কানাডার চিকিৎসা সংক্রান্ত ভ্রান্তির গোপন জগতে
‘অসংখ্য মিথ্যাচার করা হয়, অনেক কিছু ধামাচাপা দেয়া হয়’
মে ১০, ২০১৫
টম ব্ল্যাকওয়েল : ২০১২ সালের ক্রিসমাসের মাত্র ক’দিন আগে সকালে ঘুম থেকে জেগেই হেলেন চার্চ তার ডান চোখের পেছনে প্রচ- ব্যথা অনুভব করলেন। ব্যথাটা কয়েক সপ্তাহ ধরেই তিনি অনুভব করছিলেন।
ব্যথায় চিৎকার করে তিনি টরন্টোর ইস্ট-এন্ডে তার অ্যাপার্টমেন্টে ছুটোছুটি করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ৯১১ নম্বরে ফোন করেন এবং অপেক্ষা করতে থাকেন।
এর কিছুদিন পরে দ্বিতীয়বার তিনি স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েন যা অস্বাভাবিকতার পর্যায়ে চলে যায়। মাত্র দুবছর আগে জরায়ুতে সিস্টজনিত ব্যথার কারণে মিজ. চার্চ কাছের একটি হাসপাতালে যান জরায়ু অপসারণ করাতে। কয়েকঘণ্টা পর তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন কিন্তু তখনও তার পেটে জরায়ু রয়ে গিয়েছিলোÑ আর তার তলপেটে অস্তিত্বহীন হার্নিয়া সারানোর জন্য এক টুকরা জাল জড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
এর কয়েক মাস পর একজন স্পেশালিস্ট একটি কৃত্রিম ছানি-সংশোধনের লেন্স পাল্টে দেন যা তিনি পরতে শুরু করেছিলেন। ফলাফল হলো : ওই চোখটি এখন অন্ধ এবং ব্যথা দিন দিনই বাড়ছে।
অন্য একজন বিশেষজ্ঞ পরে চার্চকে জানান, চক্ষু চিকিৎসক ভুল জায়গায় লেন্স পরিয়েছিলেন যা তার দৃষ্টিকে বাধাগ্রস্ত করেছে, এর ফলে একটি নালি ছিদ্র হয়ে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে।
৮৩ বছর বয়স্ক মিজ. চার্চ বলেন, “সেখানে অনেক বেশি রক্ত ছিলো, সেগুলো আমার চক্ষুগোলককে মাথার বাইরে ঠেলে দিয়েছিলো, সেটি আমার গালে ঝুলছিলো। সব জায়গায় রক্ত ছড়িয়ে পড়ছিলো, আর ব্যথা ছিলো অসহ্য।”
দুটি ঘঁনাই কানাডার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা তুলে ধরে। কিন্তু তাদের এই দৃশ্যমান মারাত্মক ভুলের অথবা প্রতি বছর সারাদেশে একইরকম ক্ষতিকর এবং কখনও প্রাণঘাতী যে হাজার হাজার ভুলভ্রান্তি ঘটে তার কোনও সরকারি রেকর্ড রয়েছে এমনটা মনে করবেন না।
ন্যাশনাল পোস্টের এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোগীদের আরোগ্য করার পরিবর্তে তাদের কষ্ট দেয়ার মতো বেশিরভাগ ঘটনাই প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালের কর্মচারীরা অভ্যন্তরীণভাবে কখনই রিপোর্ট করে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর চিকিৎসা নিতে গিয়ে ৭০ হাজার রোগী প্রতিরোধযোগ্য কিন্তু গুরুতর জখমের শিকার হন। আরও মর্মান্তিক ব্যাপার হলো এই যে, এক দশক আগে প্রকাশিত এক উল্লেখযোগ্য সমীক্ষায় হিসাব দেয়া হয় যে, কেবল একিউট কেয়ার হাসপাতালগুলোতে প্রতিরোধযোগ্য কিন্তু প্রতিকূল ঘটনার কারণে বছরে অন্তত ২৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক কানাডীয়র মৃত্যু ঘটে।
আর ব্যাপক নজরদারির আওতাধীন রোগীর নিরাপত্তা প্রচেষ্টার অধীনে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করা সত্বেও অনেক প্রমাণাদি থেকে বলা যায় যে, বর্তমান সময়ে চিকিৎসায় ভ্রান্তির পরিমাণ আরও বেশি বেড়েছে।
তারপরও এসব ঘটনার একটি ক্ষুদ্র অংশ স্বীকার করে নেয়া হয় এবং সচরাচর তা করা হয় কেবল জীবাণুনিরোধক পরিসংখ্যানের আকারে। সবচেয়ে গুরুতর চিকিৎসাজনিত ভুলের ক্ষেত্রেও কখনই বিস্তারিত প্রকাশ করা হয় না যার ফলে বিরাট এই সমস্যাটিকে রীতিমত অদৃম্য করে রাখা হয়।
ন্যাশনাল পোস্টও জানতে পেরেছে যে, চিকিৎসাগত ক্ষতির একটি সাধারণ সূত্র হলো প্রতি বছর অনেক রোগীর মৃত্যু এবং শত শত রোগীর জখম হবার পেছনে রয়েছে অকেজো চিকিৎসা সরঞ্জাম Ñযার নিয়মিত ও সরকারিভাবে বিবরণ লিপিবদ্ধ করার কোনও ব্যবস্থা নেই।
উইনেপেগ আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে কাজ একছেন এমন একজন জটিল ঘটনার তদন্তকারী ড্যারেল হর্ন বলেন, “এসব ঘটনা থেকে যেটা জানা গেছে সেটা হলো, এমনকি যখন কোন সুষ্ঠু তদন্তকাজ চালানো হয় তষনও আপনি অন্ধকার গহ্বরেই থেকে যাবেন। তারা সবকিছু লুকিয়ে রাখার জন্য এই কার্যকর অদৃশ্য বাক্স তৈরি করে নিয়েছে।”
