জাস্টিন ট্রুডোর এক বছর
নেতৃত্বশৈলীর গুণে চ্যাম্পিয়ন তিনি : জনপ্রিয়তা বেড়েছে আরো বেশী
নেভেম্বর ৫, ২০১৬
খুরশিদ আলম : জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা সূর্যের আলোর মত জ্বল জ্বল করছে কানাডার দিগন্তজুরে। নির্বাচনের এক বছর পরেও তাঁর জনপ্রিয়তা এক রত্তিও কমনি, বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর নেতৃত্বশৈলী বা দলের ও দেশের ছন্দময় অধিনায়কত্ব তাকে দিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষ অবস্থান এবং একই সাথে তাঁর উপর দেশবাসীর নির্ভয় নির্ভরতা। কানাডার জাতীয় রাজনীতিতে নাটকীয় সব পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগিছেনে তিনি। কৃতিত্বে ছাপিয়ে গেছেন অনেক কিছুতেই।
গত ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত ফোরাম রিসার্সের জরীপে বলা হয়, নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর এক বছর পরেও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা এখনো জ্বল জ্বল করছে সূর্যের আলোর মত। এই মূহুর্তে যদি কানাডায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে শতকরা ৪৯ জন কানাডিয়ান জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টিকে ভোট দিবেন। অন্যদিকে জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি ইলেক্টরেটদের সমর্থণ এই মূহুর্তে রয়েছে শতকরা ৫৬ ভাগ। ফোরাম রিসার্স এর প্রেসিডেন্ট লরনে বাজিনফ বলেন, লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা এখন অনেক উঁচুতে বিদ্যমান। জাস্ট্রিন ট্রুডোর নেতৃত্বশৈলী এবং অর্থনীতিতে বিনিয়োগ তাঁকে ও তাঁর দলকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
জরীপে দেখা গেছে আজ এই মুহুর্তে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে লিবারেল পার্টি আসন পাবে ২৪০টি। বর্তমানে পার্লামেন্টে এই দলটির আসন সংখ্যা ১৮২টি। অন্যদিকে সাবেক ক্ষমতাসীন দল কনজার্ভেটিভ পার্টি পাবে ৩০% ভোট এবং নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি পাবে ১২% ভোট।
বর্তমানে লিবারেল পার্টির মধ্যে জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৯২%। কনজার্ভেটিভ পার্টিতে বর্তমান অন্তর্বতী বা অস্থায়ী দলীয় প্রধান রোনা এম্ব্রসের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪৩%। গত সেপ্টেম্বরে এনডিপি’র প্রতি ভোটারদের সমর্থন ছিল ৯%। বর্তমানে তা উন্নীত হয়ে ১২% এ দাড়িয়েছে। ফোরাম রিসার্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার ধারণা কিছু লিবারেল সমর্থক এনডিপি’র দিকে ঝুঁকে থাকতে পারেন এবং কনজার্ভেটিভদের কেউ কেউ লিবারেল পার্টির দিকে ঝুঁকে থাকতে পারেন। অর্থাৎ জরীপ ফলাফল বলছে, এনডিপি কিছুটা অগ্রসর হয়েছে জনপ্রিয়তায় কিন্তু কনজার্ভেটিভ পার্টি আরো পিছিয়েছে।
মোট কথা, কানাডার রাজনীতিতে চমক সৃষ্টির পাশাপাশি অধিকতর সক্রিয় ও সহসী এবং সপ্রতিভ ফেডারেল সরকার উপহার দেওয়ার জন্য জাস্টিন ট্রুডো ইতিমধ্যেই প্রশংশিত হয়েছেন কানাডার
সাধারণ মানুষের কাছে। আর এ কথা বলেছেন কানাডার জরীপ প্রতিষ্ঠানের EKOS Research Associates প্রেসিডেন্ট ফ্রেঙ্ক গ্র্যাভিস। তিনি বলেন, জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি অব্যাহতভাবে জনপ্রিয়তার বিচারে এগিয়ে আছে ৪০% এর উপরে সমর্থন পেয়ে। এই হিসাব আরো ৬ মাস আগের। ইকোস পরিচালিত ঐ জরীপে দেখা গেছে জনপ্রিয়তার দিক থেকে লিবারেল তখন ৪৬%, কনজার্ভেটিভ ২৬% এবং এনডিপি ১৫% এগিয়ে ছিল। ইকোস এর প্রেসিডেন্ট ঐ সময় বলেন সরকারের উপর জনগনের আস্থা বর্তমানে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা গত ২৫ বছরে দেখা যায়নি।
