:  বীচেস ও ইস্ট ইয়র্ক এলাকায় বাংলাদেশী কমিউিনিটির অধিকাংশ মানুষের বাস এবং তারা যদি লিবারেল পার্টিকে ভোট দেয় তাহলে ৮০% নিশ্চিত হবে তাদের বিজয়।

প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ কে জয় হবে বলে মনে করছেন? কেন করছেন?

শহীদ খন্দকার : লিবারেল পার্টির প্রার্থী এই রাইডিং এ বিজয়ী হবে বলে আমি মনে করি।  প্রথমতঃ ঐতিহাসিকভাবে লিবারেল পার্টি বাংলাদেশী কমিউিনিটির জনগণের কাছে পছন্দনীয় এবং  বিশ্বস্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, এবং দ্বিতীয়তঃ এই পার্টির নির্বাচিত সদস্যরা কমিউিনিটির জন্যে অনেক কাজ করেছে।

জয়ন্ত সিন্হা : যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন পেলে কনজারভেটিভ অথবা এন.ডি.পি. যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।  বিশেষত  এন.ডি.পি. র মনোনীত প্রার্থীকে  আমিযোগ্য মনে করি।

ফারহানা খান:   আমার ধারণা যে প্রার্থী এটা দেখাতে সক্ষম হবে যে সে সত্যি সত্যিই কমিউিনিটির স্বার্থের বিষয়কে গুরুত্ব দেয় ও সমর্থন করে সেই প্রার্থীর স্কারবোরো সাউথ-ওয়েস্ট এ জয়ী  হবার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।