কানাডায় চিকিৎসাজনিত ভ্রান্তি লুকিয়ে রাখার যে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক রয়েছে তার থেকে বিরল ব্যতিক্রম হচ্ছে ম্যানিটোবা; এই প্রদেশে গত তিন বছর ধরে এক লাইনের একটি বিবরণ প্রকাশ করা হচ্ছে যা থেকে অন্তত এটুকু আভাস পাওয়া যায় যে রোগীরা কী ধরণের দুর্যোগের মুখোমুখি হতে পারেন।
২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত তিন মাসে দেয়া ১০০টি রিপোর্টের মধ্যে একটি ছিলো এক নতুন মায়ের ঘটনা যেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীকে বমি বমি ভাব দূর করার অষুধ দেয়ার পরিবর্তে একজন স্টাফ রক্তচাপ বৃদ্ধির ওষুধ দেয়ার কারণে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো।
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির জন্য সুবিদিত অন্য একজন রোগীকে সার্জারির পর প্রতিষেধক ওষুধ দিতে অবহেলা করায় তিনি গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
একজন মহিলার সি-সেকশন করানোর সময় একটি ভাঙ্গা ক্ল্যাম্প-এর স্ক্রু ভেতরে থেকে যাওয়ায় তাকে দ্বিতীয়বার অপারেশন করাতে হয়েছে।
আর বাড়তি কোনও ব্যাখ্যাদান ছাড়াই একজন রোগীকে “সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে ফুসফুস উন্মুক্ত করে বায়োপসি করাতে হয়েছে।”
অবশিষ্ট সারাদেশে এধরণের ঘটনা ঘটে একধরণের শুন্যতার মধ্যে, বেশিরভাগেরই কোনরকম রিপোর্ট করা হয় না এবং কার্যত কাউকেই কোনরকম বর্ণনা দেয়া হয় না।
বস্তুত, বেশিরভাগ প্রদেশের আইনে চিকিৎসাজনিত বিরূপ ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্মী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্যসেবার সংস্কৃতি এখনও পুরনোধাচের যাজকতন্ত্রের মতই রয়ে গেছে’ যাতে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার পরিবর্তে আইনগত ব্যবস্থার ভয় এবং শাস্তির ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং ভুল পদক্ষেপকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
অন্টারিওর একটি হাসপাতালে একজন নার্স বলেন, তিনি দু’জন সার্জনের সঙ্গে কাজ করেন যাদের দক্ষতায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। রোগীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ভয়ে তিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। তার মন্তব্য, “তারা এমনকি আমার কুকুরের দেহ স্পর্শ করুক এটাও আমি চাই না।”
তিনি কয়েক বছর আগে নামোল্লেখ না করে একজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন কিন্তু তাতে সামান্যই পরিবর্তন এসেছে। এখন তিনি অপারেশনের পর ইনফেকশন বা সার্জারির পরবর্তী সেবায় নানা ধরণের অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কেও সম্পূর্ণ নিরব থাকেন।
ওই নার্স স্বীকার করেন যে, “আমরা এক চোখ বন্ধ করে রাখি এবং নিরবে হেঁটে চলে যাই। এক্ষেত্রে অনেক মিথ্যাচার করা হয়, অনেক কিছু ধামাচাপা দেয়া হয় যা আমার পেট ঘুলিয়ে দেয়।”
চিকিৎসাজনিত ভ্রান্তি জনসমক্ষে তুলে ধরার বিষয়টি রোগীর নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটি কাউকে লজ্জা দেয়া বা অভিযুক্ত করার জন্য কিংবা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ত্যাগী পেশাজীবীদের দিয়ে ভরপুর এই সত্য অস্বীকার করার জন্য নয়। উইনিপেগ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের যুগান্তকারী রোগীর নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সাত বছর ধরে কাজ করেছেন এমন একজন চিকিৎসক রব রবসন বলেন, মুষ্ঠিমেয় সত্যিকারের অযোগ্য লোকেদের বাদ দিলে এখানে কেউই দায়মুক্ত থাকার জন্য আসে না বরং তারা দৃষ্টান্তমূলক সেবা দেয়ার জন্যই এই পেশায় আসেন।
