কানাডায় ইমিগ্রেন্ট ডাক্তারগণ ব্রিজিং প্রগ্রামের মাধ্যমে মেডিক্যাল ফিল্ডে জব পেতে পারেন : ড. সাফি উল্লাহ ভুইয়া

কানাডার ডাক্তারী পেশায় প্রবেশ করতে না পারা ইমিগ্রেন্ট ডাক্তারদের মধ্যে ব্রিজিং প্রগ্রাম ব্যপাক আশা জাগিয়েছে

এপ্রিল ৯, ২০১৬

খুরশিদ আলম : অধ্যাপক ড. সাফি উল্লাহ ভুইয়া একজন বাংলাদেশী ডাক্তার। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। এর পর থ্যাইল্যান্ড থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি। পরবর্তীতে পিএইচডি করেছেন জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটি থেকে। টরন্টো এসেছেন ২০১০ সালে। সদালাপী, উদ্যোগী এবং কর্মঠ এই মানুষটির সঙ্গে এই প্রতিবেদকের দেখা কিংস্টনের উপর অবস্থিত বাংলা বাজার গ্রোসারীতে। গ্রোসারীর মালিক কামাল আহমেদ পরিচয় করিয়ে দিলেন তার সঙ্গে। প্রথম পরিচয়েই জানতে পারলাম তিনি টরন্টোর রায়ারসন ইউনিভার্সিটিতে TMD bridging program নামে একটি প্রগ্রাম চালু করেছেন যার মাধ্যমে তিনি ইমিগ্রেন্ট ডাক্তারদেরকে কানাডার মূলধারার মেডিক্যাল ফিল্ডে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছেন। প্রগ্রামটি চালু হওয়ার পর ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তিনি কানাডার বিভিন্ন ইউসিভার্সিটি থেকে। অন্টারিও হেলথ মিনিস্ট্রিও তার এই প্রকল্পটিকে পছন্দ করেছে এবং গ্র্যান্ট দিতেও রাজী হয়েছে।

আমন্ত্রণ জানালাম একদিন প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের কার্যালয়ে আসার জন্য। উনি খুশি মনেই রাজী হলেন। তারপর এক বিকেলে তার সঙ্গে আবারো দেখা হলো প্রবাসী কন্ঠ কার্যালয়ে। আলাপ হলো দীর্ঘক্ষণ। জানতে পারলাম গুণী এই মানুষটির পিছনের কথা। তার স্বপ্নের কথা। মানুষের জন্য তার ভালবাসার কথা।

অধ্যাপক ড. সাফি উল্লাহ ভুইয়া বর্তমানে রায়ারসন ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আছেন Adjunct Professor & Distinguished Visiting Scholar হিসাবে। এছাড়াও তিনি টরন্টো ইউনিভারসিটির Dalla Lana School of Public Health  এ সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত। তার স্ত্রীও একজন ডাক্তার। তবে কানডায় আসার পর ইমিগ্রেন্ট ডাক্তারদের পরিস্থিতি অবলোকন করে তিনি আর সে পথে পা বাড়াননি। তিনি স্থানীয় একটি ইউনিভার্সিটি থেকে কোর্স করে বর্তমানে মিনিট্রি অব হেলথ এ ডাটা এনালিস্ট হিসাবে কাজ করছেন।

ড. সাফি জানালেন, আমি কানাডা আসার কিছু দিনের মধ্যেই চাকরী পেয়ে গেছি। আমার লাইনটা যেহেতু রিসার্স এবং টিচিং তাই আমার জব পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমি একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করছি। তবে রোগীর চিকিৎসা আমি করতে পারবো না এখানে যেহেতু আমি লাইসেন্স নেইনি। এটাও একটা অদ্ভুত ব্যাপার যে আমি ডাক্তারদের পড়াই, কিন্তু আমি নিজে ডাক্তারী করতে পারবা না কানাডায়। আর অমি  লাইসেন্স নিতেও চাইনা এই বয়সে। কারণ, এটি অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং অনেক যন্ত্রনা ও ঝামেলার কাজ।

