প্রতিভার দিক থেকে টরন্টোর বাঙ্গালী শিল্পীরাও পিছিয়ে নেই

রেজাউল হাসান ॥ প্রতিভার দিক থেকে টরন্টো প্রবাসী শিল্পীরাও যে কোন অংশে কম নয়-তার একটি জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ আইরিন আলম। তার সুরেলা কন্ঠের গান মুহূর্তেই দর্শকদের মরমে পৌঁছে আকুল করে প্রান। কানাডা উদীচীর একজন নিয়মিত শিল্পী হিসেবে উদীচীর সব অনুষ্ঠানে তো গান করেনই-তার বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান করে আসছেন অনেক বছর ধরে। স্বামীর হাত ধরে কানাডায় এসেছিলেন ’৯৪ সালে। দেশে শাপলা শালুক-এর সঙ্গে ছিলেন জড়িত। তখন সবে ধন মণি বিটিভি-ই ছিল শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশের একমাত্র মাধ্যম। একমাত্র যোগ্যতার মাপকাঠিতেই সেইখানে গাইবার সুযোগ মিলতো। সেখানে তার হাতে খড়ি হয়েছিল রবীন্দ্র সঙ্গীতের মাধ্যমে। এখন অবশ্য লোক সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই বেশী জনপ্রিয়। বিশেষ করে শাহ্ আব্দুল করিমের গান তার কন্ঠে প্রান পায়। মঞ্চে উঠলেই দর্শক শ্রোতারা অনুরোধ জানান লোক সঙ্গীত গাইতে। তার স্বামী মোঃ আলমগীর আলমও উদীচীর সঙ্গে জড়িত একজন শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক। বছর পাঁচ হলো গড়ে তুলেছেন সাংস্কৃতিক শিল্পী সংগঠন। এই মার্চ থেকে তারা রজার্স কমিউনিটি টিভিতে ২০ মিনিটের একটি ংষড়ঃ পেয়েছেন। ‘প্রানে বাংলা’ শিরোণামে এই শিল্পী দম্পত্তি নিয়মিত অনুষ্ঠান করবেন বলে জানালেন।

আইরিনের জন্ম কুমিল্লায় আর আলমগীরের জন্ম নোয়াখালিতে। কিন্তু লেখাপড়া করেছেন কুমিল্লাতেই এবং আইরিনদের পাড়ায় তার আনাগোনা ছিল কিন্তু বিয়ের আগে কেউ কারুকে দেখেননি বলে জানালেন। অথচ সেই লোকটির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে টরন্টোতে এলেন ঘর করতে। সেই সংসার আর নেই দু’জনাতেই। তাদের রয়েছে এক ছেলে দুই মেয়ে। তারা সবাই ইউনিভার্সিটিতে যায়। বড় মেয়ে সুমাইয়া আলম পড়ছে বায়লজি নিয়ে। পরের মেয়ে ইয়র্কে পড়ছে আইনে আর ছেলে আল আমিন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র।

১১টি গান নিয়ে সম্প্রতি আইরিন আলমের ‘পান্থ পাখি’ নামে একটি ডিভিডি বাজারে এসেছে। শিগগিরই ‘মাটি মা ও মেয়ে’ আরও একটি গানের সিডি আসছে বলে আইরিন জানালেন। তবে এই সিডিটির বিশেষত্ব হচ্ছে টরন্টোতে বসবাসরত আফ্রিকার জনপ্রিয় ২৫ জন ড্রামার মিউজিকে অংশ নেবেন। বিশেষ করে শাহ্ আব্দুল করিমের গানে যে তাল লয় তাতে ড্রামারদের অংশ গ্রহন সঙ্গীতের দ্যোতনা আরও মনোগ্রাহী হবে বলে আইরিন জানালেন। তার ছেলে মেয়েরাও গান করে কিনা জানতে চাইলে আইরিন বলেন, অবশ্যই তারা গান করে।

এ সময় পাশে বসা তার স্বামী আলমগীর বললেন,  আমাদের এখানে এখন অনেক শিল্পী এবং আমাদের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান করাটাও একটা রেওয়াজে দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কোন কমিউনিটি সেন্টার নেই। ছোট্ট পরিসরের যে বাংলাদেশ সেন্টারটি রয়েছে তাতে কোন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। গ্রীক কমিউনিটি যেমন বছরে দুই দিন পথ মেলা করে আমরাও তো পারি সেই রকম একটি মেলা করতে। এবং সেই মেলার থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে একটি কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা তো কোন ব্যাপারই না। ড্যানফোর্থের একটি অংশ যেমন গ্রীকদের দখলে তেমনি অপর অংশটিতে গড়ে উঠেছে লিটল বাংলাদেশ। এজন্যে দরকার ড্যানফোর্থে আমাদের যে ব্যবসায়ী ভাইয়েরা আছেন তারা যদি লিখিত দেন যে-এই মেলায় তাদের কোন আপত্তি নেই এবং সেই কাগজ সিটিতে জমা দিলেই সিটি মেলা করার অনুমতি দেবে। বিষয়টি নিয়ে জরুরী পর্যায়ে ভাববার সময় এসেছে বলেই অন্ততঃ আমি মনে করি।

আইরিন বললেন, যাই বলেন না কেন ভাই এই যে আমরা প্রবাসে আছি-আমরা তো একটা পরিবারের মতোই-এখানে দলাদলি থাকবে কেন! কিন্তু কে শোনে কার কথা! এন ডি পির থেকে নির্বাচিত বিচ এরিয়ার এমপি মিঃ ম্যাথু ক্যালওয়ে গত তিন বছর ধরে ২১শে ফেব্র“য়ারী উদযাপন করে আসছেন। তিনি বাঙ্গালী কমিউনিটিকে বলেছেন একত্রে এই দিবসটি উদযাপন করার জন্যে। কিন্তু দলছুটদের সংখ্যা কমছেনা।

আলমগীর বললেন, সব কমিউনিটেতে কম বেশী দলাদলি আছে। তবে তাদের তো একুশে ফেব্র“য়ারী নেই। বিশ্বে একমাত্র আমরাই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা  করেছি। এটা আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার। সেই জায়গায় তো দলাদলি হওয়ার কথা নয়। তার পরেও হচ্ছে এটাই বাজে বড় বেদনার মতো!