তিনি বলেন, যখন কোন একটা ভুল হয়ে যায় তখন সেটি ঘটে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ফল হিসাবে, কখনও ব্যবস্থাপনার ভেতরে থেকে যাওয়া কোনও গলদের কারণে। এধরণের ভ্রান্তি প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করা অবশ্যই চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং এটি হলো ব্যাপকতর গবেষণা ও অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়।
নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভুলভ্রান্তির বিষয়টি জনসমক্ষে এলে তা এই বিষয়ে নজর ফেরানোর জন্য সহায়ক হয়।
ডা. রবসন বলেন, “আপনি জনগণকে বলতে পারেন যে, রোগীরা কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না জনগন অনুধাবন করছে যে, হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে প্রতি ১৩ জনে একজন বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন Ñ আর এটি হলো খুবই রক্ষণশীল হিসাবÑ ততক্ষণ পর্যন্ত এমন কথা বলার মতো চাপ সৃষ্টি হবে না যে, দেখো, এসব জঘন্য ব্যাপারগুলো শুধরে নাও।”
এধরণের তথ্য গোপন করার যে ঝুঁকি তা ১৯৯৭ সালে অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে জনসমক্ষ্যে আসে যখন আরেকটি শিশু একই ধরণের চিকিৎসাগত ভুলের শিকার হয়। এটি ছিলো এমন একটি ভুল যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখনও ঘটে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার শিশু হাসপাতালের ডাক্তাররা ক্রিস্টাইন ওয়াকার নামে সাত বছরের একটি শিশুর দেহে ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেন। শিশুটির লিউকেমিয়া রোগ ভালো হওয়ার পর আবার ফিরে আসে। অসাবধানতার কারণে তারা ধমনীতে প্রয়োগযোগ্য ওষুধটি তার শিরদাঁড়ায় ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিক থেকে চিকিৎসকরা জানেন যে, ইন্ট্রাথেকালি ওষুধ প্রয়োগ করা হলে তা মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে সাধারণত ¯œায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্রিস্টাইন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দুই সপ্তাহ পর মারা যায়। তার মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবিষ্কার করেন যে, অন্যান্য প্রদেশে আগের বছরগুলোতে ঠিক একই ধরণের তিনটি ঘটনা ঘটেছে। এটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য একটি স্মরণীয় ঘটনা। কিন্তু তিনটি ঘটনার কোনটিই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি কিংবা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় আওতায় জানানো হয়নি।
হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট লিন্ডা ক্রানস্টোন সে সময় বলেছিলেন, “আমরা আমাদের নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সক্ষম ছিলাম না অথবা
আমাদের অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ারও কোনও সুযোগ ছিলো না।” এই ভ্রান্তি এড়ানোর জন্য উৎপাদনকারীরা অনেক ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু এমনকি ২০১২ সালেও ইন্সটিটিউট ফর সেফ মেডিক্রাল প্র্যাকটিসেস (ওঝগচ) এমন উদ্বেগজনক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, কানাডার ৬০% ভাগেরও কম হাসপাতাল ভিনক্রিস্টাইন নামের ওই ওষুধ প্রয়োগের সময় সতর্কীকরণ লেবেল অনুসরণ করে। অথচ এটি অনুসরণ করা হলো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম।
গত বছরের শেষ দিকে আইএসএমপির এক সতর্কবার্তায় দাবি করা হয় যে, বিরল হলেও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ভ্রান্তি এখনও ঘটে।
আর এতকিছুর পরও, গণমাধ্যমের রিপোর্ট এবং একটি সাময়িকীতে ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ঘটনাটির ওপর নিবন্ধ ছাড়া বাস্তবিক পক্ষে সরকারিভাবে কানাডায় সংঘটিত কোনও ঘটনারই কোনও বিবরণ কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