আরেক জরীপ প্রতিষ্ঠান এবাকাস ডাটা’র প্রধান নির্বাহী ডেভিড কলেটো বলেন, গত নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডো তার সমালোচকদের বোকা বানিয়েছেন এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজনীতিকদের প্রতি জনগনের প্রত্যাশাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
কানাডার জনগণ চান রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও অবারিত দ্বার। ট্রুডো কানাডার রাজনীতিতে সেই বিষয়গুলোই আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার করেছেন ঠিক তার উল্টোটি। জনগণ এমনকি পার্টির লোকদের কাছেও তিনি স্বচ্ছ ছিলেন না। গোপনদ্বার বৈঠকে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে ও চাপিয়ে দিতে ভালবাসতেন।
লিবারেল পার্টি ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত যে ভাবে সরকার পরিচালনা করে আসছে তাতে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট। কানাডার জরীপ প্রতিষ্ঠানের EKOS Research Associates এর প্রেসিডেন্ট ফ্রেঙ্ক গ্র্যাভিস এবং Abacus Data’র প্রধান নির্বাহী ডেভিড কলেটো ডেভিড কলেটো দুজনেই এই ব্যাপারে একমত।
গ্র্যাভিস বলেন, একটি সাহসী ও সপ্রতিভ এবং সক্রিয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে জাস্টিন ট্রুডোকে মনে হচ্ছে একজন চ্যাম্পিয়ন ব্যক্তিত্ব। তিনি সরকার ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা এনেছেন। জনগণ আগের সরকারের তিরিক্ষি ও অভদ্র আচরণে পরিশ্রান্ত।
দাম্ভিকতা বা অহংকার প্রদর্শন হবে বর্তমান সরকারের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও একটি ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গ্র্যাভিস আরো বলেন, কানাডিয়ানদের কাছে লিবারেল যদিও এখন একটি পছন্দের দল কিন্তু এই পরিস্থিতি বদলাতে সময় নিবে না যদি অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যায়। এটাই এখন বড় ধরণের ঝুঁকি সামনে। সাধারণ মানুষ ধৈর্য্য ধরবে। তবে পর্যবেক্ষন করবে এই দলটি তাদের প্রতিশ্রুতি ঠিকমত পালন করে কি না।
লিবারেল পার্টি অবশ্য ইতিমধ্যে মধ্যবিত্তদের কল্যানে কিছুদূর অগ্রসর হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মিডল ক্লাস টেক্সকাট, নতুন চাইল্ড বেনিফিট প্রবর্তন এবং পেনশন রিফর্ম এর কথা উল্লেখ করা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, লিবারেল পার্টিকে বর্তমান জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে জনকল্যানের ব্যাপারে সামনের দিকে আরো অগ্রসর হতে হবে।
সুদর্শন ও সুঠাম দেহের অধিকারী জাস্টিন ট্রুডোর বয়স বর্তমানে ৪৪। কেউ কেউ মজা করে বলেন জাস্টিন ট্রুডো ইজ দ্যা সেক্সিয়েস্ট প্রাইম মিনিস্টার অন আর্থ। জন্মেছিলেন বিশেষ একটি দিনে। ২৫ ডিসেম্বর। খ্রীস্টানদের বড় দিন। যীশু খ্রীস্টের জন্মদিন। এই ৪৪ বছর বয়সেই জাস্টিন ট্রুডো কানাডার প্রধান মন্ত্রী হয়ে দৃষ্টি কেড়েছেন কানাডাসহ বিশ্বের অনেক মানুষের।
জাস্টিন ট্রুডো অল্প বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন তা নয়। তিনি এমন এক পিতার সন্তান যার নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আধুনিক কানাডার ইতিহাস। তিনি হলেন কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের এলিয়েট ট্রুডো। কানাডার মাল্টিকালচারালইমজের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা। তবে পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি বা দলেরও প্রধান হননি। যেমনটি হয় পশ্চাদপদ ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমুহে। জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল দলের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন নিজ যোগ্যতাবলে এবং কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন নিজ কর্মগুনেই। পরাজিত স্টিফেন হারপার অবশ্য জাস্টিন ট্রুডোকে নানাভাবে অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন নির্বাচনের আগে তার নির্বাচনী প্রচারণার বিজ্ঞাপন গুলোতে। কিন্তু জনগণই প্রমাণ করে দিয়েছেন কে অযোগ্য আর কে যোগ্য।