কানাডায় এসেই আমার নিজের টিচিং লাইনে কাজ পাওয়া সম্ভব হয়েছে আমার নেচার অব ওয়ার্ক এবং নেটওয়ার্ক এর কারণে। আমি যে ফিল্ডে কাজ করি ইন্টারন্যাশনালি তাদের সঙ্গে আমার আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। এদের অনেকেই কানাডায় আছেন। প্রায় দশ বছর আগে থেকেই আমার এই নেটওয়ার্ক গড়া। প্রবাসে আমাদের বাংলাদেশের লোকদের মধ্যে এই নেটওয়াকের্র ঘাটতি রয়েছে। তারা অধিকাংশই জানেননা কোথায় যেতে হবে। শুধু বাংলাদেশীরাই নয়, অন্যান্য দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টরাও জানেননা জব পেতে হলে কোথায় যেতে হবে কার কাছে যেতে হবে।

আমার একটি বিষয় খারাপ লাগে, যারা আমরা এখানে আছি এবং এখানকার ইনসাইড অনেক তথ্য জানি সেগুলো আমরা আর কারো সঙ্গে শেয়ার করিনা। এটা একটা সমস্যা।

ড. সাফি অভিযোগ করে বলেন, সরকারী ভাবেও সঠিক তথ্য দেওয়া হয় না। ডাক্তারদের বলা হয় স্কিল্ড ইমিগ্রেন্ট হিসাবে তোমরা এদেশে আসতে পার। ডাক্তাররাও ইমিগ্রেশনের ওয়েবসাইটে ঐ তথ্য দেখে ৩/৪ বছর চেষ্টা করে এ দেশে চলে আসেন। আসার আগে চাকরী ছাড়েন, জমিজমা বিক্রি করে দেন। কিন্তু আসার পর এয়ারপোর্ট থেকেই শুরু হয় তাদের হতাশা। এই হতাশা থেকে তারা আর বের হয়ে আসতে পারেন না।

ড. সাফি বলেন, আমি মনে করি সরকারের উচিৎ এ দেশে আসার আগে ডাক্তারদের জানিয়ে দেওয়া যে এখানে ফরেইন ট্রেইনড্ ডাক্তারদের চাকরী নেই ডাক্তার হিসাবে। কারণ দেখা গেছে এই ফরেইন ট্রেইনড্ ডাক্তারদের প্রায় ৯৮% কোয়ালিফাই করে না মেডিক্যাল লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য। এটি একটি উইয়ার্ড থিং। বিষয়টি ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক ক্লারিফাই করা উচিৎ তাদের ওয়েবসাইটে।

আমি কানাডা আসার আগে শুনেছি এখানে ডাক্তারদের জব নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি। আমি এখানে আসার পর আরো প্রায় ৩/৪ ডাক্তাররের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আমার মত বিশ্বাস করেননি যে এখানে ডাক্তারদের জব নেই বা ডক্তারি করার সুযোগ নেই। কারণ ইমিগ্রেশন তো বলছে ইউ আর কোয়ালিফাইড। সুতরাং সেটাকে বিশ্বাস করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

আমার স্ত্রী এখানে এসে ডাক্তারীর চেষ্টা না করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেন এবং ক্লিনিক্যাল ডাটা মেনেজমেন্ট এর উপর কোর্স করলেন। উনিও উনার ঐ লাইনে জব পেয়ে যান।

