সেই যে আমার নানা রংয়ের দিনগুলি

কাজী সাব্বির আহমেদ

সেদিন হঠাৎ করেই ‘বৃক্ষকথা’ নামক ফেসবুক গ্রুপের একটি পোষ্টে চোখ আটকে গেল। পোষ্টটি ছিল রংপুর ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেটদের করা দৃষ্টিনন্দন একটি বাগান নিয়ে। বাগানের সেই ছবি আমাকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিল। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, মাঝে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে অথচ মনে হচ্ছে এইতো সেদিনের কথা। তখন আমরা ক্লাস নাইনে পড়ি। হঠাৎ করেই কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, আমাদের হাউজ বিল্ডিং-এর সামনে যে বিশাল লন আছে সেখানে বাগান করতে হবে। হাউজ ভিত্তিক এই বাগানগুলো মূলত ক্যাডেটরাই নিজ হাতে করবে। আমাদের শহীদ জাহাঙ্গীর হাউজের হাউজ মাষ্টার তখন সুজা হায়দার স্যার। তাঁর তত্ত্বাবধানে শুরু হলো আমাদের হাউজের বাগান করার অভিযান। বিকেলের গেমসের সময় পালা করে আমাদের বাগানে কাজ করতে হতো। মাটি কুপিয়ে বিভিন্ন নকসার ফ্লাওয়ার বেড তৈরী করা, সেই ফ্লাওয়ার বেডে নানা জাতের ফুলের বীজ বপন করা, তারপর সেখানে নিয়মিত নিড়ানী ও পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা – বিপুল উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে আমরা লেগে গেলাম বাগান করার কাজে। আমাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেলো যখন জানতে পারলাম ‘ইন্টার হাউজ গার্ডেনিং কম্পিটিশন’ হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এক সময়ের খালি লন ধীরে ধীরে বাগানের রূপ নিতে শুরু করল। ধীরে ধীরে সেই বাগান এক সময় ভরে উঠল নানা রঙের ফুল গাছের চারা দিয়ে। আর গাছগুলিতে যখন ফুল আসা শুরু করল, আমাদের সবার মনই ভরে উঠল অনাবিল এক আনন্দে। শেষ বিকেলের সোনা ছড়ানো রোদের মাঝে সেই বাগানে একটু পায়চারী করার সুযোগ ছিল সবার কাছেই বিশেষ আকাঙ্খিত। কারণ বিকেলের গেমসের শেষে লাইন দিয়ে গোছল করে নামাজের জন্য তৈরী হওয়ার পর হাতে কিছুটা সময় পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। একদিন ভাগ্যক্রমে হাতে পাওয়া এই সময়টুকুতে বাগানে বিচরণরত এক ক্যাডেটের ততোধিক ভাগ্যক্রমে নজর চলে যায় কোনায় লুকিয়ে থাকা এক কোলা ব্যাঙের উপর। ব্যাঙ আবিষ্কারের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সেই ক্যাডেটের মাথায় খেলে যাওয়া এক দুষ্টুবুদ্ধি থেকেই সেই ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনার সূত্রপাত। প্রাইভেসী রক্ষার স্বার্থে ঘটনার সাথে জড়িত কুশীলবদের ছদ্মনাম দিয়ে সম্বোধন করা হবে এই লেখায়।

পলায়নরত সেই ব্যাঙটিকে চোখের নিমিষে করায়ত্ত করে ফেলে ক্যাডেট জাবেদ। তারপর বারান্দা টপকে সোজা মামনুনের রমে ঢুকে তার লকারের উঁচু তাকে ব্যাঙটাকে রেখে পাল্লা এঁটে দেয়। গোছল সেরে এসে খালি গায়ে মামনুন যখন লকারের পাল্লা খুলেছে, অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া মুক্তির আনন্দে লকার থেকে ব্যাঙটি তখন লাফিয়ে পড়ে। তবে ‘পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে’-এর মতন করে মামনুনের ঠিক বুকের উপর। আর সেই সাথে ডিফেন্স মেকানিজমের অংশ হিসেবে ব্যাঙ তার নির্দিষ্ট এক গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত করে মামনুনের বুক ভিজিয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় মামনুন তো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তবে শীঘ্রই সেই অবস্থা কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে গায়ে একটা শার্ট চাপিয়ে সে রওনা হয়ে যায় হাউজ মাষ্টার রুমের দিকে।