উল্লেখ্য যে, গত বছর নির্বাচনের আগে জাস্টিন ট্রুডো বেশ কিছু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কানাডিয়ান প্রেস জানায়, তাঁর ঐ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সংখ্যা ছিল দুই শ’রও বেশী।
কানাডিয়ান ভোটারগণ অবশ্য এটা ভাল করেই জানানে যে এই প্রতিশ্রুতি প্রদানের বিষয়টি প্রধানত ভোট পাবার আশায়ই করা হয়। সব দলের সব প্রার্থীগণই এই কাজটি করে থাকেন। কেউ বেহিসাবীর মত প্রতিশ্রুতি প্রাদান করে যান আবার কেউ একটু সংযমের পরিচয় দেন। কারণ বাস্তবতা হলো, নির্বাচনে জয়ী হবার পর এই প্রতিশ্রুতিগুলো পালন হলো কি হলো না সেই প্রশ্ন একটা সময় আসবেই। ভোটারগণ সাধারণত ঐ সব প্রতিশ্রুতির কথা খুব একটা মনে রাখেন না। তবে বিরোধী দলগুলো নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার জন্য জনগণকে স্বরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের আগে কি কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
তবে এটাও ঠিক, সব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হয় না কোন দলের পক্ষেই। তারপরও নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। জাস্টিন ট্রুডোও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তবে প্রথম এক বছরের মধ্যে জাস্টিন ট্রুডো আলোচিত বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতিগুলো হলো :-
Ñ মন্ত্রী পরিষদে আগের তুলনায় অধিক সংখ্যক মহিলার অন্তর্ভুক্তিকরণ। যার ফলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বর্তমানে সমান সংখ্যাক পুরুষ ও মহিলা মন্ত্রী রয়েছে ট্রুডোর মন্ত্রীসভায়। ১৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন মহিলা মন্ত্রী যাদের অধিকাংশের বয়স ৫০ এর নীচে।
Ñ যাদের বাৎসরিক আয় ৪৫,২৮২ থেকে ৯০,৫৬৩ ডলারের মধ্যে তাদের জন্য ইনকাম টেক্স রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০.৫% যা আগে ছিল ২২%।
Ñ যাদের বাৎসরিক আয় বছরে ২০০,০০০ ডলারের বেশী তাদের জন্য নতুন ৩৩% টেক্স নির্ধারণ।
Ñ অধিকতর উদার নতুন চাইল্ড বেনিফিট।
Ñ বাধ্যতামূলক আদমশুমারীর লং ফরম প্রত্যার্পন করা।
Ñ নির্দলীয় এবং মেধার ভিত্তিতে সিনেট মেম্বার মনোনয়নের জন্য একটি নিরপেক্ষ এ্যাডভাইজরী বোর্ড গঠন করা।
Ñ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা।
Ñ সিরিয়া ও ইরাক থেকে কানাডিয়ান ফাইটার জেট প্রত্যাহার করা এবং মানবীয় সাহায্য জোরদার করার পাশাপাশি ইরাকী গ্রাউন্ড ফোর্সকে ট্রেনিং দেওয়া।
Ñ যে সকল আদিবাসী নারী খুন হয়েছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের ব্যাপারে জাতীয়ভাবে তদন্ত শুরু করা।
Ñ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকান্ড তদারকী করার জন্য পার্লামেন্টারী কমিটি গঠন করা।
Ñ বাজেটে অবকাঠামো নির্মানের জন্য প্রতিশ্রুত অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন ডলাররের প্রথম কিস্তির (প্রতি দুই বছরে ১১.৯ বিলিয়ন ডলার) অনুমোদন।
Ñ ওল্ড এজ সিকিউরিটি এ্যান্ড গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট পাওয়ার জন্য বয়স ৬৭ থেকে কমিয়ে আবার ৬৫ এ করা।
Ñ কানাডা পেনশন প্লান বর্ধিত করার জন্য প্রভিন্সগুলোর সঙ্গে কাজ করা।
Ñ ৪ বছরে আদিবাসীদের জন্য শিক্ষাখাতে ২.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়।