ব্রিজিং প্রোগ্রামের আইডিয়াটা আপনার মাথায় কি ভাবে আসলো? এই প্রশ্নের জবাবে ড. সাফি বলেন, আমার মাথায় আইডিয়াটা এলো যখন দেখলাম এখানে বিদেশ থেকে আসা ডাক্তাররা কিছুই করতে পারছেনা তাদের প্রফেশনাল লাইনে। কেউ টেক্সি চালাচ্ছেন, কেউ সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে কাজ করছেন, কেউ পিজ্জা ডেলিভারী দিচ্ছেন বা অন্য কোন অড জব করছেন। এভাবে তারা তাদের ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার অপচয় করছেন। তখন আমি কথা বলালাম এইরকম বেশ কিছু ডাক্তারের সঙ্গে। তারদেরকে বললাম, আপনারা কি আগ্রহী হবেন যদি আমি একটি প্রগ্রাম তৈরী করি যার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে আপনারা মেডিকেলের রিসার্স লাইনে, ম্যানেজমন্টে লাইনে জব পেতে পারেন? আপনারা আপনাদের মেডিক্যাল ফিল্ডে ফিরে যেতে পারেন? আপনারা আপনাদের আইডেন্টিটি ফিরে পেতে পারেন? এবং এটি করতে পারলে আপনারা আর আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগবেন না। প্রস্তাবটি শুনে তারা বললেন, এটি করতে পারলে খুবই ভাল হবে। তখন আমি রায়ারসন ইউনিভার্সিটির হায়ার লেভেল কে আমার পরিকল্পনার কথা জানালাম। তারা শুনে আমার প্রস্তাবটি লুফে নিল এবং বললো, দেট উইল বি গ্রেট ফর দেম।

ড. সাফি জানালেন, এ জাতীয় একটি প্রোগ্রাম বিল্ড করতে বেশ সময় এবং অর্থের প্রয়োজন হয়। প্রায় ৫০ হাজার ডলারের বাজেট। আমি কারো কাছ থেকে কোন অর্থ না নিয়েই নিজের সময় ব্যয় করে দশ মাসের মধ্যে একটি প্রগ্রাম তৈরী করে ফেললাম। ইউনিভার্সিটিও খুব গ্ল্যাডলি একসেপ্ট করলো আমার প্রগ্রাম। আমি বিভিন্ন হাসপাতাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললাম জব প্লেসমেন্ট এর ব্যাপারে। কারণ ট্রেনিং শেষে প্র্যাকটিকাল অভিজ্ঞতাও লাগবে। যে যে হাসপাতাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি তারাও রাজী হয়ে গেল।

আমি বা ইউনিভর্সিটি এ বিষয়টি নিয়ে কোন প্রচারও চালাইনি সরাসরি কোন মিডিয়াতে। ইউনিভার্সিটি শুধু তাদের ওয়েবসাইটে এ প্রগ্রামের তথ্যটি দিয়েছিল। ওয়েবসাইটের এ তথ্যটি মিনিস্ট্রি অব হেলথও দেখেছে। তারাও এই ওয়েবসাইটের লিংটি তাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়। তারা আমার সঙ্গে বৈঠকও করে এবং সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

ওয়েবসাইটে প্রগ্রামটি সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার পর প্রচুর আবেদন পাই আমি। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি প্রায় শ পাচেক ফোন কল ও শ চারেক আবেদনপত্র পাই। বর্তমানে আমার তৃতীয় ব্যাচ চলছে এই ব্রিজিং প্রগ্রামে। আমি প্রথম ব্যাচে ১২ জন স্টুডেন্ট নিয়েছিলাম। দ্বিতীয় ব্যাচে ১৫ জন আর এবার ২০ জন। এর মধ্যে বাঙ্গালীও আছেন কয়েকজন। কোর্স শেষে ৫০-৬০ পার্সেন্ট জব পেয়ে যাচ্ছে রিসার্স কোঅর্ডিনেটর, রিসার্স এসিস্টেন্ট, প্রাগ্রম এনালিস্ট ইত্যাদি পদে।  বাকিরা বলছেন তারা এই কোর্স থেকে উদ্দিপনা পেয়েছেন। তারা এখনই জবে না ঢুকে আরো উচ্চ শিক্ষার জন্য যাবেন। কারণ, এ বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারলে তারা ম্যানেজারিয়াল পদে জব পেয়ে যাবেন। ম্যানেজারিয়াল পদে ৮০-৯০ হাজার ডলারের বার্ষিক বেতন। এসিস্টেন্ট হিসাবে যারা জবে ঢুকেন তারা বছরে বেতন পান ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার।

