ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে মৃত্যুর হার কানাডিয়ানদের চেয়ে কম!
এপ্রিল ১৫, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: অন্টারিওতে বসবাসরত ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে মৃত্যুর হার স্থানীয়ভাবে জন্ম নেয়া অথবা দীর্ঘ সময় ধরে এখানে বসবাসরত অধিবাসীদের চেয়ে ৬০% কম! ইমিগ্রেশন এবং আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে মৃত্যুর হারের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করে তার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইনস্টিটিউট ফর ক্লিনিক্যাল ইভেলুয়েটিভ সায়েন্স এবং ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক কম যদিও তারা অন্টারিও প্রভিন্সের সবচেয়ে বঞ্চিত এলাকায় থাকেন। খবর টরন্টো স্টারের।
হিসাবে দেখা গেছে সংখ্যার বিচারে ২০০২ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অন্টারিওতে সার্বিকভাবে ৪২,৭০০ জন কম ইমিগ্রেন্ট এর মৃত্যু ঘটেছে। আর অকাল মৃত্যু ঘটেছে ১৮,৪০০ জন কম ইমিগ্রেন্ট এর।
গবেষক দলের প্রধান ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর এপিডেমিলজিস্ট লরা রজেলা বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর মাত্রায় এই পার্থক্য দেখে বিস্মিত হয়েছি। এই পার্থক্য অনেক বেশী এবং দৃঢ়কায়।’ জার্নাল অব এপিডেমলজি এন্ড কমিউনিটি হেলথ এর সর্বশেষ ইস্যুতে এই গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।
গবেষণাটি পরিচালনার সময় যে তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে তার মধ্য আছে ডেমোগ্রাফিক ডাটাবেস, অন্টারিও রেজিস্টার জেনারেল এর কার্যালয়ে নথিবদ্ধ জন্ম-মৃত্যুর হিসাব, সেন্সাস তথ্য এবং ইমিগ্রেশন রেকর্ড। এই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কানাডিয়ান বর্ন, ১৯৮৫ সালের আগে এবং পরে আসা ইমিগ্রেন্টদের বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে মৃত্যুর তুলনামূলক হার কত তা বের করার চেষ্টা করা হয়েছে।
২০০২ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অন্টারিওতে মোট ৯৩৪,৭৬৫ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে যার মধ্যে ১৯,৫০১ জন মহিলা ইমিগ্রেন্ট এবং ২০,৫১৪ জন পুরুষ ইমিগ্রেন্ট রয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় অন্টারিওর যে সকল নেবারহুডের আর্থসামাজিক অবস্থা নিম্নতম পর্যায়ে আছে সেখানে ইমিগ্রেন্টদের বাস কানাডিয়ান বর্ন বা যারা বহু বছর ধরে কানাডায় আছেন তাদের তুলনায় বেশী। (মহিলাদের বেলায় ২৯.৫% বনাম ২৪% এবং পুরুষদের বেলায় ৩২.৪ বনাম ২৩%)
এপিডেমিলজিস্ট লরা রজেলা বলেন, “আমার ধারণা ছিল আর্থিক ও মানসিক প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে মৃত্যুর হার হবে সবচেয়ে বেশী হবে। কিন্তু আমাদের গবেষণা থেকে আমরা পাচ্ছি উল্টো তথ্য।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে সকল এলাকায় ইমিগ্রেন্টরা সবচেয়ে বেশী বঞ্চিত সে সকল এলাকায় তাদের মৃত্যুর হার কম। প্রতিকুল অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে বাস করেও তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভাবে ভাল। লরা রজেলা বলেন, ‘হেলদি ইমিগ্রেন্ট ইফেক্ট’ হয়তো এই পরিস্থিতির পিছনে কাজ করছে।
উল্লেখ্য যে, কানাডায় আসার আগে শর্ত অনুযায়ী সবাইকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের ঐ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফেল করলে সাধারণত ইমিগ্রেশন দেয়া হয় না। আর তার অর্থ হলো, স্বাস্থ্যবান লোকেরাই ইমিগ্রেন্ট হয়ে কানাডায় আসছেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম প্রজন্মের এই ইমিগ্রেন্টদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের স্বাস্থ্য আবার অতটা ভাল হয় না যেমনটা থাকে প্রথম প্রজন্মের।
তবে ইমিগ্রেন্টদের মৃত্যুর হার কানাডায় জন্ম নেয়া বা দীর্ঘদিন এদেশে আছেন এমন নাগরিকদের তুলনায় কম হলেও তাদের লাইফ লংজিবিটি বা আয়ুস্কাল কিন্তু কম। গবেষণায় দেখা গেছে গড়ে তারা কানাডিয়ানদের তুলনায় ৬ বছর কম বাঁচেন।