Ñ সাবেক কানজার্ভেটিভ সরকার কর্তৃক কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (সিবিসি) এর কর্তিত ফান্ড পুনরুদ্ধার করা।
Ñ ইয়থ সামার জব প্রগ্রামের বিস্তৃতিকরণ।
Ñ সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকার কর্তৃক বন্ধ করা ৯ টি ভেটেরান এ্যাফেয়ার্স অফিস পুনরায় খোলা।
Ñ আহত হওয়ার কারণে যে সকল ভেটেরানদের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে তাদের ফিনান্সিয়াল বেনিফিট বৃদ্ধি করা।
Ñ ২৫ হাজার সিরিয়ান রিফিউজিকে কানাডায় স্বাগতম জানানো।
Ñ স্টুডেন্ট গ্র্যান্ট ৫০% বৃদ্ধি করা।
Ñ এম্পøয়মেন্ট ইন্সুরেন্স এ ক্লেইম করার আগের যে ওয়েটিং টাইম তা কমানোর জন্য আইন পুনর্গঠন করা, ইআই এর জন্য যোগ্য হতে হলে মোট কর্মঘন্টার পরিমান কমিয়ে আনা।
Ñ সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকার কর্তৃক করে যাওয়া দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের আইন রদ করা। – সূত্র : কানাডিয়ান প্রেস।
দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের আইন রদ করার পাশাপাশি ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত আরো যে সব আইন রদ করা হয়েছে তার মধ্যে আছে –
Ñ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা কানাডিয়ান সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করবেন তাদেরকে এই মর্মে কোন ঘোষণা দিতে হবে না যে, সিটিজেনশীপ পাওয়ার পর তারা কানাডায় অব্যাহতভাবে বাস করবেন।
Ñ সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকার আইন করে গিয়েছিল কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করতে হলে ইমিগ্রেন্টদেরকে ৬ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৪ বছর কানাডায় বাস করতে হবে। লিবারেল সরকার এখন নিয়ম করেছে ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩ বছর কানাডায় বাস করতে হবে সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করার আগে।
Ñ কনজার্ভেটিভ সরকার নিয়ম করে গিয়েছিল সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করতে হলে যেদিন থেকে আবেদনকারী পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী লাভ করেছেন সেদিন থেকে দিন গণনা শুরু হবে। কিন্তু লিবারেল সরকারের হালনাগাদ করা সিটিজেনশীপ আইনে বলা হয়েছে, আবেদনকারী যেদিন থেকে কানাডায় স্বশরীরে উপস্থিত হয়েছেন সেদিন থেকে দিন গণনা শুরু হবে।
Ñ নাগরিকত্ব লাভের জন্য ল্যাংগুয়েজ টেস্টকেও কঠিন করে গিয়েছিল সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকার। বয়স্ক ব্যক্তিদের পক্ষে ল্যাংগুয়েজ টেস্ট পাস করা এমনিতেই কঠিন। তা জানা সত্বেও কর্তৃপক্ষ বয়সের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করেছিল। আগে নিয়ম ছিল ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিদেরকে ল্যাংগুয়েজ টেস্ট পাস করতে হবে। কনজার্ভেটিভ সরকার নিয়ম করেছিল ১৪ থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিদেরকে ল্যাংগুয়েজ টেস্ট পাস করতে হবে। এবার লিবারেল সরকার নতুন নিয়ম করেছে যাতে বলা হয়েছে ১৮ থেকে ৫৪ বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিদেরকে ল্যাংগুয়েজ টেস্ট পাস করতে হবে।
