নাগরিকত্ব আইনের পরিবর্তনের অর্থ হবে কানাডীয় হওয়ার জন্য দীর্ঘতর সময় অপেক্ষা করা

কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইনে বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যার ফলে অনেকের জন্য কানাডার নাগরিক হওয়া কঠিনতর হবে

অভিবাসন মন্ত্রী বলেছেন, সরকার নতুন বিধি-বিধান বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে যাতে করে কানাডার নাগরিকত্বে ‘মূল্য’ নিশ্চিত হবে

ডেবরা ব্ল্যাক, মার্চ ৫, 2014: কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইনে বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যাতে থাকবে আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময় কমিয়ে আনা, আবাসন সম্পর্কিত শর্ত কঠোরতর করা এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মত বিষয়Ñ এগুলি এমন ব্যবস্থা হবে যার ফলে অনেকের জন্য কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস আলেকজান্ডার গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমাদের সরকার কানাডার নাগরিকত্বের মূল্য জোরদার করছে। কানাডীয়রা বোঝেন যে, নাগরিকত্ব কেবল সুবিধালাভের জন্য একটি পাসপোর্ট পাওয়া নয়। নাগরিকত্ব হলো পারস্পরিক দায়িত্বশীলতা এবং আমাদের ইতিহাসের শেকড়ে প্রোথিত মূল্যবোধের প্রতি অংশীদারিত্বমূলক অঙ্গীকার।

১৯৭০-এর দশকের পর এই প্রথম নাগরিকত্বের আইনে বড় ধরণের সংস্কার করা হচ্ছে। এতে যেসব পরিবর্তন আনা হবে তাতে স্থায়ী বাসিন্দাদেরকে কানাডায় ছয় বছর অবস্থান করতে হবে এর মধ্যে চার বছর ব্যক্তিগতভাবে এখানে থাকতে হবে। বর্তমান আইনে চার বছর অবস্থান এবং তিন বছর ব্যক্তিগতভাবে অবস্থানের শর্ত রয়েছে।

নতুন বিলে ভাষাজ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হয় এমন আবেদনকারীদের বয়সের সীমা বর্তমানের ১৮ থেকে ৫৪ বছরের পরিবর্তে ১৪-৬৪ বছরে সম্প্রসারণ করার কথা বলা হবে।

নাগরিকত্বেও জন্য আবেদন প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা বর্তমানের তিন স্তরের মূল্যায়ন ব্যবস্থার পরিবর্তে ওয়ান-স্টপ প্রক্রিয়া হবে যেখানে নাগরিকত্ব বিষয়ক বিচারকের পরিবর্তে নাগরিকত্ব বিষয়ক কর্মকর্তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।

আর এতে এমন পরিবর্তনের বিষয়ও থাকছে যাতে সন্ত্রাসবাদ, গুরুতর বিশ্বাসঘাতকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির মত অপরাধে জড়িত দ্বৈত নাগরিকদের অথবা যারা কানাডার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে এমন লোকদের নাগরিকত্ব হরণের ব্যবস্থা থাকবে। স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে যারা এধরণের অপরাধ করতে তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ রহিত করা হবে।

বিল সি-২৪ নামে অভিহিত ‘‘কানাডার নাগরিকত্বের আইন জোরদার করণ’’ শীর্ষক ওই বিলটি সম্প্রতি পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বৈরি এবং উদ্বাস্তুদের পক্ষের লোকেরা অনেকগুলো সংস্কারের বিষয়ে দ্রুত সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছেন।

কানাডীয় উদ্বাস্তু বিষয়ক কাউন্সিল বলেছে, নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ করে উদ্বাস্তুদের জন্য ‘‘বাড়তি বাধা’’ সৃষ্টির বিষয়ে তারা উদ্বিগ্নÑ আর এ কাউন্সিল সুনির্দিষ্টভাবে নির্দিষ্ট কতগুলি ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব হরণের ক্ষমতার বিরোধী।

সিসিআর-এর প্রেসিডেন্ট লোলি রিকো বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব হলো একটি মৌলিক অবস্থাÑ এটি এমন কিছু নয় যা যোগ্যতার বলে অর্জনযোগ্য। লোকেদের অপকর্মের শাস্তি বিধানের জন্য নাগরিকত্বকে ব্যবহার করা ভুলÑ সেটি হলো ফৌজদারি ব্যবস্থার কাজ।’’

