অন্টারিওতে অস্থায়ী চাকরির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে

নভেম্বর ৩, ২০১৭

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অস্থায়ী কাজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ‘উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে অন্টারিওর শ্রমমন্ত্রী নতুন আইন করার প্রতিশ্র“তি দিলেন যে আইন অনুযায়ী চাকরিদাতা কোম্পানিগুলোকে “সেইসব দিনে ফিরে যেতে উৎসাহিত করা হবে যখন তারা পূর্ণকালীন সময়ের জন্য লোকেদের কাজ দিতেন।”

টরন্টো স্টারের প্রতিবেদক ক্রিস্টিন রুশোই এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, কীভাবে গোটা প্রদেশে অস্থায়ী নিয়োগাদাতা কোম্পানিগুলো বেড়ে উঠেছে এবং কীভাবে তারা কর্মজীবীদেরকে চাকরির কোনও নিশ্চয়তা এমনকি ন্যূনতম প্রশিক্ষণ না দিয়েই কাজে নিয়োগ করছে। প্রতিবেদনে এমন তথ্যও উঠে আসে যে, কর্মস্থলে খন্ডকালীন কর্মজীবীদের জখম হবার ঝুঁকিও অনেক বেশি। এর পরই শ্রমমন্ত্রী কেভিন ফ্লিন সোমবার কুইন্স পার্কে বলেন, “আমরা এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু বিকল্প উপায় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করেছি।”

তিনি বলেন, “অন্টারিওর মানুষ পূর্ণকালীন চাকরি আশা করে…আমরা বলতে চাই যে, আপনি যদি অন্টারিও প্রদেশে একই ধরণের কাজ করেন তাহলে আপনার মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির পক্ষ থেকে ভিন্ন কিছু করার যৌক্তিকতা নেই।”

ন্যূনতম মজুরি ঘন্টায় ১৫ ডলারে করার দাবীতে গত জানুয়ারী মাসে আন্টারিও পার্লামেন্ট ভবনের সামনে সমাবেশ। ছবি : নিল সেন্ডিল, ইনসাইটটরন্টো.কম এর

অন্টারিও সরকারের একটি প্রস্তাবিত আইন অর্থাৎ বিল ১৪৮-এ মজুরি, কর্মঘণ্টা এবং সংগঠিত হওয়ার অধিকারসহ অস্থায়ী চাকরি নিয়ে বেশ কিছু উদ্বেগের বিষয় সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিলটি প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে এবং চলতি গ্রীষ্মেই সেটি আবারও পর্যালোচনার জন্য উত্থাপন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনে কেবল একটি বিষয়ের সমাধান করা হয়নি। সেটি হলো, কর্মস্থলে অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কোনও কর্মী আহত হলে তার কোম্পানি নয় বরং তিনি যে স্থানে কাজ করেন সেই কর্তৃপক্ষই কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও ইনস্যুরেন্স বোর্ডের কাছে দায়বদ্ধ হবেন। সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, এটি হলো খন্ডকালীন কাজে নিয়োগদানকারী সহায়ক সংস্থাগুলোকে ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় প্রণোদনা।

ফ্লিন বলেন, তার মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

তিনি বলেন, কোনও কোম্পানিতে কর্মরত কর্মী অথবা অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করা কর্মী যদি ঘণ্টাপ্রতি সমান মজুরি পায় তাহলে “এজেন্সির মাধ্যমে কাজ নেয়ার ক্ষেত্রে কোনও প্রণোদনা নেই।”

আপনি এমন অনেক দেখতে পাবেন যে, কেউ হয়তো ঘণ্টায় ২০ ডলার করে মজুরি পাচ্ছে আবার তার পাশাপাশি এমন লোকও পাবেন যে কিনা একই কাজ করে ঘণ্টায় ১২ ডলার করে পাচ্ছে। আমরা বলতে চাই যে, অন্টারিও প্রদেশে এটা চলতে দেয়া হবে না এবং আমরা যেভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে যাচ্ছি সেটা হলো সবার জন্য সমান মজুরির ব্যবস্থা করা।”

অন্টারিও সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অস্থায়ীভিত্তিতে কর্মরত ব্যক্তিরা সবচেয়ে দুঃস্থ এবং তারা “সবধরণের কর্মজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপত্তাহীন।” ডেইলি স্টারের সারা মজতেহেজাদেহ গোপনে বেকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ফিয়েরা ফুডস-এ যান। উত্তর ইয়র্কের এই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত অসংখ্য বিধিবিধান লংঘন করেছে এবং সেখানে গত বছর একজন কর্মী মারা গেছেন।

মজতেহেজাদেহ এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বেন্ডান কেনেডি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন যে, মাত্র গত ১০ বছরের মধ্যে অন্টারিওতে অস্থায়ী এজেন্সিরর সংখ্যা ২০ শতাংশ বেড়েছে এবং বৃহত্তর অন্টারিওতে এদের মোট সংখ্যা এখন ১,৭০০টি। কোম্পানিগুলো তাদের ব্যয় কমানো এবং কর্মচারীদের প্রতি তাদের দায়-দায়িত্ব কমানোর জন্য ওইসব এজেন্সিকে ব্যবহার করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও পুরো দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।

“আমরা কোনও এজেন্সি বা পূর্ণকালীন নিয়োগদাতার মাধ্যমে নিযুক্ত সবার জন্যই কর্মচারী নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মজুরি সমান করতে যাচ্ছি।”

এনডিপি নেতা আন্দ্রে হরওয়াথ বলেন, লিবারেল সরকার অস্থায়ী কর্মীদের জীবনযাত্রা উন্নয়নের জন্য গত ১৪ বছরে দুবার চেষ্টা করেছে এবং তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর আমরা সেই ভয়াল কাহিনী দেখলাম যেগুলো সম্পর্কে আমরা শুনতাম, সেই জীবনহানির কথা… এমনই হলো অন্টারিওর শাসকগোষ্ঠী, গত ১৪ বছর ধরে। এটা গ্রহণযোগ্য নয় এবং লিবারেলরা বিল ১৪৮ উত্থাপনেরও আগে নিউ ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছে প্রদেশের প্রতিটি কর্মীর জন্য সমান মজুরি নিশ্চিত করার।

“সুতরাং অস্থায়ী নিয়োগদাতা এজেন্সিগুলো যদি এখনও টিকে থাকে তবে তারা কর্মচারীদের সেবাটুকু ব্যবহার করার জন্য নিয়োগদাতাদের প্রণোদনা দিতে স্বল্প মজুরির সুযোগ ব্যবহার করে একটি ভিন্নতর উপায়েই টিকে থাকবে।”

অন্টারিও পিসির অর্থনৈতিক বিষয়ক সমালোচক ভিক ফেডেলি বলেন, “অন্টারিওর প্রত্যেকেই জানতে চায় যে, এখানে পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে এবং আপনি একটি নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেন।” তিনি বলেন, “আমি মনে করি প্রত্যেকেই সে লক্ষ্যেই কাজ করছেন।”