সিনোপ্সিস ৫৬:

ভারত, চীন+পাকিস্থান, ও আওয়ামী লীগের Blessing নিয়ে দেশের পরবর্তী সরকার গঠনের ধীর প্রস্তুতি নিচ্ছে জামাত!

ফয়জুল হক দুলা, ccp

(এক) দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই কোন কোন দল বা গোষ্ঠী আগাম নিজেদেরকে মসনদে দেখা শুরু করেছেন। একবার, দু’বার বা একাধিকবার বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করেছে কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বড় দল জামাতে ইসলামী একক ভাবে দেশ শাসনের সেই স্বাদ আজোও পায়নি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামাতে ইসলামী বিরোধিতা করেছে –আমাদের মনে রাখা উচিত ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তান হওয়ার বিরোধিতাও কিন্তু জামাতে ইসলামী করেছে। অর্থাৎ ভারত বিভক্তি জামায়াতের মৌলিক নীতি বিরুদ্ধ্ব ছিল সব সময় এবং এখনো। এর প্রমাণ আমরা পাই ভারতের জামায়াতে উলামায়ে হিন্দ’র সাথে বাংলাদেশের জামায়াতের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ও দহরম মহরম দেখে। আওয়ামীদের সাঁড়াশি অভিযানে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জামায়াত তাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হারিয়েছে-হাজার হাজার শিবির কর্মী ও জামায়াত কর্মী আজো জেল হাজতে রয়েছে। জামাত মনে করে এই বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একাত্তরে করা তাদের সব পাপ মাফ হয়ে গেছে -তারা আজ পূত-পবিত্র এক নতুন দল রুপে জনগনের আস্থা অর্জনে সক্ষম । সাম্প্রতিক কালে জামায়াতের আমীরের বিভিন্ন বক্তব্য থেকেও সেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। – “আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল –অথচ তা ধরে রাখতে পারে নাই”, “ কারো প্রতি আমাদের কোন হিংসা বিদ্বেষ নাই” ইত্যাদি সফট মানসিকতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

বুধবার মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। ছবি : ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি

(দুই) “ভারত বিদ্বেষ” মানসিকতার পরিবর্তন করতে জামায়াতকে ইতিমধ্যেই অনুরোধ করেছে দিল্লী। ভারত বিদ্বেষ –এক সময়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যাপক ব্যবহার করলেও সাম্প্রতিক কালে তার পরিবর্তন লক্ষ করা যায় জামায়াতের আমীরের বক্তব্য থেকে -“কোন প্রকার সিকিউরিটি ছাড়া আমরা বসবাস করতে পারলেও আমার হিন্দু ভাইয়েরা পারবে না কেন ?” সরকার পরিবর্তনের পর সংখ্যালঘুদের পাহারা দান ইত্যাদি। এগুলো দেশের সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনের ট্যাকনিক ছাড়াও ভারত তোষণের নতুন কৌশল বৈ কি।

এখন কথা হচ্ছে দিল্লী হঠাৎ করেই জামাতের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার কারণ কি ? পুরানো বন্ধু আওয়ামী লীগকে এক ধরনের প্রক্সি সার্ভার হিসাবেই কাছে পেয়েছিল দিল্লী। শেখ হাসিনার পতনের পর সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। বিএনপির শাসনামলে খালেদা জিয়াকে প্রথমে একই কায়দায় কাছে পেলেও পরবর্তীকালে সে ভরসা আর থাকে নি । ভারতের সেভেন সিস্টারে বিচ্ছিন্নতাবাদী অনুপ চেটিয়ার দলকে সাহায্য করতে ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাসে বাবর + ইলিয়াস আলী সরাসরি জড়িত থাকায় আর কোন ভাবেই বিএনপিকে বিশ্বাস করতে পারছে না দিল্লী । দ্বিতীয়তঃ শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও সাড়ে ৫ কোটি আওয়ামী সদস্য তো এখনো দেশেই আছে । এই সাড়ে ৫ কোটিকে ইনফ্লুয়েন্স করতে যে কোন মূল্যে হাসিনাকে ভারতে এসাইলাম দিয়ে ধরে রাখতে হবে । নতুন সিটিজেনশীপ আইনে বাংলাদেশ থেকে কোন মুসলমান ভারতে এসাইলাম চাইতে পারবে না – শেখ হাসিনার জন্য আপাতত এই নতুন আইন বাধা হলেও দিল্লী তা ম্যানেজ করতে কাজ করে যাচ্ছে । এদিকে আওয়ামী লীগকে আবার ট্র্যাকে নিয়ে আসতে জামাতের প্রতি অন্ধ সমর্থন পোষণ  ছাড়া আর কোন রাস্তা শেখ হাসিনার হাতে নাই –অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এসে খাল কেটে কোন পরাশক্তিকে নিয়ে আসুক তা ভারত বরদাস্ত করতে পারবে না । তাই দু’জনের ( দিল্লী ও হাসিনার ) অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে জামাতকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দানের কাজ চলছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করে ।

