মাকড়সার জাল: বায়োনিক্সের জগতে নতুন বিপ্লব আসতে পারে
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : স্পাইডার ওয়েব প্রকৃতির অভিনব এক সৃষ্টি। আর কৃত্রিম উপায়ে এখন সেই জাল তৈরি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ করতে চান জার্মান বিজ্ঞানীরা। উদ্দেশ্য সফল হলে বায়োনিক্সের জগতে নতুন বিপ্লব আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাকড়সার জাল ইস্পাতের চেয়েও মজবুত, অথচ রবারের থেকেও নমনীয়! কিন্তু মাকড়সা কীভাবে এমন অসাধারণ জাল বোনে? সেই আশির দশক থেকেই বিজ্ঞানীরা এই রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কৃত্রিম উপায়ে এমন জাল বোনার স্বপ্নও দেখছেন তারা। বায়োকেমিস্ট টমাস শাইবেল ও তার সহকর্মীরা একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। টমাস জানান, ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে মাকড়সার জাল তৈরি করতে অনেকেই এ চেষ্টা চালিয়েছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক টাকাও ঢেলেছে। কিন্তু দেখা গাছে, এতে মোটেই কাজ হয় না। ব্যাকটেরিয়ার গ্রোগ্রাম বদলে তাকে দিয়ে বিশাল পরিমাণ রেশম তৈরি করানো যায় না।কিন্তু টমাস শাইবেল সেই অসাধ্য সাধন করেছেন। মাকড়সার জিন রয়েছে এমন ব্যাকটেরিয়াকে তিনি বিশেষভাবে পরিবর্তন করেছেন, যাতে তারা মাকড়সার জালের প্রোটিন তৈরি করতে পারে। কৃত্রিম মাকড়সার জাল তৈরির উপাদান সেটি। তিনি বলেন, আমরা ব্যাকটেরিয়াগুলিকে রেশম মলিকিউল তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। রাসায়নিক এক প্রক্রিয়ার সাহায্যে এটা করা যাচ্ছে, শর্করার এক দ্রবণের মাধ্যমে যা শুরু করা হচ্ছে। আর এটি ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।তরল ব্যাকটেরিয়া প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। মাকড়সার জাল তৈরি হতে আরও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান মাত্র। শাইবেল-এর গবেষণাগারে আপাতত তলতলে এক পদার্থ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, ব্যাকটেরিয়াগুলি রেশমের মলিকিউল তৈরি করেছে। আমরা তাতে লবণ মিশিয়েছি। মাকড়সাও ঠিক তাই করে। জালের সুতা তৈরির পথে এটাই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।আনিয়েলা হাইডেব্রেশট বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে রেশমের প্রোটিন ঢুকিয়ে দেন। এই যন্ত্র মাকড়সার জালের উপাদান বিশেষ তরল ভরা পাত্রে সমানভাবে পাম্প করে। সামান্য কয়েক মিলিলিটার তরল প্রোটিন দিয়েই গবেষকরা ২০ মিটার পর্যন্ত মাকড়সার জাল তৈরি করতে পারেন।আর এটাই হলো মানুষের হাতে তৈরি মাকড়সার জাল। প্রকৃতি থেকে নকল করে তৈরি। বায়োনিক্সের ক্ষেত্রে এটা একটা বিশাল সাফল্য। শাইবেল বললেন, আসলে নিখুঁত জাল বলে কিছু হয় না। যেমন বিশেষ কাজের জন্য এই সুতা তৈরি করা হয়েছে। মাকড়সাও ঠিক তাই করে। জালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সুতা থাকে, যার গুণাগুণ আলাদা। আমরাও সেটা চাই। বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ সুতা।তবে বিজ্ঞানীরা শুধু সুতা নিয়ে কাজ করছেন না। তারা সম্প্রতি কসমেটিকস-ও তৈরি করছেন। আর এখন ওষুধের মধ্যেও এমন জাল ব্যবহারের প্রস্তুতি চলছে। যেমন এই সিলিকন ইমপ্লান্ট-এর উপর চিকন স্তর রয়েছে, যা মাকড়সার জাল দিয়ে তৈরি। মানুষের শরীর এই রেশমের জালকে সহজেই মেনে নেয়।
ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