কানাডায় মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি

অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের মাত্রা হ্রাস

জুলাই ১১, ২০১৫

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : কানাডায় মুসলমান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা আগের তুলনায় অধিক হারে ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের শিকার হচ্ছেন। তবে অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি এই ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। এই রিপোর্ট স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার। গত ৯ জুন প্রকাশিত ঐ রিপোর্টে দেখা যায় ২০১৩ সালে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ৬৫ টি ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। আর ২০১২ সালে এরকম ঘটনা ঘটেছে ৪৫ টি।

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার রিপোর্টে বলা হয়, ধর্মীয় পরিচিতির দিক থেকে কানাডায় সাধারণত ইহুদি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশী মাত্রায় ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু ২০১৩ সালে দেখা গেছে এই অপরাধের সংখ্যা কমে গেছে। রিপোর্টে দেখা যায় ২০১২ সালে ইহুদী ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের বিরুদ্ধে ২৪২ টি ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। আর ২০১৩ সালে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে ১৮১ টি।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, কানাডায় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত যে অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে সেগুলো বিচার বিশ্লেষন করলে দেখা যায় মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকদের রিরুদ্ধে অপরাধ বেশী মাত্রায় (৩৩%) সহিংস হয়ে থাকে। আর এই মাত্রা মুসলমান মহিলাদের বেলায় আরো বেশী (৪৭%)। কারণ হিসেবে বলা হয়, মুসলমান মহিলারা ঘরের বাইরে হিজাব ও বোরখা ব্যবহার করে বিধায় তারা খুব সহজেই চিহ্নিত হয় এবং আক্রমনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয়।

দৈনিক ন্যাশনাল পোস্টের সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর হিউম্যান রাইটস কো-অর্ডিনেটর আমীরা এলগাওয়েবী বলেন, বিষয়টি অপ্রীতিকর এবং এটি প্রমান করছে যে, কানাডায় মুসলমানের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজস্ব তথ্য-উপাত্ত বলছে ২০১৪ সালে এই পরিস্থিরি আরো অবনতি ঘটেছে। সুতরাং বিষয়টির প্রতি আরো বেশী করে নজর দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।

ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর মতে মুসলমান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের সব খবর মিডিয়াতে আসে না। সে কারণে স্ট্যাটিসটিক্স কানাডা যে হিসেব দেখিয়েছে তা বাস্তব অবস্থার সামগ্রিক চিত্র নাও হতে পারে।

কানাডায় ২০১৩ সালে সামগ্রিকভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে

১,১৬৭ টি। ২০১২ সালের তুলনায় এটি ১৭% কম। মানুষ প্রধানত তার গ্রাত্র বর্ণ বা সম্প্রদায়গত পরিচিতির কারণে ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের শিকার হয়। সে হিসেবে কানাডার কালো বর্ণের মানুষেরা বেশী মাত্রায় অরক্ষিত। দেখা গেছে ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত যে অপরাধের ঘটনা ঘটে তার প্রায় অর্ধেকেরই শিকার হয় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কালো বর্ণের মানুষেরা।

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার হিসেবে দেখা যায় ২০১৩ সালে সামগ্রিকভাবে যে ১,১৬৭টি ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে তার ২৮% ঘটেছে ধর্মীয় পরিচিতির কারণে। আর জেন্ডার পরিচিতির কারণে অপরাধের শিকার হয়েছে ১৬% ভাগ লোক।

কানাডায়  ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের ঘটনাগুলো বেশীর ভাগই (৬০%) হিংস্র মাত্রার নয়। এগুলো সাধারণত সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, দেওয়ালে আপত্তিকর ছবি অংকন (মৎধভভরঃর) ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর কানাডায়  ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত যত অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে তার ৪৩% ভাগই ঘটে থাকে টরন্টো, মন্ট্রিয়ল এবং ভেঙ্কুভারে যেখানে অধিকাংশ ইমিগ্রেন্টদের বসবাস।