দক্ষ অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য
কানাডার শ্রমবাজারে কাজের সন্ধানে নামা দক্ষ অভিবাসীগণ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাদের ভাষাগত দক্ষতা নেই, কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা নেই, কানাডিয়ান ডিগ্রি নেই, কানাডিয়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই এরকম কিছু অভিযোগ তুলে তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। যে সকল আবেদনকারীর নাম দেখে অনুমান করা যায় তার জন্ম এশিয়া বা আফ্রিকায় অর্থাৎ অ-ইউরোপীয় নামযুক্ত যে সকল আবেদনপত্র চাকুরীদাতাগণ পেয়ে থাকেন সেগুলোর ব্যাপারে তারা আগ্রহী থাকেন না। শুরুতেই তারা অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান যে, এই আবেদনকারীর যোগ্যতার অভাব রয়েছে। সুতরাং তাকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। নিয়োগ দিতে গেলে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হবে। তাকে নতুন করে ট্রেনিং দিতে হবে। আবেদনকারীর ভাষা দুর্বল হওয়াতে তার সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা যাবে না- ইত্যাদি।
বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই দক্ষ অভিবাসীদের জন্য বিব্রতকর এবং এটি তাদের মধ্যে হতাশা ও দুর্ভাবনা সৃষ্টি করছে। কিছু সংখ্যক দক্ষ অভিবাসী যদিও ভাগ্যগুণে চাকরী পেয়ে যান, তাদের মজুরী থাকে কানাডিয়ান সমদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় কম। বলা যায় বেশ কম। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সম্প্রতি আসা অভিবাসীরা কানাডায় জন্মগ্রহণকারী তাদের সমবয়সী চাকরিপ্রার্থীদের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যায় বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন। একই মানের ডিগ্রি নিয়েও অভিবাসীরা একই বয়সের স্থানীয়দের চেয়ে ৪৮ শতাংশ কম বেতন পাচ্ছেন।
এমনকি কানাডায় আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং এদেশেই কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও শুধু নামের কারণে নিয়োগদাতারা ব্যাপকভাবে বৈষম্য করেছেন।
দেখা গেছে কানাডায় শিক্ষালাভ এবং কাজের অভিজ্ঞতা থাকার পরও বিদেশি নামধারী চাকরিপ্রার্থীরা যদি একাধিক ভাষায় অনর্গল কথা বলতে সক্ষম হন, কোনও ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে থাকেন বা মাস্টার্স ডিগ্রি করে থাকেন তবুও তাদের চাকরির ইন্টারভিউতে ডাকার হার বাড়ে না।
অন্যদিকে কানাডায় অভিবাসী নারীদেরকে চাকরি পেতেও নিদারুণ বাধাবিপত্তি পোহাতে হয়। শুধু তাই নয়, তারা অভিবাসী পুরুষ এবং কানাডায় জন্মগ্রহণকারী নারী উভয়ের চেয়ে কম অর্থ আয় করেন। অভিবাসন বিভাগের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তে এমনটাই জানা গেছে।
অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন আইনের আওতায় দ্য কানাডিয়ান প্রেসের হাতে আসা তথ্যে দেখা যায়, কানাডায় নতুন আসা অভিবাসী নারীর ক্ষেত্রে কানাডায় জন্মানো নারীদের সঙ্গে এক ধরণের স্থায়ী ব্যবধান রয়ে গেছে।
তথ্যে আরো জানা যায়, ভাগ্যান্বেষণে, উদ্বাস্তু হিসাবে বা অন্য কোনও ক্যাটাগরিতে আসা অভিবাসীদের স্ত্রীদের চাকরির সুযোগ কমে যাচ্ছে এবং গড় বেতনের চেয়েও তারা কম অর্থ আয় করছেন।
সরকারের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই বাস্তবতা থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, অভিবাসন কর্মসূচিগুলোতে মনোনয়নের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো নারী অভিবাসীদের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন সর্বোচ্চে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়নি।
অথচ কানাডিয়ান ফেডারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্ট বিজনেস (CFIB) এর নতুন তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, কানাডায় যত ধরণের কাজ রয়েছে তার সবগুলোতে নিয়োগের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী এদেশে নেই। হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শূন্য পদ পূরণে সহায়তা সম্পর্কিত সিএফআইবির সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের শেষ তিন মাসে কানাডায় চাকরির শূন্য পদ ছিলো ৩,৯৯,০০০। শূন্য পদ বৃদ্ধির সংখ্যা ছিলো ৩৮,০০০ বা ১০.৫ শতাংশ যা মাত্র তিন মাসে বেড়েছে।
কানাডায় শ্রমবাজার যখন ইতিহাসের সবচেয়ে জোরালো অবস্থানে রয়েছে ঠিক সেই সময়েই দেশটিতে শ্রমিকের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দক্ষ অভিবাসীদেরকে শ্রম বাজার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে নানান অজুহাত দেখিয়ে যা কানাডার অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। আমরা মনে করি বিষয়টি কানাডার নীতিনির্ধারকদেরকে জরুরী ভিত্তিতে তলিয়ে দেখা উচিৎ এবং কিভাবে তার সমাধান বের করা যায় সেটাও বের করা উচিৎ কানাডার বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থে।
অগাস্ট ৪, ২০১৮