উদ্বাস্তু বিষয়ক কানাডীয় সমিতির প্রেসিডেন্ট লোরনি ওয়াল্ডম্যান ওই কমিশনের উদ্বেগের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, কানাডীয় হিসাবে আমরা যদি সরকারের মন্ত্রীদেরকে নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা দিই তাহলে আমরা এটিকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে ফেলবো।’’

লিবারেল পার্টি এবং এনডিপির অভিবাসন বিষয়ক প্রবক্তারাও একইরকম উদ্বিগ্ন। এনডিপির অভিবাসন বিষয়ক প্রবক্তা ব্লানচেত্তি-ল্যামোথি বলেন, ‘‘রক্ষণশীল সরকারের হাতে এই ক্ষমতা দিয়ে আমি ভরসা করতে পারি না কারণ তাদের অতীত অভিবাসন আইন সংস্কারের বিষয়টি ছিলো ভয়ংকর।’’

লিবারেল দলের অভিবাসন বিষয়ক প্রবক্তা জন ম্যাককালাম বলেন, ‘‘তারা দাবি করছে যে তারা কেবল অপেক্ষার সময় নিয়ে কিছু করতে যাচ্ছে… আমি এটা বিশ্বাস করবো তখনই যখন বাস্তবে এটি দেখতে পাবো।’’

ট্রু প্যাট্রিয়ট লাভ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রনওয়েন ইভান্স-এর মত অন্যরা আইনে প্রস্তাবিত একটি সংস্কারের প্রশংসা করেন যেখানে কানাডার সেনাবাহিনীতে কাজ করেন এমন স্থায়ী বাসিন্দা বা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনরকম এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

নাগরিকত্ব ও অভিবাসন দফতরের নাগরিকত্ব ও বহুসংস্কৃতিবাদ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক এন্ড্রু গ্রিফিধ বলেন, সব মিলিয়ে নাগরিকত্বের ইস্যুর প্রসঙ্গ এলে বলতে হবে বিলটি সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ‘‘এই ব্যবস্থাগুলো নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিনতর কিন্তু তা হারানো সহজতর করবে। এটাই তারা কার্যত করতে যাচ্ছে।’’

নাগরিকত্ব আইনে কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে সে বিষয়ে গণমাধ্যমকে বক্তব্য পেশকারী অভিবাসনর কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে কানাডায় তিন লাখ ২০ হাজার নাগরিকত্বেও আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য জমা আছে। আর এসব আবেদন প্রক্রিয়াকরণে সময় লাগে ২৪ মাস থেকে ৩২ মাস পর্যন্ত।

তবে প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়িত হলে ২০১৬ সালের মধ্যে অপেক্ষমানদের তালিকা ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা হবে। সংশোধনী অনুযায়ী আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময় এক বছরের চেয়ে নিচে নামিয়ে আনা হবে।

অন্যান্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে :

–        নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের ফি ১০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে তিন’শ ডলার করা হবে এবং এর মধ্যে নাগরিকত্বের অধিকার সংক্রান্ত ফিসহ প্রত্যেক আবেদনকারীকে মোট ৪০০ডলার করে দিতে হবে।

–        প্রতারণার বিরুদ্ধে বিধান কঠোরতর করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। যথাযথ আইনগত কর্তৃত্বহীন কোন ব্যক্তি জেনেশুনে কোন আবেদনকারীর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করলে বা পরামর্শ দিলে বা ফি নিয়ে শুনানীতে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে ১ লাখ ডলার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হচ্ছে।

–        কোন ব্যক্তি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিলে তাকে এক লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা এবং/অথবা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া যাবে।

–        নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রীকে কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হবে। আর প্রতারণার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া লোকেদের নাগরিকত্ব হরণের সম্পূর্ণ ক্ষমতা এককভাবে তাকে দেয়া হবে। সেটি আবাসন সংক্রান্ত প্রতারণা, অপরাধজনিত অযোগ্যতা গোপন করা বা পরিচয় সম্পর্কিত প্রতারণা যেটাই হোক।

–        এমন একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে যা অভিবাসন সম্পর্কিত কনসালট্যান্টদের ওপর নজরদারি করবে এবং তাদের পেশাদারিত্বের মান নিশ্চিত করার বিষয়গুলো দেখবে।

–        কানাডার বাইরে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের জন্য অভিযুক্ত বা দণ্ডিত এবং একইসঙ্গে কানাডার বাইরে কারাদণ্ডভোগী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানানোর ব্যবস্থাও নতুন আইনে থাকবে। -সৌজন্যে : টরন্টো স্টার