বাস্তবে, কানাডায় চিকিৎসাগত ভ্রান্তি কতটা বা কী পরিমাণে ঘটছে তা কেউই সঠিকভাবে জানেন না। সর্বোত্তম আনুমানিক পরিসংখ্যান এসেছে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য ২০০৪ সালের একটি সমীক্ষা থেকে। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রস বেকার এবং ক্রালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিটার নরটন যারা এখন বেকার-নরটন হিসাবে পরিচিত তারা ওই সমীক্ষা পরিচালনা করেন।
গবেষকরা ২০টি একিউট-কেয়ার হাসপাতালে প্রতিনিধিত্বমূলকভাবে রোগীদের চার্ট পরীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান যে, ৭.৫% প্রাপ্তবয়স্ক রোগী গুরুতর ধরণের ক্ষতিকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। এই হিসাবে সারাদেশে বছরে এক লাখ ৮৫ হাজার রোগী ক্ষতিকর পরিস্থিতির শিকার হন। এসব ক্ষতিকর ঘটনার ৪০% ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিলো। তারা জানান, প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিলো এমন সব ভ্রান্তির কারণে ৯,০০০ থেকে ২৩,০০০ রোগী বছরে মারা যান।
আট বছর পর একই ধরণের এক সমীক্ষায় শিশুরোগ নিয়ে গবেষণা করা হয়। তাতে দেখা যায় যে, এক্ষেত্রে ক্ষতিকর ভ্রান্তির হার আরও বেশি ৯.২%। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত কানাডীয় রোগীর নিরাপত্তা ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহী হাফ ম্যাকলোড বলেন, ওই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন ওষুধ, নতুন অভিগমন…ইত্যাদি কারণে ঝুঁকি এবং ভুলের ঘটনার সম্ভাবনাও বেড়েছে।”
দুটি সমীক্ষাতেই যাদের হিসাবে ধরা হয়নি সেই মানসিক রোগী, ধাত্রীবিদ্যা বিষয়ক রোগী এবং নার্সিং হোম ও পুরনো রোগের চিকিৎসার হাসপাতালে যেসব রোগী দীর্ঘমেয়াদে থেকে যান তাদের বিষয়টি ধরা হলে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর ঘটনা বছরে হতে পারে ৩৫,০০০। ডা. রবসন বলেন, এর অর্থ হলো প্রতি ঘণ্টায় একজন করে রোগীর মৃত্যু।
চিকিৎসাজনিত ভ্রান্তি থেকে ঘটার কারণে এবং এগুলো প্রতিরোধযোগ্য হওয়ায় তিক্ততার সৃষ্টি হয়, ক্রোধের সৃষ্টি হয়। আর সেজন্যেই চারটি প্রদেশ Ñ আলবার্টা, নিউ ব্রান্সউইক, নিউ ফাউন্ডল্যান্ড এবং এডওয়ার্ড আইল্যান্ড ক্ষতিকর ঘটনার কোন তথ্য-উপাত্ত এমনকি ঘটনাটি সম্পর্কেও কোনকিছু প্রকাশ করে না।
এর পরও ন্যাশনাল পোস্ট হেল্থ কানাডা থেকে যেসব তথ্য পেয়েছে তাতে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, সংস্থাটি বছরে বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্রের কারণে সংঘটিত ক্ষতিকর ঘটনার অন্তত ১০,০০০ রিপোর্ট পায়। এর মধ্যে ১,০০০ রোগী মারাত্মকভাবে জখম হয় এবং ৯৫ জনের মত রোগী মারা যায়।
স্বাস্থ্যকর্মীরা ভুলটা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এতটা অনিচ্ছুক কেন? ডা. রবসন বলেন, অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে কোনরকম ভুল হয়ে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেটা চেপে যায়। তিনি বলেন, ভুলের বিষয়টি রিপোর্ট করলে সেটি তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তারা সেটি চেপে যায়। আর সে রিপোর্ট প্রকাশিত হবে না এমনটা নিশ্চিত হলে তারা ভুল সম্পর্কে রিপোর্ট করে।
টরন্টোতে ২০ বছর ধরে জরুরী বিভাগে কাজ করছেন এমন একজন নার্স এন্ডি সামারস বলেন, বেশিরভাগ হাসপাতালেই ভুলের জন্য শাস্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয় এবং হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের প্রধান্য থাকায় খোলা দুয়ার নীতিকে নিরুৎসাহিত করা হয়। গত পাঁচ বছর ধরে অন্টারিওর নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ইউনিয়নের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী সামারস বলেন, “নার্সরা কোনরকম ইস্যু হওয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকে। তারা যদি ক্ষতিকর ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকে তাহলে অনুভব করতে থাকে যে তাদেরকে দোষারোপ করা হবে।” তিনি বলেন, “এটি খুবই বড় বোঝা হয়ে ওঠে। তার চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে চুপ থাকা সহজ।”
-ন্যাশনাল পোস্ট