জাস্টিন ট্রুডোর হাতে আরো তিন বছর সময় আছে বাকি প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করা। তবে এই সময়ের মধ্যে তিনি ও তার দল কতটা সফল হবেন তা সময়ই বলে দিবে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, গত বছর নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাস্টিন ট্রুডো তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, “ It’s time for a change in this country, my friends, a real change.” এক বছর পার হবার পর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিরোধী দলের সদস্যরা হয়তো বলবেন রিয়েল চেঞ্জ বা বাস্তব পরিবর্তন তেমন কিছুই হয়নি কানাডায়। কিন্তু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করে যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখা হয় তবে অবশ্যই বলতে হবে কানাডায় বাস্তব পরিবর্তনের ছোঁয়া জাস্টিন ট্রুডো ইতিমধ্যে লাগিয়েছেন। উদাহরণ হিসাবে প্রথমেই বলা যায় মন্ত্রীপরিষদে পুরুষের সমান সংখ্যক মহিলা মন্ত্রী নিয়োগ। এখন থেকে একশ বছর আগে যে দেশটিতে মহিলাদের ভোটাধিকারই ছিল না সে দেশে অর্ধেক মন্ত্রীই এখন মহিলা।
সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকার যেখানে এথনিক কমিউনিটিকে কোনঠাসা করে রেখেছিল সেখানে জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতায় এসে এথনিক কমিউনিটি থেকে নির্বাচিত বেশ কয়েকজন এমপি’কে ঠাই দিয়েছেন তার মন্ত্রী সভায়। শুধু ঠাই নয়, এদের কেউ কেউ পেয়েছেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
বিগত কনজার্ভেটিভ সরকার কানাডার রাজনীতিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই একটা রক্ষণশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ইমিগ্রেশন নীতি। কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতৃত্বেই ইমগ্রেন্টবান্ধব নয় এমন আইন পাশ হয়েছিল যে আইনে দ্বৈত নাগরিকদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করার বিধান রাখা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে কোন আপিলের সুযোগও রাখা হয়নি তখন। অথচ যে অপরাধসমূহের দোহাই দিয়ে এই আইন করা হয়েছিল সেই অরাধসমূহের বিচার করার জন্য দেশটির প্রচলিত আইনই যথেষ্ট ছিল। কানাডার আইন বিশেষজ্ঞরাই তখন বলছিলেন, দেশ থেকে বহিস্কারের আইনটি মধ্যযুগীয় প্রথা যা আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে একেবারেই বেমানান এবং মানবাধিকার পরিপন্থী। এটি সংবিধানও লংঘন করেছে।
দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের এই আইনটি বিগত সরকার করেছিল প্রধানত ইসলামোফোবিয়ার কারণে। মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গীবাদের প্রসার, কানাডায় জঙ্গীদের হামলা ইত্যাদির কারণে এখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ইসলামোফোবিয়া তৈরী হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। মুসলমান নাম শুনলে তাদের মানসপটে প্রথমেই একটা ‘জঙ্গী’র চেহারা ভেসে উঠে। আর এটাকে কাজে লাগিয়েই বিগত সরকার চেয়েছিল নতুন কিছু আইন করে জনগনের মধ্যে দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে। তাছাড়া বিগত কনজার্ভেটিভ সরকারের প্রধান স্টিফেন হারপার নিজেও একজন ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরকম অভিযোগ একজন কানাডিয়ান আইনজীবীই তুলেছিলেন সরাসরি। তার নাম ড্যানিস এ্যাডনি। তিনি বলেন, “স্টিফেন হারপার একজন মুসলিম বিদ্বেষী ধর্মান্ধ ব্যক্তি।” তিনি দাবী করেন, হারপার যে মুসলিম বিদ্বেষী তা প্রমাণ করার যথেষ্ট প্রমানাদিও রয়েছে তার কাছে। ড্যানিস এ্যাডনি গুয়ান্তনামার বন্দি কানাডিয়ান নাগরিক ওমর খাদারের কেসটি নিয়ে লড়েছেন।
স্টিফেন হারপার ও তার কিছু মন্ত্রী মিলে সেদিন আরো কিছু আইন প্রবর্তনের চেষ্টা করেছিল যা ছিল কানাডার রাজনীতিতে রক্ষণশীলতাকে আরো জেঁকে বসানোর প্রচেষ্টা। নিকাব ইস্যু, বার্বারিক কালচার ইস্যু ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে একটা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা ছিল তাদের কর্মকান্ডে। কিন্তু কানাডার জনগণ সেই ফাঁদে পা দেয়নি। তারা সম্প্রীতির পক্ষেই রায় দিয়েছেন। আর এর কৃতিত্ব জাস্টিন ট্রুডোরই। তিনি ও তাঁর দল মুসলিম সহ অন্যান্য এথনিক সম্প্রদায়কে কাছে টেনে নেন।