ফেসবুক গ্রুপ ‘বৃক্ষকথা’র পোষ্ট

সেদিনের ডিউটি অফিসার স্যার ক্যাডেটদের সাথে নামাজে যাওয়ার জন্যে সেই সময় হাউজেই ছিলেন। আর আমাদের হাউজের ‘হাউজ টিউটর’ হওয়ায় তিনি সেই মুহূর্তে হাউজ মাষ্টার রুমেই ছিলেন যখন মামনুন হন্তদন্ত হয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। তারপর তার চেয়েও বেশী হন্তদন্ত হয়ে স্যারের পাঠানো ‘সমননামা’ নিয়ে হাউজ বেয়ারা উমেদ আলী ভাইয়ের আমাদের রুমে আগমন। আমরা তখন মাত্র পায়জামা পাঞ্জাবী পরে নামাজের জন্য প্রস্তুত। আমাদের তিন রুমমেটের ভিতর শুধু আমার আর ফাহিমের জন্য এই সমননামা। ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে তখন পর্যন্ত আমাদের বিন্দুমাত্রও ধারণা ছিল না। কী কারণে এই জরুরী তলব, এই দুশ্চিন্তা নিয়ে আমরা হাউজ মাষ্টার রুমের দিকে পা চালালাম। পথে মামনুনের মুখোমুখি হলাম। কিন্তু আমাদেরকে তীব্র একটা ‘হু’ ধ্বনি দিয়ে সে তার রুমের দিকে চলে গেল। সেই ‘হু’ ধ্বনির সরল বাংলা অর্থ হলো, ‘আজ তোদের খবর আছে’। আমাদের সমননামার সাথে মামনুনের যে একটা যোগসূত্র আছে সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হলেও, কিন্তু সেই যোগসূত্রটা যে কোথায় তা ধোঁয়াটেই রয়ে গেল। তবে আমাদের দুশ্চিন্তার মূল কারণ ছিল সেদিনের ডিউটি অফিসার স্যার যিনি আমাদের নামে সমননামা জারী করেছেন।

স্যার এমনিতে মানুষ হিসেবে নিপাট ভালো মানুষ। ক্যাডেটদের বাংলা পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে উনি বেশ কিছু ব্যঙ্গাত্মক ছড়া আর গান লিখেছেন, যে গুলো আবার বিভিন্ন কালচারাল অনুষ্ঠানে রম্য-নাটিকা হিসেবে ক্যাডেটদের দ্বারা মঞ্চস্থও হয়েছে। ফলে সবার মুখে মুখে স্যারের নিত্য নতুন ছড়ার ছড়াছড়ি। এমনই একজন জনপ্রিয় শিক্ষক তিনি। তবে বাংলা উচ্চারণের ব্যাপারে স্যার ভীষণ কড়া। কিন্তু তার চেয়েও কড়া তিনি ক্যাডেটদের ডিসিপ্লিনের বিষয়ে – জিরো টলারেন্স সেখানে। আজ কপালে যে কী দূর্ভোগ আছে সেই দুশ্চিন্তা করতে করতে হাউজ মাষ্টার রুমে ঢুকতেই কানে এলো নামাজের ঘণ্টা ধ্বনি। ক্ষীণ আশা ছিল মনে, সময়ের স্বল্পতার কারণে যা কিছু ঘটার তা দ্রুতই ঘটে যাবে। সে আশায় গুড়ে বালি দিয়ে স্যার সংক্ষিপ্ত বিচারের দিকে পা বাড়ালেন না। মামলার ওপেনিং স্টেটমেন্ট হিসেবে তিনি ফাহিমকে ব্যাঙ ঘটনার প্রধান আসামী আর আমাকে তার সহযোগী হিসেবে সাব্যস্থ্য করলেন। আর আদালত রাতের প্রেপ ক্লাস শেষ হওয়া অবধি মুলতবী ঘোষণা করলেন। ব্যাঙ নিয়ে এই ঘটনার ল্যাঙ যে আমাদের কপালে এভাবে এসে জুটবে, সেটা ছিল আমাদের দূরতম কল্পনারও অতীত।

রাতের প্রেপ ক্লাসে কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারলাম না। ঘটনার সাথে আমাদের যে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই কিভাবে সেটা প্রমাণ করব তারই রিহার্সেল দিতে লাগলাম মনে মনে। এই বিচারে আমরা নিজেরাই নিজেদের উকিল। সাদা চোখে দেখলে সহজেই প্রমাণ করা যাবে যে আমরা নির্দোষ। কিন্তু ঘটনার পেছনেও যে অনেক ঘটনা রয়ে গেছে। সেই সব ঘটনার সাথে এই ঘটনা যোগ দিলে বাঘা উকিলদের পক্ষেও আমাদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করতে গলদঘর্ম হতে হবে। সাক্ষী-সাবুদ হাজির করতে হবে। কারণ অতীতের সেই সব ঘটনাগুলো ভয়াবহ – মামনুনের অংক নোট কিংবা অস্ট্রেলিয়ান দামী ‘রেডিও-বন্ড’ পেপার গায়েব হওয়ার ঘটনার যখন কোন কূল-কিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না, ফাহিম তখন সেই রেডিও-বন্ড পেপারে চিঠি লিখতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা খেল। আর তারপর থেকেই মামনুনের যে কোন ঘটনায় প্রথম সন্দেহের তীরটি থাকত ফাহিমের দিকে। আর দ্বিতীয়টি আমার দিকে – ‘পার্টনার ইন ক্রাইম’ হিসেবে। কারণ অপরাধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যে কোন ক্রিমিনালের এক বা একাধিক ‘অ্যাকমপ্লিস’ থাকাটা স্বাভাবিক। আর ফাহিমের ক্ষেত্রে আমিই হচ্ছি তার একমাত্র অ্যাকমপ্লিস। আর এই তথ্যটি মোটামুটি সব স্যারদেরই জানা। সেই হিসেবে আজকের বিচারের রায় পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই ষোল আনা। তার উপর মামলার এক্সিবিট হিসেবে ব্যবহৃত ব্যাঙের নিঃসৃত রস নিশ্চয়ই শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এসব ভাবতেই রক্ত হিম হয়ে আসছিলো।

প্রেপ ক্লাসে যেহেতু পিনপতন নিস্তবতা পালন করতে হয়, তাই কারও সাথে পরামর্শ করবার জো নেই। মামনুনের সাথে আলোচনায় যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না – সে তখনও রাগে ফুঁসছিলো। ঘটনার একমাত্র চাক্ষুষ সাক্ষী আরেক ক্যাডেট কোন এক অজানা কারণে সেদিন মুখ খুলেনি। আর স্বাভাবিক কারণেই মূল আসামী যে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করবে, সে আশা করাটাই বোকামী। পরে অবশ্য তার দোষ স্বীকার না করার কারণ বুঝতে পেরেছি। আজকের মামলার বিচারক স্যারের হাতে সে আগে একবার ‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তি ভোগ করেছিল – ন্যাড়া কখনই বেলতলায় দুইবার যায় না। এক ঘোলাটে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে প্রেপ পর্ব শেষ হলো।

যথা সময়েই আদালতের পেয়াদারূপে উমেদ আলী ভাইয়ের আগমন। হাউজ মাষ্টার রুমে গিয়ে স্যারের মেজাজ এবং প্রস্তুতি দেখে আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। যা হোক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলো। তবে জিজ্ঞাসাবাদের ধরণ দেখেই ধারণা করা যাচ্ছে যে, আত্মপক্ষ সমর্থন হবে কেবল মাত্র আনুষ্ঠিকতার নামান্তর। পরিস্থিতি দ্রুত ‘এন্ড গেম’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে – ফাহিম আর আমি অসহায়ের মতন শাস্তির অপেক্ষায়। এই কঠিন সময়ে আশার আলো হয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন হাউজ মাষ্টার সুজা হায়দার স্যার। পেছনে কফির ফ্লাস্ক হাতে হাউস বেয়ারা উমেদ আলী ভাই।