(তিন) দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও আওয়ামী মাঠ খালি হওয়ার সাথে সাথে জামাত বিএনপির বিচ্ছেদ হয়ে গেছে –এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কাদা ছোড়াছুড়িও হচ্ছে । বিএনপির ডান হাত এবং ডেডিকেটেড+এগ্রেসিভ শক্তি জামাতকে হারিয়ে এখন নিজেরাই প্রতিদ্বন্দী রুপে মাঠে। এদিকে বর্তমান তরুণ সমাজের কাছে বিএনপির অবস্থানও অনেকটা আওয়ামীদের মত – কারণ তাদের শাসনামলও সুখকর ছিল না । তরুণরা এখন নতুনের সন্ধানে হন্যে হয়ে ছূটছে । তবে রাতারাতি নতুন পলিটিক্যাল পার্টি এসে জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যাবে এবং দেশকে রাইট ডাইরেকশনে নিয়ে যাবে – এ গুলো কল্পনাতেই সম্ভব । তাই বাধ্য হয়েই তরুণরা অল্টারনেট অপশন খুঁজবে । ঐ অপশনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে জামাত ।

(চার) একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে থাকায় স্বভাবতঃই জামায়াতের জন্য পাকিস্তানের সফট কর্নার আছে। অন্য দিকে চীন চাইবে না তার নাকের ডগায় অন্য কোন পরাশক্তির আগমন ঘঠুক। ইতিমধ্যে জামায়াতের সাথে চীনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার পতনের পর সেনা প্রধানের মিটিং এ জামাতের আমীরের কথা দুই বার উচ্চারণ হওয়াতে অনেকেই সেটাকে নেক নজর ধরে নিয়েছেন। সুতরাং বর্তমান অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে – ভারত , চায়না , পাকিস্তান , আওয়ামী লীগ –সেনা সমর্থন + এক বিরাট অংশের ধর্মীয় ভাবাপন্ন জনগনের সমর্থন জামায়াতের পাল্লায়ই জমা হয়েছে । জামায়াতের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান ( এমনকি সিগারেট খেলেও সদস্য থাকা যাবে না ) চালিয়ে তরুণদের নজর কাড়ার জন্য অভিনব কৌশল নেওয়া হচ্ছে । সুতরাং মোদ্দা কথা হচ্ছে আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ মেজরিটি সরকার না পেলেও মাইনোরিটি সরকারে জামাতের অবস্থান নিশ্চিত বলা যায় । ইলেকশনের সময় যতই দেরিতে হবে জামাতের ততই নিজেকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে সক্ষম হবে বলে অনেকেই মনে করেন। সে যাই হোক জনগনের ম্যন্ডেট নিয়ে যে দলই ক্ষমতায় আসবে তাকেই সাধুবাদ জানাতে হবে

(পাঁচ) একটি দেশ তার বন্ধু বদলাতে পারে কিন্তু প্রতিবেশী বদলাতে পারে না । সার্বভৌমত্ব বা ন্যাশনাল সিকিউরিটির ক্ষেত্রে কোন প্রকার কম্প্রমাইজ না করে প্রতিবেশী দেশের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নোয়ন, বন্ধু সুলভ আচরণ-অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে মডার্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল মন্ত্র। উদাহরণস্বরূপ কানাডা আমেরিকার কথা বলা যায় । সুপার পাওয়ার হয়েও তার প্রতিবেশীর সাথে প্রভূ সুলভ আচরণ না করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দুই দেশ। দুই দেশের মধ্যে প্রতিদিন ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য লেনদেন হয়। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষায় মিলিটারী প্রজেক্টসহ গ্লোবাল স্টেজে বিভিন্ন সংস্থায় রয়েছে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ । ঠিক একই ভাবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে ভারত, চায়না , পাকিস্তান , মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশ গুলোর সাথে অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে ।

ফয়জুল হক দুলা, ccp

টরন্টো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *