মুসলিম কানাডিয়ানগণ কানাডারই অংশ, বিচ্ছিন্ন কেউ নন

কানাডায় শতকরা ৮৩ ভাগ মুসলমান নিজেদেরকে কানাডীয় ভেবে খুবই গর্ববোধ করেন। অপরদিকে অমুসলিমদের মধ্যে এই হার শতকরা ৭৩ ভাগ!

৯৪% মুসলিম কানাডিয়ান জানিয়েছেন কানাডার প্রতি তাদের একাত্মতার অনুভূতি খুবই শক্তিশালী। ৫৮% জানিয়েছেন কানাডার প্রতি তাদের একাত্মতার অনুভূতি গত ৫ বছরে আরো শক্তিশালী হয়েছে। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরীপ রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা যায়। জরীপ কার্যটি পরিচালিত হয় এনভাইরনিকস ইন্সিটিউট নামের একটি সংস্থার অধিনে।

জরীপে অংশগ্রহনকারী কানাডার মুসলিম সম্প্রদায় আরো মনে করেন কানাডা বর্তমানে সঠিক পথে এগুচ্ছে। ২৪% মুসলমান বলেন, কানাডায় তাদের কাছে গর্ব করার সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় হলো, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র। আর ২২% মনে করেন মাল্টিকালচারালইজম ও ডাইভারসিটি হলো তাদের কাছে গর্ব করার শ্রেষ্ঠ বিষয়। যুবক বয়সী ও কানাডায় জন্ম নেয়া মুসলমানগণও মনে করেন মাল্টিকালচারালইজম ও ডাইভারসিটি হলো গর্ব করার বিষয়।

জরীপের এই তথ্য গুলো কানাডার মাল্টিকালচারালইজম নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ দেশটির নীতিনির্ধারকদের জন্যও এবং আরো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যারা ইসলামোফোবিয়ায় ভুগেন বা যারা বর্ণবাদে বিশ্বাস করেন তাদের জন্যও।

কানাডা মূলত ইমিগ্রেন্টদেরই দেশ। কেউ আগে এসেছেন আর কেউ পরে এসেছেন। আগে যারা এসেছেন তাদের যেমন অবদান রয়েছে কানাডার অর্থনীতি গড়ার পিছনে, পরে যারা এসেছেন তাদেরও অবদান রয়েছে এই দেশটি গড়ার পিছনে। তাই কারো অবদানকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। তেমনি অবকাশ নেই কাউকে ছোট করে দেখার এবং সন্দেহের চোখে দেখার।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, কানাডায় একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে এই চর্চাটি বিদ্যমান। আর এই চর্চার প্রধান টার্গেট হলেন মুসলমান জনগোষ্ঠি যারা নিজেদেরকে কানাডীয় ভেবে অত্যন্ত গৌবরবোধ করেন। এমনি তথাকথিত মূলধারার কানাডিয়ানদের চেয়েও বেশী গৌরব বোধ করেন তারা। জরীপে আরো দেখা গেছে অধিকাংশ মুসলিম কানাডায় এসে এখানকার রীতিনীতি ও জীবনযাপনের পদ্ধতিকে গ্রহণ করতে চান। ৮৯% মুসলিম মনে করেন বর্তমানে কানাডায় যে পরিস্থিতি বিরজমান বা দেশটি যে ভাবে চলছে তা ঠিকই আছে এবং এ ব্যাপারে তারা সন্তুষ্ট। ৪৪% কানাডিয়ান মুসলিম জানান, দেশের বাইরে যে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্যক্রম চলছে তার প্রতি তাদের সমর্থন নেই। ৩৭% মুসলিম মনে করেন জঙ্গীদের প্রতি সমর্থন রয়েছে যাদের তাদের সংখ্যা খুবই কম।

অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈষম্য আর সন্দেহের শিকার হয়েও কানাডা সম্পর্কে সিংহভাগ মুসলিম কানাডিয়ানদের দৃষ্টিভঙ্গি সবদিক থেকেই ইতিবাচক। মুসলিম এবং কানাডিয়ান এ দুটি পরিচয়ই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জরীপ রিপোর্ট থেকে আমরা এই বার্তাই পাচ্ছি। তাই আমরা মনে করি কানাডায় মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। দেশে এবং বিদেশে গুটি কতক মুসলমান নামধারী বিপথগামী সন্ত্রাসীদের জন্য কানাডাসহ গোটা বিশ্বের মুসলিম জনতাকে দায়ী করার কোন অর্থ হয় না। তাছাড়া ঐ মুসলিম নামধারী সন্ত্রাসীরা কাদের সৃষ্টি সেটিও আজ আর কারো কাছে গোপন নয়।

মে ৮, ২০১৬