প্রধান মন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ফেসবুকে প্রদত্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষন করলেও দেখা যাবে বিভিন্ন এথনিক সম্প্রদায়কে নানাভাবে খুশি বা তুষ্ট করার একটা প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ফেসবুকে প্রায় ৬০টি ভিডিও প্রকাশ করেছেন যার ১৩% হলো বিভিন্ন এথনিক সম্প্রদায়কে নিয়ে। ঐ ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় সেখানে এংলোফোন বা ফ্রাঙ্গোফোনদের ঐতিহ্য উদযাপন নিয়ে কোন ভিডিও নেই। যা আছে তা হলো মুসলমানদের রমজান নিয়ে ভিডিও, ইহুদীদের হনুকা নিয়ে ভিডিও ইত্যাদি।
লিবারেল পার্টির প্রচার কার্যক্রমের দিকে নজর দিলেও বিষয়টি কিছুটা অনুধাবন করা যেতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রায় প্রতি সপ্তাহে বা সপ্তাহান্তে কয়েক ডজন লিবারেল এমপি বিভিন্ন মাল্টিকালচারাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন, বক্তৃতা দেন, বিবৃতি দেন এবং সেগুলো প্রচারের ব্যবস্থা নেন। এভাবেই জাস্টিন ট্রুডো ও তাঁর দল কানাডায় বিভন্ন এথনিক সম্প্রদায়কে কাছে টেনে একটি উদারনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন যার মাধ্যমে কানাডায় ইলেকশন নাইটের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তব পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।
সিবিসি নিউজে প্রকাশিত এক কলামে সাংবাদিক এ্যারন ওয়েরী লিখেছেন, “অটোয়াতে এখন প্রায় কোন সিদ্ধান্তই গ্রহন করা হয় না জনগনের সঙ্গে পরামর্শ না করে। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার প্রভিন্সের প্রিমিয়ারদের সঙ্গেও খুব কম সময়ই মিলিত হতেন। তিনি পার্লামেন্টের প্রেস গ্যালারীর সাংবাদিকদের কাছ থেকে খুব কম সময়ই কোন প্রশ্ন গ্রহণ করেছেন। কিন্তু জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতায় এসে সবসময়ই স্টিফেন হারপারের উল্টোটি করছেন। জাস্টিনের মুখে হাসি লেগেই থাকে। তাঁর কাছে যারা যান সবাইকেই তিনি আলিঙ্গণ পাশে আবদ্ধ করেন। বিনা দ্বিধায় তিনি প্রাইড প্যারেডে অংশ নেন, নিজেকে নারীবাদি বলতে দ্বিধাবোধ করেন না, নিয়মিত প্রিমিয়ারদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, প্রেস গ্যালারীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের
উত্তর দিচ্ছেন।”এগুলো তো বাস্তব পরিবর্তনেরই লক্ষণ। হারপার কানাডাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তার রক্ষণশীল মনোভাব ও কর্মকান্ড দিয়ে। আর জাস্টিন কানাডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার উদারনৈতিক মনোভাব ও কর্মকান্ড দিয়ে। টরন্টো ইউনিভার্সিটির কানাডিয়ান স্টাডিজ প্রগ্রামের পরিচালক নেলসন ওয়াইজম্যান বলেন, “জাস্টিন ট্রুডো তার পূর্ববর্তী যে কোন প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় অধিক মিশুক, সামাজিক ও সদা হাস্যময়ী। এমনকি তিনি তার বাবা সাবেক প্রধানন্ত্রী পিয়ের ট্রুডো থেকেও আলাদা ইমেজ নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন। তার বাবা ছিলেন নির্লিপ্ত ধরণের মানুষ এবং সবকিছুতে অংকের হিসেব মিলিয়ে চলতেন।”
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সেন্টার ফর দ্যা স্টাডি অব ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউশন এর পরিচালক ম্যাক্স ক্যামেরুন বলেন, “জাস্টিন ট্রুডো দেশের জন্য তাঁর কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে যে আবেগ ও ভালবাসা প্রদর্শন করছেন তা ছলনাহীন এবং আন্তরিকতাপূর্ণ।”
আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও কানাডার ভূমিকাতে বাস্তব পরিবর্তন এনেছেন জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতা গ্রহনের এক বছরের মাথায়ই। ট্রুুডো নিজেও মধ্যমনি হয়েছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে। সব রাষ্ট্রিয় নেতাদেরকে ছাপিয়ে তার উপস্থিতি ছিল দেদীপ্যমান ও নজরকারা।
ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিনের মাথায়ই আন্তর্জাতিক অঙ্গণে জাস্টিন ট্রুডো কানাডার ভামূর্তি অনেকগুন বাড়িয়ে দেন সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে। কানাডার সাবেক কূটনীতিক এবং সাংবাদিক ভূপিন্দর লিদ্দার তার এক প্রবন্ধে লিখেন, “কানাডা জাতি সংঘে নতুন করে অভির্ভুত হয় জাস্টিন ট্রুডোর নব-উদ্যোগে। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের অবজ্ঞা ছিল এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ব্যাপারে। জাতিসংঘের প্রতি তাঁর অসম্মান এবং অসমর্থনের কথা সবাই জানতেন। ফলে এই সংস্থার সঙ্গে কানাডার একটি দুরত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিল। এমনকি জাতি সংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কানাডা তার পদ হারায় যে পরিষদ বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসমূহের কর্মসূচীর সঙ্গে হারপারের অসহযোগিতামুলক মনোভাবও ছিল। কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভলাপমেন্ট এজেন্সীকে (সিডা) আর্থিক সহায়তা প্রদানও তিনি কমিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাপকভাবে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বিশ্বে মানবিক সাহায্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা পুনরায় শুরু করে।”
জাস্টিন ট্রুডো রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই নানাভাবে নানা উপলক্ষে মিডিয়ার আলোচনায় এসেছেন বারে বারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর ছেলে এই পরিচয় ছাড়াও তার নিজেরও একটা ক্যারিশমাটিক পরিচিতি গড়ে উঠেছিল।
জাস্টিান ট্রুডো পিয়ের ট্রুডোর বড় ছেলে। জাস্টিনের মায়ের নাম মার্গারেট ট্রুুডো। পিয়ের ট্রুডো মৃত্যুবরণ করেন ২০০০ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর। মা মার্গারেট এখনো জীবিত। মার্গারেটও রাজনৈতিক পরিবারেরই মেয়ে। তাঁর জন্ম ভেংকুভারে। বাবা জেমস সিনক্লেয়ার ছিলেন লিবারেল পার্টির এমপি। মৎস্য ও সমুদ্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সাইমন ফ্রেসার ইউনিভারসিটিতে ইংরেজী সাহিত্যে লেখাপড়া করেন মারর্গারেট। লেখালেখি, অভিনয়, ফটোগ্রাফী করা ছিল তার শখ। তিনি টিভি টক শো’র হোস্টও ছিলেন।
জাস্টিন ট্রুডো যে শুধু রাজনীতিতেই সফল তা কিন্তু নয়। প্রেমিক পুরুষ হিসেবেও একজন সফল ব্যক্তি। প্রেম করেই বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীর নাম সোফি গ্রেগওয়ার। জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৪ এপ্রিল। সোফিকে জাস্টিন চিনতেন সেই শৈশব থেকেই। কারণ তিনি ছিলেন জাস্টিনের ছোট ভাই মিশেল ট্রুডোর সহপাঠীনি। তবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে আরো অনেক পরে। সেটি ছিল ২০০৩ সালের ঘটনা যখন দুজনে একটি চ্যারিটি প্রগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন থেকেই একজন আরেকজনের প্রতি কৌতুহলী হয়ে উঠেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তা গভীর পরিনয়ে পরিনত হয়। ২০০৪ সালের অক্টোবরে এঙ্গেজমেন্ট এবং ২০০৫ সালের মে মাসে বিয়ে। বর্তমানে তারা তিন সন্তানের বাবা-মা।
– প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিটি নেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারী ওয়েবসাইট থেকে।