সুজা হায়দার স্যার ছিলেন আমাদের ফাইন আর্টসের শিক্ষক। ক্যাডেট কলেজে আসার আগে আমাদের পাঠ্যসূচীতে ‘ড্রইং ক্লাস’ নামের এক নিরানন্দ সাবজেক্ট ছিল যেখানে আম, পেঁপে ইত্যাদির ছবি আঁকা শিখানো হত। ক্যাডেট কলেজে এসে সেই ‘ড্রইং ক্লাস’ ভোল পাল্টে হয়ে গেলো ‘ফাইন আর্টস এন্ড ক্রাফটস’। সুজা হায়দার স্যারের কাছে আমাদের প্রথম পাঠ ছিল ড্রইং-এর দুটি বেসিক টেকনিক – আলো-ছায়া আর পরিপ্রেক্ষিত। এই দুটি টেকনিকের ব্যবহারের ফলে নিরানন্দ ‘স্টিল-লাইভ’ ড্রইং হয়ে উঠলো ‘লাইভলি’ একটা ব্যাপার। প্রথাগত ড্রইং-এর পাশাপাশি এই ক্লাসে তিনি আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন শিল্পকলার বিভিন্ন বিষয়ের সাথে। আদিম মানুষের গুহাচিত্র থেকে শুরু করে রেনেসাঁ পরবর্তী চিত্রকর্মের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে তিনি আমাদের কিশোর মানসে এক অদ্ভুত আনন্দ মিশ্রিত স্বপ্নিল জগতের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তাঁর মাটি দিয়ে ‘ক্রাফটস’ তৈরীর ক্লাস ছিল আরও আকর্ষণীয়, সেখানে আমরা আমাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে বিচিত্র সব জিনিষ বানাতাম। মুক্ত মনের অধিকারী সুজা হায়দার স্যার আমাদের স্টেজ ডেকোরেশন থেকে শুরু করে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য মাঠের ডেকোরেশন, হাউজ গার্ডেনের নকশা সব কিছুরই তদারকী করতেন। তাঁরই উৎসাহে এবং ডিজাইনে আমাদের কলেজের শহীদ মিনারটি তৈরী হয়। কলেজের ‘ফটোগ্রাফী সোসাইটি’র দেখভালের ভারও ছিল তাঁর উপর। ক্যামেরাতে ছিল তাঁর দারুণ হাত। পাহাড়পুর এস্কারশনে তাঁর তোলা ছবিগুলো ছিল অতুলনীয়। আজ আমাদের এ্যালবামে যে ছবিগুলো কলেজের স্মৃতি হিসেবে জ্বলজ্বল করছে, তার অধিকাংশই সুজা হায়দার স্যারের হাতে তোলা। তিনি ছিলেন আমাদের এই কঠিন নিয়মবন্দী জীবনে খানিক মুক্তির শীতল ছোঁয়া।  

অতএব সুজা হায়দার স্যারের আগমনে আমরা যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলাম। বিচার প্রক্রিয়ার মোড় ঘুরতে শুরু করল – মামলা এখন হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিমকোর্টে। ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে তিনি রায় দিয়ে দিলেন – এই জাতীয় মিসচিভিয়াস ঘটনার যদি পুনারাবৃত্তি ঘটে তবে তিনি আমাদের অভিভাবকদের কাছে সতর্কতামূলক চিঠি পাঠাবেন। এত সহজেই যে এই জটিল মামলা ডিসমিস হয়ে যাবে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল। হাউজ মাষ্টার রুম থেকে আমাদেরকে অক্ষত ফিরতে দেখে মামনুনও হয়ত মনে মনে খুশী। সে আমাদেরকে শুধু একটু টাইট দিতে চেয়েছিল, তার বেশী কিছু তো নয়।

সেদিনকার সেই বিভীষিকাময় ঘটনাটি কিন্তু আজ মনের পাতায় একটি সুখস্মৃতি হয়ে জমা হয়ে আছে। এই পঁয়ত্রিশ বছরে জীবন বয়ে গেছে অনেকদূর। শ্রদ্ধেয় সুজা হায়দার স্যার পরলোকগত হয়েছেন অনেক বছর হলো। জাবেদ আজ জাহাজ নিয়ে দূর সাগর পাড়ি দিচ্ছে অহরহ। মামনুন বিমান বাহিনী থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে এখন ঢাকার এক নামকরা আন্তর্জাতিক স্কুলের সিকিউরিটি চীফ। ফাহিম সুইডেনের এক বন্দর শহরে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। সেদিনের সেই ডিউটি অফিসার স্যার ক্যাডেট কলেজের দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নিয়ে তাঁর নিজ শহর নওগাঁতে থিতু হয়েছেন। এখনও তিনি তাঁর কাব্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘ইলতুদ আলীদ’ পেননেম-এ তাঁর ছড়ার একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে।

তবে মামনুন আর ফাহিমের খুনসুটি এখনও সেই আগের মতনই আছে। ঢাকায় বসে মামনুন সময় পেলেই সুইডেনে থাকা ফাহিমকে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল করে বসে। আর ফাহিম টরন্টোতে বসবাসরত তার ‘পার্টনার ইন ক্রাইম’ আমাকে যোগ করে নেয় সেই কলে। আমিও রাত চারটায় ঘুম ভেঙ্গে সেই কলে সাড়া দিয়ে এক নিমিষেই চলে যাই আমাদের সেই ফেলে আসা ক্যাডেট জীবনে। মনে মনে ভাবি, আহা কতই না আনন্দময় ছিল সেই জীবন… সেই যে আমার নানা রংয়ের দিনগুলি।

কাজী সাব্বির আহমেদ

কলাম লেখক । টরন্টো