ড. সাফি জানান, মেডিক্যাল লাইসেন্স পাওয়া থেকে এটি অনেক অনেক সহজ। এ বছর থেকে আমি সরকারী গ্র্যান্টও পাব এই প্রগ্রামটি চালু রাখার জন্য। রায়ারসনে এই প্রগ্রামটি পাইলট প্রগ্রাম হিসাবে চালু করা হয়েছিল। এখন এটি রেগুলার প্রগ্রাম হিসাবে চলছে। অন্যান্য কয়েকটি ইউনিভার্সিটি থেকেও আমন্ত্রণ পেয়েছি এই কোর্সটির ব্যাপারে। আমার ভাল লাগছে এই ভেবে যে এই প্রগ্রামের মাধ্যমে ইমিগ্রেন্ট ডাক্তারগণ নিজ ফিল্ডে ফিরে আসতে পারছেন। সরাসরি ডাক্তারী পেশায় না হোক, অন্তত মেডিক্যাল ফিল্ডেতো কাজ করতে পারছেন।

কানাডায় ইমিগ্রেন্ট ডাক্তারগণ প্র্যাকটিস করার জন্য লাইসেন্স কেন পান না। বা পেলেও এত কম সংখ্যক কেন পান? এ প্রশ্নের জবাবে ড. সাফি বলেন, আমাদের দেশের বা অন্যকোন দেশের (যে সব দেশ থেকে ইমিগ্রেন্ট ডাক্তারগণ আসছেন) মেডিক্যাল কোর্স আর এদেশের মেডিক্যাল কোর্সের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের কথাই যদি ধরি তবে দেখবো সেখানে ইন্টারমিডিয়েট এর পরে ৫ বছর ডাক্তারী পড়েই একজন ডাক্তার হয়ে যাচ্ছেন আর এখানে লাগে ৮ বছর। সুতরাং একটা বড় ধরণের নলেজ গেপ থেকে যায়। পৃথিবী এখন কোয়ালিটির দিকে এগুচ্ছে। আর এই ফিল্ড এত টাফ হয়ে গেছে যে অনেক ছেলেমেয়ে যারা কানাডিয়ান বর্ন এবং যারা এখান থেকে পাস করে বেরুচ্ছে তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এই ফিল্ডে চাকরী পাচেছনা।

আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি এই ব্রিজিং প্রগ্রাম নিয়ে? এ প্রশ্নের জবাবে ড. সাফি বলেন, এটাকে চার মাস থেকে ছয় মাস, পরে এক বছর এভাবে এই কোর্সের সময়সীমা বৃদ্ধি করবো যাতে করে স্টুডেন্টরা এখান থেকে বের হয়ে জব মার্কেটে আরো বেশী যোগ্যতর হয়ে উঠেন। তাছাড়া অন্যান্য ইউনিভার্সিটিও এই কোর্সটির ব্যপারে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। আমার এই প্রগ্রামটি কঠিন কিছু নয়। আমি বলবো এটি ফরেইন ট্রেইনড ডাক্তারদের জন্য রাইট থিংক টু ডু। কারণ এখানে এসে তারা ডাক্তারী লাইসেন্স পান না। এখন এটি পাওয়া আরো কঠিন হয়ে গেছে। সুতরাং আমি বলবো, অড জবের চেয়ে এটি অনেক ভাল । নিজের ফিল্ডেই রয়ে গেলেন তারা। পরিচয় সংকট ও কাটলো। ভাল বেতনও পেলেন এবং তার যে মেধা সেটারও অপচয় হলো না।

উল্লেখ্য যে, গ্রেটার টরন্টোতে আনুমানিক প্রায় ৫ শ বাংলাদেশী ডাক্তার আছেন। এর মধ্যে মাত্র চার কি পাঁচজন ডাক্তারী লাইসেন্স পেয়েছেন। ড. সাফির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কানাডায় আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কেউ কেউ ভয় পায় এই লেংদি কোর্সে ভর্তি হতে। অনেকে মাঝ পথে সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে অন্য কোর্সে চলে যায়। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?

