ইমিগ্রেন্ট কর্মীবাহিনী ছাড়া কানাডার অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়

কানাডায় প্রতি ১০ জন নাগরিকের মধ্যে ৮ জন এখনো মনে করেন দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইমিগ্রেন্টদের প্রয়োজন রয়েছে। তারা আরো মনে করেন, কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা এখনো খুব বেশী নয়। সাম্প্রতিক এক জরীপ রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। জরীপটি যৌথভাবে চালায় Environics Institute Ges Canadian Race Relations Foundation.

উল্লেখ্য যে, গত এক বছরে কানাডায় রেকর্ড সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট প্রবেশ করেছে এবং যাদের মধ্যে রয়েছে ৩২ হাজারেরও বেশী সিরিয়ান উদ্বাস্তু। গত এক বছরে (জুলাই পর্যন্ত) ৩২০,৯৩২ জন ইমিগ্রেন্ট প্রবেশ করেছে কানাডায় যা ছিল কাগজ-পত্রে ইমিগ্রেন্টদের হিসাব রাখার রীতি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যার বিচারে সর্বোচ্চ।

আমরা জানি পাশ্চাত্য বিশ্বে জেনোফোবিয়া (xenophobia) বা বিদেশীদের সম্বন্ধে অহেতুক ভয়ের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে। কিন্তু কানাডার পরিস্থিতি আমরা লক্ষ্য করছি পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশ থেকে অনেকটাই ভিন্ন। জরীপে দেখা গেছে কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। টরন্টোতে এই মতের সমর্থকদের সংখ্যা বেশী এবং যারা উচ্চ শিক্ষিত (ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী) তারাও এই মতের পক্ষে।

জরীপে আরো বলা হয়, অধিকাংশ কানাডিয়ান আগামীতেও এই বিশ্বাস ধরে রাখবেন যে, কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ভূমিকা ইতিবাচক।

পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত প্রায় সবকটি দেশেই যখন ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব দিন দিন চাঙ্গা হয়ে উঠছে তখন কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে এরকম ইতিবাচক মনোভাব নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তিকর এবং মঙ্গলকর সংবাদ প্রতিটি ইমিগ্রেন্টের জন্যই।

উল্লেখ্য যে, ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাক্কুলাম গত ৩১ অক্টোবর কানাডার নতুন ইমেগ্রেশন টার্গেট ঘোষণা করেছেন যাতে বলা হয়েছে, কানাডা আগামী বছর ৩ লাখ ইমিগ্রেন্ট নিবে। কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই কোটা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি কানাডায় বয়স্ক লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে আগামী বছরের ইমিগ্রেশন কোটা ৩ লাখে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের অধিকাংশই আরো বেশী ইমিগ্রেন্ট গ্রহনের পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ, কানাডায় একদিকে সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যদিকে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।”

এদিকে অন্য এক জরীপে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জব মার্কেটের উন্নতি ও বিকাশের জন্য কানাডা এখন সম্পূর্ণভাবে ইমিগ্রেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছে। স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার সর্বশেষ এম্পøয়মেন্ট ডাটা এই তথ্যই দিচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় গত এক বছরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত জব মার্কেটে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের সংখ্যার চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে জব মার্কেটে কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

পাশ্চাত্যের দেশসমূহে একটা প্রবাদবাক্য চালু আছে এই বলে যে, ‘ইমিগ্রেন্টরা আমাদের চাকরী চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে’। কিন্তু কানাডার ক্ষেত্রে এরকমটা মনে করার কোন কারণ নেই। এখানে মূলত ব্যাপারটি ঘটছে এই কারণে যে কানাডায় জন্ম নেয়া বয়স্ক লোকেরা ক্রমশ কাজ থেকে অবসরে যাচ্ছেন এবং সেই স্থানগুলো দখল করছেন তরুন ইমিগ্রেন্টরা। তাছাড়া হিসাবে আরো দেখা যায়, কানাডায় জন্ম নেয়া বয়স্ক নাগরিকের মধ্যে অবসরে যাওয়ার সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে নতুন কর্মজীবীর সংখ্যা তাদের উত্তরসূরীর মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে একটা শূণ্যতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিস্থিতি এমনটাই ইঙ্গিত করছে যে, কানাডার ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন একটা বিশেষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। আর এই অবস্থার কারণে এখন ইমিগ্রেন্ট কর্মীবাহিনী ছাড়া কানাডার অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়।

তাই আমরা মনে করি ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের এই ইতিবাচক মনোভাব এবং এর পাশাপাশি ইমিগ্রেন্টদের কঠোর পরিশ্রম ও কানাডার প্রতি তাদের ব্যাপক অংশের অনুগত্য ও ভালবাসা দেশটিকে আরো অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

নভেম্বর ৫, ২০১৬