ড. সাফি এর উত্তরে বলেন, আমার বিবেচনায় এদেশে ডাক্তারী কোর্স দ্বিতীয় প্রজন্মের জন্য লেংথি না কঠিনও না। আসলে আমরা অনেকেই সিস্টেমটা জানি না। আমাদের প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্ট যারা তাদের অনেকেই আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে সঠিকভাবে গাইড করতে পারি না। কারণ, এখানকার লেখাপড়ার সিস্টেম সম্পর্কে আমাদের ধারনা কম অথবা নেই। এটা হচ্ছে একটি সমস্যা।

আমাদের ছেলে মেয়েরা এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয়। যে সব ছেলে-মেয়েরা আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে ভাল ইউনিভার্সিটি কোর্স বেছে নিতে পারে তারা সাকসেসফুল হয়। আমার জানামতে বেশ কিছু বাঙ্গালী ছেলেমেয়ে ইউএফটি, ম্যাকমাস্টার বা ইয়র্ক ইউনিভারসিটিতে গেছে এবং তারা মেডিক্যাল স্টুডেন্ট হিসাবে লেখা পড়া করছে। ভাল রেজাল্টও করছে তারা। আমি মনে করি আমাদের বাঙ্গালী স্টুডেন্টরা খুবই টেলেন্ট। ডাক্তারী পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। তাদেরকে শুধু পথটা দেখিয়ে দিতে হবে। বাকিটা তারা করতে পারবে ভাল করেই। কেউ যদি আমার কাছে আসে আমি তাদের পরামর্শ দিতে প্রস্তুত।

আমি মনে করি কানাডা হচেছ সিস্টেমের দেশ। সিস্টেমটা খুব ইম্পর্টেন্ট। এদেশে সিকিউরিটি সিস্টেম, হেলথ সিস্টেম, এডুকেশন সিষ্টেম সবই ইউনিক। এই সিস্টেমের সুযোগগুলো আমাদের ইমিগ্রেনটদের নেয়া উচিৎ। এদেশে অনেক কিছুই আসলে আমরা অনেকে জানি না। না জেনে আমরা ব্লেম করি।  সঠিক ভাবে এগুতে হলে এই সিস্টেম জানাতে হবে। এগুলো জেনে নিয়ে সবকিছুই করা সম্ভব এ দেশে।  আমি আমার নিজের উদাহরণই দিতে পারি। আমি সিস্টেম জেনেছি। সেই মত এগিয়ে আমি একটি ভাল অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস অন্যরাও পারবেন যদি আগ্রহ ও সদিচ্ছা নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হন।

আমার মতে, এডুকেশন ইজ দ্যা মেইন থিং। এডুকেশন ছাড়া আমরা মেইন স্ট্রিমে প্রবেশ করতে পারবো না। তাই আমরা যারা এদেশে এসেছি তারা যেন ছেলে মেয়েদের এডুকেশনের দিকে বিশেষভাবে নজর দেই। তারা প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে আমাদের বাংলাদেশও উপকৃত হবে এদের মাধ্যমে। এখন তো আরো সুযোগ হয়েছে অন্টারিওতে স্বল্প আয়ের অভিভাবকদের সন্তানদের জন্য টিউশন ফি ফ্রি হওয়াতে। তবে ছেলেমেয়েরা যে যেটা পছন্দ করে তাকে সেটাই করতে দেয়া উচিৎ। জোর করে কাউকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানানো যাবে না। বরং পছন্দের কাজ করতে দিলে সেটাতেই তারা সাকসেস হতে পারবে ভবিষ্যতে।

ড. সাফির মেয়ে ইউএফটিতে লাইফ সাইন্সে পড়ছে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। ছেলে গ্রেড টুয়েলভে পড়ছে।